আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

وحدة الأمة واتباع السنة উম্মাহর ঐক্য : পথ ও পন্থা : মতভিন্নতার মাঝেও সম্প্রীতি রক্ষা, সুন্নাহসম্মত পন্থায় সুন্নাহর প্রতি আহবান

''প্রভু, ভুল ভেঙ্গে দাও; যে ভুলে তোমারে ভুলি, হিরা ফেলে কাচ তুলি, আমার সেই ভুল তুমি ভেঙ্গে দাও প্রভু। '' মুসলিম উম্মাহ পরস্পর ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং নিজেদের একতা ও সংহতি রক্ষা করা ইসলামের একটি মৌলিক ফরয। তেমনি সুন্নাহর অনুসরণ তথা আল্লাহর রাসূলের শরীয়ত এবং তাঁর উসওয়াহ ও আদর্শকে সমর্পিত চিত্তে স্বীকার করা এবং বাস্তবজীবনে চর্চা করা তাওহীদ ও ঈমান বিল্লাহর পর ইসলামের সবচেয়ে বড় ফরয। সুতরাং সুন্নাহর অনুসরণ যে দ্বীনের বিধান উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি রক্ষা এবং বিভেদ ও অনৈক্য থেকে বেঁচে থাকাও সেই দ্বীনেরই বিধান। এ কারণে এ দুইয়ের মাঝে বিরোধ ও সংঘাত হতেই পারে না।

সুতরাং একটির কারণে অপরটি ত্যাগ করারও প্রশ্ন আসে না। কিন্তু এখন আমরা এই দুঃখজনক বাস্তবতার সম্মুখীন যে, হাদীস অনুসরণ নিয়ে উম্মাহর মাঝে বিবাদ-বিসংবাদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। উম্মাহর ঐক্য ও সংহতির প্রশ্নে মুজতাহিদ ইমামগণকে এবং তাদের সংকলিত ফিকহী মাযহাবসমূহকে দায়ী করা হচ্ছে। অথচ ফিকহের এই মাযহাবগুলো হচ্ছে কুরআন-সুন্নাহর বিধিবিধানেরই ব্যাখ্যা এবং তার সুবিন্যস্ত ও সংকলিত রূপ। মূলে তা ফকীহ ও মুজতাহিদ সাহাবীগণের মাযহাব, যা উম্মাহর অবিচ্ছিন্ন কর্মপরম্পরা তথা তাওয়ারুছের মাধ্যমে চলে এসেছে।

এই অবস্থা প্রমাণ করে, আমাদের অনেকে সুন্নাহ অনুসরণের মর্ম ও তার সুন্নাহসম্মত পন্থা এবং সুন্নাহর প্রতি আহবানের সুন্নাহসম্মত উপায় সম্পর্কে দুঃখজনকভাবে উদাসীন। তদ্রূপ মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সংহতির সঠিক উপলব্ধি এবং ঐক্যবিনাশী বিষয়গুলো চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে ভ্রান্তি ও বিভ্রান্তির শিকার। সুন্নাহর অনুসরণ এবং উম্মাহর ঐক্য দুটো বিষয়ই অনেক দীর্ঘ এবং উভয় ক্ষেত্রে আমাদের সমাজে চলমান অবহেলা ও ভুল ধারণা ব্যাপক। সবকটি দিক নিয়ে এ প্রবন্ধে আলোচনা করা সম্ভব নয়। এখানে শুধু প্রবন্ধের শিরোনাম (মতভিন্নতার মাঝেও সম্প্রীতি রক্ষা; সুন্নাহসম্মত পন্থায় সুন্নাহর প্রতি আহবান)-এর সাথে সম্পৃক্ত কিছু মৌলিক বিষয় আলোচনা করা উদ্দেশ্য।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিক কথা বলার এবং ইখলাস ও ইতকানের সাথে উপস্থাপন করার তাওফীক দান করুন। আমীন। ঐক্য ও সংহতি এবং সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির গুরুত্ব ইসলাম তাওহীদের দ্বীন এবং ঐক্যের ধর্ম। এখানে শিরকের সুযোগ নেই এবং অনৈক্য ও বিভেদের অবকাশ নেই। ইসলামে ঐক্যের ভিত্তি হচ্ছে তাওহীদ-এক আল্লাহর ইবাদত, এক আল্লাহর ভয়।

এই তাওহীদের সমাজকে ইসলাম আদেশ করে সীরাতে মুস্তাকীম ও সাবীলুল মুমিনীনের উপর একতাবদ্ধ থাকার, নিজেদের ঐক্য ও সংহতি এবং সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি রক্ষা করার, ইজমা ও সাবীলুল মুমিনীনের বিরোধিতা পরিহার করার এবং এমন সব কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার, যা উম্মাহর একতা নষ্ট করে এবং সম্প্রীতি বিনষ্ট করে। সাবীলুল মুমিনীন থেকে বিচ্যুত হওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে কুফর এবং পরস্পর কলহ-বিবাদে লিপ্ত হওয়া হারাম ও কবিরা গুনাহ। কথাগুলো যদিও দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট এবং উম্মাহর সর্ববাদীসম্মত আকীদা তবুও পুনস্মরণের স্বার্থে কিছু আয়াত ও হাদীস উল্লেখ করা হচ্ছে। (এ প্রসঙ্গে মূল প্রবন্ধে আটটি সূরার সর্বমোট ২৭টি আয়াত রয়েছে। এখানে আরবী পাঠ ও তরজমাসহ কয়েকটি আয়াত উল্লেখ করা হল।

