আমি সিনেমা দেখতে ভালবাসি জীবনটা একটা সিনেমার মতো জাতীয় সংসদে অধ্যাপক গোলাম আযম সম্পর্কে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর বক্তব্যকে তার অসুস্থ মানসিকতার প্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন আফিফা আযম। ১২ জুন সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে গোলাম আযমের স্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, তিনি কখনোই অধ্যাপক গোলাম আযমের জন্য উন্নতমানের খাবার প্রদানের দাবি করেননি, বরং তার জন্য প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহ করতে বলেছিলেন।
আফিফা আযমের বিবৃতি-
জাতীয় সংসদ একটি মহান এবং পবিত্র স্থান। কিন্তু, অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের জনপ্রতিনিধিদের একাংশ জনগণের কোটি কোটি টাকা অপচয় করে সংসদে বসে গালাগালি ও কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করেন এবং গীবত, পরনিন্দা ও পরচর্চা করে পরম তৃপ্তি লাভ করেন।
সম্প্রতি মাননীয় কৃষিমন্ত্রী, মিসেস মতিয়া চৌধুরী, সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিকভাবে জাতীয় সংসদে আমার স্বামী অধ্যাপক গোলাম আযম সম্পর্কে যা বলেছেন তা মিথ্যা, অশালীন এবং তার সংকীর্ণ মনের বহিঃপ্রকাশ। উনাদের মত মাননীয় মন্ত্রীদের ন্যূনতম শিষ্টাচারবোধের অভাব দেখে দুঃখ পাই, কষ্ট পাই, করুণা হয় কিন্তু, বিস্মিত হই না, কারণ এটাই তাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি।
আমার ও আমার পরিবারের শিক্ষা, শিষ্টাচার ও শালীনতাবোধের কারণে আমরা কারো সমালোচনা করা বা পরনিন্দা করা অভদ্রজনোচিত ও অসৌজন্যমূলক বলে মনে করি। তাই, একটি স্বার্থান্বেষী মহল হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে বিগত ৪০ বৎসর ধরে যত কুৎসা রটনা করেছে আর যত মিথ্যাচার করেছে, আমার স্বামী সেগুলোর কোন জবাব দেয়ারও প্রয়োজন মনে করেননি। কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করার তো প্রশ্নই ওঠে না।
আমার স্বামীর নীতি অনুযায়ী আমিও কখনো এ ধরনের কোনো মিথ্যাচার এর প্রতিবাদ জানাইনি। কিন্তু, ৯০ বৎসরের এক অসহায় ও বৃদ্ধকে প্রায় হাত-পা বাঁধার মতো অবস্থায় নির্জন একাকী সেলে আটক রেখে যারা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তৃপ্তি পায় এবং তাকে নিয়ে মহান সংসদে বসে নির্লজ্জভাবে মিথ্যাচার করে, তাদের রাজনৈতিক চরিত্র সম্পর্কে দেশবাসীকে অবহিত করার দায়িত্ববোধ থেকে আমার এ বক্তব্য।
মিসেস মতিয়া চৌধুরী অত্যন্ত উদ্ধতভাবে বলেছেন, ‘যে নেতা নিজে উন্নতমানের মুখরোচক খাবার খায় আর কর্মীরা নিম্নমানের খাবার খায় তার দ্বারা আর যা-ই হোক জিহাদ হবে না। ’
স্পষ্টতই, আপনার বক্তব্যে একটা প্রচ্ছন্ন ব্যঙ্গ ও শ্লেষ মেশানো। আপনি এ ‘উন্নত মানের মুখরোচক খাবার’ বলতে কী বুঝিয়েছেন তা আপনারই জানা।
তবে, আপনার জানা উচিৎ যে-
