আমি জানিনা যে আমি জানিনা, আর আমি যে জানিনা আমি জানিনা সেটাও আমি জানিনা। অর্থাৎ আমি জানি যে আমি জানি, কিন্তু আসলে আমি জানিনা পিলগ্রিমেজ টু আর্থ
লেখক: রবার্ট শেকলি
আলফ্রেড সাইমন এর জন্ম কাজাংগা ৪ এ। ছোট্ট এই গ্রহের বাসিন্দারা মূলত কৃষিকাজে তাদের দক্ষতার জন্য সারা গ্যালাক্সিতে সুপরিচিত।
তবে কৃষিকাজে সাইমনের মন নেই। সে একটু ভাবুক প্রকৃতির।
সারাদিন সে শুধু তার কম্বাইন (এক ধরনের যান) চালিয়ে গম ক্ষেতগুলোর উপর ঘুরে বেড়ায়, আর রাতে চুপচাপ বসে শোনে পৃথিবীর বাসিন্দাদের রচনা করা ভালবাসার গান।
বসবাসের জন্য কাজাংগার মত ভাল জায়গা আর হয় না, এ কথা সবাই একবাক্যে স্বীকার করবে। এই গ্রহের মেয়েরা স্বাস্হ্যবতী, খোলামেলা, হাসিখুশী। কোন এক রৌদ্রকরোজ্জ্বল দুপুরে পাহাড়ী পথ ধরে হাঁটা বা লেকের পানিতে সাঁতার কাটা জন্য তাদের চেয়ে ভাল সঙ্গী আর হয় না। কিন্তু তারপরও তাদেরকে সাইমনের খুব একটা পছন্দ হয় না।
সাইমনের মনে হয়, তাদের মধ্যে কিছু একটা নেই।
কোন জিনিসটা নেই কয়েকদিন পরেই সেটা সাইমন বুঝতে পারল।
অনেক পুরনো ভাঙ্গাচোরা এক স্পেসশিপে করে কাজাংগায় এল এক বই বিক্রেতা। অন্যগ্রহের একজনকে কাছে পেয়ে ঘিরে ধরল তাকে কাজাংগার মানুষ, জানতে চাইল গ্যালাক্সির খোঁজ খবর। সেই বৃদ্ধ বিক্রেতা তাদের শোনাল পণ্যের বিনিময়মুল্য নিয়ে ডেট্রয়েট ২ আর ডেট্রয়েট ৩ এর মধ্যকার মনকষাকষির খবর, মোরাসিয়ার প্রেসিডেন্টের স্ত্রী কোন পোশাক পড়ার কারণে সমালোচিত হলেন, ডোরান ৫ এর মানুষরা কি অদ্ভূতভাবে কথা বলে; অবশেষে ভিড়ের মধ্য থেকে একজন বলে উঠল, আমাদের পৃথিবীর গল্প শোনান।
"পৃথিবীর গল্প শুনবে? মানব সভ্যতার জন্মদাত্রী পৃথিবীর মত আর কোন গ্রহ এই গ্যালাক্সিতে নেই। এই গ্রহে অসম্ভব বলে কিছু, সবকিছুই সেখানে সম্ভব,” বিক্রেতা বলল।
"অসম্ভব বলে কিছুই নেই?" সাইমন বলল।
“তাদের যে একটা আইন আছে, কোন কিছুতেই না বলা যাবে না। আজ পর্যন্ত কেউ সেই আইন ভেঙ্গেছে এমন শোনা যায়নি।
তোমরা তো কৃষিকাজে দক্ষ, পৃথিবীর মানুষেরা কিসে দক্ষ জানো? যত সব আজগুবি জিনিস আছে, পাগলামি, নেশা, সৌন্দর্য, যুদ্ধ, আতন্ক, ক্রোধ এইসব নিয়ে পৃথিবীর মানুষে কারবার। আর এসবের স্বাদ নিতে আলোকবর্ষদূরের গ্রহ থেকে লোকজন পৃথিবীতে ছুটে আসে। ”
"আর ভালবাসা?" জিজ্ঞাসা করল এক মেয়ে।
