আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এডিবিও চুক্তি বাতিল করল : টোকিওর সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবে জাইকা।

মনের সব স্বপ্নগুলো একদিন বাস্তব হয়ে ধরা দেবে, আমি সেই বিশ্বাসে বিশ্বাসী। বিশ্বব্যাংকের পর এবার পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে ঋণসহায়তা প্রত্যাহার করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। গতকাল সংস্থাটির এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, যে কারণে বিশ্বব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এডিবি তা অনুধাবন করতে পারে এবং এ সিদ্ধান্তকে সম্মান করে। পরিচালনের ক্ষেত্রে এডিবি ও বিশ্বব্যাংক একই ধরনের নীতি, নিয়ম ও কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করে।

কিন্তু এডিবির দুঃখ এই যে দেশ ও আঞ্চলিক বিবেচনায় পদ্মা সেতুর বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও উভয়পক্ষ কাজ করার মতো কার্যকর একটি সমঝোতায় পৌঁছতে পারেনি। বিশ্বব্যাংক যে পদ্মা সেতু থেকে ঋণসহায়তা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে, বিষয়টি আগেই এডিবিকে জানিয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। পদ্মা সেতু বাংলাদেশ ও এর দক্ষিণাঞ্চলের জন্য ‘যুগান্তকারী প্রকল্প’ উল্লেখ করে এডিবি বলেছে, বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্পে সবচেয়ে বড় অর্থ জোগানদাতা। সংস্থাটির সঙ্গে কাজ করছে এডিবি, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি)। এডিবির দাবি, বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের সঙ্গে এডিবির দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে।

সংস্থাটি আগামীতেও উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে দীর্ঘমেয়াদি প্রয়োজনীয় উন্নয়নের ব্যাপারে বাংলাদেশের পাশে থাকতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে। বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংক সমঝোতায় আসতে ব্যর্থ হওয়ায় হতাশাও প্রকাশ করেছে ঋণদাতা এ সংস্থা। দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক শুক্রবার পদ্মা সেতু প্রকল্পে তাদের অর্থায়ন বাতিলের ঘোষণা দেয়। ২৯০ কোটি ডলারের এ প্রকল্পে তাদের সবচেয়ে বেশি ১২০ কোটি ডলার দেয়ার কথা ছিল। এছাড়া এডিবি ৬১ কোটি, জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) ৪০ কোটি এবং ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) ১৪ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার জন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছিল।

এডিবি সরে যাওয়ার কারণ বিবৃতিতে স্পষ্ট করে না বললেও একটি সূত্র বলেছে, বিশ্বব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে এডিবি পুরোপুরি একমত। বিশ্বব্যাংকের মতো এ সংস্থাটিও একমত, পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে ভয়াবহ দুর্নীতি হয়েছে। জাইকা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া না জানালেও তারা আগের দুটি সংস্থার পথ অনুসরণ করবে বলে জানা গেছে। তবে জাইকার একজন প্রতিনিধি বলেছেন, তারা টোকিওর সঙ্গে কথা বলে ঋণচুক্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে। অর্থনীতিবিদরা বললেন, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তির যে ধরন, তাতে মূল অর্থদাতা সংস্থা সরে গেলে অন্যদের অর্থায়নও আপনা-আপনি আটকে যাওয়ার কথা।

এতে এডিবিসহ অন্য সংস্থাগুলোর কাছ থেকে আগের চুক্তি অনুযায়ী টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান আমার দেশ-কে বলেন, এটা একটা কো-ফিন্যান্স প্রজেক্ট। বিশ্বব্যাংক যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্যদের সঙ্গে আলাপ করে একসঙ্গেই নিয়েছে। কাজেই এডিবি, জাইকাসহ অন্য দাতাসংস্থাগুলোও এখন সরে যাবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে হতাশা প্রকাশ করে ঢাকায় জাইকার প্রতিনিধি কেই তোয়ামা রোববার সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের (জাপান) সঙ্গে আলোচনা করে আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।

প্রসঙ্গত, দুর্নীতি অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে—দাবি করে বিশ্বব্যাংক শুক্রবার পদ্মা সেতু প্রকল্পে তাদের অর্থায়ন বাতিলের ঘোষণা দেয়। ২৯০ কোটি ডলারের এ প্রকল্পে তাদের সবচেয়ে বেশি ১২০ কোটি ডলার দেয়ার কথা ছিল। ওই দিন ওয়াশিংটন থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে বিশ্বব্যাংক জানায়, পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপর্যায়ে দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-প্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে। বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করার পরও দুর্নীতি তদন্তে তেমন কোনো সাড়া না পাওয়ায় ব্যাংককে এ অর্থচুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। আমেরিকাভিত্তিক এ উন্নয়ন সংস্থাটি তাদের বিবৃতিতে আরও জানায়, দুই দফা তদন্তের মাধ্যমে ব্যাংক পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে দেয়।