(১) অধ্যাপক গোলাম আযম সারা জীবন অত্যন্ত সাদামাটা জীবনযাপন করেছেন এবং সাদা মাটা ভাজি-ভর্তাই খেয়েছেন। এখনো উনার খাদ্যাভ্যাস তেমনটিই রয়েছে। গ্রেফতারের পর হতে তিনি নিজে কখনোই বলেননি যে তার ‘উন্নত মানের খাবার’ প্রয়োজন। ১১ জানুয়ারি তাকে বন্দী করার পর হতে আমার স্বামী ‘উন্নত মানের খাবারের’ জন্য কাউকে কিছু বলেছেন তা একমাত্র মিথ্যাবাদী ছাড়া আর কেউ বলতে পারবে না। সুতরাং, অধ্যাপক গোলাম আযম সম্পর্কে ‘যে নেতা উন্নতমানের খাবার খায়’ বলে আপনি যে বক্তব্য রেখেছেন তা এক নির্লজ্জ মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়।
(২) আমার স্বামীর খাবারের ব্যাপারে পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার ভাজি-ভর্তা, ছোট মাছ, চচ্চরি এসবের কথাই বলা হয়েছে। ‘মুখরোচক’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে বটে। তবে, ‘মুখরোচক’ শব্দের অর্থ আপনি বুঝতে না পারলে আপনার জন্য করুণা করা ছাড়া আমার কিছুই করার নেই। বাজারের সর্বনিম্ন দামের সবজি ভাজিও ভালো রান্নার সুবাদে ‘মুখরোচক’ হতে পারে। তাই ‘মুখরোচক”’ শব্দটির কোনো নেতিবাচক ব্যাখ্যার কোন অবকাশ নেই।
(৩) আমার স্বামীকে দিয়ে ‘আর যাই হোক জিহাদ হবে না’ বলে আপনি যে ব্যঙ্গ করেছেন তার দ্বারা আপনি নিজেকেই হেয় প্রতিপন্ন করেছেন। আসলে, আপনার মুখ দিয়ে ‘জিহাদ’ শব্দটি বের হওয়া ‘ভূতের মুখে রাম নাম’ এর মতই। প্রথম জীবনে আপনি বাম রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাই, আপনার সুহৃদ ও বন্ধুগণ আপনাকে অত্যন্ত ভালবেসে খেতাব দিয়েছিলেন ‘অগ্নিকন্যা’। সেই ‘প্রথম জীবনের বাম রাজনীতির পতাকাবাহী অগ্নিকন্যা মতিয়া চৌধুরী’ যখন দেখলেন যে, বাম ‘অগ্নিকন্যা’ খেতাব নিয়ে ক্ষমতার স্বাদ পাওয়া যাবে না, তখন মাঝ বয়সে এসে বাম রাজনীতির ইতি টেনে, নৌকায় চড়ে মতার মসনদে বসলেন।
কোথায় গেল আপনার সমাজতান্ত্রিক নীতি? কোথায় রইল আপনার সারা জীবনের বাম আদর্শ? পত্রিকায় জানলাম, আরো এক প্রাক্তন বাম নেতা ও বর্তমান মন্ত্রী তিন নির্বাচনে (১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১) সর্বমোট ৩,০০০ ভোটও পাননি! প্রকৃতপক্ষে, শুধু আপনি একা নন- বাম রাজনীতির ধারক-বাহকগণ, যারা সারা জীবনই নির্বাচনে জামানত খুইয়েছেন এবং দলের সবাই মিলেও জামায়াতের যেকোনো একজন এমপি’র চেয়েও কম ভোট পেয়েছেন, তারাও শেষ বয়সে ক্ষমতার লোভ সামলাতে পারেননি।
যাদের আদর্শ নেই, নীতি নেই, গণভিত্তি নেই এবং ক্ষমতাই যাদের একমাত্র লক্ষ্য তারা এমনটিই করে। জেনে রাখুন, অধ্যাপক গোলাম আযম ফাঁসিকে ভয় পান না। শহীদ হওয়ার জয্বা নিয়েই তিনি ইসলামী আন্দোলন শুরু করেছেন এবং সেই নীতি বুকে লালন করেই এই ৯০ বৎসর বয়সেও গ্রেফতারের সময় জাতির জন্য দিক নির্দেশনা দিয়ে গিয়েছেন, কোনো প্রলাপ বকেননি। এটাই ‘জিহাদী’দের সেনাপতির লক্ষণ।
প্রাণ ভয়ে তারা মিথ্যার আশ্রয় নেন না, বা ‘ক্ষমতার লোভে খোলস পাল্টান না’।
