আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেই আইনজীবীর বিরুদ্ধে রুল বিচারপতি শামসুদ্দিনের

যে বিচারপতির অপসারণ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মোজাম্মেল হক রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছিলেন, সেই বিচারপতির আদালতে হাজির হয়েই তাকে এর ব্যাখ্যা দিতে হবে। বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই রুল জারি করে। আগামী ১৫ জুলাই মোজাম্মেলকে আদালতে হাজির হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদনের কারণ ব্যাখ্যা করতে বলেছেন তিনি। বিচারপতি সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করার মাধ্যমে আদালতের মর্যাদা, পবিত্রতা ও কর্তৃত্ব ক্ষুণœ করার কারণে আদালত অবমাননার অভিযোগে মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বার কাউন্সিলকে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী আদেশে বলেন, পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনে একটি আবেদন করা হয়েছে।

ওই আবেদনের বক্তব্য আদালত অবমাননাকর। আবেদনটি পত্র পত্রিকায় প্রকাশ করে মোজাম্মেল হক আদালতের মর্যাদা ও পবিত্রতা ক্ষুণœ করেছেন। “আদালতের কাছে মনে হয়েছে, ওই আইনজীবীর একটি আবেদন এই আদালত সরাসরি খারিজ করে দিয়েছে। তাই প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে তিনি এ কাজটি করতে পারেন। ” এ সময় বিচারক আদালতে উপস্থিত অ্যাডভোকেট লায়েকুজ্জামান মোল্লার বক্তব্য জানতে চাইলে এই আইনজীবী বলেন, “সে (মোজাম্মেল) একজন অসুস্থ্য ও কা-জ্ঞানহীন মানুষ।

সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে দেশের আপাময় জনগণের মান মর্যাদা জড়িত। তাই মানুষের স্বার্থেই সুপ্রিম কোর্টের মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। ” গত ৫ জুন বঙ্গভবনে জমা দেওয়া ওই আবেদনে সুুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মোজাম্মেল হক অভিযোগ করেন, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী তাকে আদালতে বানরের সঙ্গে তুলনা করে দুর্ব্যবহার করেছেন। “গত ৩১ মে বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী আমাকে অকারণে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং নিজে নিজে অযথা উত্তেজিত হয়ে আমাকে বানরের সাথে তুলনা করেন, যা আদালত অঙ্গনে নজীরবিহীন। “এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, এ পর্যন্ত উক্ত বিচারপতি পাঁচ শতাধিক আইনজীবীকে বিভিন্নভাবে অহেতুক গালিগালাজ এবং লাঞ্ছিত করেছেন বিধায় বর্তমানে একাধিক সৎ, ভদ্র, আইনজীবী তার কোর্ট নিরবে বর্জন করে চলেছেন এবং নিজের সম্মান রক্ষার্থে কেহ মুখ খোলেন নাই।

” মোজাম্মেল রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ করেন, এই বিচারপতির আদালত বর্তমানে ‘গুটি কয়েক আইনজীবীর পছন্দের আদালতে’ পরিণত হয়েছে। তিনি ‘কারণে অকারণে’ দেশের বিভিন্ন জনের বিরুদ্ধে স্বপ্রণোদিত রুল জারির ‘মহোৎসব’ শুরু করেছেন, যা সংবিধান পরিপন্থী। এছাড়া আইনজীবীদের ওপর ব্যক্তিগত আক্রমণ, গুটিকয়েক আইনজীবীর মামলায় সহায়ক ভূমিকা রাখা, কারণে অকারণে উত্তেজিত হয়ে পক্ষপাতিত্ব, বিজ্ঞ আইনজীবীদের ব্যক্তি স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপের মতো অভিযোগও আনা হয়েছে এই বিচারপতির বিরুদ্ধে। মোজাম্মেল আবেদনে বলেন, “এমতাবস্থায় কী কারণে তিনি আমাকে অকারণে আদালতে অহেতুক হেয় প্রতিপন্ন করেছেন। তার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবি করছি।

” ‘আইনের শাসন, সুশাসন, বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি এবং সংবিধানকে সমুন্নত রাখার’ লক্ষ্যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও রাষ্ট্রপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন মোজাম্মেল। উচ্চ আদালতের একটি রায়ের সমালোচনায় ‘বিরূপ’ মন্তব্য করে স্পিকার রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল অপরাধ করেছেন- এমন বক্তব্য দেওয়ার পর গত ৫ জুন ক্ষমতাসীন মহাজোটের সাংসদরাও এই বিচারপতির অপসারণ দাবি করেন। অবশ্য স্পিকার আব্দুল হামিদ পরে বলেন, তিনিই এ বিষয়ে রুলিং দেবেন। আওয়ামী লীগের বিগত সরকারের সময়ে ২০০১ সালের ২৫ জুলাই হাই কোর্ট বিভাগে অতিক্তি বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার পর দুই বছর দায়িত্ব পালন করেন এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। কিন্তু পরের বিএনপি সরকার তাকে স্থায়ী করেনি।

দীর্ঘদিন পরে মহাজোট ক্ষমতায় আসলে ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ তিনি হাই কোর্টে স্থায়ী নিয়োগ পান। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।