আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার দুষ্টামি বেলার বান্দর কাহীনি - ০৩

এতটুকু বুঝি জীবনের কাছে আবেগ নস্যি। তখন ৪ ক্লাসে পড়ি! ক্লাসেরই দোস্ত আবার বাড়ী্ও একই পাড়ায় তো সে তখন নতুন বাই সাইকেল চালানো শিখল, তার মামা নাকি ছোট সাইকেল ভাড়া করে শিখিয়ে দিয়েছেন। এ নিয়ে প্রতিদিন ঐ দোস্ত গর্ব করে বলতেন সে এখন সাইকেল চালাতে জানে আমি নাকি তার থেকে পিছিয়ে গেছি এখনও সাইকেল চালাতে জানিনা দোস্তের এহেন নাক সিটকানোতে ত্যাক্ত-বিরক্ত হয়ে মনে মনে প্রতিজ্ঞা খাইলাম, যেভাবেই হোক আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সাইকেল চালানো শিখব! সাইকেল চালানো শিখবো এটা মা জননীর কাছে বলতেই যেন উনি বিষম খাইলেন! কিছুক্ষন পরই ২ চোখ উল্টাইয়া হুংকার দিলেন, এহেন হুংকার শুনে আমি ধমে যাইতে যাইতে প্রতিজ্ঞার কথা মনে করিয়া হেমন্ত কালের মশার মত ঘ্যান ঘ্যান শুরু করলাম। দীর্ঘ ২ দিন ঘ্যান ঘ্যান করার ফলসরুপ বাই সাইকেল চালানোর আর্জি আমার মা-জননীর আদালতে গৃহীত হইল সেই সাথে একটি শর্ত জুড়িয়া দিল। শর্তটি ছিল এমন কাউকে নিয়ে আসতে যে কিনা সাইকেল চালাইতে পারে এবং আমাকে শিখাইতে পারবে তার বরাবরই আমার মা জননী সাইকেল ভাড়ার জন্যে প্রয়োজনী অর্থ ছাড় দিবে।

মায়ের সিদ্ধান্তের বাপ্যারে সদিচ্ছা পোষন করিয়া আমি আমার দোস্তের দ্বারস্থ হইলাম এবং দোস্তকে বলিলাম এখন তুই আমাকে সাইকেল চালানো শিখাইতে পারিস তোকে এই কর্মে আমি আমার গুরুমানি। দোস্ত এই কথা শুনে আমতা আমতা শুরু করে দিল, আমি দোস্তকে গুরুর হাদিয়া হিসেবে ৫টাকায় রফা করিলাম বায়না সরুপ দোয়েল পাখির ছবিযুক্ত ২টাকার একটি চকচকে নোট দোস্তের প্যান্টের পকেটে ভরে দিলাম দোস্ত আমার মন্ত্রী আবুলের মত দাঁত কেলাইয়া হাঁসি দিয়া বলিল চিন্তা করিস না আমার হবু বউয়ের কসম! তোকে আমি সাইকেল চালানো শিখিয়ে দিব। অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ হয়ে পরের শুক্রবারেএলো সেই মধুক্ষন দোস্ত সহ বাজার থেকে সাইকেল নিয়ে আসলাম প্যাক্টিসের ভ্যেনু ঠিক করা হল আমাদের উঠোন। দোস্ত অতি যত্নে আমাকে শেখাতে লাগলেন একসময় আমি ঠিক একা একা চালাতে লাগলাম, আমার দোস্ত দুপরে খাবারের ব্রেক চাইলো বললাম তুই খেয়ে আয় আমি আরেকটু চালাই। উঠোনে সাইকেল নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে একসময় প্রেগনেন্ট মহিলার মত আমারও মাথা ঘুরানো শুরু হল।

এমন সময় উত্তম কুমারের ঐ গানের দৃশ্যটার কথা মনে হল এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হত বলতো তাই উঠোন ছেড়ে সাইকেল নিয়া রাস্তায় বের হলাম। বড় রাস্তায় না গিয়ে ছোট রাস্তা দিয়ে অন্য পাড়ার দিকে সাইকেল চালাতে চালাতে মনে মনে গাইতে লাগলাম এই পথ যদি না শেষ হয়...... পথ শেষ হওয়ার আগেই সামনে দেখলাম এক লুঙি পরা চাচা একবারে রাস্তার মাঝ বরাবর হেটে যাচ্ছে আমি নিজের সাইট ঠিক করে বাম পাশ দিয়ে চলে যাব ভাবলাম। চাচার খুব কাছে গিয়ে টিং টিং বেল চাপলাম চাচা দেখি মাঝ রাস্তা ছেড়ে বাম পার্শে মানে আমার সাইকেলের ঠিক সামনে এসে পড়লেন, সময় সল্পতার কারনে আমিও বাম পাশ ব্যতীত অন্যকোন সিদ্ধান্ত নিতে পারিনাই তাই সিসিং ফাক বলে চাচার ২ রানের মাঝখান দিয়ে চাইকেলের সামনের চাকা ডুকিয়ে দিলাম। চাচা তার বিশেষ যায়গায় সজোরে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলেন এবং ছাগল ছানার মত তিড়িং বিড়িং পা ছুড়ে গোঙানি দিতে থাকলেন। এদিকে আমিও পড়ে গেলাম, সাইকেলর চেইনে পা সামান্য কেটে গেল।

ঘটনার আকস্মিকতায় আমি স্তম্ভিত হয়ে পায়ের ব্যথা ভুলে পরিস্থিতি অবলোকন করছি এদিকে চাচার গোঙানিতে আসে পাশে থেকে রেসকিউ টীম এসে আমাদের উদ্ধারে ব্যস্ত হলেন। চাচার এহেন গোঙানি দেখে রেসকিউ টীমের এক সদস্য আরেক সদস্যকে বলে উঠল এই দেখতো চাচার বিচি খুজে পাস কিনা মনে হচ্ছে বিশেষ যায়গা থেকে বিচি খুলে পড়ে গেছে। ঐ সদস্য বলে উঠলো না কোন বিচি মিলে নাই বরং এক কাজ কর হাত দিয়ে দেখ যায়গায় বিচি আছে কিনা? তখনই রেসকিউ টীমের ঐ সদস্য চাচার বিচি দেখার জন্য যেইনা চাচার লুঙির নিচে হাত দিতে যাবে তখনই চাচা গোঙানি বন্ধ করে উঠে দৌড় লাগালেন! মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করলাম অপরাধ আমার আমি একসিডেন্ট করলাম আর চাচা দৌড়ে পালাইতেছে কেন? আপসুস এ প্রশ্নের উত্তর এখনো পাই নাই আমার দুষ্টামি বেলার বান্দর কাহীনি : ০২ আমার দুষ্টামি বেলার বান্দর কাহীনি - ০১  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।