আসলে ক্ষমতার স্বপ্নে সব ভুলে গিয়ে আপনারা সারা জীবনের বাম রাজনীতির ‘জিহাদ’ থেকে বিচ্যূত হয়ে যে নীতিহীনতা দেখিয়েছেন তাতে আপনারা নীতিহীন কথা বলবেন এতে আর আশ্চর্য হবার কি আছে? আর নীতিহীন মানুষ ‘জিহাদ’ শব্দের সঠিক অর্থ না বুঝাই স্বাভাবিক। ক্ষমতা আর পয়সার জোরে লোক জমায়েত করা যায়, গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানো যায়, কিন্তু মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায় না। পৃথিবীব্যাপী লাখ লাখ লোক অধ্যাপক গোলাম আযমের জন্য চোখের পানি ফেলছেন, তাহাজ্জুদ নামায পড়ে দোয়া করছেন। সমস্ত পৃথিবী থেকে বক্তৃতা, বিবৃতি ও চিঠি আসছে।
তিনি বিশ্বব্যাপী নন্দিত, আদরনীয়, বরণীয় ও সমাদৃত তার ব্যক্তি ও নীতিসম্পন্ন নেতৃত্বের গুণাবলীর জন্যই।
অধ্যাপক গোলাম আযম একজন অনন্য সাধারণ নেতৃত্বের গুণাবলী সম্পন্ন মানুষ। তিনি ন্যায়বান, নীতিবান ও জনদরদী একজন নেতা - আপনাদের ক্ষমতালোভী ক্ষমতালোভী নন। তিনি আপনাদের মতো ক্ষমতাকে লক্ষ্য করে কোনোদিন কিছু করেননি।
আপনাদের মতো নীতিহীন ক্ষমতালোভী নেতা-নেত্রীরা ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকার স্বার্থে যত গালিই দেন না কেন, ৯০ দশকের প্রথম নির্বাচনের পর যখন ক্ষমতায় যাওয়ার স্বার্থে প্রয়োজন ছিল তখন অধ্যাপক গোলাম আযমের পদধূলি নিয়েছিলেন, মন্ত্রীত্বের লোভ দেখিয়ে সরকার গঠনের উদ্দেশ্যে উনার সহায়তা চেয়েছিলেন।
এটাই নীতিহীনদের নীতি - ক্ষমতার জন্য সব জায়েজ তাদের কাছে। আপনাদের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীও অধ্যাপক গোলাম আযমের পদধূলি নিয়েছিলেন।
আর, কেয়ারটেকার সরকারের রূপকার অধ্যাপক গোলাম আযম হলেও আপনারা তা ‘হাইজ্যাক’ করে নিজেদের দাবী করা সত্ত্বেও অধ্যাপক গোলাম আযম তার বিরুদ্ধে কোনো উচ্চবাচ্চ্য করেননি। আপনাদের না জানার কথা নয় যে, প্রেসিডেন্ট এরশাদের শাসনামলে ৮০’র দশকের মাঝামাঝি সময়ে অধ্যাপক গোলাম আযমই এই কেয়ারটেকার ফর্মূলা পেশ করেছিলেন।
ম্যাডাম চৌধুরী, ‘জিহাদ’ শব্দের অর্থ ও তাৎপর্য আপনি বুঝবেন তা আমরা আশা করি না।
সমাজতন্ত্রের নীতি বিসর্জন দিয়ে ধর্ম নিরপেক্ষতার বুলি বুকে লালন করে ক্ষমতার লোভে এক সময় যেই ‘জিহাদী’দের পদধূলি নিয়েছিলেন, আজ ক্ষমতায় গিয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার স্বার্থে সেই ‘জিহাদী’দের বিরুদ্ধেই তো জিহাদে আপনারা অবতীর্ণ। জিহাদের চেতনায় উদ্বুদ্ধদের ৯০ বৎসরের বৃদ্ধ নেতার হাত-পায়ে শিকল পরিয়ে মহা বীর বীক্রমে মহান সংসদে সেই সিপাহসালার সম্পর্কে অশোভন ভাষণ প্রদান আপনাদেরই সাজে। প্রকৃতপক্ষে আপনারা তো ধর্ম অনুসরণ করেন না, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করেন। তাই আপনারা ‘জিহাদের’ অর্থই বোঝেন না।
আশা করি, আগামী দিনে এইরূপ অশালীন বক্তব্য প্রদানে আপনারা বিরত থাকবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।