إِنَّ هَذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَأَنَا رَبُّكُمْ فَاعْبُدُونِ ۞ وَتَقَطَّعُوا أَمْرَهُمْ بَيْنَهُمْ كُلٌّ إِلَيْنَا رَاجِعُونَ ۞ (তরজমা) ‘নিশ্চিত জেনো, এই তোমাদের উম্মাহ, এক উম্মাহ (তাওহীদের উম্মাহ) এবং আমি তোমাদের রব। সুতরাং আমার ইবাদত কর। কিন্তু তারা নিজেদের দ্বীনকে নিজেদের মাঝে টুকরা টুকরা করে ফেলেছে। (তবে) সকলেই আমার কাছে ফিরে আসবে। -সূরাতুল আম্বিয়া (২১) : ৯২-৯৩ وَإِنَّ هَذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَأَنَا رَبُّكُمْ فَاتَّقُونِ ۞ فَتَقَطَّعُوا أَمْرَهُمْ بَيْنَهُمْ زُبُرًا كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ ۞ فَذَرْهُمْ فِي غَمْرَتِهِمْ حَتَّى حِينٍ ۞ (তরজমা) ‘নিশ্চিত জেনো, এই তোমাদের উম্মাহ, এক উম্মাহ (তাওহীদের উম্মাহ) এবং আমি তোমাদের রব।

সুতরাং আমাকে ভয় কর। এরপর তারা নিজেদের দ্বীনের মাঝে বিভেদ করে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেল। প্রত্যেক দল (নিজেদের খেয়ালখুশি মতো) যে পথ গ্রহণ করল তাতেই মত্ত রইল। সুতরাং (হে পয়গাম্বর!) তাদেরকে এক নির্ধারিত সময় পর্যন্ত মূর্খতায় ডুবে থাকতে দাও। -সূরা মুমিনুন (২৩) : ৫২-৫৩ উপরের দোনো জায়গায় নবীগণ যে তাওহীদের দাওয়াত দিয়েছেন তা বর্ণনা করার পর বলা হয়েছে, আল্লাহর কাছে উম্মত একটিই।

আর তা হচ্ছে তাওহীদের উম্মত। সূরা ইউনুস (১০ : ১৯) ও সূরা বাকারায় (২ : ২১৩) বলা হয়েছে যে, আদিতে সকল মানুষ এ সমাজেই ছিল। পরে লোকেরা কুফর ও শিরক অবলম্বন করে আলাদা উম্মত, আলাদা সমাজ বানিয়ে নিয়েছে। তাই উম্মাহর ঐক্য ও সংহতির কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে তাওহীদ। تَقَطَّعُوا أَمْرَهُمْ بَيْنَهُم (তারা নিজেদের দ্বীনকে নিজেদের মাঝে টুকরা টুকরা করে ফেলেছে) বাক্যে আকীদায়ে তাওহীদ এবং দ্বীনের অন্যান্য মৌলিক ও অকাট্য আকীদা ও বিধানসমূহ (জরুরিয়াতে দ্বীনের) অস্বীকার বা অপব্যাখ্যার মাধ্যমে আলাদা মিল্লাত ও আলাদা উম্মত সৃষ্টির নিন্দা করা হয়েছে।

شَرَعَ لَكُمْ مِنَ الدِّينِ مَا وَصَّى بِهِ نُوحًا وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى وَعِيسَى أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ كَبُرَ عَلَى الْمُشْرِكِينَ مَا تَدْعُوهُمْ إِلَيْهِ اللَّهُ يَجْتَبِي إِلَيْهِ مَنْ يَشَاءُ وَيَهْدِي إِلَيْهِ مَنْ يُنِيبُ ۞ وَمَا تَفَرَّقُوا إِلَّا مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْعِلْمُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ وَلَوْلَا كَلِمَةٌ سَبَقَتْ مِنْ رَبِّكَ إِلَى أَجَلٍ مُسَمًّى لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ وَإِنَّ الَّذِينَ أُورِثُوا الْكِتَابَ مِنْ بَعْدِهِمْ لَفِي شَكٍّ مِنْهُ مُرِيبٍ ۞ فَلِذَلِكَ فَادْعُ وَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ وَقُلْ آَمَنْتُ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ مِنْ كِتَابٍ وَأُمِرْتُ لِأَعْدِلَ بَيْنَكُمُ اللَّهُ رَبُّنَا وَرَبُّكُمْ لَنَا أَعْمَالُنَا وَلَكُمْ أَعْمَالُكُمْ لَا حُجَّةَ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ اللَّهُ يَجْمَعُ بَيْنَنَا وَإِلَيْهِ الْمَصِيرُ ۞ (তরজমা) তিনি তোমাদের জন্য সেই দ্বীনই স্থির করেছেন, যার হুকুম দিয়েছিলেন নূহকে এবং (হে রাসূল!) যা আমি ওহীর মাধ্যমে তোমার কাছে পাঠিয়েছি এবং যার হুকুম দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে; যে, কায়েম রাখ এই দ্বীন এবং তাতে সৃষ্টি করো না বিভেদ। (তা সত্ত্বেও) মুশরিকদের তুমি যে দিকে ডাকছ তা তাদের কাছে অত্যন্ত গুরুভার মনে হয়। আল্লাহ তাআলা যাকে ইচ্ছা বাছাই করে নিজের দিকে আকৃষ্ট করেন এবং যে আল্লাহর দিকে রুজু হয় তাকে নিজ দরবার পর্যন্ত পৌঁছার সামর্থ্য দান করেন। এবং মানুষ যে বিচ্ছিন্ন হয়েছে তা হয়েছে তাদের কাছে নিশ্চিত জ্ঞান আসার পরই, পারস্পরিক শত্রুতার কারণে। তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে যদি একটি কথা নির্ধারিত কাল পর্যন্ত পূর্বেই স্থির না থাকত তবে তাদের বিষয়ে ফয়সালা হয়ে যেত।

তাদের পর যারা কিতাবের উত্তরাধিকারী হয়েছে তারা এ সম্পর্কে এক বিভ্রান্তিকর সন্দেহে পড়ে আছে। ‘সুতরাং (হে রাসূল!) তুমি ঐ বিষয়ের দিকেই মানুষকে আহবান কর এবং অবিচল থাক, যেরূপ তোমাকে আদেশ করা হয়েছে। এবং তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করো না। বল, আল্লাহ যে কিতাব নাযিল করেছেন আমি তার প্রতি ঈমান এনেছি এবং আমি আদিষ্ট হয়েছি তোমাদের মাঝে ন্যায়বিচার করতে। আল্লাহ আমাদের রব এবং তোমাদেরও রব।