"পৃথিবীই একমাত্র জায়গা যেখানে তুমি ভালবাসা খুঁজে পাবে। ডেট্রয়েট ২ আর ৩ এর মনে হয়েছে জিনিসটার দাম অনেক বেশী, আর আলানা ভালবাসা আমদানী করল না অস্থিতিশীল বলে।
একমাত্র পৃথিবীতেই এইসব আজগুবী জিনিস পাওয়া যায়, আর তারা এর বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করে। "
"অর্থ উপার্জন করে?" জিজ্ঞাসা করল মোটাসোটা এক কৃষক।
"অবশ্যই। পৃথিবী এখন বিগতযৌবনা, তার খনিজের পদার্থের মজুদ শেষ, শষ্যক্ষেত্রগুলো শত বছরের চাষের পর অনুর্বর। তাদের এখন তোমাদের কাছ থেকে খাদ্য কিনতে হয়, আর বিনিময়ে দেবার মত ভালবাসা ছাড়া তাদের যে আর কিছু নেই।
”
"তুমি কি কখনো প্রেমে পড়েছিলে, পৃথিবীতে?" সাইমন জিজ্ঞাসা করল।
পড়েছিলাম বৈকি, বৃদ্ধ বিক্রেতআ মুচকি হাসল, “আর এমন অনেক প্রেমকাহিনী তোমরা পাবে বন্ধুগণ, যদি তুমি কেন এই বইটা, অসম্ভব সস্তায়..............”
সাইমন একটা প্রাচীন কবিতার বই কিনল (অবিশ্বাস্য রকমের চড়া দামে)। রাতে বিছানায় শুয়ে বইটা পড়তে পড়তে কল্পনায় সে দেখল, পূর্ণিমা রাতে সমুদ্রতীরে সে শুয়ে আছে ভালবাসার মানুষটাকে জড়িয়ে ধরে, পায়ের কাছে আছড়ে পড়ছে প্রমত্তা ঢেউ......
সেই রাতেই সাইমন সিদ্ধান্ত নিল, পৃথিবীতে তাকে যেতেই হবে।
অনেকগুলো বছর সে পরিশ্রম করল আর টাকা জমাল। অবেশেষে তার ২৯তম জন্মদিনে সে তার খামারটা বেঁচে দিল, কাপড়গুলো গুছিয়ে নিল একটা হ্যান্ডব্যাগে, তারপর তার সবচেয়ে ভাল স্যুটটা গায়ে চড়িয়ে, রওনা দিল পৃথিবীর উদ্দেশ্যে।
নিউই্য়র্ক স্পেসপোর্টে কাস্টমসের ঝামেলা শেষ করে, আন্ডারগ্রাউন্ড শাটলে চড়ে সে চলে এল টাইমস স্কোয়ারে। সাবধানে বাইরে পা ফেলল, এক হাতে শক্ত করে হ্যান্ডব্যাগটা ধরা, পরিচিতরা অসংখ্যবার তাকে সাবধান করে দিয়েছে পৃথিবীর পকেটমারদের ব্যাপারে।
সবার প্রথমে সে লক্ষ্য করল রাস্তার দুপাশে অসংখ্য মুভি থিয়েটার। কোনটাতে চলছে টু ডাইমেনশন মুভি, কোনটাতে থ্রি, কোনটাতে বা ফোর। আর কত ধরনেরই না মুভি।
ডান দিকে একটা থিয়েটার এর মাথায় বড় বিলবোর্ডে লেখা:
শুক্রগ্রহের কামকলা! সবুজ নরকের বাসিন্দাদের যৌন ক্রীড়া নিয়ে নির্মিত ডকুমেন্টারী
আনসেন্সর্ড!
সাইমন একবার ভাবল যাবে কিনা। কিন্তু রাস্তার ওপারের আরেকটা বিলবোর্ড তাকে টানল। সেখানে বড় করে লেখা:
সূর্যযোদ্ধারা! দু:সাহসী স্পেস মেরিনদের উৎসর্গ করে বানানো এক চলচিত্র!
