আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তিন বন্ধুর তিনাভিযান(বগুড়া মেডিকেল ভার্সন)

একজন চরম বোরিং মানুষ, কোন এক্সসাইটমেন্ট নাই আমার মাঝে। চিল্লাপাল্লা ভালো লাগেনা। মানব দেহের রোগ তিন প্রকার। পানিবাহিত, জলবাহিত, বিবাহিত। এই কয়দিন মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে কাজ করতে যেয়ে সবচেয়ে বেশি এই রোগ তিনটার এই কৌতুকের কথাই মনে পড়ছে।

বেশ কয়েকটা চকলেট টাইপের প্রেমের গল্প লেখা হয়েছে। এবার তাই সেইরকম সিরিয়াস গল্প নিয়ে, তিন পর্বের একটা গল্প অনেক দিন আগের কথা। ২০০৮ সাল। আমরা তখন ১ম বর্ষে। গ্রহ নক্ষত্রের সাক্ষাতের কারনেই হোক, আর শিলালিপি তে খন্ডিত খন্ডানো কোন বিধি হোক।

দেখা হল চার বন্ধুর। মারফিউক্স, রাকুস, জুন্স, এবং আলীবাবা। তিন বন্ধু বলছি এজন্য যে আলীবাবা এখনো বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতদের সাথে মারামারি ও গুহা অভিযানে ব্যাস্ত। তাই সে আমাদের সাথে তেমন সময় দিতে পারেনা। তিন গোয়েন্দার গল্প এর মতই আগে আমাদের পরিচয় দিয়ে দেই।

রাকুস রোমান বংশোদ্ভুত। কোন একটা বিষয়ে পিনিক যোগাতে তার জুড়ি নেই। ধরেন একটা ক্রিম আপনি কিনবেন বা কিনবেন না বলে চিন্তা করছেন-মানে দ্বিধা দন্দে ভুগছেন। সে এমন পিনিক দিবে যে আপনি না কিনে পারবেন না। জুন্স গ্রীক বংশোদ্ভূত।

বিশাল মুরগীর খামারের মালিক। ডিম ও নিত্য নতুন মুরগী জোগাড় করা তার কাজ। আপনি তার সামনে পিস্তল ধরে আছেন- তার সেখানে ভয় নেই, তার ভয় পাছে কোন মুরগী চলে যায় কিনা। আর আমি মারফিউক্স খাটি বাংলাদেশী। বাঙ্গালীর মতই ঘরের ভিতর বসে বসে আকাশ কুসুম কল্পনা করাই আমার স্বভাব।

আর যখন সামনে বিপদ আসবে, তাতে কিছু না বলে-চুপ করে বসে থাকাই আমার কর্তব্য। ২০০৮, এপ্রিল মাস হবেই। আশে পাশের দর্শনীয় জায়গা মোটামুটি ঘুরা শেষ। ঘুরার জায়গা পাচ্ছিনা। হঠাত হাতে একটা কাগজ এসে পড়ল।

তাতে যা পেলাম তার সারমর্ম হল- রামসাগরের মতই প্রতি ৪ সাল পর পর ৪ নং মাসের ৪ তারিখ নাকি মহাস্থানগড়ের কুপে একজন করে মানুষ মারা যায়। রাকুস কে বললাম। ব্যস, পিনিক আর কী লাগে। দিনক্ষন বুঝে সেদিন ই ছিল ৪ তারিখ। চল চল করে আমার যথারীতি আপত্তি সত্ত্বেও আমরা তিনজন বেরিয়ে পড়লাম।

সেদিন রাতটা ছিল বেশ নীরব, নিশ্চুপ। কিন্তু আচমকা ঠেকল লেডিস হোস্টেলের ছাদের দিকে তাকিয়ে। কেমন জানি বেশি লাল লাগছে সেদিকের আকাশটা। অনেক গুলো বাদুড় ঘুরাঘুরি করছে। যা হবে হোক, হয়তোবা ছাদের মধ্যে রান্না করতেছে- এই ভেবে যাত্রা শুরু করলাম।

এত রাতে মহাস্থানে যাব ভেবে সি এন জি মামা বেশ মজার চোখে তাকাল। রাতের বেলা নাকি বেশ গাজার আসর বসে এখানে। তবে আমাদের তো উদ্দেশ্য অন্য তাই না। সে যাই হোক- কাদা মাটির চিকন রাস্তায় এগিয়ে চললাম সেই রহস্যময় জিয়ত কুপের দিকে। জীবন কুপ বলে মনে হয়।

চারদিকে ঝিঝি পোকার ডাক, নিঃশব্দটা সবকিছু মিলে বেশ ভয় লাগছিল আমার। অন্যদিকে রাকুস তো বেশ মজার উপর আছে। রাত ১২.০০ বাজতে তখনো এক মিনিট বাকি। আমরা তিনজন তিনজনের হাত ধরে গোল করে ঘিরে দাড়ালাম। মরলে একসাথেই মরবো।

