আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘ওরা অ-হিন্দু’, ‘ওরা অ-মুসলিম’, ...

‘ওরা অ-হিন্দু’, ‘ওরা অ-মুসলিম’, ... ================================= ‘হিন্দু’ এবং ‘মুসলমান’, এ দু’টো শব্দের কোনোটাই কোনো একটি সম্প্রদায়ের বা কোনো একটি এলাকার বিশেষ কোনো ধরণের ধার্মিক জনগোষ্ঠীর ধর্মের নাম নয়। ‘হিন্দু’ শব্দটি ফারসি থেকে এবং ‘মুসলমান’ শব্দটি আরবি থেকে, কিছুটা রূপান্তরিত হয়ে, বাংলায় ঢুকেছে। সমর্পিত যে-ব্যক্তি (নর বা নারী) শান্তির চর্চাকে তার নিজের ধর্ম হিসেবে আন্তরিক বিশ্বাসে কল্যাণকর ভেবে নিয়ে ধারণ করে, সেই ব্যক্তি সবখানে সকল যুগেই শান্তিধর্মী {আরবি অনুবাদে ‘মুসলিম’ (মুসলিমুন বা মুসলিমাতুন)} হিসেবে স্বীকৃত। হিন্দুস্তানের সকল মানবসন্তান হিন্দু (পারস্য অনুবাদে) পরিচয়েই পরিচিত। অব্রাহ্মণের সন্তান হলেও যে, যেকোনো মানবসন্তান তার নিজের চেষ্টায় ব্রাহ্মণ হতে পারে, কিম্বা ব্রাহ্মণের সন্তানও যে অব্রাহ্মণ রূপেই জন্মায় এবং যে-কেউ ব্রহ্মজ্ঞান অর্জন করতে চাইলে তাকে কিছু দাবি মিটিয়ে পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে হয়, এ সত্যটি নরাধমেরা নিজেদের আধিপত্য হারানোর ভয়ে অজ্ঞদেরকে জানার সুযোগ দেয় না।

পরিণতিতে, কোনো সঙ্-সার পইতা ব্রাহ্মণের কুলাঙ্গার প্রতারক অবৈধখোর সন্তানটিও ব্রাহ্মণ হিসেবে গণ্যমান্য বিবেচিত হয়ে আজও আমাদের কাছে সামাজিক মর্যাদা পেয়ে যায়। কুলীনের প্রতি কুর্নিশে কুর্নিশে কুঁজো ভঙ্গিমায় থাকতে থাকতে কোমড়ে পিঠে কাঁধে কবজিতে অনেকেই আমার মতোই কূলহীন-কিনারাহীন ব্যথায় কাতর কেবল অজ্ঞতার কারণে। আমরা জ্ঞানীদের কাছ থেকেই ‘হিন্দু’ ও ‘মুসলমান’ শব্দ দুটোর মতোই, ‘ব্রহ্ম’, ‘ব্রাহ্ম’, ‘ব্রহ্মা’,‘ব্রাহ্মণ’, ‘ব্রাহ্মণত্ব’ ইত্যাদি শব্দগুলোর সরল বাংলা অনুবাদ জেনে নিতে পারি এবং জেনে নিতে পারলে পরে, আমরা যথাস্থানে, যথাপাত্রে, যথাকালে শব্দার্থগুলোকে যথার্থে বাংলায় ব্যবহার করতে পারি। অশান্তিধর্মী বা বিশৃঙ্খলাকামীরা তাদের ভাষাতে বিদেশি শব্দগুলোর সরল ভাষান্তর পছন্দ করে না। বিবেকবান যোগ্য শিক্ষিতরা যেন নিজেদের ভাষায় ধর্মগ্রন্থ পড়েও সহজে বুঝতে না-পারে, এবং অপরিচিত শব্দ কিম্বা বাক্যের অর্থ বুঝতে চাইলে সমধিক অজ্ঞদেরকেই শ্রদ্ধার আসনে বসিয়ে তাদের কোন্দলময় অপব্যাখ্যা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়, সেই লক্ষ্যেও প্রকাশ্যে শয়তানি চলে কোন্দলকামীদের মধ্যে।