সবকিছুই এখানে আলো ঝলমলে আর চাকচিক্যময়। সাইমন রাস্তার পাশের ছোট্ট খাবার দোকানগুলোর দিকে গেল। সারা গ্যালাক্সির খাবার বিক্রি হচ্ছে এখানে, বিশেষ করে পৃথিবীর বিখ্যাত পদগুলো, যেমন পিজা, হটডগ, স্প্যাগেটি।
পানীয়'র দোকানের সংখ্যাও কম নয়।
সাইমন বুঝতে পারছিল না কি শুরু করবে। হঠাৎ করে তার কানে এল আগ্নেয়াস্ত্রের আওয়াজ।
আওয়াজটা আসছে একটা শুটিং গ্যালারী থেকে। ছোট্ট একটা চিকন খুপরী মত দোকান, উজ্জ্বল রং এ রাঙ্গানো।
দোকানদার সাইমন এর দিকে তাকিয়ে হাসল, "নিজের ভাগ্য পরীক্ষা করতে চাও?"
সাইমন দোকানের ভিতর উঁকি দিল। টার্গেট এর জায়গায় চারজন স্বল্পবসনা মেয়েকে বসিয়ে রাখা হয়েছে, চেয়ারগুলো বুলেটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত, প্রত্যেকটা মেয়ের কপাল আর দুই বুকের মাঝখানে বুলস আই আঁকা।
"কিন্তু বুলেট গুলো দেখে তো মনে হচ্ছে আসল?"
"অবশ্যই আসল। কোন ধরনের নকল জিনিসের প্রচার করা পৃথিবীতে নিষিদ্ধ। আসল বুলেট এবং আসল মেয়ে।
কথা না বাড়িয়ে এটা হাতে নাও, গুলি করে ভর্তা করে দাও একটাকে। "
"এত ভয় পাচ্ছ কেন? চিন্তা করো না, তুমি আমার ধারেকাছে লাগাতে পারবে না," চেয়ারে বসে থাকা একটা মেয়ে চিৎকার করে বলল"। "আরে তোমাকে তো দূরের কথা, টার্গেট হিসাবে একটা স্পেশসিপ দিলেওএই গাধা লাগাতে পারবে না" পাশ থেকে টিপ্পনী কটাল আরেকটা মেয়ে।
সাইমন বলল: "ছেলেদের এভাবে গুলি করারও ব্যবস্থা আছে?"
"অবশ্যই। কিন্তু তুমি নিশ্চই এরকম পারভার্ট নও?”
"অবশ্যই না!"
"তুমি কি অন্য গ্রহের নাকি?"
"হুম।
কিভাবে বুঝলে?"
"স্যুটটা দেখলেই বোঝা যায়। এখন কথা না বলে মেয়েগুলোকে গুলি করো, দেখো কি আরাম লাগে, নিজের ভেতরের যত রাগ, ক্ষোভ আছে সব দেখবে দূর হয়ে গেছে। লোকে এখন আর ম্যাসাজ করে না, শুটিং গ্যালারিতে আসে। মদ খেয়ে মাতলামি করার চাইতেও অনেক ভাল। "
"কিন্তু গুলি লাগলে তো তুমি মরে যাবে," সাইমন একটা মেয়েকে বলল।
"গাধার মত কথা বল না, মরব কেন। কিন্ত গুলি লাগার সময় যে শকটা লাগে, সেটা মৃত্যুর চেয়েও ভয়ংকর। " ব্যাপারটা কল্পনা করেই মেয়েটা শিউরে উঠল।
"কি দিয়ে মারতে চাও?" দোকানদআর একটা সাবমেশিনগান বের করে কাউন্টার এর উপর রাখল। "আর যদি একটু বেশী খরচ কর তাহলে এই টমি গানটা নিতে পার।
আসল জিনিস। সেইরকম ফিলিংস। "
"নো থ্যাংকস। "
"আমার কাছে গ্রেনেডও ছিল, স্প্লিন্টারগুলো যখন শরীরে ঢোকে...." বলতে বলতে দোকানদারের চোখ চকচক করে উঠল।
"না!" দৌড়ে পালাল সাইমন, একটা পানীয়'র দোকানে গিয়ে কোকের অর্ডার দিল।
গ্লাসে চুমুক দেওয়ার সাইমন লক্ষ্য করল তার হাত কাঁপছে। সে ব্যাপারটা এখনও সহজভাবে নিতে পারছে না। যদি পৃথিবীর মানুষ অন্য মানুষকে গুলি করে আনন্দ পায়, আর যে গুলো খাচ্ছে তার কোন আপত্তি না থাকে তাহলে আমি বলার কে? কয়েকবার সে নিজেকে বলল।
নাকি আসলেই কিছু বলা উচিত?