আমাদের কর্ম আমাদের, তোমাদের কর্ম তোমাদের। আমাদের ও তোমাদের মাঝে কোনো তর্ক নেই। আল্লাহ আমাদের সকলকে একত্র করবেন এবং তাঁরই কাছে সকলের প্রত্যাবর্তন। -সূরাতুশ শূরা (৪২) : ১৩-১৫ দ্বীনের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির অর্থ, তাওহীদ বা অন্য কোনো মৌলিক বিষয় সরাসরি অস্বীকার করে কিংবা তাতে অপব্যাখ্যা করে তাওহীদের উম্মাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া। হক সম্পর্কে নিশ্চিত জ্ঞান আসার পর এ বিভেদ-বিচ্ছিন্নতা কেবল জিদ ও হঠকারিতার কারণেই হয়ে থাকে।

শাখাগত বিষয়ে কুরআন-সুন্নাহর দলিলভিত্তিক যে মতপার্থক্য তা এখানে উদ্দেশ্য হতে পারে না। কারণ অনেক শাখাগত বিধানের ক্ষেত্রে স্বয়ং নবীগণের শরীয়তেও বিভিন্নতা ছিল। অথচ তাঁদের সবার দ্বীন ছিল এক। তাঁরা সবাই ছিলেন তাওহীদপন্থী এবং অভিন্ন। অন্য অনেক আয়াতের মতো উপরের আয়াতগুলোতেও স্পষ্ট নির্দেশনা আছে যে, দ্বীনের মৌলিক বিষয়ে মতভেদ হতে পারে না।

এখানে মতভেদ অর্থই বিভেদ-বিচ্ছিন্নতা। আর এই বিভেদের দায় ঐ মতভেদকারীকেই বহন করতে হবে। যারা হকপন্থী, তাদেরকে নয়। কারণ ঐক্যের ভিত্তি হচ্ছে তাওহীদ ও মৌলিক আকিদা ও বিধান। যারা এর উপর আছে তারা তো মূল পথেই রয়েছে।

যারা মতভেদ করেছে তারা এই পথ থেকে সরে গেছে এবং বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতার জন্ম দিয়েছে। আর এ কথা বলাই বাহুল্য যে, তাওহীদের বিষয়ে বা দ্বীনের অন্য কোনো মৌলিক বিষয়ে হক থেকে বিচ্যুত হওয়া বা সন্দেহ-সংশয় পোষণ করা খেয়ালখুশির অনুগামিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। এখানে ইসলামের অতুলনীয় ও ন্যায়সঙ্গত শিক্ষাটিও লক্ষণীয় যে, যারা মৌলিক বিষয়ে মতভেদ করে বিচ্ছিন্ন হল তাদের সাথেও জুলুম-অবিচার করা যাবে না; তাদের সাথেও ন্যায়বিচার করতে হবে। يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ ۞ وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا وَاذْكُرُوا نِعْمَةَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنْتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُمْ بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنْتُمْ عَلَى شَفَا حُفْرَةٍ مِنَ النَّارِ فَأَنْقَذَكُمْ مِنْهَا كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آَيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ ۞ وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ۞ وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ تَفَرَّقُوا وَاخْتَلَفُوا مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ وَأُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ ۞ يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوهٌ وَتَسْوَدُّ وُجُوهٌ فَأَمَّا الَّذِينَ اسْوَدَّتْ وُجُوهُهُمْ أَكَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيمَانِكُمْ فَذُوقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْفُرُونَ ۞ وَأَمَّا الَّذِينَ ابْيَضَّتْ وُجُوهُهُمْ فَفِي رَحْمَةِ اللَّهِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ ۞ (তরজমা) ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে সেভাবে ভয় কর যেভাবে তাকে ভয় করা উচিৎ। এবং (সাবধান) তোমাদের মৃত্যু যেন এ অবস্থায়ই আসে যে, তোমরা মুসলিম।

তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভেদ করো না। স্মরণ কর যখন তোমরা একে অন্যের শত্রু ছিলে তখন আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। তিনি তোমাদের অন্তরসমূহ একে অপরের সাথে মিলিয়ে দিয়েছেন। ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই ভাই হয়ে গেছ। তোমরা তো ছিলে অগ্নিকুন্ডের প্রান্তে।

আল্লাহ সেখান থেকে তোমাদের মুক্ত করেছেন। এভাবেই আল্লাহ তাঁর বিধানসমূহ সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যেন তোমরা পথপ্রাপ্ত হও। ‘তোমাদের মধ্যে যেন এমন একটি দল থাকে, যারা কল্যাণের দিকে আহবান করবে, সৎকাজের আদেশ করবে এবং মন্দ কাজে বাধা দিবে। আর এরাই তো সফলকাম। ‘তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা বিচ্ছিন্ন হয়েছিল এবং মতভেদ করেছিল তাদের নিকট সুস্পষ্ট বিধানসমূহ পৌঁছার পর।

এদের জন্যই রয়েছে ভীষণ শাসিত্ম। ‘যেদিন কতক মুখ উজ্জ্বল হবে আর কতক মুখ কালো হয়ে যাবে। যাদের মুখ কালো হবে তাদেরকে বলা হবে, তোমরা কুফরি করলে ঈমান আনার পর?! সুতরাং স্বীয় কুফরির দরুণ শাস্তির স্বাদ গ্রহণ কর। ‘পক্ষান্তরে যাদের মুখ উজ্জ্বল হবে তারা আল্লাহর রহমতের মধ্যে থাকবে। সেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে।

