স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা Pick up a camera. Shoot something. No matter how small, no matter how cheesy, no matter whether your friends and your sister star in it. Put your name on it as director. Now you’re a director. Everything after that you’re just negotiating your budget and your fee. – James Cameron
প্রথমেই বলে নেয়া ভালো এটা কোন টিউটোরিয়াল নয়। এখানে আমি একটা সিনেমা বানিয়ে ফেলবো লিখে লিখে, আর আপনারাও ধারনা পেয়ে যাবেন সিনেমা বানানোর কলা কৌশলের ব্যাপারে। হয়তো বাসার হ্যান্ডিক্যাম বা কোন বড় ভাই থেকে ধার করে একটা dSLR দিয়ে আপনিও বানিয়ে ফেলবেন একটা ফিল্ম। প্রথমে যখন এই পোস্ট টা সিরিজ আকারে দিয়েছিলাম তখন অনেক ছবি দিয়েছিলাম পোস্টে; কিন্তু এক সাথে সব গুলো সিরিজ দেয়ায় ছবি গুলো লিঙ্ক আকারে দিলাম; নাহলে লোড হতে সময় নিবে।
কোন জিনিসই কঠিন নয় যদি আপনার passion থাকে।
তবে সব পথই দুর্গম। কথাটা হয়তো একটু বিতর্কিত হয়ে গেলো। তারপরেও বলছি, আপনি চাইলে বিনা পয়সায় সিনেমা বানাতে পারবেন। সেটাই এখানে শিখাবো আমি। এই পোস্টে কোন প্রকার তাত্ত্বিক কথা-বার্তায় যাবোনা।
আমি আর আপনি মিলে সরাসরি সিনেমা নির্মান করে ফেলবো। আসুন তবে আর দেরী করা উচিত হবেনা।
সিনেমা বানাতে হলে কি লাগে?
ক। দৃষ্টিভঙ্গী (সিনেমা বানাতে হলে এইটা লাগেনা। ভালো সিনেমা বানাইতে গেলে লাগে)
খ।
গল্প
গ। ক্যামেরা
ঘ। অভিনেতা
ঙ। কম্পিউটার
ভিশন বা দৃষ্টিভঙ্গীর ব্যাপারটা নিয়ে অনেক কথা বলতে হয়। কিন্তু সেসব আজকে নয়।
একটা গল্প দাঁড় করিয়ে ফেলুন। যেকোন কিছুই হতে পারে আপনার গল্পের মাল-মশলা। যে কোন কিছু বলেতো যে কোন কিছু। গল্প তৈরী হয়ে গেলে সেটাকে ফ্রেমবন্দী করতে গেলে লাগবে ক্যামেরা। ক্যামেরার সামনে গল্পটাকে উপস্থাপন করতে হলে লাগবে অভিনেতা।
আর শ্যুট করা উল্টো-পাল্টা গল্পটাকে সাজিয়ে দাড় করানোর জন্য চাই একটি কম্পিউটার। এবার আসুন একটু বিস্তারির আলোচনা করি।
গল্প নির্বাচন
চাই ভালো গল্প। আপনাকে গল্প নির্বাচন করতে হবে। গল্প হলো একটি সিনেমার প্রান।
প্রান ভোমরা নিয়ে কোন কম্প্রোমাইজ করবেন না। তারপর, আপনাকে গল্প নিয়ে ভাবতে হবে। গল্পের আগা-মাথা পুরোটা মাথায় নিয়ে এমন ভাবে সাজাতে হবে যেনো চোখ বন্ধ করলেই আপনি আপনার গল্পটাকে সিনেমাকারে দেখতে পান। এবার সেটা কাগজে লিখে ফেলুন।
এবার কাগজের গল্পটাকে আপনার কাছের দু-একজন কে পড়তে দিন।
তাদের কাছ থেকে ফিডব্যাক নিন। গল্পটা নিয়ে আলোচনা করুন। দেখুন কোথাও কোন পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয় কিনা। প্রয়োজন হলে পরিবর্তন করুন। কিন্তু ভুলেও আপনার চিন্তা-ভাবনার উপর যেনো কারো প্রভাব না পারে।
গল্পঃ আসুন একটা গল্প দাঁড় করাই। এক ছেলে তার রুমমেটের নাক ডাকার শব্দে ঘুমাতে পারেনা। রুমমেটকে এটা বলেও কোন লাভ হচ্ছেনা। তাই, ছেলেটা একদিন তার রুমমেটকে ঘুমের মধ্যে বস্তায় ভরে বুড়িগঙ্গার ঐ পারে নিয়া ফালায়া আসে। ফিরে আসার পথে নৌকার মাঝির বৈঠার আঘাতে পানির ছিটা এসে ছেলেটার মুখে লাগে।
ছেলেটা বিরক্ত হয়ে মুখ সরিয়ে নিতে গেলে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ছেলেটা দেখে তার রুমমেট তাকে পানির ছিটা দিয়ে ঘুম ভাঙ্গাচ্ছে। (অবশ্যই গাজাখুরি গল্প। এই মুহুর্তে মাথায় কিছুই আসতেছেনা)
পেপার ওয়ার্ক
পেপার ওয়ার্ক কথাটা যত সহজ মনে হচ্ছে আসলে তত সহজ না। মেলা হাবিজাবি আছে।
বলা হয়, আপনি মুভি কতটা ভালো ভাবে নির্মান করতে পারবেন সেটা নির্ভর করবে আপনার পেপার ওয়ার্ক কত ভালো হবে। এক ঝটকায় জেনে নেই পেপার ওয়ার্ক এর মধ্যে কি কি থাকে।
ক। Film Concept - আমরা ইতিমধ্যে আমাদের সিনেমার কনসেপ্ট দাড় করিয়ে ফেলেছি।
খ।