"কি খবর বন্ধু? অন্য গ্রহের নাকি?"
সাইমন ঘুরে তাকাল, বিশাল সাইজের ওভারকোট পরা ছোটখাট এক লোক পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। "কিভাবে বুঝলেন?"
"জুতাটা দেখলেই বোঝা যায়।
তো, কেমন লাগছে পৃথিবী?"
"আসলে, আমি যেরকম ভেবেছিলাম.........."
"এটাই স্বাভাবিক। তোমাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে তুমি একজন আদর্শবাদী। তুমি এই গ্রহে এই এসেছ একটা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে, আর তা হচ্ছে এক মহাযুদ্ধে সামিল হওয়া, যেই যুদ্ধে জয়ের মাধ্যমে তুমি পৃথিবীর দরিদ্র, নিপীড়িত মানুষে মুখে হাসি ফোটাতে পারবে। তুমি ঠিক জায়গাতেই এসেছ। এই মূহুর্তে পৃথিবীতে ছয়টি বড় যুদ্ধ চলছে, এবং এর প্রত্যেকটাতেই একটা গুরুত্বপূর্ণ পদ খালি আছে, যা একমাত্র তোমার পক্ষেই পূরণ করা সম্ভব।
"
"স্যরি, আসলে........"
"ঠিক এই মুহূর্তে," মানুষটার মধ্যে থামার কোন লক্ষণ দেখা গেল না, "পেরুর শ্রমিকেরা এক মরণপণ লড়াই লড়ছে রাজকীয় শাসকশ্রেণীর বিরুদ্ধে, আর একজন যোদ্ধা পেলেই তারা জয় ছিনিয়ে আনতে পারে। তুমি হতে পার সেই যোদ্ধা, নিশ্চিত করতে পার সমাজতন্ত্রের জয়। " কিন্তু সাইমনের প্রতিক্রিয়া দেখে দ্রুত সে সুর পাল্টে ফেলল, "কিন্তু পেরুর মহান সম্রাট এর কথাও ভুলে গেলে চলবে না। এই শতবর্ষী বৃদ্ধ শাসক, আর তার অনুগত বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক আর ছোট্ট রাজকীয় সেনাদল আজ বিদেশী শক্তির মদদপুষ্ট কিছু দুষ্কৃতিকারীর কাছে কোনঠাসা হয়ে পড়েছে........"
"ভাই, আপনি ভুল নাম্বারে ডায়াল করেছেন........." সাইমন বলা শুরু করল
"চায়নাতে দুষ্কৃতিকারীরা........."
"না!"
"তাহলে ওয়েলস এ কমিউনিস্টদের হয়ে লড়তে চাও?" অথবা জাপানে ক্যাপিটালিস্টদের হয়ে?" অথবা তোমার যদি কোন বিশেষ গোষ্ঠীর ব্যাপারে আগ্রহ থাকে, ফেমিনিস্ট, প্রহিবিশনিস্ট, ফ্রি সিলভারিস্ট....."
"আমি যুদ্ধ চাই না"
"আরে এটা আগে বলবেনা? যাই হোক, তাহলে তোমার পৃথিবীতে আসার আরেকটা কারণই থাকতে পারে, নিশ্চই তুমি ভালবাসার খোঁজে এসেছ। "
"আপনি কিভাবে বুঝলেন?"
"যুদ্ধ আর ভালবাসা, এই দুটোই আর আমাদের প্রধান ফসল।
আর সময়ের শুরু থেকে দুটিতেই আমাদের বাম্পার ফলন হচ্ছে। "
"ভালবাসা খুঁজে পাওয়া কি খুব কঠিন?"
"সোজা দুটা গলি পরে হাতের বামে। বড় করে লেখা আছে। বলবে যে জো পাঠিয়েছে। "
"কি যা তা বলছেন! ভালবাসা এরকম রাস্তার মোড়ে পাওয়া যায় না।
"
"ভালবাসা সম্পর্কে তুমি কি জানো?”
