যখন অলস সময় পাই, কিংবা রাতে একাকী সময়টা, তখন তোমাকে মনে পরে ..!! পরক্ষনেই ভুলে যাবার চেষ্টা.... দায়িত্ব এবং আরও হাজারো চিন্তায় তোমার ভাবনা গুলো আবার হারিয়ে যায়... আবার ব্যস্ততা, মনে পরা, ভুলে যাওয়া ....... চলে যাচ্ছে দিন, ভালই তো....!!! দিনাজপুরের ভূমি অফিসে তৎকালীন কর্মরত এক সরকারী কর্মচারী তার পুরো পরিবার নিয়ে একটা গ্রামে বসবাস করতেন। বৃদ্ধ বাবা যিনি একটা মসজিদের ইমাম ছিলেন, তার মা একজন গৃহিনী। তিন বোন, একজন বিবাহিত এবং তার দুটি সন্তান ছিলো। স্বামী সহ ভাইয়ের বাড়িতে আশ্রয় এর জন্য এসেছিলেন। দুইটি কাজের ছেলে, সেই কর্মচারীর আপন ছোট ভাই যে কৃষিকাজ করতো বয়স মাত্র ১৮ বছর, কর্মচারীর স্ত্রী এবং পাঁচ সন্তান।
এমন সময় গ্রামে পাক বাহিনীর সাথে প্রবেশ করে এদেশীর রাজাকার বাহিনী। হাতের কাছে যাক পাচ্ছিলো, তার জামা কাপড় খুলে চেক করছিলো যে মুসলমান কিনা, সন্দেহ হলে কলেমা পড়তে বলছিলো। যারা পারছিলো তারা লাথির ওপর চলে যেতে। যারা পারছিলো না, কিংবা অমুসলীম দের এনে একটা পুকুরের পাশে দাড় করাচ্ছিলো। খবর পেয়ে সেই কর্মচারী সবাইকে নিয়ে পালাতে থাকেন।
কিন্তু বিধি বাম। ধরা পড়েন রাজাকার বাহিনীর হাতে। এক রাজাকার তার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করে তার কয়টা সন্তান। তিনি বলেন পাঁচটা। তার ছোট ছেলের বয়স তখন মাত্র ২২ দিন।
কিন্তু ভেজাল বাধে এক কাজের ছেলেকে নিয়ে। সে ছিলো হিন্দু। পাক বাহিনী তখন গ্রামের অন্য পাশে ঘড় বাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। রাজাকার রা তখন সবাইকে মারতে উদ্যত হয়। সেই কর্মচারীর বয়স ৩৯ হলেই যথেষ্ট শক্তিশালী ছিলেন।
তিনি রাজাকার দের লীডারের ওপর ঝাপিয়ে পড়েন। এক কাজের ছেলে তার ছোট মেয়ে আর বড় দুই ছেলেকে নিয়ে দৌড় দেয়। তাদের কে একটা ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে সে ফিরে আসে কর্মচারীর স্ত্রীকে নিয়ে যেতে। পথে এক রাজাকার এর দা এর কোপে তার মৃত্যু হয়। এর মধ্যে কর্মচারী তার এক বোনকে নিয়ে দৌড় দিয়েছিলেন।
সন্ধ্যা হওয়ার কারনে রাজাকার রা ঠিক মতো সবাইকে লোকেট করতে পারে নি। কর্মচারী ছোট ভাইকে খুঁজে বের করে ফেরত আসেন বাবা মা এবং অপর দুই বোনকে নিতে। ফিরে এসে দেখেন এক পুকুরের ধারে তার বাবা, মা, তার বোন, বোনের স্বামীর লাশ পড়ে আছে। তার বোনের বড় ছেলে পালিয়ে গিয়েছিলো। ৩ বছরের ছোট ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করে রাজাকার রা।
পরে লাশ একটা গাছের ডালের সাথে লটকিয়ে রাখে।
এর মধ্যে পাক বাহিনী দেখানে হাজির হয়। তাদের গুলিতে কর্মচারীর ছোট ভাই নিহত হয়। সেই কর্মচারী ছুটে পালাতে গিয়ে একটা ঝোপের মধ্যে তার বড় মেয়েকে পান। সবাইকে একত্রিত করে তারপর দেখেন মাত্র আধা ঘন্টার মধ্যে তিনি তার পরিবার এর ৯ জনকে হারিয়েছে।
তার বাবা মা, এক বোন, তার স্বামী, তার ছোট সন্তান, তার ছোট ভাই, এক কাজের ছেলে যে তার সন্তানদের বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবন দিয়েছে, অপর এক কাজের ছেলে, তার আরেক বোন। নিমিষের মধ্যে তাদের সুখের পরিবার পরিনত হয় কান্নার ধারকে।
তার অপর বোনের লাশ পাওয়া যায় অনেক দূরে আরো ২৫ টা লাশের সাথে। অপর কাজের ছেলের লাশ পাওয়া যায় নি। তবে ধারনা করা হয় তার লাশ পুকুরের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছিলো।
সকাল হওয়ার পর দেখা যায়, গোটা পুকুরের পানি রক্তের মতো লাল হয়ে আছে। পাক বাহিনীর সেই অভিযান এ ঐ গ্রামের প্রায় ৫০ জনের মৃত্যু হয়।
সেই কর্মচারী ছিলেন আমার নানা শামসুল হক। আর ঝোপের মধ্যে যে দুই সন্তান ও ছোট মেয়ে কে লুকিয়ে রেখে এসেছিলো তারা যথাক্রমে আমার বড় ও মেঝ মামা এবং মেয়েটি আমার মা।
এরপরও যদি কোন শুয়োরের বাচ্চা বলে একাত্তরে কোন মানবতা বিরোধী অপরাধ হয়নি, ঐ শুয়োরের বাচ্চারে রাজাকার রা যেমনে একাত্তরে মানুষ মারছিলো, তেমনে মারা উচিৎ।
## মূল পোস্ট টি লিখেছেন অরিত্র আহমেদ । উনার সাথে আলোচনা করে সামু ব্লগে পোস্ট টি দেওয়া হল । উনার সামু নিক ডিমোশন হওয়ার ফলে আমি ই উনার পক্ষ থেকে ব্লগে এই লিখাটি পোস্ট করলাম ## ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।