’-সূরা আলে-ইমরান (৩) : ১০২-১০৭ ‘হাবলুল্লাহ’-আল্লাহর রজ্জু অর্থ আলকুরআন এবং আল্লাহর সাথে কৃত বান্দার সকল অঙ্গিকার, যার মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গিকারটি এই যে, আমরা শুধু রবেরই ইবাদত করব, অন্য কারো নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, এই তাওহীদ ও কুরআনকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর। তাওহীদ ত্যাগ করে কিংবা কুরআনের কোনো বিধান থেকে বিমুখ হয়ে বিভেদ করো না। তো এখানেও ঐ কথা-ঐক্যের ভিত্তি তাওহীদ ও কুরআন। আরো বোঝা গেল যে, তাওহীদপন্থী উম্মাহর পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নেয়ামত।

আর এ নেয়ামত হাসিল হবে সর্বপ্রকার ‘আসাবিয়াত’ থেকে মুক্ত হয়ে শুধু এবং শুধু ইসলামের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ এবং ইসলামী বিধিবিধানের আনুগত্যের দ্বারা। আউস ও খাযরাজের দৃষ্টান্ত স্মরণ করুন, এই নেয়ামতে তাঁরা এতই সৌভাগ্যশালী হয়েছিলেন যে, তাঁদের গোত্রীয় পরিচয় ছাপিয়ে গেল এবং দ্বীনী পরিচয়ে-‘আনসার’ নামেই তাঁরা প্রসিদ্ধ হয়ে গেলেন। ‘বাইয়িনাত’ অর্থ কিতাব-সুন্নাহর অকাট্য ও সুস্পষ্ট দলিল, যা থেকে বিমুখ হয়ে মতভেদ করার অর্থই হল এ বিষয়ে বিভেদ-বিচ্ছিন্নতা অবলম্বন করা, যা সম্পূর্ণ গর্হিত ও বর্জনীয়। যেমন ঈমানদার ও তাওহীদপন্থীদের সাথে কাফির-মুশরিকদের মতভেদ। কট্টর বিদআতীদের মতভেদও অনেক সময় এই সীমানায় প্রবেশ করে।

এই বিভেদ-বিচ্ছিন্নতার শাস্তি আখেরাতে মুখ কালো হওয়া। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. এ আয়াতের তাফসীরে বলেছেন- تبيض وجوه أهل السنة والجماعة، وتسود وجوه أهل البدعة والفرقة অর্থাৎ কিয়ামতের দিন আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর মুখ উজ্জ্বল হবে এবং আহলুল বিদআহ ওয়াল ফুরকার মুখ কালো হবে। -তাফসীরে ইবনে কাছীর ১/৫৮৪ এ থেকে বোঝা যায়, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর অনুসারীগণ ‘আল্লাহর রজ্জুকে ধারণ করার এবং বিভক্ত ও বিচ্ছিন্ন না হওয়ার’ আদেশ পালন করছেন, যার পুরস্কার তারা দুনিয়াতে পেয়ে থাকেন পরস্পর সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মাধ্যমে। আর আখিরাতের পুরস্কার এই হবে যে, তাদের চেহারা উজ্জ্বল হবে। পক্ষান্তরে যারা কালিমা পাঠ করেও সুন্নাহ ছেড়ে বিদআ অবলম্বন করবে কিংবা উম্মাহর ঐক্যে আঘাত করে ‘আলজামাআ’ এর নীতি থেকে বিচ্যুত হবে তাদেরও আশঙ্কা আছে আয়াতের কঠিন হুঁশিয়ারির মাঝে পড়ে যাওয়ার।

আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর ইমামদের মাঝে শাখাগত বিষয়ে দলিলের ভিত্তিতে যে মতপার্থক্য, তা যেমন বিভেদ-বিচ্ছিন্নতা নয় তেমনি এ আয়াতের হুঁশিয়ারিরও আওতাভুক্ত নয়। কারণ এ জাতীয় মতপার্থক্যের পরও তাঁরা একতাবদ্ধ ছিলেন এবং তাঁদের মতপার্থক্য-আল্লাহর পানাহ-স্পষ্ট বিধান থেকে বিমুখতার কারণেও ছিল না। তা তো ছিল ‘বাইয়্যিনাত’-এর উপর ইজমা ও ইত্তিহাদের পর কিছু শাখাগত বিষয়ে দলিলভিত্তিক ইখতিলাফ। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা সামনে আসছে ইনশাআল্লাহ। وَلَقَدْ آتَيْنَا بَنِي إِسْرَائِيلَ الْكِتَابَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ وَرَزَقْنَاهُمْ مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَى الْعَالَمِينَ ۞ وَآتَيْنَاهُمْ بَيِّنَاتٍ مِنَ الْأَمْرِ فَمَا اخْتَلَفُوا إِلَّا مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْعِلْمُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ إِنَّ رَبَّكَ يَقْضِي بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ ۞ ثُمَّ جَعَلْنَاكَ عَلَى شَرِيعَةٍ مِنَ الْأَمْرِ فَاتَّبِعْهَا وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَ الَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ ۞ إِنَّهُمْ لَنْ يُغْنُوا عَنْكَ مِنَ اللَّهِ شَيْئًا وَإِنَّ الظَّالِمِينَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَاللَّهُ وَلِيُّ الْمُتَّقِينَ ۞ هَذَا بَصَائِرُ لِلنَّاسِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِقَوْمٍ يُوقِنُونَ ۞ (তরজমা) ‘আমি তো বনী ইসরাইলকে কিতাব, রাজত্ব ও নবুওয়ত দান করেছিলাম।

তাদেরকে উত্তম রিযিক প্রদান করেছিলাম এবং জগদ্বাসীর উপর তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলাম। ‘আমি তাদেরকে দ্বীনের সুস্পষ্ট বিধানাবলি দান করেছিলাম। অতপর তারা যে মতভেদ করল তা তাদের কাছে ইলম আসার পরই করেছিল শুধু পরস্পর বিদ্বেষবশত। তারা যে বিষয়ে মতভেদ করত তোমার প্রতিপালক কিয়ামতের দিন সে বিষয়ে তাদের মাঝে ফয়সালা করে দিবেন। ‘এরপর আমি তোমাকে দ্বীনের এক বিশেষ শরীয়তের উপর রেখেছি।

