আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইয়ংলুর ঘণ্টা

আলো অন্ধকারে যাই... ঘণ্টা সাধারণত লোহা, ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়ম, কাঁসা বা তামা জাতীয় ধাতব দ্রব্য দিয়ে তৈরি হয়। কিন্তু চীনের ঐতিহাসিক ইয়ংলুর ঘণ্টাটি তৈরি হয়েছিল মানুষের দেহ ও লোহার মিশ্রণে। এর অবস্থান চীনের বিখ্যাত তা চুং সু মন্দিরে। প্রকাণ্ড এ ঘণ্টার আওয়াজ শোনা যায় ৩৭ মাইল দূর থেকেও। সম্রাট ইয়ংলু এটি তৈরি করেন।

ঘণ্টাটি তৈরির পেছনে রয়েছে এক মর্মান্তিক কাহিনী। তখন নিজের মন্দিরের জন্য একটি ঘণ্টা তৈরির পরিকল্পনা করেন সম্রাট ইয়ংলু। যেই কথা সেই কাজ। সঙ্গে সঙ্গে শহরের নামিদামি কর্মকারদের ডাক পড়ে। প্রায় দুই শতাধিক কর্মকারের মধ্য থেকে বেছে নেওয়া হয় একজনকে।

যার নাম ওং চাং ছি। মন্দিরের বিরাট ঘণ্টা তৈরির আদেশ দেন শহরের সেরা এই কর্মকারকে। তবে সম্রাটের শর্ত একটাই_ ঘণ্টা হতে হবে প্রকাণ্ড এবং আওয়াজ হতে হবে জোরালো ও শ্রুতিমধুর। একটানা কয়েক মাস কাজ করার পর তৈরি হয় প্রকাণ্ড একটি ঘণ্টা। কিন্তু ঘণ্টাটির আওয়াজ সম্রাটের পছন্দ হয়নি।

আবার নতুন করে ঘণ্টা তৈরির আদেশ দেওয়া হয়। দুই-তিন মাস কষ্ট করে কর্মকার ফের আরেকটি ঘণ্টা তৈরি করেন। কিন্তু ওই ঘণ্টার শব্দও সম্রাটের মনের মতো হয় না। কর্মকারের দুবারের বিফলে সম্রাট ক্ষিপ্ত হন। রেগে আবার আদেশ দেন নতুন ঘণ্টা বানাতে।

তবে এও বলে দেওয়া হয়, এবার যদি সম্রাটের নতুন ঘণ্টার শব্দ পছন্দ না হয়, তবে কর্মকারের গর্দান যাবে। শুধু তাই নয়, তার পরিবারের বাকি সদস্যকেও হত্যা করা হবে। সম্রাটের এ আদেশ শুনে কর্মকার ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বাড়ি ফিরল। সব অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান দিয়ে সে কাজ করেছিল, তবুও হচ্ছে না কেন! তার ভুল কিছুতেই বুঝতে পারল না। দিন-রাত ভাবতে থাকল।

শেষে উপায়ন্তর না দেখে শহরের বিখ্যাত জ্যোতিষীকে বাড়িতে ডেকে আনল কর্মকার। জ্যোতিষী সব শুনে বলে দিলেন, মন্দিরের দেবতা তার ওপর রুষ্ট, কোনো অবস্থায়ই কর্মকার ঘণ্টাটি তৈরি করতে পারবে না। তাই দেবতাকে খুশি করতে একজন নিষ্পাপ কুমারীকে বিসর্জন দিতে হবে। এ কথা শুনে কর্মকার অাঁতকে উঠল। সে ঠিক করল নিজের সব জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে আবার ঘণ্টা তৈরি করবে।

এতে যদি তার নিজের প্রাণ যায় তবে তার কোনো আপত্তি নেই। তবে সে কোনো প্রাণ নিতে পারবে না। কর্মকারের ১২ বছরের একটি মেয়ে ছিল। তার নাম 'মাও-আই'। সে পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনল।

