আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাঠমান্ডুর প্রান্তরে-১ : যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ শিশুদের নতুন স্বপ্ন

ভয়াবহ অবস্থা থেকে উদ্ধার পেয়ে স্কুলগামী বিশ জন যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ শিশু পেয়েছে উন্নত জীবনের সুযোগ। জনহিতকর কাজের অংশ হিসেবে এ বছর কাঠমান্ডুর শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জ্ঞানদায়া বাল বাতিকা স্কুল শিশুদের তাদের এখানে পড়ার সুযোগ দিয়েছে। সহপাঠীরা অভিজাত ও ধনাঢ্য পরিবার থেকে এলেও, এই শিশুদের আগমন সম্পূর্ন ভিন্ন পরিবেশ থেকে। সাত বছর আগে শিশু বিশটিকে উদ্ধার করা হয়েছিল কাঠমান্ডুর একটা অন্ধকার-অস্বাস্থ্যকর গোয়ালঘর থেকে! রিতা ভান্ডারি, বসন্ত বুধাথকিরা এখন ডাক্তার, আইনজীবী, বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে! অভিজাত স্কুলে পড়ার সুযোগ পাওয়া ১৪ বছরের রিতা ভান্ডারি বলল, ‘আমার স্বপ্ন পাইলট হওয়া। বিজ্ঞান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাই।

চেষ্টা করব ফ্রান্সে যেতে। ’ ক্লাশে মেধাবিও, দশম। তার মতো আরো ১৯ জনকে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন নেপালে বেড়াতে আসা আইরিশ দম্পতি জেন স্পোলেন ও মোওরা! ২০০৪ সালে নেপালে বেড়াতে এসে তারা একদিন শুনলেন বেশ কয়েকজন শিশু গোয়ালঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এরপরই সেখানে যান এবং শিশুদের উদ্ধার করেন এই দম্পতি। নেপালে একটা দাতব্য প্রতিষ্ঠানও খুলে বসেছেন জেন স্পোলেন-মোওরা দম্পতি।

উত্তম সানজেলের (কাঠমান্ডুর তৃণমুলের শিক্ষা সম্প্রসারণে বড় ভুমিকা রাখছেন। ইতিমধ্যে কাঠমান্ডুতে তার গড়া ১৪টি বাঁশের স্কুলে ১৪ হাজার দরিদ্র শিক্ষার্থী আধুনিক শিক্ষা নিচ্ছে) মাধ্যমে কাঠমান্ডুর দাতব্য প্রতিষ্ঠান ‘দ্য হুমলা চিলড্রেন্স হোম’এ যাওয়া এবং দর্শন। শিশুদের উদ্ধার করার সেই সময়ের বর্ণনা দিলেন জেন স্পোলেন, ‘মার্চের ঠান্ডা একটা দিন। অন্ধকার ঘরে ঢুকে প্রথমে আমরা কোন শিশুর অস্তিত্ব টের পাইনি। মই বেয়ে আমরা উপরে উঠলাম।

উপরের ঘরে কোন জানালা না থাকায় অন্ধকার ছিল। চোখ অন্ধকারে কিছুটা সয়ে গেলে দেখলাম, ছোট্ট ঘরে গাদাগাদি করে থাকা এক দল শিশু। ঘরে স্তুপ হয়েছিল শিশুদের কাপড়। ’ জেন স্পোলেন ও তার স্ত্রী শিশু বিশটিকে উদ্ধার করার সময় তাদের প্রত্যেকের বয়স ছিল তিন থেকে নয়। এই দম্পতি কাঠমান্ডুর একটা বাড়ি ভাড়া নিয়ে দাতব্য প্রতিষ্ঠান খুলে বাচ্চাদের সেখানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা ছাড়াও স্থানীয় স্কুলে ভর্তি করা হয়।

সেখানে স্ব-গোত্রীয় ছাড়াও তারা ইংরেজি, নেপালি ভাষা শিখতে লাগলো। শিশুদের রুটিন বাঁধা জীবনটা এমন, ভোর ৬টায় ঘুম থেকে প্রার্থনা। স্কুলে যাওয়ার আগে এক ঘন্টা লেখাপড়া। ক্লাশ শেষ হলে এক ঘন্টা সময় খেলার। এরপর আবার ফিরে আসে পড়াশুনায়।

তাদের এই শিক্ষা ও রুটিন বাঁধা জীবন প্রক্রিয়ায় খরচও কম না। পুরো দলটার জন্য বছরে ব্যয় ৩৫ হাজার ডলার (২৮ লাখ রুপি)। খরচের অধিকাংশই স্পোলেন-মোওরা দম্পতি বহন করে, বাকিটা আসে দাতাদের কাছ থেকে। দাতব্যটি শুরু করে এই দম্পতি দেশে ফিরে গেলেও তারা শিশুদের যথাযথ শিক্ষা ও বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে চান্দ রাই ও তার স্ত্রী মেনুকাকে শিক্ষক ও অভিভাবক নিয়োগ করে যান। দায়িত্ব পেয়ে রীতিমতো আপ্লুত তারা।

রিতার জীবনের আজকের সাফল্যের সঙ্গে তার জীবনের শুরুটা একেবারেই মিলে না। ১৯৯৬ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত মাওবাদীদের গৃহযুদ্ধের সময় তার বাবা মারা যায়। এরপর তাকে কাঠমান্ডু পাঠিয়ে দিলে ছোট ভাই বুদ্ধ গৌতম বোন ও মাকে ফেলে চলে যায়। রিতার কাছে স্পোলেন ও জেন দাদা-দাদির মতো। তাদের আন্তরিকতায় শিশুরা এখন পর্যন্ত কেউ বাড়ি ফিরে যানি।

প্রতি মাসে মুঠোফোনে বাড়িতে কথা বলার সুযোগ পায়। স্পোলেন দম্পতি আগে ২/৩ মাস পর পর আসলেও এখন বছরের ছয়মাস কাটান নেপালে। স্পোলেন জানান, ‘শিক্ষা জীবনের পরবর্তী কয়েক বছরে দেখা গেল শিশুদের মধ্যে প্রকৃত অর্থেই বড় হওয়ার একটা ইচ্ছা জন্ম নিয়েছে। একটা পরিবারের মতো বাস করলেও নিজেদের মধ্যেই প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব তৈরি হয়েছে। শিশুরা লেখাপড়ায় খুবই ভালো করছে, এবং অনেকে ক্লাশের অনেক ভাল ছাত্রদেরও টপকে যাচ্ছে।

রিতা ভান্ডারি অতীত প্রসঙ্গে জানালেন, দারিদ্রপীড়িত পশ্চিম নেপালের তার পরিবার সে সময় গ্রামে ছড়িয়ে পড়া ভয়াবহ যুদ্ধ থেকে মুক্ত জীবন দিতে পাচারকারীদের হাতে তুলে দেয়! হুমলায় শুরু হয় তাদের অনিশ্চিত যাত্রা। স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী যাত্রা শেষ হওয়ার কথা কাঠমান্ডুর নির্মম পথে। এসব শিশুদের কিনে মালিকরা দিনে ইট কারখানা বা কোন মিলের শ্রমিক ও রাতে মেয়ে শিশুদের পতিতার কাজ করতে বাধ্য করে। এখন এসব শিশুদের নিয়ে খুবই আশাবাদী স্পোলেন। বললেন, ‘সঠিক পরিচর্যা করা হলে তাদেরকে দমিয়ে রাখা যাবে না।

’ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।