"কিছুই না। "
"আমরা এ ব্যাপারে এক্সপার্ট। "
"কিন্তু বইয়ে যে লেখা থাকে, পূর্ণিমা রাতে সমুদ্রতীরে..."
"বুঝতে পেরেছি, ভালবাসার মানুষটাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকা, পায়ের কাছে আছড়ে পড়ছে প্রমত্তা ঢেউ। "
"আপনিও বইটা পড়েছেন?"
"সব ব্রশিওর এ এটাই লেখা থাকে। আচ্ছা আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে, হাতের বামে দুই গলি পরে, গেলেই দেখতে পাবে", বলতে বলতে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেল জো।
কোকটা খাওয়া শেষ করল সাইমন, তারপর হাঁটা শুরুল। তার মাথা ঘুরাচ্ছে। হাতের বামে তিন নম্বর গলিতে ঢুকেই দেখ বিশাল বড় এক নিয়ন সাইন, তাতে লেখা, "লাভ, ইন্ক(LOVE, INC)।
নিচে ছোট অক্ষরে লেখা, আমরা ২৪ ঘন্টাই খোলা।
তার নিচে লেখা, পরবর্তী ফ্লাইট একটায়।
ভ্রু কুঁচকাল সাইমন, একটা সন্দেহ হচ্ছে তার। তারপরও সিঁড়ি বেয়ে উঠল, ঢুকে পড়ল রিসেপশনে। ঘরটা সুন্দরভাবে সাজানো, রুচিশীলতার ছাপ স্পষ্ট। সেখান থেক তাকে পাঠান হল আরেকটা ছোট রুমে। প্রকান্ড এক ডেস্কের পিছনে হ্যান্ডসাম চেহারা, কাঁচাপাকা চুলের অধিকারী একজন বসে আছেন, উঠে সাইমনের সাথে হাত মেলালেন, "কাজাংগার কি খবর?"
"আপনি কিভাবে জানলেন আমি কাজাংগা থেকে আসছি?"
"শার্টটা দেখেলই বোঝা যায়।
আমি মি: টেইট, আপনার নামটা?"
"সাইমন, আলফ্রেড সাইমন"
"প্লিজ টেক এ সিট, স্যার। বলুন কি খাবেন, সিগারেট? ড্রিংকস? আপনি সঠিক জায়গাতেই এসেছেন স্যার। আমরাই গ্যালাক্সির সবচেয়ে পুরনো ভালবাসা বিপণন প্রতিষ্ঠান, নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী প্যাশন আনলিমিটেড এর চেয়ে অনেক এগিয়ে। আমরা আপনাকে দিচ্ছি লেটেস্ট প্রডাক্ট, রিজনেবল প্রাইসে। কাইন্ডলি বলবেন আমাদের সম্পর্কে কোথায় জানলেন, গতকালের পত্রিকায় আমাদের ফুল পেজ বিজ্ঞাপন? নাকি....."
"জো আমাকে পাঠিয়েছে।
"
"আচ্ছা, জো আমাদের এখানে অনেকদিন ধরে আছে। ঠিক আছে স্যার, তাহলে আসুন শুরু করা যাক....."
"আসলে আপনি কি ভেবেছেন আমি জানি না," ইতস্তত করল সাইমন, "আমি কিন্তু কোন পতিতা চাচ্ছি না। "
"ছি: ছি: ছি: স্যার, এটা কি বললেন। এটা কোন পতিতালয় নয়। আর সেক্স তো সবখানেই চাওয়া যায়।
এই পৃথিবীতে সবচেয়ে সস্তা হল মানুষের জীবন, তারপরেই সেক্স। কিন্তু ভালবাসা হল দুর্লভ, পবিত্র। আপনি কি আমাদের ব্রশিওরটা পড়েননি?"
"বালুকাবেলায় ভালবাসার মানুষকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকা?"
