আলো অন্ধকারে যাই... ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গ রেলপথের পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার কৈডাঙ্গা রেল ব্রিজটি যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
এ ব্রিজের খাঁচায় ধাক্কা লেগে একের পর এক যাত্রীদের প্রাণহানি ঘটলেও টনক নড়ছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের।
এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, গত ১০ বছরে কৈডাঙ্গা রেলব্রিজের খাঁচায় ধাক্কায় অন্তত দুই শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।
ট্রেনে ভ্রমণকারী যাত্রীদের অভিযোগ, এ রেলপথের অন্য কোনো রেলব্রিজে সমস্যা না হলেও কৈডাঙ্গা রেলব্রিজের খাঁচা অপেক্ষাকৃত নিচু করে তৈরি করার কারণে প্রাণহানি ঘটছে।
এর ধারাবাহিকতায় গত ১৪ জুন রাত ৮টার দিকে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী আন্তঃনগর সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনের ছাদে থাকা ৩ যাত্রী ওই রেলব্রিজের খাঁচায় ধাক্কা লেগে নিহত ও অপর ৩ জন গুরুতর আহত হন।
স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, কৈডাঙ্গা রেলব্রিজের খাঁচায় ধাক্কা লেগে প্রতিবছর অন্তত ২০ জন রেলযাত্রীর মৃত্যু হয়।
বিশেষ করে বছরের দুই ঈদে উপচে পড়া ভিড়ের মধ্যে যাত্রীরা জীবন হাতে নিয়ে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করেন।
এছাড়া বর্তমানে বাসের ভাড়া সীমাহীনভাবে বেড়ে যাওয় ও যাতায়াত নিরাপদ ভেবে উত্তর দক্ষিণাঞ্চলের প্রচুর মানুষ ট্রেনে যাতায়াত করেন।
এ সময় ছাদে ভ্রমণকারী যাত্রীদের অনেকেই ওই রেল ব্রিজের খাঁচায় ধাক্কা খেয়ে নদীতে ছিটকে পড়ে প্রাণ হারান। আবার অনেককে পরবর্তী স্টেশনে গুরুতর আহত বা নিহত অবস্থায় নামানো হয়।
এভাবেই চলছে বছরের পর বছর।
এদিকে, প্রতিবছর এভাবে একের পর এক মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। রেলওয়ের এই নীরব ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ সাধারণ মানুষ। তারা অবিলম্বে এ মৃত্যুফাঁদ সংস্কার করে রেলযাত্রীদের জীবন রক্ষার দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও রেলযাত্রীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, কৈডাঙ্গা রেল ব্রিজের উপরিভাগের অবকাঠামোটি (খাঁচা) অন্যান্য ব্রিজের চেয়ে খুবই নিচু হওয়ায় প্রতিবছর বিশেষ করে দুই ঈদের সময় ট্রেনের ছাদে ভ্রমণকারী যাত্রীরা এখানে এসে দুর্ঘটনার শিকার হন।
এছাড়া ভাঙ্গুড়ার বড়াল ব্রিজও তুলনামূলক কিছুটা নিচু হওয়ায় সেখানেও মাঝে-মধ্যে ঘটে একই ধরনের হতাহতের ঘটনা। তবে কৈডাঙ্গা রেল ব্রিজে শতকরা ৯০ ভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
সূত্র জানায়, ভিড়ের কারণে নিরুপায় যাত্রীরা এক শ্রেণির লোভী ব্যক্তির ভাড়াটিয়া মই ব্যবহার করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাদে উঠে বসেন। রেলপথের অন্য কোনো রেল ব্রিজে সমস্যা না হলেও কৈডাঙ্গা ব্রিজের অবকাঠামো নিচু হওয়ায় ট্রেনের ছাদে বসে থাকা যাত্রীরা খাঁচার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে নদীতে পড়ে মারা যান।
নিহত অনেক যাত্রীর পরিচয় না মেলায় তাদের কারও কারও লাশ গুমানী নদীতে ভেসে ভেসে শকুনে খেয়ে ফেলে।
আবার কেউ কেউ গুরুতর আহত হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মারা যান অথবা সারা জীবনের মতো পঙ্গুত্ব বরণ করেন।
এ বষিয়ে সিরাজগঞ্জ জিআরপি থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) অখিল উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, কৈডাঙ্গা রেল ব্রিজের খাঁচায় ধাক্কা লেগে প্রতিবছর অন্তত ২০ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়। এভাবে গত ১০ বছরে প্রায় দুইশ যাত্রীর প্রাণহানি ঘটেছে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে ভাঙ্গুড়া রেলস্টশ মাস্টার নুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, এ রুটে দু’টি লোকাল ট্রেনসহ ঢাকা থেকে খুলনায় ২টি ব্রডগেজ, রাজশাহী ৩টি ব্রডগেজ, নীলফামারী ১টি ব্রডগেজ এবং রংপুর, দিনাজপুর ও লালমনিরহাট ৩টি মিটারগেজ আন্তঃনগর ট্রেন আপ-ডাউন চলাচল করে।
তিনি জানান, ব্রডগেজ ট্রেন অনেক উচুঁ হওয়ায় এর ছাদ এবং ব্রিজের উপরের গার্ডারের মধ্যে ফাঁকা থাকে মাত্র আড়াই ফুট।
ফলে যাত্রীরা বসে থাকলে আঘাত পাবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রেলওয়ে কর্মচারী বাংলানিউজকে জানান, সব মৃত্যুর ঘটনা তাৎক্ষণিকভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। কিন্তু প্রতিকারের কোনো পদক্ষেপ নেই।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মুখ্য প্রকৌশলী রফিকুল আলম কৈডাঙ্গা রেল ব্রিজে একের পর এক দুর্ঘটনার কথা স্বীকার করে বাংলানিউজকে জানান, ব্রিজটি বৃটিশ আমলে তৈরি। এর উপরের অবকাঠামো সরিয়ে ফেললে রেল ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে।
তিনি জানান, কৈডাঙ্গা রেল ব্রিজটি অন্যান্য ব্রিজের তুলনায় একটু নিচু হলেও মাপ স্ট্যান্ডার্ড। আধুনিক পরিকল্পনা অনুযায়ী নতুন ব্রিজ নির্মাণ ছাড়া এর কোনো অবকাঠামো অপসারণ সম্ভব নয়।
এ কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে যাত্রীদের ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দেন রফিকুল আলম।
এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বাকি বিল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, একের পর এক ওই রেল ব্রিজের খাঁচায় ধাক্কা লেগে প্রাণহানি ঘটছে। কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
যত দ্রুত সম্ভব সমস্যা সমাধানে উদ্যোগের দাবি জানান তিনি।
সূত্র: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।