বারোটা বাজল-পনেরো মিনিট পেরিয়ে গেল, কোন কিছু নেই। হঠাত জুন্সের চোখে একটা আলোর মত চোখে পড়ল যা কুপের নিচ থেকে আসছে। আমি তাকিয়ে দেখি কুপের মধ্যে কী সুন্দর করে সিড়ি কাটা। কী ব্যাপার আগে তো দেখিনি। আমি একটু ইতস্তত করলেও নেমে গেলাম তিনজনই।

নেমেই আমাদের জুন্স সম্ভাব্য পুন্ড্রের মুরগীর আশায় সেই আলোময় পাথর হাতে নিতেই ঘটল এক অবাক ঘটনা। আমাদের চারপাশে পানি ঘিরে ফেলছে। অথচ আমরা ভিজছি না। আমাদের মাথার মধ্যে কোন কিছু কাজ করবার আগেই আমি তাকিয়ে দেখি কুপের উপরে আলো ঝলমল করছে। পাকা বাধানো কুপ।

তার চারপাশ দিয়ে পুজার নানা উপকরন। আমার মাথার উপরে অনেক পানি-কিন্তু কোন কস্ট হচ্ছে না। আমিও তাই আনন্দে দেখছি। লাইভ সিনেমা হতে যাচ্ছে। যদিও বেশ সন্দেহের মধ্যে আছি বেচে আছি না মরে গেছি।

অনেক কস্টে মেডিকেল চান্স পাইছি। এই রাকুস এর ধান্দায় এই যাত্রায় বাচলেই হয়। জয় পরশুরামের জয়। জয় মা মনসার জয়। ধ্বনিতে তখন চারদিকে তুমুল কোলাহল।

নীল আকাশ ধোয়ায় তখন গাড় হয়ে আসছে। হঠাত সবাই চুপ। তারপরেই তুমুল হর্ষে সবাই চীৎকার দিল মনে হয়-জয় পরশুরামের জয়। কুপের একপাশে এক বিশাল মুচ ওয়ালা লোক দাড়ালেন। ইনিই পরশুরাম মনে হয়।

জয় মা মনসার জয় বলে ছেড়ে দিলেন কুপের মাঝে এক ঝাক সাপ। আমি তখন ভয়ে অস্থির। সাপ-বাপরে বাপ। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি জুন্স উপরেও মুরগী খুজতেছে। হঠাত কী হল।

সাপগুলো সব কুন্ডলী পাকিয়ে আমাদের থেকে বাইরের জগত আলাদা করে ফেলল। ব্যস লাইভ টিভি বন্ধ। জুন্সকে বললাম মার ঘুসি। জুন্স করলো কী ওর জুতা দিয়ে সাপের মাথায় বাড়ি মারল। ব্যস-টিভি খুলে গেল।

ওটা মনে হয় তখন এমনিতেই খুলতো!!! আবারো সেই ধ্বনি , জয় মা মনসার জয়। তারপরে যা ঘটল, তা শুনলে তো আরো অবাক হবে। দেখলাম-এক মরা মহিলাকে হাত পা বেধে কুপে নামানো হচ্ছে। কুপে কবর দিবে নাকি। হিন্দুরা তো পুড়ায় শুনছিলাম।

এক মহিলাকে কবরের এত আয়োজন যে রাজা আসা লাগে। যাই হোক। মহিলা ডুবে গিয়ে আমাদের সোজাসুজি এসে পড়ল। আমি তাকিয়ে দেখি আহারে কী সুন্দর মেয়েটা। কম বয়সীই হবে।

জুন্স বলে মাল রে একটা। হঠাত করে চোখ মেললো মেয়েটা-এতে আমরা যতটা অবাক তার চেয়ে অবাক মনে হয় মেয়েটাই হয়ে থাকবে। ভয়ে পেয়ে হাত পা নাড়তে থাকলে। সাথে সাথে উপর থেকে টান পড়ল। আবার চারিদিকে তুমুল ধ্বনি।

জয় মা মনসার জয়। এরপরের কাহিনী খুবই কম। আমাদের আশেপাশে খালি লাশ পড়ে। নানা জাতের লাশ পাশ। একদিন দুপুরে দেখি আকাশে এক চিল উড়াউড়ি করছে।

সেই দূর থেকে চিল ফেলে দিল এক টুকরা মাংশ। এরপর থেকে লাশ আর জীবিত হয় না। বেজে উঠল সেই হর্ষদ্ধনি কিন্তু এবার নাম ভিন্ন-জয় শাহ সুলতান বলখি মহিসওয়ার এর জয়। এরপরে আর কী ? আবার সেই রাত নেমে আসলো। আমি সবার আগে উঠলাম।

মোটামুটি এই যাত্রায় রক্ষা পাইলাম, আর প্রতিজ্ঞা করলাম আর পটমু না পিনিকে। কিন্তু হোস্টেলে যেয়ে শুবার আগে রাকুস দিল আরেকটা ভয়ংকর খবর। লেডিস হোস্টেলের নেট ওয়ার্ক নাকি চুরি হয়ে গিয়েছে। কালকেই এর সমাধানে সে বেরুতে চায়। চোখ কচলাতে কচলাতে আমি বললাম-ভাই ঘুমাতে দে ভাই।

তিন পর্বে সমাপ্য। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।