বক ধার্মিক পৃথিবীর প্রায় সবগুলো ধর্মে মানুষকে ধর্মান্ধে পরিণত করার মৌলিক এবং কার্যকরি উপাদান হচ্ছে লোভ এবং ভয়। এক্ষেত্রে ভয় দেখানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করা হয় নরক/দোযখের আগুন এবং লোভ দেখানোর উপকরণ হিসেবে ব্যাবহার করা হয় সুখকে। সুখ যা মানবকুলের সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত বস্তুটির নাম। একটা মানুষ বোধবুদ্ধি হবার পড় থেকে আমৃত্যু সুখ নামের ওই উড়াল পঙ্খির পিছনে ছুটে বেড়ায়। মানুষের সকল কর্মযজ্ঞের কেন্দ্রে আছে ওই সুখ নামের উড়াল পঙ্খি।
পৃথিবীতে হেন কোন কবি সাহিত্যিক নেই যিনি সুখকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেন নি অথবা সুখ নিয়ে কোন গল্প কবিতা লেখেন নি। যাইহোক কবির কবিতায় অথবা গল্পকারের গল্পে সুখ কি সেই আলোচনা নাহয় আরেকদিন করব। মানুষের লোভী মনে সুখের লোভকে কাজে লাগিয়ে কি করে ধর্মগুলো ধর্মান্ধদের স্বর্গ অথবা বেহেস্তের নেশায় কি করে বুদ করে রাখে আজকে তা নিয়ে একটু আলোচনা করি।
(স্বর্গ এবং স্বর্গিয় সুখ নিয়ে পোস্ট, কিন্তু স্বর্গের কোন ছবি থাকেবে না তা কি করে হয়! তাই একটা ছবি দিয়ে দিলাম)
ছবি গুগল মামার কাছ থেকে নেওয়া।
আসুন দেখি সুখ বলতে আসলে আমরা কি বুঝি।
শুরু করার আগে একটা কথা একটু বলে নেই, ধর্মান্ধদের মস্তিষ্কের ধারন ক্ষমতা অনুযায়ী সুখের সংজ্ঞা হচ্ছে “ভালো খাবারের নিশ্চয়তা, সুন্দর অথবা কামোদ্রেক নারীর সাথে যৌনতায় লিপ্ত হওয়া অথবা অন্যান্য শারীরিক আনন্দই সুখ। ” স্বাভাবিকভাবেই এখানে সুন্দর/কামোদ্রেক নরের কথা আসছে না কারন কোন ধর্মেই নারীর সুখকে গুরুত্ব দেয় না।
এখন আমরা সুখের সার্বজনীন একটা সংজ্ঞা দেবার চেষ্টা করি। যদি সুখকে আমরা এইভাবে সংজ্ঞায়িত করি যে, "সুখের পিছনে ছোটাই সুখ" অথবা এইভাবে, "সুখের আশা করাই সুখ" কিংবা আমরা যদি বস্তুকেন্দ্রিক সুখকেই প্রকৃত সুখ হিসেবে গন্য করি তাহলে স্বর্গ নরক ধারণাটাকে অনেকটা বানরকে কলা দেখিয়ে নাচানোর মত হাস্যকর ব্যাপারে পরিণত হয়।
মানুষের সুখ ব্যাপারটা প্রধানত নির্ভর করে আশা করা এবং আশাপূরণের উপর।
স্বর্গে আমরা কোন কিছুর আশা করতে পারি না। কারন আশা করার আগেই যে বস্তুটির আশা করছি সেই বস্তুটি সামনে হাজির হবে। যেহেতু স্বর্গে মানুষের সুখের সাথে সম্পর্কিত সবকিছুই সুপ্রাপ্য হবে সেহেতু সেখানে কষ্ট করে বহু আকাঙ্ক্ষিত বস্তু অর্জন করার কোন আনন্দই থাকবে না। সুতরাং অনন্তকাল এই আশাবিহীন একঘেয়েমি সময় কাটানো নরক যন্ত্রণা ভোগের চেয়েও ভয়াবহ।
ধার্মিকদের জন্য নিন্মোক্ত উদাহরণটি (খাবার ও যৌনতা সম্পর্কিত) দ্রস্টব্যঃ
প্রতিদিন পোলাও-কোর্মা খেতে যেমন কারো ভালো লাগে না তেমনি প্রতিদিনকার হুরী/অপ্সরী গমনও কারো ভালো লাগার কথা না।
এখন যারা এই যুক্তি দেখাবেন যে স্বর্গের প্রতিটি জিনিস প্রতিবার সম্পুর্ন নতুনভাবে উপভোগ করার সুযোগ থাকবে অর্থাৎ পুর্বের ওই একই বস্তু উপভোগ করার স্মৃতির বিলুপ্তি ঘটবে, তাদেরকে বলব হিন্দি সিনেমা "গজনী" দেখার ফলে আপনার মধ্যে হয়ত শর্ট টার্ম মেমোরি লসের রুগী হবার মত ফ্যান্টাসি কাজ করতে পারে কিন্তু আমার ওইরকম মানসিক রোগী হবার বিন্দুমাত্র সাধ নেই।
ছোটবেলায় আমরা সবাই একটা ভাবসম্প্রসারন পড়েছিলাম, মনে আছে নিশ্চই!
“আলো বলে, অন্ধকার, তুই বড় কালো
অন্ধকার বলে, ভাই তাই তুমি আলো। ”
এখন মনে মনে এই লাইনগুলোতে যে ভাব প্রকাশিত হয়েছে সেটিকে আর একবার সম্প্রসারিত করুন।
স্বর্গে কেবলি ভালো আর ভালোর ছড়াছড়ি, খারাপ বলতে সেখানে কিছু নেই। চারিদিকে কেবল সুখ আর সুখ, দুখের কোন অস্তিত্ব নেই স্বর্গে।
একবার ভেবে দেখুন তো যেখানে দুঃখ নেই সেখানে আমি সুখ উপলব্ধি করব কি করে! যেখানে খারাপ নেই সেখানে আমি ভালোকে সংজ্ঞায়িত করব কি করে! যেখানে আঁধার নেই সেখানে আলোর অস্তিত্ব টের পাব কি করে! যদি দুঃখ না থাকে, যদি আশা না থাকে তাহলে সুখ খোঁজা আর কুষ্ঠ রোগীকে চিমটি কাটা একই কথা। এক কথায় স্বর্গে গেলে সুখকেই আমি সংজ্ঞায়িত করতে পারব না কারন আমি যে সুখি হয়েছি সেই উপলব্ধিটাই থাকবে না। কেবলমাত্র দুঃখের সাথে সুখ মেশানো থাকলেই আমরা সুখকে আলাদা করতে পারি অন্যথায় নিরবিচ্ছিন্ন সুখ কখনোই সুখ হতে পারে না। এইরকম কাচকলা দেখানো সুখের আশায় কেবল নির্বোধরাই স্বর্গে যাবার ইচ্ছে পোষণ করতে পারে, কোন নুন্যতম বুদ্ধিসম্পন্য মানুষ না।
তার চেয়ে বরং নরকই ভালো, জ্বললাম না হয় নরকের আগুনে।
টগবগে তেলের করাইয়ের মধ্যে চিকেন ফ্রাই হতে হতে মনের কোনে মিথ্যে হলেও ক্ষীণ আশা থাকবে, হয়ত একদিন এই নরক যন্ত্রণা শেষ হবে, একদিন হয়ত শান্তি পাব, সুখ পাব। এই সুখের আশা করাইতো সুখ তাই না? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।