ভবের খেয়া এবার বাওয়া হইল আমার শেষ; এবার তরী ভাসিয়ে দিলাম পরপারের দেশ । ।
কৃষ্ণচন্দ্র দে - কে. সি. দে – (১৮৯৩ – ১৯৬২) বাংলা সঙ্গীতের একজন আদি ও প্রবাদ পুরুষ, কিংবদন্তীর কণ্ঠশিল্পী, সিনেমা ও থিয়েটার অভিনেতা, থিয়েটার প্রযোজক ও সঙ্গীত পরিচালক। তিনি ছিলেন অপর কিংবদন্তী, শচিন দেব বর্মণের প্রথম সঙ্গীত শিক্ষক। তাঁর ভাতুস্পুত্র হলেন সুবিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী, মান্না দে।
কৃষ্ণচন্দ্র দে, ১৩ বছর বয়সে তাঁর দৃষ্টিশক্তি হারান বলে, তিনি ‘অন্ধ গায়ক’ নামেও সমধিক পরিচিত।
কৃষ্ণচন্দ্র দে জন্মগ্রহন করেন ১৮৯৩ সনের আগস্ট মাসে। দিনটি জন্মাষ্টমীর ছিল বলে তাঁর বাবা, শিব চন্দ্র দে ও মা, রত্নমালা দেবী তাঁদের ছেলের নাম রাখেন শ্রীকৃষ্ণের নামে, তথা, কৃষ্ণচন্দ্র দে। বাল্যকাল থেকেই সঙ্গীতের প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ ছিল। নিয়তির পরিহাস, ১৯০৬ সালে, আকস্মিক মাথার যন্ত্রণা থেকে তিনি দৃষ্টিশক্তি হারাতে থাকেন, সেকালের চিকিৎসার সীমাবদ্ধতার কাছে হার মেনে তিনি মাত্র ১৩ বছর বয়সেই অন্ধত্ব বরণ করেন।
কিন্তু যার প্রতিভা প্রায় সীমাহীন, তাঁকে রুখবে কে ?
কিশোর কৃষ্ণচন্দ্রের সঙ্গীত শিক্ষাজীবন শুরু হয় শশীভূষণ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে, ক্রমান্বয়ে তিনি উস্তাদ বাদল খানের কাছে খেয়াল, দানী বাবুর কাছে ধ্রুপদ, রাধা রমণের কাছে কীর্তন ও কণ্ঠে মহারাজের কাছে তবলা শেখেন।
১৯১৭ সনে গ্রামোফোন কোম্পানি থেকে তাঁর প্রথম রেকর্ড বের হয়, তারপরের নিস্তরঙ্গ ছয়টি বছর যায় সঙ্গীত সাধনায়। এরপর সঙ্গীতে ম্যাচিউরড কৃষ্ণচন্দ্রের আবির্ভাব হয়, অপর প্রবাদপুরুষ, শিশির ভাদুরির থিয়েটারে। শুরু হয় গান ও অভিনয় দিয়ে থিয়েটার জয়। একের পর এক নাটক সফল হতে থাকে অন্ধ কৃষ্ণচন্দ্রের সঙ্গীত ও অভিনয়ের উপর ভর করে।
অবশেষে, ১৯৩১ এ কৃষ্ণচন্দ্র নিজের থিয়েটার কোম্পানি খোলেন। এবার তিনি একইসাথে সঙ্গীত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করতে শুরু করেন। তাঁর নতুন থিয়েটারে শিশির ভাদুরিও অভিনয় করেন। বাংলা থিয়েটারের উন্নতিই তখন কৃষ্ণচন্দ্রের ধ্যান জ্ঞান হয়ে দাঁড়ায়।
এর মধেই শুরু হয় সিনেমার যুগ।
১৯৩১ এ, নাটকে ব্যাস্ত কৃষ্ণচন্দ্র অনিচ্ছাসত্ত্বেও প্রথম 'টকি সিনেমা'য় দুটি গানে কণ্ঠ দেন। ১৯৩২ এ নির্মিত 'চণ্ডীদাস' সিনেমার মাধ্যমেই কৃষ্ণচন্দ্রের সিনেমা অভিযান শুরু হয় - চণ্ডীদাসে তিনি নাম ভুমিকায় অভিনয় ও কণ্ঠদান, এই দুইই সাফল্যের সাথে করেন। এই সাফল্য থেকেই একজন এনটারটেইনার হিসাবে তাঁর প্রকৃত বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার শুরু হয়। পরবর্তী দশক জুড়ে তিনি অভিনেতা, গায়ক, সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে সাফল্যের পর সাফল্যের মুকুট পড়তে থাকেন। একইসাথে চলে মঞ্চে, সঙ্গীত সম্মেলনে সঙ্গীত পরিবেশন।