Writing your script - মাথায় নয়, খাতায়। স্ক্রিপ্ট লিখার কিছু স্ট্যান্ডার্ড ফরম্যাট আছে। সেগুলো আয়ত্ত্ব করতে পারলে ভালো। না পারলে নিজের একটা ফরম্যাট দাড় করে ফেলুন। তবে এমন ভাবে লিখবেন যেনো সবাই বুঝতে পারে।
আমি ডিটেইলস এ যাবো আরেকদিন।
গ। Drawing your storyboards -
Click This Link
স্টোরীবোর্ড একে যদি আপনার গল্প টাকে কার্টুনের মত খাতায় তুলে ফেলতে পারেন তাহলে ধরে নিতে পারেন শুটিং এর সময় আপনি বিড়ি ফুকে পার করে দিতে পারবেন। বাকী কাজ একদম সহজ করে দেয়। না পারলে নাই।
ঘ। Film Funding - হুম, খুব দামী জিনিস। ফিলিম বানাবেন, টাকা পাবেন কোথায়? শর্ট ফিলিমের জন্য বাংলাদেশে এখনো কোন স্পন্সরশিপ পাওয়া যায়না। সরকার ইন্ডিয়া, যুদ্ধপরাধী আর দেশের শেয়ার বাজার নিয়া এতো ব্যাস্ত থাকে যে ফিলিম নামে যে একটা জিনিস আছে সেটা ভুলেই গেছে। তো, আপনার ফান্ডের জন্য আপনাকে হাত পাততে হবে আপনার পরিবার, দুলাভাই, ভাবী, বন্ধু, বান্ধবী - যার থেকে যেভাবে পারেন।
সবচেয়ে ভালো হয় প্রেয়সীর কাছ থেকে হাতাইতে পারলে।
ঙ। Cast & Crew - ঠিক করে ফেলেন কে অভিনয় করবো আর কে আপনার ব্যাগ টানবো। ক্রু দের একেক জনের একেক নাম। এখন না, পরে কমুনে।
মনে করি, আপনার দুই বন্ধু রাজী হয়ে গেলো দুই রুমমেটের ভুমিকায় অভিনয় করার জন্য
চ। Location, Location, Location - একটা চমৎকার লোকেশন আপনার সিনেমার পুরা ডাইমেনশন ঘুরায়া দিবার পারে। সুন্দর লোকেশন মানে কক্সবাজার না। আপনার বন্ধুর ছাদ ও হতে পারে চমৎকার লোকেশন। আমার দ্বিতীয় শর্ট ফিলিমে আমার বন্ধুর ছাদ থেকে নেয়া পাশের বাসার ছাদের কবুতর গুলার যে ৫ সেকেন্ডের শট নিছিলাম, এটাই সবাই বেশী পছন্দ করেছে।
আমাদের এই গল্পের লোকেশন - একটা রুম, বুড়িগঙ্গা নদী (এই জায়গায় আপনি সুন্দর একটা নদী দেখাতে পারলে ভালো।
ছ। Shooting Script - শুটিং এর জন্য স্ক্রিপ্ট আছে আলাদা। আগের স্ক্রিপ্ট হলো জেনেরাল যেটা অভিনেতাদের কাছেও যাবে। এই স্ক্রিপ্ট থাকবে শুধু ডিরেক্টর আর তার ফার্স্ট এসিস্টেন্ট এর কাছে।
আপাতত এটা স্কিপ করে যাই আমরা। পরে এটা নিয়ে বিস্তারিত বলবো।
জ। Scheduling - বন্ধু বান্ধব অভিনয় করলে তো শিডিউল নিয়া খুব বেশী ঝামেলা হয়না, তারপরেও তাদের ক্লাস বা অফিস টাইমের কথা মাথায় রাখা লাগে। আরো আছে লোকেশন ব্যাবহার করার সময়।
মনে করুন, এলাকার স্কুল টা ব্যাবহার করবেন। কিন্তু হেডস্যার সময় দিলো শুধু মাত্র টিফিন টাইম, তাহলে আপনাকে কিন্তু ওই সময়ে শুধু মাত্র ওই সম্পর্কিত শট গুলোই নেয়া লাগবে আগে। তো, শিডিওলিং বা স্কেজিউলিং টা করে ফেলুন। কোথায় করবেন? অবশ্যই মাথায় নয়।
ঝ।
Equipment - এবার লিস্ট করে ফেলুন কি কি লাগবে। কি কি আছে। ক্যামেরা, সাউন্ড, আলো প্রক্ষেপনকারি - এসবই লাগবে আপনার শট অনুযায়ী।
Directing is like putting together a collage. ~ Ethan Hawke
আমি আগে ভাবতাম শুটিং খুব মজার জিনিস। আসলে শুটিং খুব পেইনফুল একটা জিনিস।
শুটিং এর সময় আপনাকে আসলে একজন ম্যানেজার এর ভুমিকায় অভিনয় করতে হবে। সবাইকে ম্যানেজ করতে হবে। অভিনেতাদের শট বুঝিয়ে দিতে হবে, ক্যামেরাম্যান কে শট বুঝিয়ে দিতে হবে। ফার্স্ট এসিস্টেন্ট কে কাজ বুঝিয়ে দিতে হবে। তো, আপনি কতটা বুঝেছেন সেটার উপর নির্ভর করে কতটা বুঝাতে পারবেন।
এই জন্য পেপারওয়ার্ক টা জরুরী।
যাইহোক, বিস্তারিত পরে। আগে আমাদের স্টোরী নিয়া আগাইতে থাকি। শুটিং এর দিন আমাদের লাগবে একটা ক্যামেরা। ক্যামেরা ভাড়া পাওয়া যায়।
১৫০০ থেকে ৭০০০ টাকায় টিভি নাটকে ব্যাবহার হয় এমন ক্যামেরা ভাড়া পাওয়া যায়। কিন্তু আপনার টাকা নাই। তো, আপনি কি করবেন? আপনার কাছে কি dSLR আছে? নাই। আপনার বন্ধুর কাছে বা এমন কারো কাছে যে চাইলে দিবে? নাই? ওকে। আপনার কি হ্যান্ডি ক্যাম আছে বা আপনার পরিচিত কারো কাছে? তাও নাই? নো প্রব্লেম।
