আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

} ডাকসুর মূল কথা ছাত্রদের* স্বাধীনতা {

আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সবাই কমপক্ষে ১২ বছর পড়া-লেখা করে বাংলাদেশের সবথেকে প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরীক্ষায় পাশ করে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। কারো দয়ার উপর ভর করে আমরা এখানে আসিনি। কিন্তু এই আমরাই আজ স্বাধীন নই। আমাদের সাথে চাকরের চেয়েও নিকৃষ্ট আচরণ করা হচ্ছে । হলের বারান্দায় থাকার জন্যও আমাদের মিছিল-স্লোগান দিতে বাধ্য করছে 'ছাত্রনেতা' নামের সরকারি-দলের দালালরা যাদের বেশির ভাগেরই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব নেই অথবা কোনকালে ছিলও না।

যারা হলের সিট পেয়েছেন তারাও দুর্বিষহ যন্ত্রণার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। হলে নেই পর্যাপ্ত বিছানা ও আসবাবপত্র। পোকা-মাকড়ের খাবার হয়েছে হলবাসী মেধাবী ছাত্রদের শরীর। দিন দিন হলের খাবারের মান নিচে নেমে যাচ্ছে। আমাদের প্রায় ৩০০ কোটি টাকার বাজেট হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় বছরে বড়জোর ২৫০ দিন বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকে (শুধু শুক্রবারই বছরে ৫২ টির মত আর ঈদ-পূজা,শীত-গ্রীষ্মের ছুটি মিলে প্রায় ১০০ দিনেরও বেশি বন্ধ থাকে বিশ্ববিদ্যালয়) । সেই হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিদিন ১ কোটি টাকারও বেশি খরচ হবার কথা। আর প্রতি ঘণ্টায় খরচ হবার কথা ৫ লক্ষ টাকা। এই বাজেটের সিংহ ভাগই থাকে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনে। কিন্তু আমরা কি দেখতে পাই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা করছেন। তাদের বেশির ভাগই সাধারণ ছাত্রদের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করছেন। উদাহরণ স্বরূপ আমরা বলতে পারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপুল সংখ্যক শিক্ষক বছরের পর বছর বিদেশে পড়ে থাকেন কিন্তু প্রতিমাসেই তাদের নামে বেতন তোলা হয়। কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেশির ভাগই ডিউটি আওয়ার শুরু অনেক পড়ে কাজে যোগ দেন। অনেকে আদৌ ডিউটি করেন না।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য বেতনভুক্ত কর্মচারী আছেন। এমনকি বিভিন্ন ফ্যাকাল্টির লিফট চালাবার জন্যও বেতনভুক্ত লিফট-ম্যান আছেন। তাদের বেশির ভাগই ডিউটি করেন না। যেমন বিজনেস ফ্যাকাল্টির লিফট-ম্যান মহসীন হলে ফটোকপির দোকান চালান। তারা সবাই কর্মচারী সমিতি করেন।

ক্ষমতাসীন দলের দালালদের ঘুষ দিয়ে ডিউটি না করেও মাস-মাস বেতন তোলেন। এ পরিস্থিতিতে আমাদের সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয়টি ধীরে-ধীরে একটি ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। এই নোংরা-আবর্জনাপূর্ণ ক্যাম্পাসটি দেখে কে বিশ্বাস করবে যে এর পেছনে বছরের ৩০০ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ আছে। এই টাকা কোথা-থেকে এসেছে ?? কেউ বলবেন এই টাকা সরকার দিয়েছে। তাহলে সরকার এই টাকা কোথা থেকে পেল ?? আমরা মোবাইলের প্রতিটি মিনিটে, তেল , সাবান সহ নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সকল জিনিস কিনতে যে ১৫% ভ্যাট দেই আর আমাদের বাবা-মা'র কষ্টার্জিত উপার্জনের টাকার যে অংশ সরকারকে ট্যাক্স হিসেবে দেন এটা সেই টাকারই অংশ।

(যে পরিবার মাসে ১০,০০০ টাকাও খরচ করে তা সরকারকে মাসে দেয় ১,৫০০ টাকা ভ্যাট আর বছরে দেয় ১২ X ১,৫০০ = ১৮,০০০ টাকা)। দুর্নীতিবাজ চোর-বাটপারেরা সরকারকে ট্যাক্স-ভ্যাট দেয় না। এই টাকা আমাদের শ্রম আর ঘামের টাকা। আমরা কী এই টাকার হিসাব চাইব না ??? আমরা হিসাব চাই। তাই ঢাবির সকল বিষয়ে হিসাব আর জবাব চাওয়ার ছাত্রদের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিষ্ঠান Dhaka University Central Students' Union- DUCSU চাই।

ডাকসু থাকলে হলে হলে ছাত্র নির্বাচিত হল সংসদ থাকবে। আমরা আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া সকল অন্যায় আর অবিচারের প্রতিবাদ করতে পারব। আমাদের প্রয়োজনীয় আসবাব-পত্র চিকিৎসা সরঞ্জাম আর কীটনাশক দাবি করতে পারব। আমরা কখনই কাউকে মিছিল-স্লোগান দিতে কাউকে বাধ্য করতে দেব না। যার ইচ্ছা রাজনীতি করবে যার ইচ্ছা করবে না।

