আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সহজবোধ্য লিখনীর জনক, অনবদ্য প্রতিভা ড: হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুতে আমি ও আমরা যা হারালাম

আমি অত্যন্ত শোকাহত, মর্মাহত তার চলে যাওয়াতে, কেমন বিচিত্র এক অনুভূতি। আমি তার আত্মীয় নই, বন্ধু ও নই, পরিচিত নই, তবুও তার জন্য আমার স্বজন হারানোর ব্যাথা হচ্ছে, কেন মনে হচ্ছে উনি চলে গেছেন কিন্তু আমাকে অনেক কিছু না দিয়ে চলে গেলেন, যেন কিছু দিয়ে যাবার কথা ছিল!! তাঁর চলে যাওয়া যেন আমাকে শুধুই একাকী আর বন্ধুহীন করে দিল। আমার য়েন কিছুই আর করার নেই! কেন? হ্যা, ঠিক তাই আমরা বাংলা ভাষাভাষীরা এক বন্ধুকেই হারিয়েছি। এই বন্ধুর সাথে আমাদের বন্ধুত্ব তাঁর অনবদ্য লিখনীর মাধ্যমে। বই মানুষকে বন্ধুর মত আশ্রয় দেয়, হাসায়, কাঁদায় সেটা এই অসম্ভব রকমের মেধাবী মানুষটাই শিখিয়েছিলেন।

আমার সারা কৈশর কাল কেটেছে তার বই পরে। ভারতীয় লেখকদের বইগুলি পড়ার বেশ নেশা ছিল। কিন্তু ওই বইয়ের পাতায় আমি প্রাণ খুঁজে পেলেও, দাগ কাটতে পারেনি আমার মনে। পাশা পাশি হুমায়ুন আহমেদের বইয়ের চরিত্র গুলো আমি কল্পনায় দেখতে পেতাম। ওরা আমার মনে ছাপ ফেলে যেত, আর তাই বারে বারে পড়তে ইচ্ছে হত।

ওনার বই গুলো আমাদের দেশের সব স্তরের মানুষগুলো্ বুঝতে পারে। আর তার থেকে বড় কথা হল তার লেখায় এমন অশালীন কিছু নেই যে, পরিবারের সবাই সবাইকে পড়তে দিতে পারবে না। ছোটদের জন্য লিখা বই গুলো তো অনেক মজার। আমার বিয়ের পরপরই আমি আমার শশুড়ের জন্মদিনে কতগুলো বই দিয়েছিলাম ওনার লিখা। আমার শশুড় অ্নেক খুশি হলেন।

তার লিখা কাহিনী ছাড়া ঈদের নাটক, ভাবাই যায়না। ঈদের দিনের ঘুরাঘুরি শেষ করি প্রতি বছর সন্ধ্যার আগেই, যদি তার নাটক দেখতে না পারি। এমন বন্ধু যে আমাদের বাংলাদেশের মানুষগুলোর বিনোদনের সকল স্তর গুলোতে জড়িয়েছিলেন। আমার দেখা সেরা সিনেমা হল “আগুনের পরশমণি ”। আমি এতবার দেখেছি, তবুও নতুন লাগে প্রতিবার।

এই তো কালজয়ী সৃষ্টি! আর উনি ?কাল জয়ী লেখক, কাল জয়ী বন্ধু! মনটা তাই অনেক ভারী আজ। হারানোর ব্যথায় চৌচির হয়ে পরছে। মনে পরছে “নন্দিত নরকে” উপন্যাসের কথা ,কতবার যে পরেছি! আর চোখের পানি ধরে রাখতে চেষ্টা করেও পারিনি ঠিক তত বারই। আমার মতে এটাও কালজয়ী একটি উপন্যাস। শত শত বই আমি পড়েছি তার।

অনেক নাটক ও সিনামাও দেখা হয়েছে আমার। আমি যেমন অনুভব করছি যে অতি মূল্যবান কিছু হরিয়েছি , আমি জানি আমার মত দেশের প্রতিটি মানুষও এমনই শোকাহত আজ। এমন কি যারা তাকে অতি ঈর্ষায় কখনো তার প্রশংসাটুকুও করতে পারেনি তারাও ,আমি জানি। হতে পারে উনি আল্লাহ বিশ্বাস করতেন অথবা করতেন না। আমি আল্লাহকে বিশ্বাস করি, আমি এই কালজয়ী এবং বন্ধু লেখকের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করি।

আল্লাহ যেন তাকে রহমতের ছায়ায় রাখেন। তার আত্মাকে শান্তিতে রাখেন। আমীন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।