মানুষের জীবন খুবই বিবর্ণ থাকে মাঝে মাঝে। আসলে একে বিবর্ণ বলাটা বোধ হয় ঠিক না। এটাও একটা রং। হয়তো নিকষ কালো কিংবা ধূসর !
অফিস থেকে বাসায় ফিরেই আসিফ দেখতে পায় তার মা-বাবা আর ছোট বোন কি যেন আলাপ করছে। আসিফের দিকে তাকিয়েই তার বোন হেসে দেয়।
ড্রেস চেঞ্জ করে ওয়াস রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে ডায়নিং টেবিলে রাখা চায়ের কাপে চুমুক দিতেই আসিফের বাবা রহমান সাহেব আসিফকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “ আসিফ তোমার সাথে কিছু কথা আছে”।
বাবার দিকে তাকিয়ে সম্মতি জানাতেই রহমান সাহেব বলা শুরু করেন, “তোমার চাকরির বয়স তো বছর খানেক হল। গতানুগতিক সমাজ ব্যাবস্থার হিসেব অনুযায়ী তুমি এখন প্রতিষ্ঠিত। তা এই সমাজের প্রথা অনুযায়ী ছেলে প্রতিষ্ঠিত হলে বাবা-মা’র দায়িত্ব হয় ছেলের বিয়ের ব্যাবস্থা করা”।
আসিফ একটু বিরক্ত হয়ে বাবাকে বলে, “বাবা এতো পেঁচিয়ে কথা বলার অভ্যাস এখনও ছাড়তে পারলে না।
যা বলতে চাও সরাসরি বললেই তো হয়”।
আসিফের মা জাহানারা বেগম বলতে শুরু করেন, “তোমার জন্য মেয়ে দেখেছি। মেয়ে অনার্স শেষ করেছে। আরও একগাদা বর্ণনা শেষে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার কোন আপত্তি আছে কি এই বিয়েতে?” জবাবে আসিফের সরল উত্তর, “বিয়ে আজ হোক কাল হোক করতেই তো হবে। তোমার যা ভালো মনে করো তাই করো।
আমার কোন আপত্তি নেই”।
প্রিয়া বাবা-মায়ের একমাত্র আদরের মেয়ে। চোখে অনেক রঙ্গিন স্বপ্ন। গ্রাজুয়েশন শেষ করেছে। পোস্ট গ্রাজুয়েশন শেষ করে জব করবে।
নিজের পায়ে দাঁড়াবে। কিন্তু একদিন তার মা তার বিয়ের কথা বলে। প্রিয়ার মনটা অনেক খারাপ হয়ে যায়। প্রিয়ার কোন কাজেই তার বাবা-মা কখনো বাঁধা দেয় নি। তাই বাবা-মায়ের সিদ্ধান্তেও সে বাঁধা দেয় নি।
বিয়েতে রাজি হয়ে যায় বাবা-মায়ের পছন্দ অনুযায়ী।
আসিফ আর প্রিয়ার বিয়ে হয়ে যায়। নতুন সংসারে যতোটা না সমস্যা হবে ভেবেছিল, অতোটা সমস্যা হয় নি প্রিয়ার। প্রথম কয়েকদিন একটু খারাপ লেগেছিল বটে কিন্তু বাবা-মায়ের ব্যাকআপ হিসেবে শ্বশুর-শাশুড়ি দারুন কাজে দিচ্ছে ! তারা নিজেদের মেয়ের মতোই আদর করেন প্রিয়াকে। প্রিয়াও এই জিনিসটা খুব উপভোগ করে।
দিন যেতে যেতে আসিফের সাথেও প্রিয়ার ক্যামিস্ট্রি দারুন জমে একদম ক্ষীর হয়ে যায়।
“ভালোবাসি ভালোবাসি
এই সুরে কাছে দূরে জলে স্থলে বাজায়
বাজায় বাঁশি
ভালোবাসি ভালোবাসি”
গানের ভলিউমটা একটু বাড়িয়ে দিতেই প্রিয়া চমকে ওঠে। পেছনে আসিফ দাঁড়িয়ে আছে। কখন যে অফিস থেকে এসেছে তা টেরই পায়নি প্রিয়া। আসিফ ফ্রেশ হয়ে আসতে আসতে প্রিয়া ভাবতে থাকে কদিনের পরিচয়ে মানুষ এতো আপন কি করে হয়ে ওঠে? আসিফ ফিরে এলে প্রিয়া একটা আবদার করে বসে।
তার সেই পুরনো ইচ্ছের কথা। সে মাস্টার্স কমপ্লিট করে চাকরি করবে। আসিফ একগাল হেসে প্রিয়ার চুল নিয়ে খেলতে খেলতে বলে, “তোমার ইচ্ছাই শিরোধার্য হে প্রিয়তমা”।
এক বিকেলে প্রিয়া একটি পার্কের বেঞ্চে বসে আছে। হঠাৎ সে দেখতে পায় একটা ছোট্ট বাচ্চা দৌড় দিয়ে আসছে তার কাছে।
কাছে আসতেই দেখে বাচ্চাটা কান্না করছে। প্রিয়ার অনেক মায়া হয়। কিন্তু কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করতে না করতেই দেখে অতি দৈত্যাকায় এক মানবরুপী দানব ধেয়ে আসছে বাচ্চাটার দিকে। এসেই খপ করে বাচ্চাটাকে ধরে ফেলে। এরপর ইয়া বড় এক কাঁচি দিয়ে এক এক করে বাচ্চাটার হাত, পা, মাথা কাটতে শুরু করে।
রক্তে প্রিয়ার সমস্ত শরীর ভিজে যায়। প্রিয়া এক চিৎকার দিয়ে ওঠে। পাশ থেকে আসিফ প্রিয়াকে ধরে বলে ওঠে, “কি হয়েছে?” কি হয়েছে প্রিয়ার? প্রিয়া এতক্ষন স্বপ্ন দেখছিল ! দুঃস্বপ্ন !! প্রিয়ার চোখ বেয়ে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল !!!
আসিফ বলে। “কেঁদে কি হবে? যা হবার তা হয়ে গিয়েছে। আমি তোমার উপর সিদ্ধান্ত ছেড়ে দিয়েছিলাম।
তুমি আগে কিছু বল নি। কিন্তু শেষে নিজের সিদ্ধান্তেই এবরশন করিয়েছো ! তুমি চাও নি এতো তাড়াতাড়ি সন্তান নিতে। কিন্তু এটা তোমার আগেই ভাবা উচিৎ ছিল। সব সিদ্ধান্তই তোমার ছিল। আমি কখনোই বাঁধা দেই নি তোমার কোন কাজে।
কারণ আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি”।
এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সে। এরপর দুজন কিছুক্ষন চুপ করে বসে থাকে। আসিফের কাঁধে প্রিয়ার মাথা। প্রিয়ার মুখ থেকে শুধু একটা কথাই বের হয়, “আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত আমি ভোগ করছি !”
আমার কথাঃ পৃথিবীতে আমি যে শব্দগুলো বেশি ঘৃণা করি এদের মধ্যে একটি হল এবরশন ! আমাদের কারও ক্ষমতা নেই একটা প্রান তৈরি করার, আর তাই আমাদের কারও অধিকারও নেই একটা মনুষ্য প্রান হত্যা করার।
প্রত্যেকটা কাজ করার আগে ভেবে-চিন্তে করা উচিৎ।
বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ ব্লগার বোকা ডাকু ভাইকে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।