আমরা সবাই স্বাধীনতা পাব। ডাকসুর নেতাদের সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে অধ্যয়নরত ছাত্র হতে হবে। তাই যারা ছাত্রত্ব না থাকলেও ছাত্ররাজনীতির নাম ভাঙিয়ে খায়, রাজনৈতিক দলের চামচামী করে আর ক্যাম্পাসে সৃষ্টি করে ত্রাসের রাজত্ব তাদের ক্যাম্পাসে কোন অবস্থান থাকবে না। যেই ছাত্ররা ছাত্রদের কষ্ট বোঝে, যারা মনে প্রাণে সৎ তারাই হবে ছাত্রদের নেতা, ডাকসুর নেতা। ডাকসুর নির্বাচিত নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পরিষদ সিনেটের সদস্য হবেন (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইনেই তা লেখা আছে)।

তারা ছাত্রদের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক উন্নতমানের হল-ক্যান্টিন-ক্লাসরুম-লাইব্রেরী-মেডিকেল সেন্টার আর পরিবহনের দাবি বাস্তবায়ন করবেন। শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যেকোনো অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করবেন ও বিচারের দাবি তুলবেন তাদের সাথে থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার-হাজার ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ছাত্রকে কারো দ্বারা লাঞ্ছিত-নির্যাতিত হতে হবে না। সারা বছর জুড়ে ক্যাম্পাসে কোন মারা-মারি হতে দেব না আমরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ডিপার্টমেন্টে একদিনেরও সেশন-জট থাকবে না।

একজন ছাত্রকেও বারান্দায় শুতে হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে বাসে কাউকে ঝুলতে হবে না। হলে পোকা-মাকড়ের কোন উপদ্রব থাকবে না। নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা আর বিশ্বসেরা গবেষণা হবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাস হবে।

উন্নত মানের ক্যান্টিন আর চিকিৎসা সেবা থাকবে। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক হবে গণতান্ত্রিক। ডাকসু নির্বাচনের দাবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের প্রধান দাবি। এটা বাস্তবায়ন হলে আমাদের অন্যান্য দাবি বাস্তবায়ন করা হবে সময়ের ব্যাপার। হাইকোর্ট ডাকসু নির্বাচনের পক্ষে রায় দিয়েছে, দেশের সকল জ্ঞানী-গুণী মানুষ আমাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

কিছু মূর্খ আর জ্ঞানপাপী-লোক এর বিরোধিতা করছেন এই বলে যে নির্বাচন হলেও ভালো নেতৃত্ব ক্ষমতায় আসতে পারবে না। তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই '৭১রের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও অনেক কিছু মূর্খ আর জ্ঞানপাপী এরকম কথা বলেছিল যে দেশ স্বাধীন করে কী হবে জনগণ কিছুই পাবে না। তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই এটা আজ প্রমাণ হয়েছে পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ হাজার গুণে ভালো একটি দেশ। আমেরিকা বিনা যুদ্ধে সকাল বিকাল সেখানে বোমা ফেলে হাজার-হাজার মানুষ মারছে। যেই পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে এখন পর্যন্ত কোন নির্বাচিত সরকার পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে পারেনি।

যেখানকার প্রধানমন্ত্রীকে হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করে। রাজধানী আর সামান্য কিছু অঞ্চল ছাড়া যেখানে কোন রাষ্ট্রীয় আইন বিরাজ করে না। বাংলাদেশ তার তুলনায় হাজার হাজার গুনে ভালো আছে । ডাকসুর নেতৃত্ব অনেক মহান নাও যদি হতে পারে তাও তা বর্তমান দলবাজ-দখলদার অ-ছাত্রনেতাদের চেয়ে হবে লক্ষ গুণ ভালো। তাদের ভালো থাকতে আমরা সাধারণ ছাত্ররা বাধ্য করব।

তারা কোন অন্যায় করলে আমরা তাদের আর ভোট দেব না। প্রয়োজনবোধে বিচারের সম্মুখীন হতে বাধ্য করব। আমদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এই দেশটির স্বাধীনতার পেছনে যাদের ত্যাগ আর বীরত্ব ছিল তুলনাহীন। আমাদের মধ্যে একজন মুসা ইবরাহীম এভারেস্ট জয় করে জাতিকে দেখিয়ে দিল কীভাবে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শিখর স্পর্শ করতে হয়। সেই আমরাই কি সামান্য একটা নির্বাচন আদায় করতে পারব না ?? আমাদের পারতেই হবে।

এছাড়া কোন উপায় নেই। সকল বঞ্চনার বিরুদ্ধে আসুন জ্বলে উঠি তীব্র প্রতিবাদে। "শপথ হোক আমরণ দিতেই হবে ডাকসুর নির্বাচন। " [* "ছাত্র" শব্দটি এখানে স্লোগানের ছন্দমিল রাখতে ছাত্র-ছাত্রী মিলে সকল শিক্ষার্থীকে বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে। ] ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে গঠিত সাধারণ শিক্ষার্থীদের মঞ্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চের পক্ষে লিখেছেন তারিফ হক যোগাযোগ: ফোন: 01672413773, ইমেইল: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চের ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে এই আন্দোলনে যুক্ত হতে পারেন: Click This Link  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।