আপনার কাছে নিশ্চয়ই ডিজিটাল ক্যামেরা আছে, অথবা আপনার পরিচিত কারো কাছে? তাও নাই? কি বলেন? আপনার মোবাইলটা ক্যামেরাওয়ালা তো? হ্যাঁ, ক্যামেরা আছে!! গুড। আর কি চাই আপনার? তবে যে ক্যামেরাই ব্যাবহার করেন না কেনো, ব্যাবহার করার সময় কাপাবেন না। পারলে ট্রাইপড ব্যাবহার করুন। না পারলে শট নেয়ার সময় ক্যামেরা রাখুন কোন টেবিলের উপর বা বই এর উপর। হাতে নিয়ে (হ্যান্ডহেল্ড) শুটিং করলে কাপবে।
আর কাপাকাপি খুব বাজে জিনিস। তবে আপনি যদি এমন কোন শট নেন যার জন্য কাঁপাকাঁপি টা দরকার (ধরুন, হরর মুভি তে) তাহলে হ্যান্ডহেল্ড করতে পারেন।
সাইন্ড হলো একটা সিনেমার অর্ধেক। পিকচার খারাপ হলেও আমরা সিনেমা দেখি কিন্তু সাউন্ড খারাপ হলে আমরা সিনেমা দেখিনা। আর ভালো সাউন্ড টেক করতে হলে আপনাকে কিছু খরচ করতে হবে।
কিন্তু ভিন্ন উপায় ও আছে। ভালো একটা হেডফোন জোগার করুন। তারপর শুটিং শেষে হেডফোন দিয়ে সাউন্ড ফর্জ জাতীয়ে সফটওয়ার ব্যাবহার করে পিসিতে সাউন্ড রেকর্ড করুন । মানে, আপনাকে ডাবিং করতে হবে আর কি। কাজটা একটু সময় সাপেক্ষ।
এই জন্য যতটুকু পারা যায় ডায়ালগ কম রাখা উচিত।
লাইট আপনার শটের ডাইমেনশন তৈরী করতে সাহায্য করবে। ভালোভাবে লাইট প্রক্ষেপন আপনার সিনেমার চেহারা ঘুরিয়ে দিতে পারে। বাড়িয়ে দিতে পারে আপনার গল্পের আবেদন। চরিত্র কে ফুটিয়ে তুলার ক্ষেত্রে লাইট খুবই গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করে।
সিনেমায় লাইট একটা বিশাল এরিয়া। এটা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে অনেক সময় নিবে। আমার নিজের ও ভালো জানা নেই। তবে, কিছু টিপস দেই।
১... স্ক্রিপ্টে রাতের সিকোয়েন্স কম রাখবেন।
দিনের আলো অনেক শক্তিশালী। অবশ্য চাই ভালো মতো ব্যাবহার করার ক্ষমতা।
২... ধরুন, একটা সিকোয়েন্স রাতেই নিতে হবে। দিনের বেলা নিলে হবেনা। এই যেমন নাক ডাকার ব্যাপারটা।
রুমমেট নাক ডাকায় আরেক রুমমেট রাতের বেলা ঘুমোতে পারছেনা। তো, এই রাতের সিকোয়েন্স টা যদি আমরা দিনের বেলায় করি তাহলে কি হবে? তাহলে তেমন কিছুই না। কিছুটা গ্রহনযোগ্যতা হারাবে।
আমরা যেটা করতে পারি সেটা হলো, এই রকম রাতের সিকোয়েন্স গুলো দিনের বেলাই শুট করতে পারি। তারপর এডিটিং টুলস এ নিয়ে গিয়ে রাত বানিয়ে দিতে পারি।
সেটা আপনাদের শিখিয়ে দিবো পরে। আপাতত আমরা অই সিকোয়েন্স টা দিনের আলোয় করবো। কারন, রাতের বেলা শুট করলে যদি পর্যাপ্ত আলো সবরাহ করতে না পারেন তাহলে ভিডিও নয়েজ আসবে। মানে, আপনার স্ক্রিন জুড়ে ঝিরঝির আসবে। তাই দিনের বেলা শুট করবেন এই ঝির ঝির থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য।
৩... দিনের আলোটাকে ঠিক মত ব্যাবহার করুন। মনে রাখবেন, বেশী আলো মানেই ভালো কিছু না। আলোকে নিয়ন্ত্রন করতে হবে। আলো যদি প্রয়োজনের তুলনায় বেশী হয় তাহলে আপনার ভিডিও ফ্যাকাশে আসবে। কম হলে অন্ধকার আসবে।
তো আপনাকে কি করতে হবে? এক্সপেরিমেন্ট করতে হবে। আপনাকে হাতে কলমে শিখতে হবে। এটাকে বলে - ট্রায়াল ও এরর। জানালার পর্দা আর ঘরের দরজা বার বার এদিক অদিক করে আপনি দেখবেন আপনার ক্যামেরায় কতটুকু আলো পাচ্ছেন। প্রয়োজন হলে আপনার অভিনেতাদের ঘুরিয়ে দিবেন।
৪... রাতের বেলা মোম্বাতির আলো ব্যাবহার করতে পারেন। বা, টেবিল ল্যাম্প। এ দুটোর কোনটাই সল্যুশন না। তবে কার্যকরি।
৫... ককশিট ব্যবহার করুন।
আলো টাকে বাউন্স করতে সুবিধা হবে। ককশিট নাই? তাহলে একেবারে সাদা একটা পেজ কে কোন বোর্ড এ আঠা দিয়ে লাগিয়ে নিন। তারপর সেটাকে অভিনেতাদের মুখের যতটুকু কাছে নিয়ে যাওয়া যায় ততটুকু নিন। আর কোথাও আলো থাক বা না থাক। অভিনেতাদের মুখে আলো চাই।
আলো ছাড়া আর কি আছে? অনেক কিছু। আপনাকে অভিনেতাদের শট বুঝিয়ে দিতে হবে। আপনার দুই বন্ধু কই? তারা কিছুই জানেনা। তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে আপনি কি চান। তারা গল্প শুনে আগ্রহী হলেও শুটিং এর সময় বিরক্ত হবে।
স্বাভাবিক, কারন গল্প যেভাবে আগায় শুটিং সেভাবে আগায় না। আগের কাজ পরে হয়, পরের কাজ হয় মধ্যে, আর মধ্যের কাজ হয় আগে।