সুতরাং তা অনুসরণ কর, অজ্ঞদের খেয়ালখুশির অনুসরণ করো না। ‘আল্লাহর মুকাবিলায় তারা তোমার কিছুমাত্রও কাজে আসবে না। বস্ত্তত জালিমরা একে অপরের বন্ধু। আর আল্লাহ বন্ধু মুত্তাকীদের। ‘এটি (কুরআন) সকল মানুষের জন্য প্রকৃত জ্ঞানের সমষ্টি এবং দৃঢ়বিশ্বাসীদের জন্য গন্তব্যে পৌঁছার মাধ্যম ও রহমত।

’-সূরা জাছিয়া (৪৫) : ১৬-২০ ‘বাইয়িনাত’ তথা অকাট্য ও সুস্পষ্ট দলিল দ্বারা হকের নিশ্চিত জ্ঞান অর্জিত হয়। যে তা থেকে বিমুখ হয়ে মতভেদ করে তার মতভেদের ভিত্তি হঠধর্মিতা ও সীমালঙ্ঘন। এই মতভেদ হচ্ছে বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতা। এ আয়াতে এ কথাও দ্ব্যর্থহীনভাবে আছে যে, তাওহীদের সাথে শরীয়তের আনুগত্যও অপরিহার্য। শরীয়তকে মেনে নেওয়া প্রকৃতপক্ষে ‘তাওহীদ ফিততাশরী’ তথা বিধানদাতা একমাত্র আল্লাহ-এ বিশ্বাসেরই বহিঃপ্রকাশ।

সূরা মায়েদা (৫) : ৪৮ এবং অন্য অনেক জায়গায় সাবধান করা হয়েছে যে, ‘শরয়ে মুনাযযাল তথা আল্লাহর পক্ষ হতে নাযিলকৃত সুস্পষ্ট বিধানাবলির কোনো একটি বিধানের বিরোধিতাও হারাম ও কুফর। বস্ত্তত জালিমরা একে অপরের বন্ধু আর আল্লাহ বন্ধু মুত্তাকীদের-এ বাক্যে ولاء ও براء বা موالاة ও معاداة তথা বন্ধুতা ও শত্রুতার নীতি বলা হয়েছে। ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি এই যে, ‘মুয়ালাত’ বা বন্ধুত্বের মানদন্ড হচ্ছে ঈমান ও ইসলাম। আর ‘মুআদাত’ বা শত্রুতার মানদন্ড হচ্ছে শিরক ও কুফর। যে কেউ শরীয়তের দৃষ্টিতে মুসলিম উম্মাহর অন্তর্ভুক্ত সে কেবল তার ঈমান ও ইসলামের কারণেই, অন্য কোনো বৈশিষ্ট্য ছাড়াই, মুয়ালাত ও বন্ধুত্বের এবং সকল ইসলামী অধিকার পাওয়ার হক রাখে।

আর যে এই মানদন্ডে উত্তীর্ণ নয়, অর্থাৎ যে শিরক বা কুফরে লিপ্ত (প্রত্যেক কুফর শিরকেরই বিভিন্ন প্রকার) তার সাথে ‘মুয়ালাত’ বা বন্ধুত্ব হারাম; বরং তা কুফরের আলামত। (এরপর এ বিষয়ে চারটি সূরা : সূরায়ে তাওবা (৯) : ৩, ২৩-২৪, ৭১; সূরা লুকমান (৩১) : ১৪-১৫; সূরা মুমতাহিনা (৬০) : ১, ৪; সূরা মুজাদালা (৫৮) : ১৪-২২ আয়াতের তরজমা উদ্ধৃত করা হয়েছে। সূরায়ে মুজাদালার (৫৮) : ১৪-২২ আয়াতগুলো উদ্ধৃত করার পর প্রবন্ধকার বলেন-) দল মূলত দুটি : ১. হিযবুল্লাহ বা আল্লাহর দল ২. হিযবুশ শয়তান বা শয়তানের দল। যার অন্তরে ঈমান আছে এবং মুমিনদের সাথে মুয়ালাত ও হৃদ্যতা পোষণ করে আর কাফির-মুশরিকদের থেকে বারাআত ও সম্পর্কহীনতা প্রকাশ করে সে হিযবুল্লাহর অন্তর্ভুক্ত। তাকে হিযুবল্লাহ থেকে খারিজ করা কিংবা হিযবুশ শয়তানের দিকে নিসবত করা সম্পূর্ণ হারাম।

হিযবুল্লাহর মাপকাঠি হচ্ছে ঈমান, মুমিনদের প্রতি মুয়ালাত ও হৃদ্যতা এবং আহলে কুফর ও শিরকের সাথে মুআদাত ও শত্রুতা। মুয়ালাত ও বারাআতের এই ইসলামী নীতি থেকে পরিষ্কার হয় যে, ঐক্যের অর্থ ঈমান ও ইসলামের সূত্রে একতাবদ্ধ থাকা। ঐক্যের ভিত্তি হবে তাওহীদ। তাওহীদ ত্যাগ করে এবং দ্বীনের মূলনীতি বিসর্জন দিয়ে কোনোরূপ ঐক্য গ্রহণযোগ্য নয়। কেউ তা করলে সে আল্লাহ ও রাসূলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং তাওহীদ ও ইত্তিহাদ দুটোই তার হাতছাড়া হয়।

وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَا تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ وَاصْبِرُوا إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। পরস্পর বিবাদ করো না তাহলে দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব বিলুপ্ত হবে। আর ধৈর্য্য ধারণ কর। নিশ্চিত জেনো, আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে আছেন। -সূরা আনফাল (৮) : ৪৬ এ আয়াতে ‘তাওহীদ ফিততাশরী’ তথা একমাত্র আল্লাহকেই বিধানদাতা বলে বিশ্বাস করার আদেশ আছে।