তার বাবার বিপদ সে আর সহ্য করতে পারছিল না। তাই সে ঠিক করল নিজের জীবন উৎসর্গ করে তার বাবাকে বাঁচাবে। কিন্তু কর্মকার তার মেয়ের কঠিন সিদ্ধান্তের কথা কোনোক্রমেই জানতে পারেনি। কর্মকার তার জীবনের সব অভিজ্ঞতা ও মেধা কাজে লাগিয়ে বিশাল চুলি্লতে লোহা গরম করছিল। শেষবারের মতো ঘণ্টা তৈরি করতে লাল গনগনে লোহা টগবগ করে ফুটতে থাকল।

হঠাৎ কোথা থেকে যেন ছুটে এসে তার ছোট্ট মেয়ে 'মাও-আই' ঝাঁপিয়ে পড়ল চুলি্লর হাঁড়ির ওপর। চোখের পলকে তার শরীর নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল গলিত লোহার মধ্যে। ঘটনাটি যতই মর্মান্তিক হোক না কেন কর্মকার তার মেয়ের দেহমিশ্রিত লোহা দিয়েই চোখের জলে বুক ভাসিয়ে একটি সুন্দর ঘণ্টা তৈরি করল। ঘণ্টাটি তৈরি হলো ঠিকই কিন্তু মেয়ে হারানোর বেদনা কর্মকারকে কুরে কুরে খাচ্ছিল। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, সত্যি সত্যি এই ঘণ্টার আওয়াজ হলো অনেক বেশি জোরালো এবং শ্রুতিমধুর।

এমনকি এই সুমধুর শব্দের ঘণ্টা তৈরির জন্য সম্রাট কর্মকারকে পুরস্কৃত করলেন। বহু বছর পর এ বিস্ময়কর ঘণ্টার ধাতব গুণাগুণ পরীক্ষা করতে গিয়ে চমকে ওঠেন গবেষকরা। সে সময় বের হয়ে আসে ঘণ্টার আসল তথ্য। আগের দুইবার ধাতু মিশ্রণে ত্রুটি থাকায় ঘণ্টা সঠিকভাবে তৈরি হয়নি। কর্মকার তার আগের বানানো ঘণ্টাগুলোতে কাঁসা, সোনা, রুপা, তামা ইত্যাদি ধাতু মিশ্রণ করেছিল।

কিন্তু ধাতুর আওয়াজ জোরালো করতে চাই ফসফরাস। কারণ ফসফরাসের যে যৌগ রয়েছে তার কারণে যে কোনো ঘণ্টার আওয়াজ তীব্র ও জোরালো হয়। যা প্রথম দুবার তৈরি ঘণ্টায় ছিল না। তৃতীয়বার ওইসব ধাতুর মিশ্রণের সঙ্গে কর্মকারের মেয়ে 'মাও-আইয়ের' দেহের ফসফরাস মিশে উৎকৃষ্ট মিশ্রণের সৃষ্টিতে ঘণ্টার আওয়াজ জোরালো হয়। কারণ মানবদেহে প্রচুর ফসফরাস আছে।

তাই শেষবারের ঘণ্টার আওয়াজ হয়েছে অনেক জোরালো। সেই 'মাও-আইয়ের' দেহমিশ্রিত ঘণ্টাটি এখনো চীন দেশে রয়েছে। ঘণ্টার আওয়াজের নেপথ্যে আজো শোনা যায় নিষ্পাপ মেয়েটির কান্না। সেখানকার মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে সেই ছোট্ট মেয়েটির ত্যাগের কথা, যা ইতিহাসের পাতায় আজো অম্লান হয়ে আছে। সম্প্রতি দেশটির পর্যটন মন্ত্রণালয় ঘণ্টাটি রক্ষণাবেক্ষণে বিশেষ নজর দিয়েছে।

কর্মকার তার জীবনের সব অভিজ্ঞতা ও মেধা কাজে লাগিয়ে বিশাল চুলি্লতে লোহা গরম করছিল। শেষবারের মতো ঘণ্টা তৈরি করতে লাল গনগনে লোহা টগবগ করে ফুটতে থাকল। হঠাৎ কোথা থেকে যেন ছুটে এসে তার ছোট্ট মেয়ে 'মাও-আই' ঝাঁপিয়ে পড়ল চুলি্লর হাঁড়ির ওপর। চোখের পলকে তার শরীর নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল গলিত লোহার মধ্যে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.