আপনাকে ভিন্ন ভিন্ন এঙ্গেল থেকে শট নেয়া শিখতে হবে। এঙ্গেল আর শট নেয়ার ব্যাপারে যতটা ক্রিয়েটিভ হবেন ততটা ভালো হবে আপনার কাজ। কিন্তু ব্যাপারটা এমন না যে আপনি সব শট জানেন আর একটা ফিলিমে দেদারছে সব শট ব্যবহার করলেন।
তাহলে পরিশেষে কিছুই হবেনা। তাই প্রথম দিকে আমরা সাধারন শট আর এঙ্গেলেই কাজ টা শেষ করে ফেলবো।
আমি ধরে নিচ্ছি আমাদের টিম হলো মোট ৩ জনের। একজন নাক ডাকে, একজন নাক ডাকা নিয়ে বিরক্ত, আর একজন হলেন আপনি। তো, যাবতীয় সম কাজ আপনাকেই করতে হবে।
তাই আমি কোন কিছুর ডিটেইলস এ যাবোনা। ডিটেইলস বলার জন্য আমি অন্য একটা থ্রেড খুলবো। এখানে শুধু মাত্র প্রসেস টা নিয়া আলোচনা করতেছি। শুটিং এর সময় আপনাকে ক্যামেরা হ্যন্ডল করতে হবে। আমি ধরে নিচ্ছি আপনি আপনার মোবাইলের ভিডিও চালাইতে পারেন।
আমি ধরে নিচ্ছি আপনি আপনার রুম ব্যাবহার করছেন। ধরে নিচ্ছি আপনার টেবিল ল্যাম্প ছাড়া আর কিছু নাই। ধরে নিচ্ছি আপনার হাতে টাকা পয়সাও নাই। তাই গত পর্বে প্রি-প্রোডাকশন বা শুটিং এর আগের কাজ নিয়ে কথা বলেছি। এই পর্বে অল্প কিছু টিপস আর শুটিং সম্পর্কিত কিছু আইডিয়া দিলাম।
এর পরের পর্বে সরাসরি শুটিং এ চলে যাবো। তখন, এমন কিছু সাব্জেক্ট নিয়ে কথা বলবো যেগুলা আমরা আগে স্কিপ করে এসেছি। যেমন শুটিং লিস্ট বা শট লিস্ট।
Always follow your actors. Don't let your actors follow the camera. - Master Shamim
এই অধ্যায়ে আমরা শিখবো শট। অনেকপ্রকার শট আছে।
বেশীরভাগ কমন শট। আমরা প্রায়ই দেখি। কিছু আন-কমন শট আছে যা বেশী দেখা যায়না। আমরা সেগুলা নিয়েও কথা বলবো। কিন্তু আপনি কোন শট টা কিভাবে নিবেন সেটা নির্ভর করবে একান্তই আপনার উপর।
শটে যাওয়ার আগে আর্ট ডিজাইন নিয়ে হালকা পাতলা কিছু বলে নেই।
-> আর্ট ডিজাইন
আর্ট ডিজাইন এর উপর ব্যাপক পরাশুনা করা যায়। আর্ট ডিজাইনার রা পুরো সিনেমার ইন্টেরিওর আর এক্সটেরিওর ডিজাইন করে থাকে। সেট ডিজাইন আর কস্টিউম ডিজাইন আর্ট ডিজাইন এর একটা অংশ। আজকে শুটিং ডে হলেও, ক্যামেরা টা একটু দূরে রেখে আমরা কিছু জিনিস শিখে নেই।
ক্যামেরা নাহয় একটু পরে ধরি।
সেট ডিজাইন মানে হলো আপনার লোকেশন ডিজাইন করা। কোথায় কি থাকবে, কিভাবে থাকবে ঠিক করা। যেমন ধরুন, আমাদের দুইটা লোকেশন। একটা ইনডোর, আরেকটা আউটডোর।
ইনডোর হলো আপনার রুম। এবার আপনার রুমটাকে সাজান। কোথায় কি থাকবে ঠিক করে ফেলুন। ঠিক করে ফেলুন ক্যামেরা কতটুকু কাভার করবে। যততুকু কাভার করবে ঠিক ততটুকুই সাজান।
ধরুন, বেড এর পাশে একটা বেড সাইড টেবিল থাকতে পারে। টেবিলের উপর একটা টেবিল ল্যাম্প। খাটের চাদর টা বেশী লাইট যেনো না হয়ে যায়। জানালার কতটুকু কাভার করছেন> যতটুকু করছেন ততটুকু কি ঢাকা থাকবে নাকি খোলা? টেবিল ল্যাম্পের পাশে কি একটা ঘড়ি রাখা যায় কিনা? বালিশের কাভার কি চাদর এর সাথে মিললো কিনা। অভিনেতারা কি জামা পরে আছেন? এই জামা পরে কি মানুষ সাধারনত ঘুমায় কিনা? অভিনেতাদের হাতে হাতঘড়ি নেই তো? তাদের চুল কি পরিপাটি করে আচড়ানো নাকি এলোমেলো?
এরকম হাজারো ব্যাপার ডিজাইন করার ব্যাপারটা মাথায় রাখা উচিত।
আউটডোর শুটিং করতে হলে আপনাকে যা আছে তাই রেখে শুট করতে হবে। চাইলেই মেঘনা ব্রীজ কে কিঞ্চিত ডানে সরায়া দিতে পারবেন না, বা পাশের গার্মেন্টস টাকে ভেঙ্গে ফেলতে পারবেন না। এই জন্য বিগ বাজেটের সিনেমায় পুরো সেট ডিজাইন করা হয়। দেখে মনে হবে কোন এলাকা, কিন্তু আসলে এটা একটা স্টুডিও।
-> শট লিস্ট/ শুটিং লিস্ট/ শট সিলেকশন
সিনেমা দেখার সময় আমরা খেয়াল করলে দেখি, কত রকম শট নিতেছে।
মানে ক্যামেরা একবার ডাইনে যায় তো একবার বায়ে। উপর থেকে নেয় তো, নীচ থেকে। কাছ থেকে নেয়তো আবার দূর থেকে। এই সব শট এর একেক টা নাম আছে। আমি একটা ধারনা দেয়ার চেষ্টা করছি।
তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন কোন শট টা নিবেন। শুধু শট নিয়েই বই আছে কিছু। সিনেমাটোগ্রাফীর লাইট আর শট হলো বিশাল ব্যাপার। ঠিক মত লাইট প্রয়োগ করে ক্যামেরাটা সঠিক এঙ্গেল এ রেখে সঠিক শট টা নিন। পাবলিক আহা-উহু শুরু করে দিবে।
প্রথমে আমি শট গুলোর নাম দিচ্ছি ছবি সহ। একটা বাদে বাকী সব ছবি আমার কাজ থেকে নেয়া।
শটের প্রকারভেদ ->>
1. Extreme Close - খুব কাছ থেকে কোন সাব্জেক্ট কে ফ্রেমবন্দী।
Click This Link
2. Close Up - মাথার চুল থেকে চিবুকের একটু নীচ পর্যন্ত। কিন্তু আপনি এদিক ওদিক করতেই পারেন।
শুধু মাত্র সাব্জেক্টের মুখের ডিটেইলস, আর কিছুনা।
Click This Link
3. Medium Close Up - ফ্রেমে শুধু ফেস নয়, আমরা আরেকটু ডিটেইলস দেখতে চাই।
Click This Link
4. Medium Shot - মাথার কিঞ্চিত উপর থেকে কোমরের উপর পর্যন্ত। এদিক ওদিক অবশ্যই করতে পারবেন।
Click This Link
5. Medium Long Shot - সহজ ভাষায় সাব্জেক্ট এর কোমর পর্যন্তই দকেহবো কিন্তু সাথে সাথে একটু ডিটেইলস এও যাবো।
আশে পাশে বা পিছনে কেউ থাকলে তাকেও আনলাম।
Click This Link
6. Long Shot - অনেকদুর থেকে সাবজেক্ট কে দেখবো। তবে আশে পাশের এমন কিছু থাকা লাগবে যেনো আপনার দৃষ্টি যেনো ছড়িয়ে না যায়। ছোড়িয়ে গেলে তা ওয়াইড শট হয়ে যাবে।
Click This Link
7. Extreme Long Shot - নামেই বুঝা যায়।
লং শট থেকেও এটার দুরত্ব মেলা।
Click This Link
8. Over The Shoulder (OS Shot) - সবচেয়ে কমন দেখা যায় যখন দুজন ফেস-টু-ফেস কথা বলে ।
Click This Link
9. Establishing Shot - প্রতিটা সিকোয়েন্স শুরু হওয়ার সমইয়ের শট টাকে বলে এস্টাব্লিশিং শট। এটা হতে পারে, যে বাসায় লোকেশন সেই বাসার বাইরে থেকে একটা শট। বা, বুড়িগঙ্গার নদীর পারে নৌকা আর মানুষের অপেক্ষার একটা দৃশ্য।
Click This Link
10. Subjective Shot - দর্শক কে এটা বুঝানোর জন্য যে তারা সাব্জেক্ট এর চোখ দিয়ে দেখছে। এটার আরেকটা নাম POV = Point of View shot.
Click This Link
11. Two Shot - ফ্রেমে যখন দুজন কে এক সাথে দেখা যায়।
Click This Link
12. Group Shot - দুই এর অধিক সাব্জেক্ট কে একসাথে ফ্রেমবন্দি করার নাম
Click This Link
13. Canted Shot - ক্যামেরা কে একটু ডানে বা বায়ে বাকিয়ে এই শট টা নেয়া হয়। হরর মুভি তে এই শট টা বেশী দেখা যায়। অথবা, একশন দৃশ্যে নায়ক বা ভিলেইন এর আগমন।
এই শট দর্শকের মনে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরী করে।
Click This Link
14. Dolly Shot - ডলি বা ট্রলি এখন ওতো প্রোত ভাবে জড়িত। ডলি শট আসলে ফ্রেমিং এর উপর ডেপেন্ডেন্ট না। আপনি যে কোন শট ডলি করে নিতে পারবেন। ডলি হলো চাকা লাগানো কাঠের বা স্টিলের একটা পাত যেটার উপর ক্যামেরা রেখে মোশন আনা হয়।
Click This Link
15. Crane Shot - ক্রেন ব্যাবহার করে কোন শট নেয়াকে ক্রেন শট বলে।
Click This Link
16. Pan SHot - ডান থেকে বাম পাশে বা বাম থেকে ডান পাশে ক্যামেরা মুভ করে শট নেয়াকে প্যান শট বলে।
17. Tilt shoT - উপরের থেকে নীচে বা নীচ থেকে উপরে ক্যামেরা মুভ করে শট নেয়াকে টিল্ট শট বলে।
18. dolly zoom shot - জুম শট টাকে আলাদা করে কিছু লিখলাম না কারন সিনেমায় এখন আর জুম এর ব্যাবহার হয়না সহজে। ডলি করা হয়।
আর ডলি আর যুম যখন এক সাথে করা হয় তখন এটাকে ডলি জুম শট বলা হয়। হিচকক মামা এই শট এর উদ্ভাবক। এটার আরো অনেক নাম আছে। তার মধ্যে ভার্টিগো শট, জলি শট নাম দুটো বেশী জনপ্রিয়। এই শটে ডলি ইন করার সময় জুম আউট করা হয়।
বা ডলি আউট করার সময় জুম ইন করা হয়। মাঝে মাঝে দেখবেন সাবজেক্ট ঠিক থেকে শুধু মাত্র ব্যাকগ্রাউন্ড পেছনে চলে যাচ্ছে। এটাকে জলি শট বলে। ভিডিও ছাড়া এটা বুঝা মুশকিল।
19. macro shot - ধরুন আপনি একটা একটা কাঠের টুকরোতে ছুরি দিয়ে খোচাচ্ছেন।
ফ্রেম এ শুধু কাঠের টুকরো আর আপনার ছুরি আছে। এটাকে ম্যাক্রো শট বলে। বা, একটা ফুলে একটা প্রজাপতি বসে আছে - এটাও ম্যাক্রো শট।