"আমি নিজ হাতে ওটা লিখেছি। এখন বলুন, এই ফিলিংস কি সবার কাছ থেকে পাওয়া যায়? যে আপনাকে সত্যিকার অর্থে ভালবাসে, শুধু তার কাছ থেকেই এটা পাওয়া সম্ভব। "
"এটা সত্যিকার ভালবাসা?" সাইমন এখনো সন্দিহান।
"কি বলছেন আপনি! অবশ্যই সত্যি। যদি এটা স্টিমুলেশন হতো তাহলে তাহলে আমরা সেটাই লিখতাম। পৃথিবীর বিজ্ঞাপন আইন খুব কড়া। সবকিছুই বিক্রিযোগ্য, তবে সেটার ব্যাপারে বিজ্ঞাপনে পরিষ্কারভাবে লিখতে হবে। আমরা সেই ভালবাসার কথাই বলছি, যার কথা হাজার বছর আগের কবি আর লেখকেরা লিখে গেছেন।
আর আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে সেই ভালবাসা আপনি পাচ্ছেন ঘরে বসেই, তাও আবার অবিশ্বাস্য সস্তা দামে। "
"কিন্তু..."
"বুঝতে পেরেছি। আপনি ভাবছেন আমরা একটা মেয়েকে নিয়ে আসবো যে দেখাবে যে সে আপনাকে অনেক ভালবাসে, কিন্তু আসলে সে অভিনয় করবে। "
"সেরকমই তো মনে হচ্ছে। "
"মি: সাইমন, আমাকে একটা জিনিস বলুন।
আপনি একজন শিক্ষিত যুবক, আপনার কি মনে হয় না মেয়েটা যদিঅভিনয় করে আপনি সেটা ধরে ফেলবেন না?"
"তাহলে আপনারা এটা করছেন কিভাবে?"
"বিজ্ঞানের অগ্রগতির এই যুগে এখন সবই সম্ভব। আর তারপরও যদি আপনারা মনে হয় এটা নকল, আপনাকে এক পয়সাও দিতে হবে না। "
"আচ্ছা, আমি একটু ভেবে দেখি। "
"আর কোন ভাবাভাবি নয় স্যার। সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রেমে পড়া শুধু মানসিক ভারসান্য ফিরিয়ে আনে না, হরমোন ব্যালান্স ঠিক করে, গায়ের রং ফর্সা করে।
" আর কোন কথা নয় স্যার, প্রস্তুত হন প্রথম দর্শনে প্রেমে পড়ার সেই স্বর্গীয় অনুভূতি পাবার জন্য। "
মি: টেইট একটা বাটন টিপলেন। একটা দরজা খুলে গেল। রুমে এসে ঢুকল একটু মেয়ে, আর সাথে সাথেই সাইমনের চিন্তাশক্তি লোপ পেল।
মেয়েটা লম্বা, শরীরটা পাখির মত হালকা।
তার চুলগুলো ঘন কালো। তার মুখের কোনকিছুই সাইমন লক্ষ্য করেনি, শুধু দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়া জলের ধারার দিকে তার দৃষ্টি আটকে ছিল।
"মিস পেনি ব্রাইট," মি: টেইট বললেন, "উনি মি: সাইমন। " মেয়েটা কিছু বলার চেষ্টা করল, কিন্তু কথাগুলো যেন গলায় আটকে গেল। এক নিমিষেই সাইমন বুঝল, মেয়েটা তাকে অন্তরের অন্তস্হল দিয়ে ভালবাসে।
তাদের একটা জেট প্লেনে উঠিয়ে দেওয়া হল, কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা এসে পড়ল একটা ছোট্ট কটেজে, যার সামনে বিশাল সমুদ্র। হাত ধরাধরি করে তারা সমুদ্রে নামল। কিছুক্ষণ বাদেই সন্ধ্যা নামল, অস্তগামী সূর্যের আলোয় পেনিকে দেখে সাইমনের মনে হল সে যেন মানবী নয়, আগুনের দেবী। তারও পরে চাঁদ উঠল। সেই চাঁদের আলোয় বালুকাবেলায় শুয়ে সাইমনের বুকের মুখ গুঁজল পেনি, তার চোখের জল ফোঁটায় ফোঁটায় গড়িয়ে পড়ল সাইমনের বুকে।
সাইমনের চোখেও জল, কেন, তা সে নিজেও জানে না। সেই অনেক বছর আগে পূর্ণিমা রাতে সমুদ্রতীরে ভালবাসার মানুষটাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকার যে স্বপ্ন সে দেখছিল, তা আজ সার্থক হল।
পরদিন দুপুরে তারা আবার ফিরে এল লাভ, ইন্ক(LOVE, INC) এর অফিসে। এক মুহূর্তের জন্য পেনি সাইমনের হাতটা ধরল, তারপর দরজা খুলে ভিতরে হারিয়ে গেল।
"ভালবাসা আসল ছিল?" মি: টেইট জিজ্ঞাসা করলেন।
"হুম। "
"সবকিছু সন্তোষজনক ছিল?"