শর্তহীন আনুগত্য একমাত্র আল্লাহর এবং আল্লাহর আদেশে তাঁর রাসূলের। অন্য সকলের আনুগত্য এ আনুগত্যের অধীন। সাথে সাথে কলহবিবাদ থেকে বিরত থাকার আদেশ করা হয়েছে এবং এর বড় দুটি কুফল সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছে : এক. এর দ্বারা উম্মাহ শক্তিহীন হয়ে পড়বে, দুই. তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি লোপ পাবে। বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, রাসূলের আনুগত্য তথা সুন্নাহর অনুসরণের আদেশের সাথে ঐক্য ও সংহতি রক্ষা এবং কলহবিবাদ থেকে আত্মরক্ষার তাকীদ করা হয়েছে। إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ ۞ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِنْ قَوْمٍ عَسَى أَنْ يَكُونُوا خَيْرًا مِنْهُمْ وَلَا نِسَاءٌ مِنْ نِسَاءٍ عَسَى أَنْ يَكُنَّ خَيْرًا مِنْهُنَّ وَلَا تَلْمِزُوا أَنْفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ وَمَنْ لَمْ يَتُبْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ ۞ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَحِيمٌ ۞ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ ۞ (তরজমা) ‘মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।

সুতরাং তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মাঝে মীমাংসা করে দাও। আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হও। ‘হে মুমিনগণ! কোনো পুরুষ যেন অপর পুরুষকে উপহাস না করে। সে (অর্থাৎ যাকে উপহাস করা হচ্ছে) তার চেয়ে উত্তম হতে পারে। এবং কোনো নারীও যেন অপর নারীকে উপহাস না করে।

সে (অর্থাৎ যে নারীকে উপহাস করা হচ্ছে) তার চেয়ে উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অন্যকে দোষারোপ করো না এবং একে অন্যকে মন্দ উপাধিতে ডেকো না। ঈমানের পর ফিসকের নাম যুক্ত হওয়া কত মন্দ! যারা এসব থেকে বিরত হবে না তারাই জালেম। ‘হে মুমিনগণ! অনেক রকম অনুমান থেকে বেঁচে থাক। কোনো কোনো অনুমান গুনাহ।

তোমরা কারো গোপন ত্রুটি অনুসন্ধান করবে না এবং একে অন্যের গীবত করবে না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? এটা তো তোমরা ঘৃণা করে থাক। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই তিনি বড় তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। ‘হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে এবং তোমাদের মাঝে বিভিন্ন সম্প্রদায় ও গোত্র বানিয়েছি।

যাতে একে অন্যকে চিনতে পার। নিশ্চিত জেনো, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই সর্বাপেক্ষা বেশি মর্যাদাবান, যে তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশি মুত্তাকী। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু জানেন, সমস্ত খবর রাখেন। ’-সূরা হুজুরাত (৪৯) : ১০-১৩ এই আয়াতগুলোতে মুমিনদের মাঝে ভ্রাতৃত্বের চেতনা জাগ্রত করা হয়েছে এবং মুমিনের কাছে মুমিনের প্রাপ্য অধিকার সম্পর্কে বলা হয়েছে। এই আয়াতগুলো থেকে প্রমাণ হয়, ভ্রাতৃত্বের মানদন্ড শুধু ঈমান।

সুতরাং উল্লেখিত অধিকারগুলো মুমিনমাত্রেরই প্রাপ্য তার মুমিন ভাইয়ের কাছে। ঈমানী ভ্রাতৃত্বের রয়েছে অনেক দাবি। এ আয়াতে বিশেষভাবে এমন কিছু দাবি উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলো পূরণ না করার কারণে সমাজে কলহ-বিবাদ সৃষ্টি হয়। তেমনি কলহ-বিবাদ সৃষ্টি হলে এই বিষয়গুলো আরো বেশি লঙ্ঘিত হয়। অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, দ্বীনী-দুনিয়াবী মতভেদের ক্ষেত্রে একে অপরকে উপহাস ও তাচ্ছিল্য করা, গীবত করা, মিথ্যা অপবাদ দেওয়া, কুধারণা পোষণ করা, কটুক্তি করা, খারাপ নামে বা মন্দ উপাধিতে ডাকা-এই সব বিষয়ের চর্চা হতে থাকে।

লোকেরা যেন ভুলেই যায় যে, কুরআন মজীদে এ বিষয়গুলোকে হারাম করা হয়েছে। প্রত্যেকের আচরণ থেকে মনে হয়, প্রতিপক্ষের ইজ্জত-আব্রু নষ্ট করা হালাল! মতভেদের কারণে তার কোনো ঈমানী অধিকার অবশিষ্ট নেই। অথচ এ তো শুধু মুমিনের হক নয়, সাধারণ অবস্থায় মানুষমাত্রেরই হক। একজন মানুষ অপর একজন মানুষের কাছে এই নিরাপত্তাটুকু পাওয়ার অধিকার রাখে। এমনকি যদি সে মুসলিমও না হয়।

