মুক্ত আকাশ দেখব বলে বয়ে চলা। আকাশ কেন মুক্ত হয় না। মিলি আমার হাত দেখার গল্প তাদের বাসায় বলেছে। শুনে মিলির চাচী হাত দেখানোর জন্য আমাকে খুঁজে। একদিন বিকেল বেলা সবে ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরেছি মিলির ফোন।
মিলি বলে--শোন তুই সময় করে একদিন আমাদের বাসায় আয়।
কেন?
চাচীর খুব ইচ্ছা তোকে তার হাত দেখাবে।
বল্লাম--আমিতো তেমন কিছু পারিনা। ঝরে বক মরেছে বলে কি সবসময় এরকম হবে নাকি? তুই চাচীকে ম্যানেজ কর। আমি পারবো না।
প্রায় ৭ দিন পরের ঘটনা। এর মাঝে এজিবি কলোনীর বাসা থেকে কাঁচা বাজারে গেলে ওদের বাসার সামনে দিয়ে যাই না। ঘুরে ঘুরে দূর দিয়ে যাই যাতে করে চাচীর সাথে দেখা হয়ে না যায়। কিন্তু সবসময় কি আর লুকিয়ে থাকা যায়?
একদিন ঠিকি চাচী আমাকে দেখে ফেলেন।
আর পায় কে? তিনি আমার উপর রাগ করেছেন।
কোনভাবেই বোঝাতে পারিনা আমি হাত দেখতে পারিনা তেমন। পরীক্ষার কথা বলে সেদিন পার পেয়েছিলাম।
বলেছিলাম আগামী ১০/১২ দিন বাসায় থাকব না। তাই এই কয়দিন অপেক্ষা করতে হবে।
তারপর বাসায় ফিরে সোজা নীলক্ষেত।
৭ টাকা দিয়ে একটা হস্তরেখা’র বই কিনলাম। কিনে সোজা ভার্সিটির হলে চলে গেলাম। এই ক’দিন হাতের রেখা মিলাই আর বই পড়ি। আসে পাশের রুমের বন্ধুদের হাত দেখি আর বই মিলাই। আবার মেয়েদের হাত ছেলেদের থেকে আলাদা হয়।
কি বিপদ!!
তারপর কোন এক সপ্তাহান্তে বাসায় ফিরে মিলিকে কল দিলাম।
বললাম-চাচীকে রেডি থাকতে বল। আমি আসছি তোদের ওখানে।
ওদের বাসায় গিয়ে দেখি এলাহী কান্ড। চাচী আমার জন্য মজার মজার খাবার বানিয়ে রেখেছে আর চাচীর ভাই বসে আছে আমাকে প্রশ্ন করে নাস্তানুবাদ করবে বলে।
চাচাতো ভাই-বোনরা বসে আছে আমি কি বলি শুনবে। মিলি মিটি মিটি হাসছে আমার ঘেমে যাওয়া দেখে। আমি এমনিতেই লাজুক টাইপ। ভিতরে ভিতরে ঘামতে লাগলাম।
সেদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম এর পর থেকে আর কারো হাত দেখবো না।
এই বিদ্যা মহা ফ্যাসাদের বিদ্যা। এ আমার নয়।
যাই হউক সেদিন চাচীর হাত দেখে কি কি যেন বলেছিলাম এখন আর মনে নেই। সেদিন ঠিকই চাচীর ভাই আমাকে কিছুটা নাস্তানুবাদ করতে পেরেছিল---জ্ঞান যখন সীমিত/ঘাম তখন বেশী।
তারপর আমার সত্যি সত্যি পরিক্ষার সময় এলো।
প্রায় মাস খানেকের জন্যে হলে চলে গেলাম। ফিরে এসে শুনি কয়েকদিন ধরে মিলি আর তার চাচী আমাকে ফোন করে খুঁজছে (তখন মোবাইল ফোন ছিল না আমার—----অবশ্য তখন ছাত্রদের কারো কাছেই ছিল না)।
আমি ভাবছিলাম—আবার কি? সেদিন যে গুল মারছিলাম সেটার জন্য হয়তঃ খুঁজছে।
কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
মিলিকে ফোন দিলাম।
জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে—কিছুই বলল না।
শুধু বলল চাচীর সামনে পরিস না তোর খবর আছে।
হায়রে কপাল আমার।
এই সামান্য হাত দেখা আমারে কি বিপদেই না ফেলছে!
যেখানে বাঘের ভয় সেখানেও রাত হয়।
হা আবার চাচী আমাকে দেখে ফেলেন।
বাসা এতো কাছাকাছি যে লুকিয়ে থাকবার উপায় নেই।
চাচী বললেন-কি ব্যাপার তোমাকে খুঁজে পাওয়া যায় না কেন? কি হয়েছে তোমার। এক্ষনি বাসায় চলো।
চাচী -- না মানে ইয়ে—আমার একটু বাসায় কাজ আছে?
তোমার কোন কথা শুনবো না। বাসায় চলো।
যেতেই হলো।
বাসায় গিয়ে—দেখোতো সোফাটা কেমন হয়েছে??
বললাম সুন্দরতো—নতুন কিনেছেন নাকি? (মনে মনে ভাবছি ভাল ভাল কথা বলে পরে কি যে ধাতানি দেয় কে জানে)।
হা নতুন কিনেছি—তুমি সেদিন আমার হাত দেখে বলে গেলে না যে আমাদের নতুন ফার্নিচার হবে তার কিছুদিন পরেই কিনেছি। মিলিতো ঠিকি বলে-তুমিতো খুব ভাল হাত দেখো। নতুন ফার্নিচার কিনলাম- তাই তোমাকে মিষ্টি খাওয়াব বলে খুঁজি-কিন্তু পাই না।
হাফ ছেড়ে বাঁচলাম যেন।
তারপর থেকে এ বিদ্যা বাদ দিয়েছি। এখনতো ভুলেই গেছি।
(অফটপিকঃ প্রথম পর্বে যে নীরা’র কথা বলেছিলাম-সে কিছুকাল পরে অষ্ট্রেলিয়া চলে যায় তার স্বামীর সাথে। ক’বছর থেকে দেশে ফিরে আসে স্থায়ীভাবে থাকবে বলে।
একটা সুন্দর ফুঁটফুঁটে বাবুও হয়। তাদের ব্যাবসা শুরু হয়। বাবুটার বয়স যখন ১ বছর ৬ মাস প্রায়, একটা দূরারোগ্য অসুখে আমার প্রিয় বন্ধু নীরা মারা যায়। মাঝে মাঝে যখন ভাবি এতো অল্প বয়সে এমন করে চলে গেলো আমাদেরকে ছেড়ে তখন খুব খারাপ লাগা ভর করে)।
আমার হাত দেখা বিদ্যা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।