আমি কখনো যায়নি জলে,কখনো ভাসিনি নীলে,কখনো রাখিনি চোখ ডানা মেলা গাঙচিলে স্মরণকালের শুরু থেকেই মানুষ সুগন্ধি ব্যাবহার করে আসছে নিজেদের শরীরের গন্ধ লুকাতে,মানুষের ভিন্ন ভিন্ন রসায়নের জন্য মানুষভেদে একই সুগন্ধি ভিন্ন ভিন্ন সৌরভ ছড়ায়। পারফিউম শব্দটি এসেছে লাটিন শব্দ পার(মধ্য দিয়ে) আর ফুমফুম(ধোয়া) থেকে। প্রাচীন যুগে সুগন্ধি তৈরী হত গাছ গাছড়ার ছাল, বাকল পেষন ও সিদ্ধ করে । ।
পরবর্তীতে এটা বিভিন্ন নির্যাসের সাথে তেল ও এলকোহলের বিভিন্ন মাত্রায় মিশ্রনের ফলে তৈরী হয়ে থাকে।
সুগন্ধির ইতিহাসও বহু পুরানো। প্রাচীন কালে যখন কাঠে কাঠে ঠুকে আগুন জালানো হতো তখন থেকেই সুগন্ধি কাঠের আবিস্কার। মিশরীয় ইতিহাসে পাওয়া যায়-তারাই প্রথম সুগন্ধি নিজেদের ব্যাবহারের জন্য শুরু করে প্রথম দিকে শুধু মাত্র ধর্মযাজকরাই সুগন্ধি ব্যাব হার করত । এমনকি সুগন্ধি তাদের উপসানালয়তেই তৈরী হত । ধীরে ধীরে তা রাজা ও রাজপরিবারের দখলে চলে আসে।
মিশরীয়রা মমি তৈরীর সময় বিভিন্ন জাতীয় সুগন্ধি মশলা ব্যাবহার করতো কিন্তু সুগন্ধি জল বা পারফিউম খুব পবিত্র আত্মার সাথেই দেয়া হত। ১৯৯২ সালে যখন তুতেনকখামেনের মমি আবিষ্কার হয় তখন সেখানে সুগন্ধি রাখার পাত্রও পাওয়া যায়। গ্রীস পরবর্তীতে মিশরীয় সুগন্ধি গুলোকে আরও উন্নত করে । তার পরে রোমানরাও সুগন্ধি নিয়ে মেতে উঠে। তারা শুধু ধর্মীয় ব্যাপারই না বরং নিজেদের ঘর বাড়ীর দেয়াল ও মেঝেতেও সুগন্ধি ব্যাব হার করত ।
রাজ প্রাসাদের কোন নিমন্ত্রনে চলত সুগন্ধি মিশ্রিত পানির ফোয়ারা।
সুগন্ধি তৈরীর কাচামাল হলো এসেনসিয়াল ওয়েল যা বিভিন্ন ফুল, পাতা, মূল, বাকল, ছাল, কাঠ,ফল থেকে পাওয়া যায় আর বিভিন্ন প্রানী যেমন হরিন বিড়াল, হায়েনা, স্পার্ম তিমির চর্বি থেকেও পাওয়া যায়। এই এসেনসিয়াল ওয়েলের সাথে পানি বা এলকোহল মিশিয়ে মাত্রা কম বেশী করে বিভিন্ন রকমের সুগন্ধি তৈরী হয়।
সুগন্ধির মোট তিনটি নোট থাকে (মানে ব্যাবহারের সময়ের সাথে সাথে গন্ধ পরিবর্তন হবার তিনটি পর্যায় থাকে )।
টপ নোট বা নোটস ডি টেট- ইটা ব্যাবহারের সাথে সাথে যা সুগন্ধি ছড়ায় তাকে বলা হয়।
আমরা সাধারনত সুগন্ধি কেনার সময় টপ নোট টা দেখেই কিনি। এটা সাধারনত ঝাঝালো লেবুর গন্ধযুক্ত হয়।
সেন্ট্রাল বা হার্ট নোট- এটা সাধারনত টপ নোট সম্পূর্ন উবে গেলে পাওয়া যায়। এবং অনেকক্ষন ধরে আমাদের শরীরে থাকে ও টপ নোটের ঝাঝালো গন্ধটিকে স্হিমিত করে। সাধারনত ফুলের বা তৈরীর মূল উপাদানের গন্ধ সমৃদ্ধ হয়।
বেস নোট বা নোট ডি ফন্ড- এটা অনেক দিন যাবৎ থাকতে পারে। দেখা যায় পারফিউম ব্যাবহার করে কোন সার্ট বা শাড়ী উঠিয়ে রাখা হলে অনেক দিন পর খুললে একটা সুগন্ধ পাওয়া যায়। এটাই হলো বেস নোট। এটা সাধারনত কাঠের গন্ধ দিয়ে তৈরী হয়ে থাকে।
সুগন্ধির মূল রসায়ন কি? বা কেন সুগন্ধি আমাদের এতটা মুগ্ধ করে জানেন?
সুগন্ধির রসায়ন শুরু হয় আমাদের নাক থেকে-----তাই কি ? আসলে এর মূল প্রোথিত আরও গভীরে ।
সুগন্ধিতে উদ্বায়ী পদার্থ ব্যাব হার করা হয় যা ধর্মমতে সাধারন তাপমাত্রায় দ্রূত উবে যায় আর তাই সুগন্ধি ব্যাবহারের সাথে সাথে তার গন্ধ ছড়িয়ে পরে এই উদ্বায়ী অনু আমাদের নাকের ভিতর দিয়ে যেয়ে আমাদের গন্ধ সংবেদনশীল কোষে পৌছে যায় ও এদের লক্ষ লক্ষ অনু আমাদের কোষের রিসেপটরকে উজ্জীবিত করে মেমরি সেল তৈরী করে। তাই এটা আমাদের স্মৃতি তে জড়িয়ে যায়।
আমাদের নাকের রিসেপটর সংখ্যা ১০০ যা আমাদের জিনের ১ %। অথচ চোখের রিসেপটর মাত্র ৩ টি। মজার ব্যাপার হলো পারফিউম এ কারনেই আমাদের উজ্জীবিত করে মনে করিয়ে দেয় আমাদের মিলন বা বিচ্ছেদের স্মৃতি, আর এই রসায়নকে কাজে লাগিয়ে সেক্স আ্যাপিল পারফিউম গুলো কাজ করে।
অবশেষে দেখুন এ বছরের সেরা পারফিউম- আর- ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।