Click This Link
20. Steadycam shot - আহ! সিনেমা জগতে একটা যুগান্তকারী সংযোজন। সাবজেক্ট কে অনুসরন করবেন আপনি।
মনে আছে পোস্টের শুরুতে কি বলেছিলাম? সাবজেক্ট কে ফলো করার জন্য একটা বেস্ট উপায় হলো স্টেডিক্যাম। অভিনেতাদের পুরো শট বুঝিয়ে দিন। এবার স্টেডিক্যাম নিয়ে তাদের শুধু ফলো করুন।
Click This Link
21. Birds eye shot - অনেক উপর থেকে যখন শট নেয়া হয়। এটার আরেক নাম আছে।
এরিয়েল শট।
Click This Link
22. Worm's eye shot - খুব নীচ থেকে মানে একেবারে ঘাস-ফরিং এর চোখ দিয়ে দেখছেন আপনি।
Click This Link
পরের অধ্যায়ে এঙ্গেল নিয়ে আলোচনা করবো। আরেকটা কথা - একটা শট এর কথা খুব শুনে থাকবেনঃ মাস্টার শট। মাস্টার শট মানে হলো প্রথমে দূর থেকে একটা শট নেয়া যেনো দর্শক একটা আইডিয়া পেয়ে যায় আসলে কোথায় কি আছে বা কোথায় ঘটনা ঘটছে।
ওটা আসলে এস্টাব্লিশিং শট বা মিডিয়াম লঙ শট বা গ্রুপ শট বা ওয়াইড শট কেই বুঝানো হয়।
“Cinema is a matter of what's in the frame and what's out”
― Martin Scorsese
আসুন কি কি এঙ্গেলে শট নেয়া যায় সেটা ঝটপট দেখে নেই।
-> নানাবিধ এঙ্গেল সমুহ
Click This Link
-> ফিলিমের গ্রামার (ব্যাকরন সর্বদা বিরক্তিকর)
অল্প কথায় বলি - কিছু রুলস আছে যেগুলা না ভাঙ্গাই ভালো। তবে রুলস তৈরী হয় একদিন না একদিন ভাঙ্গার জন্যই। কিন্তু সেই রুলস টা কে তাহলে আগে স্টাডি করতে হয়।
আমি আপনাদের ফিলিম মেকিং এর কিছু রুলস বলে দিচ্ছি।
1. Rule of Third: আপনার ফ্রেম কে উপর থেকে নিচে ৩ ভাগে ভাগ করুন। ডান থেকে বামে করুন তিনভাগ। তাহলে আপনি পাবেন ৯টা খুপড়ি আর ৪টা interaction point পাবেন। আপনার কাজ হবে সাবজেক্ট কে ঐ ৪টা পয়েন্ট এর যে কোন একটায় রাখা।
ফ্রেমের একেবারে ডানেও না, বায়েও না আবার মাঝেও না। নিচের ছবিটা দেখলে ক্লীয়ার হবেন।
Click This Link
2. 180 degree rule: ধরুন, আপনার পুরো সেট টা ৩৬০ ডিগ্রী। আরে দাদা, ধরবেন কি, এটা আসলেও ৩৬০ ডিগ্রী। এখন স্ক্রিনে যদি দুইজন থাকে, তাহলে আপনি একটা মাঝ বরাবর একটা কাল্পনিক রেখা টানবেন।
এই রেখাটাকে বলে কাল্পনিক রেখা বা ১৮০ ডিগ্রী রুল। এখন আপনি ঠিক করুন কোন পাশ থেকে আপনি শুট করবেন। আপনি সাধারন যে শট এ নেন না কেনো, ওই সিকোয়েন্সের সব শট যে কোন এক পাশ থেকে নিতে হবে। তার মানে একজনের রাইট শোল্ডার থেকে শট নিলে আরেকজনের লেফট শোল্ডার থেকে শট নিতে হবে। দুজনেরই লেফট শোল্ডার থেকে শট নেয়া যাবেনা।
স্টেডিক্যাম আসার পর এই রুলটা প্রায়ই ব্রেক করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের স্টেডিক্যাম নাই তাই আমরা আপাতত করবোনা। নিচের ছবিটা দেখুন। লাল অংশটুকুতে ক্যামেরা বসাবেন না।
Click This Link
3. 30 degre rule: এবার এই ১৮০ ডিগ্রীর ভেতর থেকেই আপনি অনেক শট নিচ্ছেন।
কখনো ক্লোজ, কখনো মিড, কখনো বা ওভার দ্যা শোল্ডার। তো, আপনাকে ক্যামেরা নাড়াতে হবে। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ক্যামেরা নিয়ে আপনি শট কম্পোজ করছেন। জাস্ট খেয়াল রাখবেন যে ক্যামেরা যেনো ৩০ ডিগ্রী বা তার চেয়ে বেশী মুভ করা হয়। কারন ৩০ ডিগ্রী এর কম যদি ক্যামেরা নাড়ানো হয় তাহলে দর্শক ধরে নিবে আপনি আগের শট আর পরের শট একই জায়গা থেকে নিতে গিয়ে ফ্রেমিং এ ভুল করেছেন।
Click This Link
4. Screen Direction: নায়িকাকে গুন্ডা বাহিনি ধরে নিয়ে যাচ্ছে। নায়ক তার পিছে পিছে দৌড়াচ্ছে। দুইটা আলাদা আলাদা সিন এক সিনে নায়িকা বাচাও বলে চিল্লাছে। আরেক সিনে নায়ক ২০০ মিটার স্প্রিন্ট দৌড়াচ্ছে। নায়িকাকে নিয়ে জীপ গাড়ি যাচ্ছে স্ক্রিনের ডান থেকে বামে।
আর নায়ক পরের সিনে ২০০ মিটার দৌর দিতেছে বাম থেকে ডানে। কি বুঝলেন? নায়ক কি নায়িকাকে বাঁচাইতে দৌড়াইতেসে, নাকি নায়িকা কে তুলে নিয়ে যাওয়ার খুশিতে সাইড নায়িকাকে খবর টা দিতে যাইতেসে?