১৯৪২ এ কৃষ্ণচন্দ্র বম্বেতে আবাস গড়ে হিন্দি সিনেমায় মনোনিবেশ করেন। যথারীতি, হিন্দি সিনেমায় অভিনয়, কণ্ঠদান, সঙ্গীত পরিচালনা সবই তিনি আগের মতোই সফলভাবে করতে থাকেন।
তাঁর গানগুলো লোকসঙ্গীত আশ্রিত হওয়ায়, সহজেই সকল শ্রেণীর শ্রোতার হৃদয় ছুঁয়ে যায়, তাঁর কীর্তন, বাউল ও ভাটিয়ালী গানগুলো ভীষণ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। হিন্দি গানের পাশাপাশি তাঁর গাওয়া উর্দু গজলও জনপ্রিয় হয়। তাঁর হাত ধরেই বাংলা গানে ঠুমরী, দাদরা ও গজলের প্রচলন হয়।
তাঁর গীত, বাংলা গানগুলো ছিল সযত্নে বাছাই করা, প্রায় ক্ষেত্রেই, সুরকার থাকতেন তিনি নিজে আর গীতিকার হতেন কোন বিখ্যত কবি যেমন, হেমেন্দ্র কুমার রায়, শৈলেন রায়, অজয় ভট্টাচার্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ।
১৯৪৭ এ কৃষ্ণচন্দ্র আবার বাংলা সিনেমায় ফিরে আসেন, যথারীতি অভিনেতা, গায়ক হিসাবে, বাড়তি যোগ হয় সিনেমা প্রযোজনা। পরপর বেশ কয়েকটি সফল সিনেমার পর, ১৯৫৭ সালে 'একতারা' সিনেমায় অতিথি শিল্পী হিসাবে জীবনের শেষবারের মতো পর্দায় আবির্ভূত হন।
একান্ত ব্যাক্তিগত জীবনে, সবাই তাঁকে ব্যাচেলর হিসাবে জানলেও, তিনি তাঁর সহ-অভিনেত্রী, তারকবালা (মিস লাইট) কে বিয়ে করছিলেন, শাস্ত্রমতে, কিন্তু গোপনে। বিয়ের পর, তারকবালার নাম হয়, রমা দে ।
তাঁদের একমাত্র সন্তান মাত্র ১৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করে। এই শোক, কৃষ্ণচন্দ্র, বাকী জীবন পাথর চেপে রাখেন। কৃষ্ণচন্দ্র একইসাথে, রমা দে'র ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তিত ছিলেন এবং নিজের মৃত্যু শয্যায় শুয়ে তাঁর আত্মীয়দের অনুরোধ করেন, যেন তাঁর অবর্তমানে, রমার দেখভাল করা হয়। তা শেষ পর্যন্ত আর হয়নি এবং কৃষ্ণচন্দ্রের মৃত্যুর পর রমা দে নিভৃত নিঃসঙ্গ জীবন অতিবাহিত করেন।
১৯৬২ সনের নভেম্বরে, ৬৯ বছর বয়সে, কলকাতায় , কৃষ্ণচন্দ্র দে পরলোকগমন করেন।
এর মধ্য দিয়েই বাংলা সঙ্গীতের এক আদি পর্বের অবসান ঘটে।
কৃষ্ণচন্দ্র দে - কালজয়ী বাংলা গান - তুমি গো বহ্নিশিখা
বর্তমানে কৃষ্ণচন্দ্র দে'র খুব স্বল্প সংখ্যক বাংলা গানের রেকর্ডিং অবশিষ্ট আছে, যার অধিকাংশই অতি প্রাচীন ৭৮ আর পি এম রেকর্ড, আর আছে ২টি রি-মাসটারড অ্যালবাম, যার সবই বেশ রেয়ার। 'তুমি গো বহ্নিশিখা' ওই দুটি অ্যালবামের একটি।
সূচী
১। মুক্তির মন্দির সোপানতলে
২।
আসলে কি মেঘমেদুর
৩। বাঁশরি না বাজে
৪। ঘন অম্বরে মেঘসমুদ্র
৫। তুমি গো বহ্নিশিখা
৬। তোমার কাজল আঁখি
৭।
চেয়ো না চেয়ো না ফিরে
৮। যদি বন্ধুর রাত এলো দ্বারে
৯। কাশ্মীর হতে কন্যাকুমারী
১০। কথা ছিল আজ রাতে
১১। ঘন ডম্বরু
১২।
যমুনারই তীরে
১৩। চমকে বিজুরী
১৪। সঘন বনগিরি
১৫। কেন কুণ্ঠিত ওগো পান্থ
১৬। দিয়ো গো বিদায়
কোয়ালিটি - ১২৮ কেবিপিএস এমপি৩
ফাইল সাইজ - ৪৭ মেগাবাইটস
ডাউনলোড - কৃষ্ণচন্দ্র দে - তুমি গো বহ্নিশিখা ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।