হায়! বিরোধ ও মতভেদের ক্ষেত্রে যদি আমরা প্রতিপক্ষকে অন্তত একজন মানুষ মনে করে তার গীবত-শেকায়েত থেকে, মিথ্যা অপবাদ দেওয়া থেকে, উপহাস-বিদ্রূপ করা থেকে ও মন্দ নামে ডাকা থেকে বিরত থাকতাম! আল্লাহর রাসূলের সুন্নাহয় তো জীবজন্তু, এমনকি জড় বস্ত্তরও হক ও অধিকার বর্ণিত হয়েছে। তো মতভেদকারী আর কিছু না হোক একজন প্রাণী তো বটে!! লক্ষ্য করুন, আল্লাহ তাআলা কী বলেছেন- بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ অর্থাৎ এই সকল হক যে ব্যক্তি রক্ষা করে না সে সমাজ ও শরীয়ত উভয়ের দৃষ্টিতে ফাসিক উপাধির উপযুক্ত হয়ে যায়। একজন মুমিনের জন্য তা কত বড় লজ্জা ও দুর্ভাগ্যের বিষয়? তো দ্বীনী মতভেদের ক্ষেত্রে যদি এইসব আচরণ করা হয় এবং এ কারণে দ্বীনের পক্ষ হতেই ঐ ‘খাদিমে দ্বীনে’র নামের সাথে ফাসিক উপাধি যুক্ত হয় তাহলে তা দ্বীন ও শরীয়তের কেমন খেদমত তা খুব সহজেই অনুমেয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের হেফাযত করুন। শেষ আয়াতে সমগ্র মানবজাতির জন্য ন্যায় ও সাম্যের এই গুরুত্বপূর্ণ নীতি ঘোষণা করা হয়েছে যে, বংশীয়, গোত্রীয় বা আঞ্চলিক পরিচিতি মর্যাদা ও শরাফতের মাপকাঠি নয়।

মর্যাদার মাপকাঠি হচ্ছে তাকওয়া ও খোদাভীরুতা। সকল মানুষ এক পুরুষ ও এক নারীর সন্তান। এরপর আল্লাহ তাআলা তাদেরকে আলাদা আলাদা কওম, গোত্র বা খান্দানের পরিচয় এজন্য দান করেননি যে, এরই ভিত্তিতে তারা একে অন্যের উপর শ্রেষ্ঠত্বের বড়াই করবে; বরং এই বৈচিত্রের একমাত্র উদ্দেশ্য, তাদেরকে ছোট ছোট শ্রেণীতে ভাগ করা, যাতে অসংখ্য আদমসন্তানের মাঝে পারস্পরিক পরিচিতি সহজ হয়। ভাষা, বর্ণ, গোত্র ও অঞ্চল এসব ছিল আরব জাহিলিয়াতে একতা ও জাতীয়তার মানদন্ড। আধুনিক জাহিলিয়াতে এসবের সাথে আরো যোগ হয়েছে, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন দর্শন ও মতবাদকেন্দ্রিক একতা ও জাতীয়তা।

এভাবে অসংখ্য বিভেদ-বিচ্ছিন্নতার শিকার হয়ে একতা শব্দটি একটি অসার শব্দে পরিণত হয়েছে। প্রাচীন ও আধুনিক উভয় জাহিলিয়াতে মর্যাদা ও শরাফতের মাপকাঠি ধরা হয়েছে আপন আপন পসন্দের নিসবত ও সম্বন্ধকে। এর বিপরীতে ইসলামের দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা-ঐক্যের কেন্দ্রবিন্দু তাওহীদ, উম্মাহর জাতীয়তা ইসলাম, আর মর্যাদা ও শরাফতের মাপকাঠি তাকওয়া। এভাবে শ্রেষ্ঠত্বের সকল জাহেলী মাপকাঠিকে ইসলাম বাতিল সাব্যস্ত করেছে এবং সব ধরনের আসাবিয়ত, অহংকার ও সাম্প্রদায়িকতাকে হারাম ঘোষণা করেছে। আয়াতের উপরোক্ত শিক্ষা থেকে এ নীতিও প্রমাণিত হয় যে, পরিচিতির জন্য বংশীয় ও গোত্রীয় সম্বন্ধ ছাড়া আরো যে সকল জায়েয সম্বন্ধ ব্যবহার করা হয় সেগুলোকেও মর্যাদার মাপকাঠি মনে করা কিংবা সেসবের ভিত্তিতে মুয়ালাত ও বারাআত তথা বন্ধুত্ব ও শত্রুতার আচরণ করা হারাম।

মর্যাদার মাপকাঠি তাকওয়া। মুয়ালাত ও বন্ধুত্বের মানদন্ড ঈমান আর কারো থেকে বারাআত ও সম্পূর্ণরূপে সম্পর্কহীনতা ও দায়মুক্ততার কারণ শুধু শিরক ও কুফরই হতে পারে। এ সকল জায়েয সম্বন্ধের মাঝে জন্মস্থান বা আবাসস্থলের সম্বন্ধ, ফিকহী মাযহাবের সম্বন্ধ, সুলুক ও ইহসানের তরীকাসমূহের সম্বন্ধ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্বন্ধ সবই অন্তর্ভুক্ত। কেউ যদি তার শিক্ষাকেন্দ্রের হিসাবে নামের সাথে মাদানী, আযহারী, নদভী বা দেওবন্দ্বী/কাসেমী লেখে তাহলে তা নাজায়েয নয়। তেমনি ফিকহী মাযহাবের হিসাবে মালেকী, হাম্বলী, হানাফী বা শাফেয়ী লিখলে, কিংবা বিশেষ মাসলাক ও মাশরাব হিসাবে সালাফী বা আছারী লিখলে অথবা সুলূক ও ইহসানের তরীকা হিসাবে কাদেরী বা নকশবন্দী লিখলে তা নাজায়েয নয়।

কিন্তু এই সম্বন্ধগুলোকেই মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি মনে করা, এসবের ভিত্তিতে বিভক্ত হওয়া, এসবের প্রতি আসাবিয়াত ও অন্যায় পক্ষপাত লালন করা, নিজের সম্বন্ধের, প্রতিষ্ঠানের, মাযহাব-মাশরাবের এবং তরীকার কোনো বিষয় সুস্পষ্ট দলিল দ্বারা ভুল প্রমাণিত হলেও তার উপর জিদ করা এবং ঈমানী ভ্রাতৃত্বের দাবি পূরণের ক্ষেত্রে এসকল সম্বন্ধকে মাপকাঠি ও মানদন্ড মনে করা সম্পূর্ণ হারাম ও ফাসেকী। হকের মানদন্ড হচ্ছে শরীয়তের দলিল, যাতে সীরাত ও আছারে সাহাবাও অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহর কাছে মর্যাদার মাপকাঠি তাকওয়া। ঈমানী ভ্রাতৃত্ব ও তার হকসমূহের মানদন্ড ঈমান। ঈমানের অতিরিক্ত অন্য কোনো নিসবত বা সম্বন্ধের উপর এই সব হকের কোনোটিকে মওকুফ মনে করা কিংবা মওকুফ রাখা ইসলামী শিক্ষার পরিপন্থী।

