আমি একজন পর্যটন কর্মী। বেড়াতে, বেড়ানোর উৎসাহ দিতে এবং বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি। কিস্তি-২৫
পিন্টু ভাইয়ের অনুসারীরা ক্যাম্পাস থেকে স্বেচ্ছায় বা চাপে চলে যাওয়ার পর সাধারন ছাত্রদের হাতে নেতৃত্ব ফিরে যায়। ছাত্রদলের কমিটি নেই। তাই হল নিয়ে মাথাব্যথা খুব একটা কারো নেই।
সবাই কমিটির জন্য অপেক্ষা করছিল। এর ভেতর ঘটে ২৩ জুলাই শামসুন্নাহার হলে পুলিশ প্রবেশের ঘটনা। সে সময়কার হল প্রভোস্ট সুলতানা শফিকে সরিয়ে দেয়ার কথা উঠলে ছাত্রলীগ কর্মীরা সাধারণ ছাত্রীদের ক্ষেপিয়ে তোলে। এ নিয়ে তোলপাড়। ২০০২ সালে ২৩ জুলাই হলের গেট ভেঙ্গে পুলিশ ঢোকে।
পর দিন ২৪ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ে গণ বিস্ফোরণ ঘটে। কারো না কারো গার্লফ্রেন্ড আছে শামসুন্নাহার হলে। তারা আন্দোলনে দলমত নির্বিশেষে হলে হলে ক্যাম্পেইন করেন সবাই প্রতিবাদে উৎসাহ দেন। সাংবাদিকরা যারা ছিলাম, সবাই এর বিপক্ষে অবস্থান নিলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে।
রাতে পুলিশ কয়েকজনকে ধরে রমনা থানায় নিয়ে যায়।
পরে সকালে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। সে সময়কার রমনার ওসি ছিলেন লুৎফর ভাই।
২৪ জুলাই সকালেই বিশাল মিছিল। ছাত্রলীগ হলে এটা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতো, ছাত্রদল নেতারা নিয়ন্ত্রণের বদলে নিজেরাই মিছিলে শামিল। পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে উত্তেজনা।
ভিসি ছিলেন অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী। মিস্টার চৌধুরী বলছেন, রাতে তাকে আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রভোস্ট সুলতানা শফি বলেছিলেন, সিচুয়েশন আন্ডার কন্ট্রোল।
কি কন্ট্রোলে আছে সেটি পরের দিন বোঝা গেলো!
সে সময় হলে গেট ভেঙ্গে পুলিশ ঢুকেছিল কিনা তা নিয়ে প্রচুর তর্ক ছিল। পরে মানব জমিনই প্রথম প্রথম প্রমাণ করেছিল গেট ভেঙ্গে পুলিশ ঢোকে এবং সেটি ওসি লূৎফর রহমানের এক্সক্লুসিভ ইনটারভিউর ভিত্তিতে। মিস্টার লূৎফর আগস্ট মাসে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষ্য দিতে এলে আমি তার সাথে কথা বলি এবং রিপোর্টটি তৈরি করি।
সে সময় এটি একটি বহুল আলোচিত রিপোর্ট ছিল।
মিস্টার লুৎফর আমাকে খুব হেল্প করেছিলেন। সে জন্য তার কাছে আমার কৃতজ্ঞতা ছিল সীমাহীন।
আমার ক্যাম্পাস রির্পোটিংয়ের জীবনে যে ক'জন পুলিশ অফিসারকে আস্থায় নিতে পেরেছিলাম তার মধ্যে লুৎফর ভাই অন্যতম। এছাড়া এডিসি রহিম ভাই, নাফিউল ভাই , সার্জন আনোয়ার ভাই ও মশিউর ভাই ছিলেন অন্যতম।
আনোয়ার ভাই ক্যাম্পাসে দায়িত্ব পালন করতেন। মশিউর ভাই ওতাই। তাদের সাথে একেবারেই বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক ছিল। সাধারণত পুলিশ সম্পর্কে আমার যে প্রথাগত ধারণা আছে এবং এটি সত্যও বটে; সেখান থেকে এরা একটু দূরে ছিলেন। আনোয়ার ভাই ও মশিউর ভাইয়ের সাথে প্রায় আড্ডা মারতাম।
শামসুন্নাহার হলের ঘটনা নিয়ে একটা ধুম্রজাল ছিল। সরকারের দুজন প্রতিমন্ত্রী এর সাথে জড়িত ছিলেন। দুজন নারী নেত্রীর আবদার রক্ষা করতে গিয়ে এ বিপর্যয়। আর আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীর বিপর্যয় আওয়ামী লীগ নেত্রীকে বিশ্বাস করেছিলেন বলে।
ঘটনার পর নীল ও গোলাপী দলের শিক্ষকরা ক্ষোভে ফুঁসে উঠলেন।
সবাই মিলে আন্দোলন শুরু হলো। রোকেয়া হলের সামনে মুক্তাঞ্চল বানিয়ে সাবেক গাঞ্জাখোর মাহমুদুজা্জামান বাবুর গান শোনাচ্ছে। বাম দল নেপথ্যে নানা রকমের ক্যারিকাচার করছে। আন্দোলন জমিয়ে তোলা হয়। সে আন্দোলন থেকে ছাত্রদলের নেতাদের প্রতি অপমান সূচক অনেক কাণ্ডই হয়েছে।
তবে ছাত্রদলের কমিটি না থাকায় সে সময় তারা কোনো সমিন্বত প্রতিবাদ জানাতে পারেননি।
শাহবাগে মনির ভাইয়ের মত নেতাকে জুতা দেখানো হযেছে। সেটিও হজম করেছে ছাত্রদল।
পুলিশ আন্দোলন দমনে শক্তি প্রয়োগ করেছিল্ কিন্তু সফল হয়নি। আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীকে পদত্যাগ করতে হয়েছে।
সুলতানা শফিকেও পদ ছাড়তে হয়েছে। কেউ থাকতে পারেনি। ছাত্রলীগ ও বামদল এটাকে পুজি করে বিশ্ববিদ্যালয় অস্থির করে তোলে। ৭৯ দিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকে। সে সময় ক্যাম্পাস রিপোর্টারদের দুর্দিন ছিল।
হল বন্ধ। থাকা খাওয়া নিয়ে দুর্ভোগ।
পরের কিস্তি ক্যাম্পাস রিপোর্টারদের দুর্ভোগ নিয়ে ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।