গ্রাম-প্রকৃতি-সবুজ-সারল্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, সেখানে ফিরে যেতে মন চায় বার বার। এমন নির্মল ভোরের তুলনা হয়না, এমন পবিত্র সৌন্দর্যের সংজ্ঞাও দেয়া যায়না। এখন ভোর ছ'টা বাজে। এক পশলা রাত জাগানিয়া বৃষ্টি এসে পৃথিবীকে ধুয়ে মুছে দিয়ে চলে গেল। এই মুহূর্তে আকাশ নির্মেঘ না হলেও বৃষ্টি আসার পূর্বের সেই কালো ঘনঘটা আর নেই।
খন্ড খন্ড মেঘ এদিক থেকে ওদিক দৌড়াচ্ছে কি যেন কি ব্যস্ততার তাড়নায়। মেঘের আসা-যাওয়ার ফাঁক গলিয়ে প্রভাত রাগের দেখা মিলছে আকাশে। আমি বসে আছি নয় তলার বারান্দায়, পূব দিকে মুখ করে। সামনে বিজ্ঞান কলেজের সবুজে ঢাকা প্রান্তর। আমার গায়ে এসে আলতো ছোঁয়া দিয়ে যাচ্ছে ঝিরিঝিরি হাওয়া।
আমি যেন সবুজ গাছগাছালির সাথে এই ঝিরিঝিরি হাওয়ার মৃদু আলাপন শুনতে পাচ্ছি। ওরা প্রস্তুত হচ্ছে প্রভাত রবিকে বরণ করে নেয়ার জন্য। ওরাই বুঝি বৃষ্টিকে ডেকে এনেছিল। ওদের গায়ের সমস্ত ধূলি-ময়লা ধূয়ে নিয়ে ওদেরকে নির্মল-পবিত্র করে তোলার জন্য। এরপর সকালের সূর্যকে বরণ করে নিয়ে এর নরম সোনালী আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে ওরা।
মানুষ পাবে আলো ঝলমল একটি সুন্দর সোনালী সকাল।
আমি মাঝে মাঝে ভাবি, এই সবুজ ছায়া-বীথি, আকাশ-মেঘ-সূর্য, ঝিরিঝিরি বাতাসের কম্পন--এদের মধ্যে কেমন যেন একটা বোঝাপড়া আছে। বলতে পারি বন্ধুত্ব রয়েছে এদের মাঝে। এরা একে অন্যের প্রয়োজনটা ঠিক বুঝতে পারে, সাড়া দেয় একে অন্যের ডাকে। এই যেমন, গতকাল বৃষ্টি হয়নি ঢাকায়।
ধূলো-বালিতে ভরে রয়েছে চারপাশ, এমনকি গাছের পাতাগুলোও। বাতাসেও ছিল গুমট তাপ। তাই বাতাস আর গাছপালা মিলে ঠিক করল, আজ সকালে সূর্য উঠার আগে সবকিছু ধূয়ে-মুছে ওদেরকে নির্মল হতেই হবে। আকাশও রাজী হলো তাতে, বৃষ্টি ঝরাবে বলে স্বীকার করল সে। তারপর বৃষ্টিকে আমন্ত্রণ জানানো হলো।
বৃষ্টি সাড়া দিল তাতে। ভোর হবার আগেই ঝরে পড়ল পৃথিবীতে। এখন বাতাসটা নির্মল ও পবিত্র। আকাশেও কালো মেঘের ঘনঘটা নেই। পূব আকাশে সূর্য উঠছে তার নরম সোনালী আলোয় চারপাশ ভাসিয়ে দিয়ে।
বৃষ্টিধূয়া গাছের পাতায় সেই আলোর খেলা দেখতে পাচ্ছি আমি। প্রকৃতি এখন সেজে উঠেছে স্নিগ্ধ সকালি সাজে। এই প্রকৃতিকে কি ভালো না বেসে পারা যায় ?
কিন্তু এটাকে কার দুর্ভাগ্য বলব ? প্রকৃতির না ভোরের ? কারণ, সকালে প্রকৃতির এমন স্নিগ্ধ রূপের পসরা অনেকেই উপভোগ করেনা বা করতে পারেনা। আমার মতো সূর্য জাগার আগে যারা ঘুম থেকে জেগে উঠতে না পারে, তারা বরাবরই বঞ্চিত হয় প্রকৃতির এমন সুন্দর আয়োজন থেকে। আর যারা প্রকৃতিকে ভালোবাসতে শিখেনি, কিংবা প্রকৃতির আরাধনা করতে জানেনা, তারাও বঞ্চিত হয় এই আয়োজন থেকে।
অথচ প্রকৃতি তার সবটুকু উজাড় করে দিয়ে, আলো-বাতাস-আর সবুজের বন্যায় ভাসিয়ে পৃথিবীকে সৌন্দর্যমন্ডিত করে রাখতে চায়, সে শুধু মানুষের জন্য। মানুষ তা ভোগ করে আনন্দ পাবে, ভালো থাকবে এই ভেবে। আমরা মানুষেরা তা বুঝিনা কিংবা বুঝার চেষ্টা করিনা। কত নির্মম আচরণ করি আমরা প্রকৃতির সাথে ! তাই এই মুহূর্তে মনপ্রাণ দিয়ে কামনা করছি, এমন দিন কবে আসবে, সবাই প্রকৃতিকে ভালোবাসবে, প্রকৃতিকে বন্ধু ভাবতে শিখবে ? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।