আরেকটা সিনারিও কল্পনা করেন - আপনার অভিনেতা দৌড়াইতেছে - পিছনে কিছু গুন্ডা। প্রায় ৩০ সেকেন্ডের দৌড়। আপনি ভিন্ন ভিন্ন এঙ্গেল থেকে চমৎকার কিছু শট নিলেন। কিন্তু এডিট রুমে গিয়া জোড়া দেয়ার পর দেখলেন গুন্ডাবাহিনীসহ নায়ক ১ম শটে ডান থেকে বায়ে দৌড়াইতেছে, ২য় শটে বাম থেকে ডানে, ৩য় শটে উপর থেকে নিচে, ৪র্থ শটে নিচ থেকে উপরে, ৫ম শটে দান থেকে বায়ে, ৬ষ্ট শটে কোনাকুনি - ওয়েট ওয়েট ওয়েত।
এই হালার পোরা আসলে যাইতেসে কই? কোন আইডিয়া নাই।
আরেকটা বলি - দুই বন্ধু ফোনে কথা বলতেছে। ১ম বন্ধু স্ক্রিনের ডান পাশে আবার ২য় বন্ধু ও স্ক্রিনের ডান পাশে। আপনি যখন কাট করে করে এক শট থেকে আরেক শটে যাবেন, তখন দেখবেন দুইজনেই স্ক্রিনের ডানে দাড়িয়ে/বসে স্ক্রিন এর বাম দিকে মুখ ফিরায়া কথা বলতেছে। ব্যাপারটা কেমন দেখায় কল্পনা করুন।
এইসব জিনিস মাথায় রেখে শট কম্পোজ করাটাই হলো স্ক্রিন ডিরেকশন।
এসব রুলস আবার আর্ট অফ শট কম্পোজিশনের এখতিয়ারে পরে। আমি আসলে ডিটেইলস এ যাচ্ছিনা তাই সংক্ষেপে বলছি। আপনি একটা শট কে কিভাবে সাজাবেন সেটা আপনার উপর নির্ভর করবে। ধরুন নাক ডেকে ঘুমিয়ে থাকা রুমমেটের ঘুমিয়ে থাকার একটা শট নিবেন।
দৈর্য হবে ৫ সেকেন্ড। এবার আসুন কিভাবে এই শট নেয়া যায়।
আমরা এটা হাই এঙ্গেল থেকে মিড শটে নিতে পারি। দেখা যাবে রুমমেট হাত ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। বুক পর্যন্ত কম্বল টানা।
মুখ কিঞ্চিত হা করা। এক হাত বাকিয়ে মাথার উপর, আরেক হাত পেটের উপর। দেয়ালের কিছু অংশ দেখা যাবে।
এটাকে হাই এঙ্গেল থেকে ক্লোজ নিতে পারি। শুধু মুখ দেখবো আমরা উপর থেকে।
হা করা মুখ। এলোমেলো চুল।
লো এঙ্গেল থেকে মিডিয়াম শট। খাটের কিনারা থেকে।
কিভাবে কম্পোজ করবেন এটা সম্পুর্ন আপনার ব্যাপার।
শটের প্রকারভেদ, এঙ্গেলের বিভাজন আর রুলস আপনাকে শট সিলেক্ট করতে সহায়তা করবে মাত্র।
ফিলিমের ভালো মন্দ ক্যামেরার উপর নির্ভর করেনা, ক্যামেরার পিছনের মানুষটার উপর নির্ভর করে
অনেক কথা বলে ফেললাম। আরো অনেক কথা বাকী আছে। কিন্তু বেশী বকবক করে মাথা ধরিয়ে না দিয়ে আসুন কাজ শুরু করে দেই। আমরা যা নিয়ে কাজ করবো তার একটা খসড়া দিতেছি।
স্ক্রীপ্টঃ Int. মানে ইনডোর। স্ক্রিপ্ট কিভাবে লিখতে হয় সেটা জানার জন্য সিনেমা পিপলস এ স্ক্রিপ্ট রাইটিং সাব-ফোরামে ঘুরে আসতে পারেন। কিন্তু মনে রাখবেন, যদি নিজের লেখা নিজেই ডিরেকশন দেন, তাহলে সব রুলস মানাটা জরুরী নয়।
Int. কবিরের রুম - রাত
কবির/পিয়াস
-কালো স্ক্রিন-
ব্যাকগ্রাউন্ডে নাক ডাকার আর খাটে এপাশ ওপাশ করার শব্দ।
-ফেড ইন-
কবির আর পিয়াস কে একই খাটে পাশাপাশি ঘুমিয়ে থাকতে দেখা যাবে।
পিয়াসের নাক ডাকার শব্দ শুনবো। কবির কে দেখা যাবে এপাশ ওপাশ করছে।
কিছুক্ষন পর কবিরকে দেখবো ঝট করে উঠে বসে আছে। কবিরের মেজাজ খারাপ বোঝা যাবে। পিয়াসকে স্থির থেকে ঘুমোতে দেখা যাবে।
-ফেড আউট-
এই হলো আমাদের ছোটখাটো একটা স্ক্রিপ্ট। এবার আসেন কিছু ব্যাপার ঠিক করে ফেলি।
ফান্ডিং - কত খরচ হবে এটায়? বিনা পয়সা। বিড়ি সিগারেট খাওয়ার খরচ নিজের।
কাস্ট
- আপনার তো মেলা বন্ধু।
দুইজন রে বাসায় খাওয়ার দাওয়াত দিয়া দেন। অথবা খালাতো ভাই/মামাত ভাই হলেও হবে। ছেলে না পেলে যদি মেয়ে পান তাহলে স্ক্রিপ্ট এর ক্যারেক্টার ঘুরায়া দেন। রুমমেট বা বন্ধু না হয়ে তারা হবে স্বামী-স্ত্রী।
লোকেশন
- আপনার রুম এর থেকে জুতসই আর কিছু নেই।
অথবা আপনার বন্ধুর রুমটাই ধরুন না।
প্রপস (props)- এই জিনিসটার ব্যাপারে বলতে ভুলে গেসিলাম। প্রপস হলো ফিলিমে ব্যবহৃত যে কোন অবজেক্ট। ধরুন, আমাদের গল্পে কবির শোয়া থেকে উঠে বেড সাইড টেবিল ল্যাম্প জ্বাললো, এই ল্যাম্পট টা হলো প্রপস। যদি ঘড়ি দেখে, ঘড়িটা একটা প্রপস।
মোদ্দা কথা, অভিনেতারা যা ব্যবহার করবেন তাই প্রপস।
তো, কবির আর পিয়াস কি কি ব্যবহার করতে পারে? বা এই সিকোয়েন্সটায় কি কি ব্যাবহৃত হবে? একটা টেবিল ল্যাম্প। টেবিল ল্যম্প এর পাশে একটা হাত ঘড়ি। যদি এমন হয় যে আপনি কবির কে নাইট ড্রেস পরাবেন, তাহলে এই নাইট ড্রেস তা একটা প্রপ্স।
শিডিওলিং
- ছুটির দিনেই কাজ করা টা ভালো মনে হচ্ছে।
১৬ তারিখ। কিন্তু শুট করবো দিনে। দুপুর ৩ টায় সবাই কবিরের বাসায়।
সরঞ্জামাদি -
