আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই কাশেম সেই কাশেম!!!

কাশেম আলী এখন: মীর কাশেম আলী বর্তমানে দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান। এছাড়া তিনি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক, ইবনে সিনা ট্রাস্টের সদস্য (প্রশাসন) এবং কেয়ারি হাউজিং ও ইডেন শিপিং লাইনসের চেয়ারম্যান। তিনি রাবেতা আলম আল ইসলামীর বাংলাদেশের পরিচালক। কাশেম আলী তখন: মানিকগঞ্জের হরিরামপুর থানার চালা গ্রামের পিডাব্লিউডি কর্মচারী তৈয়ব আলীর চার ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় মীর কাশেম। ডাক নাম পিয়ারু, সবাই চিনে মিন্টু নামে।

স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে পিতার চাকুরির সুবাদে চট্টগ্রাম গিয়েছিল পড়তে। চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র থাকার সময় জড়িয়ে পড়ে মওদুদীর মৌলবাদী রাজনীতিতে। জামায়াতের অঙ্গসংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের দায়িত্ব পায় স্বাধীনতার আগে। ৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জামায়াত পক্ষ নেয় পাকিস্তানের। রাজাকার অর্ডিন্যান্স জারির পর জামায়াতে ইসলামী তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্র সংঘের নেতাদের স্ব স্ব জেলার রাজাকার বাহিনীর প্রধান নিযুক্ত করে।

সেই সুবাদে মীর কাশেম আলী চট্টগ্রাম জেলার প্রধান হয়। চট্টগ্রাম জেলার সমস্ত রাজাকারী কর্মকাণ্ডের নাটের গুরু ছিল সে। ‘৭১ এর ২ আগস্ট চট্টগ্রাম মুসলিম ইন্সটিটিউটে তার নেতৃত্বে স্বাধীনতা বিরোধী সমাবেশ আয়োজন করা হয়। সভাপতি হিসেবে সে তার ভাষণে বলে গ্রামে গঞ্জে প্রতিটি এলাকায় খুঁজে খুঁজে পাকিস্তান বিরোধীদের শেষ চিহ্নটি মুছে ফেলতে হবে। তার স্বাধীনতা বিরোধী তৎপরতার সময় ছাত্র সংঘের নতুন প্রাদেশিক পরিষদ গঠন হয়।

মীর কাশেম হয় তার সাধারণ সম্পাদক। ছাত্র সংঘের নেতারা শুরু থেকেই বুদ্ধিজীবি হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে। নভেম্বরে ঘটা করে পালিত হয় বদর দিবস। এদিন বায়তুল মোকাররমে ছাত্র সংঘের সমাবেশে মীর কাশেম্ আলী বলে, পাকিস্তানীরা কোনো অবস্থাতেই হিন্দুদের গোলামী করতে পারে না। আমরা শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও পাকিস্তানের ঐক্য ও সংহতি রক্ষা করব।

৪ ডিসেম্বর ইয়াহিয়া খান জরুরী অবস্থা জারির পর মীর কাশিম এক বিবৃতি দিয়ে বলে হিন্দুস্তানকে হুশিয়ার করে দিতে চাই পাকিস্তান ভাঙতে এলে হিন্দুস্তান নিজেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। দেশপ্রেমিক সকলে শত্রুর বিরুদ্ধে মরন আঘাত হানুন। এরপর শুরু হয় বুদ্ধিজীবি হত্যার পরিকল্পনা। মীর কাশেমের নির্দেশে চট্টগ্রামের টেলিগ্রাফ অফিসের লাগোয়া ডালিম হোটেলে রাজাকার বাহিনীর বন্দি শিবির খোলা হয়। বহু লোককে ওখানে এনে খুন করা হয়।

পানির বদলে অনেক বন্দীকে খাওয়ানো হতো প্রস্রাব। ১৭ ডিসেম্বর সেখান থেকে সাড়ে তিনশ বন্দীকে প্রায় মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। বুদ্ধিজীবি হত্যার তালিকা প্রণয়নকারীদের অন্যতম ছিল মীর কাশেম আলী। স্বাধীনতার পর মীর কাশেম পালিয়ে ঢাকা চলে আসে। মিন্টু নামে নিজেকে পরিচয় দিত, বলত সে মুক্তিযোদ্ধা।

কিন্তু চিহ্নিত হয়ে পড়ার পর আরেক ঘাতক মঈনুদ্দিনের সঙ্গে পালিয়ে চলে যায় লন্ডন। সেখান থেকে সৌদি আরব। সেখানে স্বাধীনতা বিরোধীদের সংগঠিত করতে থাকে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশে ফিরে আসে মীর কাশিম। একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো মুশতাক সরকার মুজিবের ঘাতকদের বাচাতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারির পাশাপাশি প্রত্যাহার করে নেয় দালাল আইন।

জিয়ার শাসনামলে নতুন করে সংগঠিত হয় ইসলামী ছাত্র সংঘ, নাম বদলে হয় ইসলামী ছাত্র শিবির। ছাত্র শিবিরের প্রথম কেন্দ্রীয় সভাপতি হয় মীর কাশেম আলী। এরপর রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের নামে রাবেতা আল ইসলামী গড়ে তুলে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর টাকায় আস্তে আস্তে বানায় ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনা ট্রাস্ট ও ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিকালস। জামাতে ইসলামী ও শিবিরের আয়ের এবং কর্মসংস্থানের বড় উৎস হয়ে দাঁড়ায় এসব প্রতিষ্ঠান।

