বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা... ১৪ এপ্রিল ২০১৩ বাংলাদেশে ছিল নতুন বাংলা বছর ১৪২০ সালের নববর্ষ। আর ভেনেজুয়েলায় এদিন ছিল প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। নির্বাচনে দুইজন প্রার্থী ভোটযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। রবিবারের ভোটে ভেনেজুয়েলার প্রয়াত নেতা উগো চ্যাভেজ-এর মনোনীত উত্তরাধিকারী ও দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো এবং সম্মিলিত বিরোধীদলের নেতা মিরান্ডা রাজ্যের গভর্নর হেনরিক ক্যাপ্রিলেস প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। দেশটির ন্যাশনাল ইলেট্রোরাল কাউন্সিল ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করেন যে, নির্বাচনে নিকোলাস মাদুরো পেয়েছেন মোট কাস্টিং ভোটের শতকরা ৫০.৭০ ভাগ ভোট এবং হেনরিক ক্যাপ্রিলেস পেয়েছেন শতকরা ৪৯.১০ ভাগ ভোট।
আগামী ১৯ এপ্রিল ২০১৩ নিকোলাস মাদুরো ভেনেজুয়েলার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহন করবেন। ২০১৯ সালের ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত মাদুরো প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
১৯৬২ সালের ২৩ নভেম্বর কলাম্বিয়ার কুকুটা শহরে নিকোলাস মাদুরো মোরোস জন্মগ্রহন করেন। তাঁর বাবা ছিলেন একজন ইউনিয়ন নেতা। কারাকাসের পশ্চিমে আই ভ্যালে শহরের লিসিও জোসে আভালোস হাইস্কুলে মাদুরো পড়াশনা করতেন।
১৯৮০ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি পড়াশুনার পাঠ চুকিয়ে বাসচালক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। বছর না ঘুরতেই তিনি কারাকাস মেট্রো বাস এসোসিয়েশনের ট্রেড ইউনিয়ন নেতা বনে যান। ১৯৮৩ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জোসে ভিসেন্টে রাঞ্জেল-এর বডিগার্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অবসর সময়ে মাদুরো এনিগমা নামের একটি রক ব্যান্ডে গিটার বাজাতেন। গোটা নব্বই দশকের পঞ্চম গণপ্রজাতন্ত্র আন্দোলনে মাদুরো গিটার হাতে হুগো চ্যাভেজের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের একজন সহকর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯৮ সালে হুগো চ্যাভেজের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি সক্রীয় অংশগ্রহন করেন।
১৯৯৮ সালে তিনি এমভিআর-এর টিকিটে ভেনেজুয়েলার চেম্বার অব ডেপুটি নির্বাচিত হন। ১৯৯৯ সালে মাদুরো ন্যাশনাল কনস্টিটিউট অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০০ সালে তিনি ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি'র সদস্য নির্বাচিত হন। সব সময় মাদুরো ক্যাপিটাল ডিসট্রিক থেকে নির্বিচিত হয়েছেন।
২০০৫ সালে মাদুরোকে দেশটির স্পিকার নির্বাচিত করা হয়। ২০০৬ সালে প্রেসিডেন্ট হুগো চ্যাভেজ মাদুরোকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব অর্পন করেন। এই সময় তাঁর স্ত্রী চিলিয়া ফ্লোরেস ভেনেজুয়েলার স্পিকার নির্বাচিত হন। এবং মাদুরোর জায়গায় স্থলাভিষিক্ত হন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মাদুরো লিবিয়ার নেতা কর্নেল মোয়াম্মার গাদ্দাফি ও কলাম্বিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
প্রেসিডেন্ট হুগো চ্যাভেজ ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে কিউবায় চিকিৎসা নিতে যাবার আগে ২০১২ সালের ৮ ডিসেম্বর মাদুরোকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনিত করেন। ২০১৩ সালের ৫ মার্চ হুগো চ্যাভেজ ক্যানসারের কাছে হার মেনে পরলোক গমন করলে মাদুরো ভেনেজুয়েলার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আর ১৪ এপ্রিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি ৬ বছরের জন্য ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
মাদুরো একজন রোমান ক্যাথোলিক। নিকোলাস মাদুরো এবং তাঁর স্ত্রী চিলিয়া ফ্লোরেস ভারতের ধর্মগুরু সত্য সাঁই বাবার অনুসারী।
২০১১ সালে ভারত সফর করে মাদুরো ও ফ্লোরেস সত্য সাঁই বাবা'র কাছে দীক্ষা নেন। চিলিয়া ফ্লোরেস একজন আইনবিদ এবং বর্তমানে তিনি ভেনেজুয়েলার স্পিকার। নির্বাচনে বিজয়ের পর কারাকাসের এক জনসমুদ্রের উত্তাল স্রোতে মাদুরো ঘোষণা করেন, 'নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও সাংবিধানিক হয়েছে। যারা আমার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে, তাদের সকলকে নিয়ে আমি দেশের জন্য দায়িত্ব পালন করব। আমার নেতা হুগো চ্যাভেজের নীতি ও আদর্শ অনুযায়ী আমি তাঁর অসমাপ্ত কাজ শেষ করব।
'
নিকোলাস মাদুরো ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় রাশিয়ার প্রসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল ক্যাস্ট্রো মাদুরোকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। অভিনন্দন কমরেড নিকোলাস মাদুরো মোরোস। অভিনন্দন তোমাকে ও ভেনেজুয়েলার সর্বস্তরের সাধারণ মানুষকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।