আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আরাকানের সভাসদবৃন্দ

শাকিলা তুবা এক. প্রখর রৌদ্রে তেতে ওঠা বালি ছাপিয়ে সমুদ্রের চিতানো বুক দেখা যায়। বাতাস নেই বলে গরমে নিশ্চল, শান্ত সমুদ্র। খুব কাছাকাছি কড়িতে, আকরে মেশানো পায়ে হাঁটা পথটুকু ভাটির ছোট ছোট ঢেউয়ে ভিজে উঠেই শুকিয়ে যাচ্ছে। ব-দ্বীপের মানবতাও গরমে সেদ্ধ হতে হতে একটু জলে সিক্ত হয়েই শুকিয়ে যায়। রোহিঙ্গা শিশুদের অভুক্ত কান্নার জাহাজ ভিড়ি ভিড়ি করেও তীর থেকে অনেক দূর দিয়ে গড়িয়ে যায়।

এদের মাঝে উবু হয়ে বসে আছে এক নিষেধের সাপ। কোন একদিন ওরা দলে দলে উঠে আসবে সমুদ্র থেকে। কেড়ে নেবে তোমার বাড়ী, আমার ঘর। নিশ্চল সাগর সেদিন কথাটি ক’বেনা। আজ কেবল দেউলিয়া মানুষকে আরো দেউলিয়া করে দেবার জন্য সে টেনে নেয় তাদের নিজের পেটের ভেতর।

এও বুঝি এক ধরনের মমতা। দুই. ওরা আগেও এসেছে বিপন্নবোধে। দারিদ্র আর মহাজনের ক্রুর চক্ষু নীলচাষী আর নীলরক্তের অতীত স্মৃতি পুনরায় টেনে তোলে। ওরা পপিফুল বাজারজাত করে দেশীয় যুবকের মেধা করেছিল হনন। নেতার বক্তৃতায় পরদেশীরা মাটি দেখে না---চারিদিকে অথৈ জল।

দেশী যুবক, তুমি কি ভাল-মন্দের বিচার জানতে না? কেন জানোনি? জানলে জলের ঘরে আজ ওরা ঘর করতোনা, মরা মেরে ওরা আর খুনী হতোনা। ধুঁকে ধুঁকে; নুয়ে নুয়ে পড়ে থাকে মাটি, বুক উঁচিয়ে সমুদ্র কতই না ইতিহাস নবায়ন করে যায়! ওরা কেবল ভাসে, জলে জলে ভাসে--- তিন. বালতি থেকে ডুবুরীরা পা তুলে নিয়েছে। ওরা সবাই মুক্তোর সন্ধানে নেমেছিল জলে। এখন ক্লান্ত দুপুরে মড়ার ঘুম ঘুমুবে ডেকে শুয়ে। ওইদিক দিয়ে ভেসে যাওয়া আরেক জাহাজে নজর দিয়ে কি লাভ? বড়জোর সন্ধ্যের দিকে এক পলকা ঝিরঝিরে বাতাস বেরুলে তারা অপর জাহাজের মেয়েগুলোর সাথে সস্তাদরের কিছু মুক্তা বিনিময় করতে পারে।

সেও হবে এক রাত্রির জন্যে ডুবুরীদের বেঁচে থাকা। পরের সকালেই তো ওরাও পরাধীন! চার. সাংবাদিকরা ছবি তুলেছে ওদের দুর্দশার। মাছের মহাজন সেসব ছবি সযত্নে রেখে দেবে বুক পকেটে। এখানেও হবে দরদাম, মাছের বদলে। রুটি আর সুপেয় পানি সবই পাবে সবাই, কেবল তের বছরের ঐ কিশোরীকে দাঁড়াতে হবে ঘোমটা খুলে ক্যামেরার সামনে।

উপসংহার জাহাজের মুখ অন্যদিকে ঘুরে যেতেই মহাজন বা ডুবুরী বা সাংবাদিকের মন হু হু করে ওঠে। একেকজন বেহায়াপনার এক একটি রঙিন স্মৃতি মনে করে ডুকরে ওঠে। কেউ জানে না আঠারো দিনের শিশুটি আঠারো বছরে ফিরবে আবার। আরাকান দস্যুদের রক্তের এককণা রয়ে গিয়েছিল তার ভেতরে সঙ্গোপনে, কেউ জানেনা। সে মুক্তো বা মাছ ফেরত দেবে আর ছিনিয়ে নিয়ে যাবে সাংবাদিকের সদ্য কেনা ক্যামেরাটা।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।