আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেঘালয়ের বালূ পাথরের নীচে সুনামগঞ্জের ৬ গ্রাম

চোখে যা দেখি, কানে যা শুনি, তা নিয়ে কথা বলবোই ! প্রকৃতির রুদ্ররোষের শিকার হয়েছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার তিনটি আদিবাসী গ্রামসহ ছয়টি গ্রাম। টানা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে মেঘালয় পাহাড়ধসে নেমে আসা বালু ও পাথরের নিচে অস্তিত্ব হারিয়েছে ফসলি জমি আর ঘরবাড়ি। বালু ও পাথরের চাপে ভেঙে গেছে পাঁচটি বসতবাড়ি। ভরাট হয়ে গেছে পাঁচটি পুকুর। ছয়টি গ্রামের দুটি পরিবার, দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পাহাড়ধসে চাপা পড়ার চরম ঝুঁকিতে রয়েছে।

আতঙ্কিত লোকজন বসতবাড়ির আশপাশে বেড়া তুলে বালু ও পাথরের স্রোত এড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। সীমান্ত এলাকায় ভারত অপরিকল্পিতভাবে ইউরেনিয়াম খনি প্রকল্প চালু করায় এই পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর ছড়াগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় পাহাড়ধসে নেমে আসা বালু আর পাথরের স্রোত সরাসরি আঘাত হানছে ফসলি জমি ও বাড়িঘরগুলোতে। সরেজমিনে গতকাল বিকেলে বড়ছড়া, রজনী লাইন, চানপুর, কড়ইগড়া, রাজাই ও পাহাড়তলি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে অধিকাংশ ফসলি জমি বালু ও পাথরে ঢাকা পড়ে গেছে। বসতঘরের সামনে বালু ও পাথরের স্তূপ।

নারী-পুরুষ নির্বিশেষে স্থানীয় লোকজন বালু-পাথরধস থেকে বসতঘর রক্ষা করতে চারদিকে বালুর বস্তা ফেলে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করছে। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার রাত থেকে এলাকার বড়ছড়া, বুরুঙ্গাছড়া, ভাঙ্গাছড়া, পাগলাছড়া ও নয়াছড়া দিয়ে মেঘালয় পাহাড়ের কালাপাহাড় এলাকা থেকে বালু ও পাথর নেমে আসছে। অব্যাহত পাহাড়ধসে বুধবার রাতে নেমে আসা বালু ও পাথরের স্তূপে ভেঙে পড়েছে রজনী লাইন গ্রামের কুলছুম বিবি, আব্দুল মান্নান, চানপুর গ্রামের সিরাজ মিয়া, আফির উদ্দিন ও মনা মিয়ার বসতঘর। ঘরের খুঁটি ও বেড়ার অর্ধেকের বেশি চলে গেছে ধেয়ে আসা বালুর নিচে। রজনী লাইন গ্রামের আম্বিয়া বেগম, শাহজাহান, হেকমত আলীসহ আরো প্রায় ১০ জনের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দিনমজুর এসব পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই ঘরগুলো ভেঙে যাওয়ায় মানুষগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছে। এসব পরিবারের বিছানাপত্র, বাসনকোসন, কাপড়চোপড় সব ঢাকা পড়েছে বালু-পাথরে। পাহাড়ধসে রজনী লাইন প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ ও চানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ও চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। আশপাশের লোকজন পাহাড়ধসে বালু-পাথর চাপার ভয়ে রাতে বসতবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান করছে। অনেকে ঘরবাড়ি রক্ষা করতে বসতঘরের চারদিকে বেড়া দিচ্ছে।

স্থানীয় লোকজন জানায়, ২০০৮ সালের ১৩ থেকে ২১ আগস্ট টানা বর্ষণে ভারতের মেঘালয় পাহাড়ধসের কারণে এই এলাকায় প্রথম বালু আর পাথরের ঢল নেমে আসে। ওই বছর চানপুর, রজনী লাইন ও পাহাড়তলি গ্রামের ৪০০ একর কৃষিজমি বালিতে ভরাট হয়ে যায়। প্রায় ২০০ পরিবার কৃষিজমি ও ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে। এর পর থেকে প্রতিবছরই পাহাড়ধসে এখানকার বসতঘর ও ফসলি জমি ভরাটের ঘটনা ঘটে চলেছে। গত এক সপ্তাহে এলাকার প্রায় ৫০ একর জমি বালু-পাথরে চাপা পড়ে গেছে।

মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত এলাকায় ভারত সরকার অপরিকল্পিতভাবে ইউরেনিয়াম খনি প্রকল্প চালু করায় এই পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটছে বলে মনে করা হয় । তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আনিসুল হক বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অতিবর্ষণে পাহাড়ধসের ঘটনায় চার বছর ধরে একে একে উদ্বাস্তু হচ্ছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্ত এলাকার মানুষ। পাহাড়ধসে প্রতিনিয়ত বসতবাড়ি, ফসলি জমি, হাওর, জলাভূমি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এলাকার মানুষ। ' তিনি বলেন, 'এই মানুষগুলোকে রক্ষায় সরকারি উদ্যোগ জরুরি।

পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে এ বিষয়ে আন্তরাষ্ট্রীয় সংলাপ দরকার। কারণ তাদের অপরিকল্পিত পদক্ষেপে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পাহাড়ধসের ঘটনা আমাদের ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে। ' সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, গত চার দিনের ঢলে বসতবাড়ি হারানো লোকজনকে টিন ও নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দ্রুত পাহাড়ি ছড়াগুলো খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সমস্যাটি পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বসতবাড়ি ও ফসলি জমি রক্ষায় শিগগিরই বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হবে।

সূত্র : Click This Link  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।