তারা এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতেও সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছিল। কিন্তু সরকার তাতে সাড়া দেয়নি—যার কারণে প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিল করতে হয়েছে এবং এ সিদ্ধান্ত অনতিবিলম্বে কার্যকর হবে। বিবৃতিতে বলা হয়, ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ বাংলাদেশের প্রস্তাবিত পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংক তার অর্থায়ন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ধরনের দুর্নীতির প্রমাণ থাকার পর বিশ্বব্যাংক চোখ বুজে থাকতে পারে না, থাকা উচিত নয় এবং থাকবেও না। ‘বিভিন্ন ধরনের নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগে বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তা, কানাডার এসএনসি-লাভালিন কোম্পানির কর্মকর্তা ও বেসরকারি লোকজনও এ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।

সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তা, কানাডার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ব্যক্তিদের যোগসাজশে বিভিন্ন সূত্র থেকে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-প্রমাণ তাদের কাছে মজুত রয়েছে। বিবৃতিতে দিন-তারিখ উল্লেখ করে বলা হয়, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এবং ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে এসব তথ্য-প্রমাণ বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুর্নীতির এ অভিযোগ পূর্ণাঙ্গভাবে তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছিলাম। আমরা এটা প্রত্যাশা করেছিলাম, বাংলাদেশ সরকার দুর্নীতির এ বিষয়টিকে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দেবে। বিবৃতিতে বলা হয়, কানাডায় এসএনসি-লাভালিনের সদর দফতর অবস্থিত।

বিশ্বব্যাংকের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এক বছর ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে কানাডার ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসেস নামের একটি গোয়েন্দা সংস্থা এসএনসি-লাভালিনের দুজন সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পদ্মা সেতু ইস্যুতে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে। এ ব্যাপারে তদন্ত ও বিচারকাজ এগিয়ে চলছে। বিশ্বব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বার্থে তারা পদ্মা সেতুর গুরুত্ব অনুধাবন করেছে। অন্যদিকে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ার পর বিশ্বব্যাংক যদি পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ না করত, তাহলে তা বাংলাদেশের সুশাসন ও উন্নয়নের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াত। দুর্নীতির যে তথ্য-প্রমাণ বিশ্বব্যাংক পেয়েছে, সেক্ষেত্রে তারা বাংলাদেশ সরকারের কাছে কিছু পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছিল।

বিশ্বব্যাংকের প্রথম দাবি ছিল, যেসব সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া। দ্বিতীয়ত, এ অভিযোগ তদন্তের জন্য দুদকে একটি বিশেষ তদন্ত দল নিয়োগ করা। তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত বিশ্বব্যাংকের তদন্ত প্যানেলকে অভিযোগটি বস্তুনিষ্ঠভাবে তদন্তের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক সহায়তা প্রদান। চতুর্থত, বাংলাদেশ সরকারের আইন ও বিধি অনুযায়ী তদন্তে দোষী প্রমাণিতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। বিবৃতিতে বলা হয়, দুর্নীতির প্রমাণ হাতে পাওয়ার পর প্রস্তাবিত পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন ইস্যুতে বিশ্বব্যাংকের অবস্থান ব্যাখ্যা ও বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে তার প্রতিক্রিয়া জানার জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের দল ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল।

কিন্তু সরকারের প্রতিক্রিয়া সন্তোষজনক ছিল না। বিশ্বব্যাংক বলেছে, তারা একটি প্রকল্পে তখনই অর্থায়ন করতে পারে, যখন তারা সে প্রকল্পের স্বচ্ছতা এবং কার্যক্রমের পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। কারণ বিশ্বব্যাংকের দাতা দেশগুলোর কাছে তাদের একটি নৈতিক দায়িত্ব আছে। বিবৃতিতে বলা হয়, দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে বাংলাদেশ সরকার পর্যাপ্ত সাড়া না দেয়ায় বহুমুখী পদ্মা সেতুতে ঋণ প্রদানের সিদ্ধান্তটি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তা শিগগিরই কার্যকর হবে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৮ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।