চোখের দেখা , মনের কল্পনাঃ আমার লেখা
ব্যাগের এক খুপরিতে জমানো ৫০০ টাকা আছে । একেবারে নিঃস্ব অবস্থায় বেরুতে চাইলেও পারা যাবেনা । আরও কিছু কাজ বাকি আছে যাবার আগে ............ । ।
ডায়েরিটা গ্যাসের চুলায় পুড়িয়ে ছাইগুলো কলের জলে ভাসিয়ে দিয়ে কালো কাভারটা ছুঁড়ে ফেলে দিলো বাইরে।
পিসিতে নিজের সব ছবি মুছে দিলো । বাদবাকি ফোল্ডারও চিতায় গেলো । শুধু রইলো গানগুলা ।
মোবাইল সিমটা খুলে পকেটে পুরলো আর মোবাইলটা ব্যাগে । সিমটা কিসের টানে নিলো কে জানে !!
প্রিয় কালো প্যান্টটা পড়ে নিলো ।
প্রিয় বলেই সবচেয়ে জীর্ণ । পিঠের নিচ দিকে ফুটো হয়ে যাওয়া একটা টি- শার্ট গায়ে চাপিয়ে স্পঞ্জের স্যান্ডেল পায়ে চড়িয়ে বেরিয়ে আসলো বাসা থেকে ।
চুপিচুপি নিঃশব্দে গেইট খোলার বিদ্যে ভালই জানা আছে । আজ সেটা কাজে লাগলো । রাত ১২ টা ।
হাঁটার উপর নির্ভর করে চলতে লাগলো ।
অভ্যাস নেই । তাই শহরের সীমানা পার না হতেই শ্রান্ত হয়ে বসে পড়লো । ভোরের প্রথম গাড়িতে চড়ে কোথায় রওনা হলো নিজেও জানেনা । জায়গার নাম জিজ্ঞেস করেনি ।
ভাড়া চুকিয়ে বসে পড়লো ।
নেমে গেলো একটা কাঁচা সড়কের পাশে । একটা গ্রাম মনে হয় ! কাউকে জিজ্ঞেসও করলো না এই জায়াগার নাম কি ।
গাছগাছড়ায় জায়গাটা সয়লাব । রাস্তাটা ছায়ায় ঘেরা ।
হাঁটতে হাঁটতে একটা মাটির ঘর দেখতে পেলো । নির্দ্বিধায় ঘরে ঢুকে দেখে – একজন বুড়ি রান্না করছে ।
- আমারে একটু জায়গা দিবেন ? আমার কেউ নাই ।
- তুমি কেডা ? কইত্থিকা আইসো ?
- জানিনা । ভুইল্লা গেসি গা ! আমারে একটু থাকতেদিবা দাদি তুমার লগে ?
- কি মুসিবত !! দাঁড়াও! তুমার দাদু ক্ষেতে গেসে ।
আগে হেয় আইয়ুক !
- আমি দাদুর লগে ক্ষেতে কাম করমু । ১ বেলা খাইতে দিও ।
কথাবার্তায় আর নিস্পাপ চেহারায় সে ভুলালো বুড়িকে আর বুড়ি মানিয়ে ফেলল বুড়োকে ।
ভোর বেলা দাদুর সাথে কাজে যায় । দুপুরে ভাত , ভর্তা খায় ।
বিকালে পুকুর পাড়ে বসে থাকে । ডায়েরিটা আনা উচিত ছিল ! ধুর ! এখন যে লিখতে ইচ্ছা করে !
দাদু , দাদি অনেক প্রশ্নই জিজ্ঞাসা করে । ও এমন ভাব দেখালো যেন স্মৃতিভ্রষ্ট । আর কেউ যেন চিনতে না পারেসেজন্য দাঁড়িতে মুখ ভরিয়ে ফেলেছে আগেই । নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি নিশ্চয়ই বেরিয়েছে !
দিনগুলো নির্ঝঞ্ঝাট ।
এমন জীবনের খোঁজেই বেরিয়েছিল ঘর ছেড়ে । যেখানে একটা অসাধারণ নৈঃশব্দ্য বিরাজ করবে ! জীবন যেখানে নির্মমতা শিখিয়ে দিয়ে আবার আদরে বুকে টেনে নেবে । লাত্থি মারতে ইচ্ছা করে ঐ একঘেয়ে ফেলে আসা দিনগুলো। লাত্থি মেরেই চলে এসেছে ।
রাতে হাতের মুঠোয় জোনাকের আলো নিয়ে কাটিয়ে দেয় অনেকখানি সময় ।
তারপর ঘুমুতে যায় ।
একভাবে না একভাবে জীবনটা চালিয়ে নেয়া যাবে । অন্য কোন ভাবনা নেই শুধু একবেলাখাওয়া ছাড়া ।
একদিন সকাল বেলা । ক্ষেতে কাজ করছে ।
একটা গরু পথ থেকে ক্ষেতে ঢুকেছে । সোজাতার দিকে দৌড়ে আসছে !! গরুর পাগলামি সম্পর্কে সে অবগত নয় । তবুও কিছু না ভেবেই দৌড় লাগালো । ক্ষেত পেরিয়ে দূর্বাভরা মাঠ ......
দৌড় , দৌড় , দৌড় ......... ঘেমে ভিজে জবজবে হয়ে গেছে ।
দৌড়াতে দৌড়াতে সে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো ! বাঁধনমুক্ত হবার হাসি , জীবনকে অন্তর দিয়ে চেখে দেখে তৃপ্ত হবার হাসি , পাগলামি ভরা হাসি .........!! হাহাহাহাহাহাহাহাহাহা.........
হাহাহাহাহাহাহাহাহা............
ছেলেটা ঘুম ভেঙ্গে দেখে পাগলের মত হাসছে সে ! আর ঘেমে একাকার !
ওহ ! ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেছে ! ফ্যান বন্ধ !
বাসায় কেউ নাই ! এই মোক্ষম সুযোগ ! জমানো ৫০০ টাকা ছিল।
ডায়েরিটা এবার সঙ্গে নিলো । পিসিতে সব ফোল্ডার মুছে ফেলল । নিজের প্রিয় কালো প্যান্ট আর ছেঁড়া টি-শার্ট টা গায়ে চাপিয়ে ব্যাগ টা কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো ! এবার সিমটা খুলে ফেলে রেখে গেলো আর মোবাইলটাও ।
বাদুরঝোলা হয়ে বাসের পেছনে দৌড়াতে নয় ! খোলা মাঠে উদ্দাম তারুণ্য নিয়ে জীবনজয়ের দৌড়ে অংশ নিতে ।
এতদিন জীবনটা রুগ্ন ছিল ।
হয় হোমিওপ্যাথি নয়তো এলোপ্যাথির ভরসায় চলতো । এবার সুস্থ ওষুধবিহীন জীবনের পথে রওনা হয়ে গেলো......... । ।
ছেলেটার চোখে মুখে দীপ্তি! অবুঝ , অবাধ তারুণ্যের দীপ্তি !
** কিছুকথাঃ হয়তো এমনভাবেনা ভেবে না চিন্তে জীবনকে উপভোগ করার সৌভাগ্য হবেনা । তবুও মনে মনে রেখেছি ।
সুযোগ পেলে নিরুদ্দেশ হতে ছাড়বো না ! আমার পাগলামি ভরা কল্পনারাজ্যের ছোট্ট একটা অংশ সবার সাথে ভাগ করে নিলাম ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।