তো, কি কি আছে আপনার শুট করার জন্য? আপনার মোবাইল, যেটায় ভিডিও করা যায়। সাউন্ড তো নিতে হয়।
নাক ডাকার শব্দ টা কি আমরা পরে মাইক্রোফোন দিয়ে নিতে পারিনা? সাথে খাটে এপাশ ওপাশ করার শব্দ, আর নিশ্বাস ফেলার শব্দ? আমরা নিতে পারি। গুড। ওহ ভালো কথা, একটা ককশীট যোগার করতে হবে। না পারলে ২ ফুট বাই ৩ ফুট বা তার চেয়ে বড় কোন বোর্ডের উপর সাদা কাগজ আটকে দিলেও হবে। কাগজ টা একেবারে ফ্লাট করে লাগাবেন না।
এমন ভাবে লাগাবেন যেনো জায়গায় জায়গায় কুচকে থাকে। একেবারে ফ্লাট কাগজ হলে আলো বাউন্স হবেনা।
শুটিং স্ক্রিপ্ট
- স্ক্রিপ্ট টা দেখুন আবার। কিভাবে কোন শট নেয়া যাবে সেটা কি বুঝা যাচ্ছে? যাচ্ছে না। তো আমাদের কি করতে হবে? আমাদের শট সিলেক্ট করে ফেলতে হবে।
শুটিং এর দিন এটা এভাবে নিবো ওটা ওভাবে নিবো - এই চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। শুটিং এর দিন ঠান্ডা মাথায় শুধু পেপারওয়ার্ক ফলো করবেন। তো, আসুন আমরা ক্যামেরা এঙ্গেল আর শট নির্বাচন করে ফেলি।
Int. কবিরের রুম - রাত
সময়ঃ দুপুর ৩টা চরিত্রঃ কবির/পিয়াস প্রপসঃ টেবিল ল্যাম্প/হাত ঘড়ি ক্যামেরাঃ নোকিয়া মোবাইল
(মিডিয়াম লং শট) (১০ সেকেন্ড)
কবির আর পিয়াস খাটে শুয়ে আছে। কবির ডান পাশ থেকে বাম পাশে ঘুরে ডান হাত দিয়ে কান চাপা দিবে।
(মিডিয়াম ক্লোজ শট - হাই এঙ্গেল) (৫ সেকেন্ড)
কবির ডান পাশ থেকে বাম পাশে ঘুরে ডান হাত দিয়ে কান চাপা দিবে। কবির মাথার নীচ থেকে বালিশ নিয়ে মাথার উপর চাপা দিবে।
(ক্লোজ শট টু ওভার দ্যা শোল্ডার) (২০ সেকেন্ড)
কবির একটু নড়ে উঠবে। তারপর এক ঝটকায় বালিশ সরিয়ে উঠে বসবে। [ট্র্যাকিং - কবির কে ফলো করুন] কবির বসে তার পাশে শুয়ে থাকা পিয়াসের দিকে তাকাবে।
কবিরের মাথার পাশ দিয়ে পিয়াস কে দেখা যাবে।
(ওভার দ্যা শোল্ডার - লো এঙ্গেল) (৫ সেকেন্ড)
পিয়াসের মুখের পাশ দিয়ে দেখা যাবে কবির পিয়াসের দিকে তাকিয়ে আছে। কবির মুখ ঘুরিয়ে সোজা তাকাবে।
(মিডিয়াম শট - আই লেভেল) (১০ সেকেন্ড)
কবির মুখ ঘুরিয়ে সোজা তাকাবে। হাত দিয়ে মুখ মুছবে ও।
খাট থেকে নেমে যাবে কবির।
(ওয়াইড শট - পিয়াস/খাট/টেবিল ল্যাম্প সহ রুমের বেশ কিছু অংশ দেখা যাবে) (৫ সেকেন্ড)
খাট থেকে নেমে কবির ফ্রেম আউট হয়ে যাবে।
-কাট-
স্টোরীবোর্ডঃ
(স্টোরীবোর্ড আসলে আবশ্যিক কিছুনা। যদি না পারেন তাহলে এইটা স্কিপ করেন)
এবার দেখি আমরা কি স্টোরী বোর্ড আকতে পারি কিনা। খাতা কলমে পারিনা অনেকেই।
কিন্তু অনেক সফটওয়ার আছে যেগুলা এই কাজ করে। কিন্তু সেইসব সফটওয়ার কিনতে হয় বা ব্যাবহারে ঝামেলা!? তাহলে নেমে পড়ুন বাই ডিফল্ট থাকা এমএস পেইন্ট দিয়ে। কোনো মতে একটা আইডিয়া দাড় করান আকা-আকি করে। কোথায় কি থাকতে পারে বা অভিনেতারা কোথা থেকে কোথায় মুভ করবে এখনি কল্পনা করুন। ধরে নিলাম লোকেশন দেখেছেন আপনি।
বা, আপনার পরিচিত যায়গা যেহেতু আপনার ধারনা আছে। তো, রুমটা কে কল্পনা করুন। মনে মনে সাজিয়ে ফেলুন। তারপর একে ফেলুন।
তো, আমাদের সব রেডী।
আমরা এখন শুধু শুট করবো।
I steal from every movie ever made. – Quentin Tarantino
-> সিনেমাটোগ্রাফী
আজকে শুটিং এর দিন তাই বেশী কিছু বলবোনা। শুধু মাত্র সিনেমাটোগ্রাফী, আর্ট ডিজাইন সহ কিছু টিপস জাতীয় পয়েন্ট উল্লেখ করবো।
১... আর্ট ডিজাইন আসলে আগেই করা উচিত ছিলো। কিন্তু আমাদের প্রোজেক্ট অত বড় না, তাই আমরা শুটিং এর দিন ই করবো।
আর কিছু কিছু কাজ তো আমরা আগেই খাতা কলমে করে ফেলেছি। ঠিক করে ফেলুন, রুমের কোথায় কোথায় ক্যামেরা থাকবে। ১৮০ ডিগ্রী রুলস এর কথা মনে রাখবেন। ঠিক করে ফেলুন, কবির মাথা উঠিয়ে কোন পর্যন্ত এসে থামবে, বা খাট থেকে নেমে কোন দিক দিয়ে ফ্রেম আউট হবে। জানালার পর্দা আটকিয়ে দিন।
সব চেয়ে বেটার জানালার পুর উলটো দিকে খাট সরিয়ে নিন। কেনো নিবেন সেটা বলছি পরে। টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে দিন। কারন, মানুষ এক নজরে বুঝতে পারবে যে এটা রাত। দিনের বেলায় শুট করে কিভাবে বুঝাবেন যে এটা রাত - সেটা পরে এডিটিং এ বলবো।
২... অভিনেতাদের ডিরেকশন দিন। মানে রিহার্স্যাল দিন। এই কাজটাও আসলে শুটিং এর আগেই করা উচিত। কিন্তু একেতো ছোট কাজ, তার উপ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।