চলমান ভাষায় সাধারণ পাঠকদের পরিচিত পারিভাষিক শব্দ থাকার পরও সেগুলোকে না-নিয়ে, যখন কোনো জ্ঞানপাপী কোনো ধর্মগ্রন্থের সহজ সরল অনুবাদে, অপরিচিত শব্দগুলো খুঁজে খুঁজে বেছে নিয়ে কিম্বা বিদেশি শব্দগুলোকে রেখে দিয়েই গ্রন্থের অনুবাদ করে, তখনি বোঝা যায়, ঐ অনুবাদক কোনোভাবেই শান্তিধর্মী নয়, বরং শয়তানিতে লিপ্ত। ধর্মগ্রন্থের দোহাই দিয়ে যারা বিশৃঙ্খলার চর্চাকেই উৎসাহিত করে আর ঐ বিশৃঙ্খলাকারীদেরকেই ধর্মিক হিসেবে দেখিয়ে যারা বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক ধর্মগ্রন্থগুলোর প্রতি মনুষ্য সমাজে ভয় এবং ঘৃণা জাগানোর চেষ্টায় লিপ্ত থাকে, উভয় দল-ই শয়তানিতে সমান দক্ষ; ওরাই শ্রেষ্ঠতম সামাজিক আত্মঘাতী কুলাঙ্গার, স্বেচ্ছাচারিতা এবং আধিপত্যলোভী-পারস্পরিক-ধ্বংস-ই যাদের কাম্য। শয়তানের মতোই ওরা ধ্বংসপ্রবণ। কারো জন্যেই ওরা নিরাপদ নয়, বরং ওরা নিজেরাই নিজেদের জন্যে মহা-আপদ। যেকোনো পরিচয়ে পরিচিত হতে গেলে সুনির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করতেই হয়, যেগুলো কুলীন-কূলহীন-নির্বিশেষে সকলের জন্যেই সমান।

অশান্তিকামীরা কোনো শর্তই মানতে চায় না, এবং তারা শয়তানি চালায়, শব্দের বিকৃত অর্থই তাদের পছন্দ। পারিভাষিক শব্দগুলোর মনগড়া ব্যাখ্যাগুলো কখনোই যে সরল শব্দার্থের মতো নয় এবং সরল বোধগম্য বাক্যের জটিল ব্যাখ্যাকারীরা যে প্রকাশ্যে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত শয়তানিতে লিপ্ত, তা’ অনেকাংশেই নিশ্চিত। সার্বজনীন কোনো কিছুর মতোই সার্বজনীন কোনো শব্দকে দলীয় দখলে নেওয়ার পেছনে ভালো কোনো লক্ষ্য থাকতে পারে না, --নিঃসন্দেহে সেখানে শয়তানি উদ্দেশ্যই ভীষণভাবে বেগবান। ‘মুসলমান’ এবং ‘হিন্দু’ শব্দ দুটোকে সাম্প্রদায়িক দখলে নিয়ে ‘ওরা অ-হিন্দু’, ‘ওরা অ-মুসলিম’, ‘আমরা হিন্দু’, ‘আমরা মুসলিম’, --ইত্যাদি ধরণের উচ্চারণ ঘরে বাইরে ধর্মব্যবসায়ীরা সুযোগমতো তাদের ভাষাতে এমনভাবেই ব্যবহার করে এসেছে যে, কোন্দলকামীদের ভক্তান্ধরা শান্তিকামী মানবসন্তানদেরকেই বিধর্মী আর প্রতারকদেরকে ধার্মিক ভাবতে শিখেছে। আধিপত্যকামী স্বেচ্ছাচারী দু’দল প্রতিপক্ষের অমানবিক নরহত্যাযজ্ঞকে যদিও ঐ ভক্তান্ধরা পবিত্র ধর্মযুদ্ধ হিসেবে মূল্যায়ন ক’রে আন্তরিক সমর্থন দেয়, ওরা শয়তানের খপ্পরে পড়া অজ্ঞ ধর্মান্ধ জন্যেই ওরা নিষ্পাপ।

যেকোনো বয়সকালে ওরা নিষ্পাপ শিশুর মতোই পবিত্র। তাদের অজ্ঞতার পরিণতির জন্যে তাদের নিকটস্থ জ্ঞানীজনেরাই দায়ী। প্রায়শ্চিত্ত না-করে জ্ঞানীদের বরাদ্দে যথাকালে অপদস্থকর জবাবদিহিতা থেকে মুক্তি নেই। (অসম্পূর্ণ খসড়া) করণিক : আখতার২৩৯ ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।