তথ্যসূত্র : মুক্তিযুদ্ধ কোষ/ তৃতীয় খন্ড; সম্পাদক : মুনতাসীর মামুন সাম্প্রতিক কাজকাম: যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত রাজনৈতিক দল জামাত। তারা বিষয়টিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে না পেরে আনত্মর্জাতিক লবিং-এর জন্যে লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছে। চুক্তি করেছে ২৫ মিলিয়ন ডলারের। বাংলাদেশী মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে দায়িত্বরত একটি বিদেশী ব্যাংকের মাধ্যমে চুক্তির অর্থও পাঠিয়েছেন জামাত নেতা মীর কাশেম আলী।

সম্প্রতি এই অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে, যুদ্ধাপরাধের বিচার বাধাগ্রসত্ম করতে জামাত নেতা মীর কাশেম আলী লবিস্ট নিয়োগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের একটি কনসালটেন্সি ফার্মের সঙ্গে ২৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছেন। ২০১০ সালের ১০ মে ৬ মাসের জন্য আমেরিকান কনসালটেন্সি ফার্ম কেসিডি এন্ড এসোসিয়েটের সঙ্গে চুক্তি করেন মীর কাশেম আলী। পরে সিটি ব্যাংক এনএ-এর মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক্স ট্রান্সফার করে চুক্তির অর্থ কেসেডি এন্ড এসোসিয়েটের হিসাব যার নম্বর সিএমজিআরপি.আইএনসি ৩০৭১৭২৪৮ (সুইফ্ট কোড : সিটি ইউএস ৩৩) পাঠানো হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা হচ্ছেন মার্কিন সাবেক কংগ্রেসম্যান মার্টি রুশো। তিনি কেসেডি এন্ড এসোসিয়েটস-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।

অনুসন্ধানে পাওয়া নথিতে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা হচ্ছে ৭০০/১৩ স্ট্রিট, ১১ ডবিস্নউ, সুইট-৪০০ ওয়াশিংটন ডিসি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশের সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ ও লবিং করাসহ মীর কাশেমের আলীর উদ্দেশ্য সফলের জন্য এই চুক্তি হচ্ছে বলে চুক্তিপত্রে উলেস্নখ করা হয়েছে। গত বছরের ১০ মে স্বাক্ষরিত এই চুক্তিতে মীর কাসেম আলী এবং লবিস্ট ফার্মের পক্ষে জেনারেল কাউন্সেল জে. ক্যামেরম্নজ স্বাক্ষর করেন। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানিটি ২০১০ সালের ৫ অক্টোবর থেকে গত ৫ এপ্রিল ২০১১ সাল পর্যন্ত এই ৬ মাস মীর কাশেম আলীর উদ্দেশ্য সফল করতে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে লবিং করবে। প্রয়োজনে ৬ মাসের জন্য চুক্তির মেয়াদ আরো ২৫ মিলিয়ন ডলার দিয়ে বাড়ানো যাবে বলে চুক্তিপত্রে উলেস্নখ করা হয়েছে।

এছাড়াও চুক্তির বাইরেও মামলা খরচসহ অন্যান্য খরচের ব্যয় বহন করতে আরো অর্থ দেয়া হবে উপদেশক এই প্রতিষ্ঠানকে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের পড়্গ থেকে একটি প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। তবে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছিল ২০১১ সালের ১৭ অক্টোবরের আগে এদেশে আসতে পারবে না। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকে না জানিয়ে কনসালটেন্সি বাবদ ২৫ মিলিয়ন পাঠানো হলে সেটা মানি লন্ডারিং অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত হবে বলে মনত্মব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশিস্নষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা। বাংলাদেশ ব্যাংকে না জানিয়ে অর্থ পাঠানো হয়েছে কিনা গতকাল থেকে খতিয়ে দেখতে শুরম্ন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মীর কাশেম আলীকে লেখা একটি চিঠিতে কেসেটি এন্ড এসোসিয়েটস-এর নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট (আনত্মর্জাতিক অপারেশন) এস জে. পৃস্টেন উলেস্নখ করেন, তার স্বার্থ রড়্গার জন্যে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের লবিং চালাতে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। উলেস্নখ্য, আওয়ামী লীগ সরকার ড়্গমতায় আসার পর যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরম্ন করে। গঠিত হয় আনত্মর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তাদের আবেদনের পরিপ্রেড়্গিতে জামাতের শীর্ষস্থানীয়দের গ্রেপ্তার করা হয়। জামাত বিরোধী দলকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্নভাবে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া বানচাল করতে উঠেপড়ে লাগে।

হালে পানি পায়নি জামাত। পরে তারা দেশে-বিদেশে কাজ শুরম্ন করে। অর্থ দিয়ে গোপন ও প্রকাশ্যে বিভিন্ন উপদেশক নিয়োগ করে। তবে ধরা পড়ার ভয়ে লবিস্ট নিয়োগের উদ্দেশ্য গোপন রাখে জামাত। মীর কাশেম আলীও তার চুক্তিতে উদ্দেশ্য গোপন রাখেন।

তবে সম্প্রতি তাদের এই গোপন তৎপরতা বেরিয়ে আসতে শুরম্ন করেছে। অনুসন্ধানে এসব বিষয় বেরিয়ে আসার পর আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এ ব্যাপারে খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।