হাদীস কুরআন মজীদের আয়াতের পর আলোচ্য বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কিছু হাদীস পেশ করছি। প্রথমে ঈমানী ভ্রাতৃত্বের বিষয়ে কিছু হাদীস উল্লেখ করব। এরপর ঐক্যের অপরিহার্যতা এবং অনৈক্যের বর্জনীয়তা সম্পর্কে কিছু হাদীস উল্লেখ করব ইনশাআল্লাহ। (ঈমানী ভ্রাতৃত্বের বিষয়ে মূলপ্রবন্ধে সর্বমোট দশটি হাদীস রয়েছে। তন্মধ্যে দুটি হাদীস উল্লেখ করা হল।

) عن أبي هريرة رضي الله تعالى عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إياكم والظن، فإن الظن أكذب الحديث، ولا تَحَسَّسُوا، ولا تَجَسَّسُوا، ولا تَنَافَسُوا، ولا تَحَاسَدُوا، ولا تَبَاغَضُوا، ولا تَقَاطَعُوا، وَلا تهجروا، ولا تَدَابروا، ولا تناجشوا، ولا يبع بعضكم على بيع بعض، وكونوا كما أمركم الله عباد الله إخوانا. المسلم أخو المسلم، لا يظلمه ولا يخذله ولا يحقره، التقوى ههنا، ويشير إلى صدره، ثلاث مرات. بحسب امرئ من الشر أن يحقر أخاه المسلم، إن الله لا ينظر إلى أجسادكم، ولكن ينظر إلى قلوبكم، وأشار بأصابعه إلى صدره. كل المسلم على المسلم حرام دمه وماله وعرضه. رواه البخاري ومسلم، والسياق مأخوذ من مجموع رواياتهما. আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা ধারণা থেকে বেঁচে থাক। কারণ ধারণা হচ্ছে নিকৃষ্টতম মিথ্যা। তোমরা আঁড়ি পেতো না, গোপন দোষ অন্বেষণ করো না, স্বার্থের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ো না, হিংসা করো না, বিদ্বেষ পোষণ করো না, সম্পর্কচ্ছেদ করো না, পরস্পর কথাবার্তা বন্ধ করো না, একে অপর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিও না, দাম-দস্ত্তরে প্রতারণা করো না এবং নিজের ভাইয়ের ক্রয়-বিক্রয়ের মাঝে ক্রয়-বিক্রয়ের চেষ্টা করো না। হে আল্লাহর বান্দারা! আল্লাহ যেমন আদেশ করেছেন, সবাই তোমরা আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে যাও। ’-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫১৪৩, ৬০৬৪, ৬০৬৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৫৬৩/২৮, ২৯, ৩০ ও ২৫৬৪/৩২, ৩৩ عن أبي برزة الأسلمي قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : يا معشر من آمن بلسانه ولم يدخل الإيمان قلبه لا تغتابوا المسلمين ولا تتبعوا عوراتهم فإنه من يتبع عورة أخيه يتبع الله عورته حتى يفضحه في بيته. رواه أحمد وأبو داود، وهو صحيح لغيره، ومن شواهده حديث ثوبان عند أحمد برقم : ٢٢٤٠٢ وحديث ابن عمر عند الترمذي برقم : ٢١٥١ وابن حبان في صحيحه برقم : ٥٧٦٣ আবু বারযা আলআসলামী রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ওহে যারা মুখে মুখে ঈমান এনেছ, কিন্তু ঈমান তাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি তারা শোন, মুসলমানের গীবত করো না এবং তাদের দোষত্রুটি অন্বেষণ করো না।

কারণ যে তাদের দোষ খুঁজবে স্বয়ং আল্লাহ তার দোষ খুঁজবেন। আর আল্লাহ যার দোষ খুঁজবেন তাকে তার নিজের ঘরে লাঞ্ছিত করবেন। ’-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৯৭৭৬; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪৮৮০ এ সকল হাদীসের শিক্ষা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য এক হাদীসে এক বাক্যে ইরশাদ করেছেন- المسلم من سلم المسلمون من لسانه ويده অর্থ : মুসলিম সে, যার মুখ ও হাত থেকে সকল মুসলিম নিরাপদ থাকে। -সহীহ বুখারী, হাদীস : ১০ অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহর হক আদায়ের সাথে বান্দার হকও আদায় করে সে-ই প্রকৃত মুসলিম। ইমাম নববী রাহ. এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন- فيه جمل من العلم، ففيه الحث على الكف عما يؤذي المسلمين، بقول أو فعل، بمباشرة أو سبب، وفيه الحث على الإمساك عن احتقارهم، وفيه الحث على تألُّف قلوب المسلمين واجتماع كلمتهم، واستجلاب ما يُحصّل ذلك. قال القاضي عياض : والألفة إحدى فرائض الدين وأركان الشريعة، ونظام شَمْل الإسلام. ‘‘এ হাদীসে রয়েছে অনেক ইলম : যেমন-নিজের কথা বা কাজের মাধ্যমে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো মুসলিমকে কষ্ট না দেওয়ার আদেশ, কোনো মুসলিমকে উপহাস ও তাচ্ছিল্য না করার আদেশ, মুসলমানদের মাঝে ঐক্য প্রতিষ্ঠার এবং এর জন্য সহায়ক সকল পন্থা অবলম্বনের আদেশ ইত্যাদি।

কাযী ইয়ায রাহ. বলেছেন, ‘সম্প্রীতি দ্বীনের অন্যতম ফরয, শরীয়তের অন্যতম রোকন এবং বৈচিত্রে পূর্ণ মুসলিমসমাজকে একতা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।