"হ্যা, আসলেই সত্যিকার ভালবাসা ছিল। কিন্তু ও ফিরে আসার জন্য জোর করছিল কেন?"
"পোস্ট হিপনোটিক কমান্ড। "
"কি?"
"আপনি কি আশা করেছিলেন? সবাই ভালবাসা চায়, কিন্তু খুব কম লোকই এর জন্য মুল্য দিতে প্রস্তুত। এই যে আপনার বিল, স্যার।
" মি: টেইট বিলটা এগিয়ে দিলেন।
"অবশ্যই আমাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য আপনাকে টাকা দেব, আগে পেনিকে ফিরিয়ে আনুন। সে এখন কোথায়? তাকে আপনারা কি করেছেন?"
"দয়া করে সংযত হোন। " মি: টেইট আস্তে করে বললেন।
"কিসের সংযত, আমি পেনিকে দেখতে চাই, নিয়ে আসুন ওকে!" চিৎকার করে উঠল সাইমন।
"সেটা কোনভাবেই সম্ভব নয়, দয়া করে নিজেকে সামলান। " এবার মি: টেইটের কন্ঠস্বরে দৃড়তা।
"আপনি কি আমার কাছ থেকে বেশী টাকা আদায়ের চেষ্টা করছেন? ঠিক আছে, টাকা আমি দেব। কত টাকা লাগবে পেনিকে আপনার হাত থেকে মুক্ত করতে?" নিজের ওয়ালেট বের করে টেবিলের উপর আছড়ে ফেলল সাইমন।
মি: টেইট এক আঙ্গুল দিয়ে ওয়ালেটটা সাইমনের দিকে ঠেলে দিলেন।
"দয়া করে এটা পকেটে ঢুকান। আমরা একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। যদি আপনারা আর একবার আপনি গলা উঁচু করে কথা বলেন আমি আপনাকে এখান থেকে বের করে দিতে বাধ্য হব। "
সাইমন অনেক কষ্টে নিজেকে শান্ত করল। ওয়ালেট টা পকেটে ঢুকিয়ে চেয়ারে বসল।
"আমি দু:খিত," আস্তে করে বলল সে।
"ঠিক আছে। আপনি যদি সভ্য ভাবে কথা বলেন, আমিও আপনার সাথে ভাল আচরণ করব। এখন বলুন, সমস্যাটা কোথায়?"
"সমস্যা কোথায় মানে?" সাইমন অনেক কষ্টে নিজেক সামলাল। পেনি আমাকে ভালবাসে।
"অবশ্যই। "
"আপনি আমাদের একসাথে থাকতে দিচ্ছেন না কেন?"
"ভালবাসার সাথে একসাথে থাকার কি সম্পর্ক? ভালবাসা একটা চমৎকার জিনিস জিনিস, মনকে প্রফুল্ল করে, হরমোনের ব্যালান্স রক্ষা করে, গায়ের রং ফর্সা করে। " কিন্ত এটা স্বল্পস্থায়ী একটা ব্যাপার, কাউকে ভালবাসতে থাকা যায় না, ভালবেসে একসাথে থাকা যায় না। "
"আমাদের ভালবাসা ওরকম নয়, আমাদের ভালবাসা অনন্য। "
"শুধু আপনাদেরটা নয় সব ভালবাসাই অনন্য।
কারণ সব ভালবাসাই একভাবে তৈরী। "
“কি?”
"আপনি নিশ্চই জানেন ভালবাসা কিভাবে তৈরী হয়। "
"না, আমি তো জানতাম, এটা..........প্রকৃতির সৃষ্টি" সাইমন বলল।
মি: টেইট মাথা নাড়লেন। "প্রকৃতির হাত থেকে ভালবাসা আমরা নিজেদের হাতে নিয়ে নিয়েছি অনেক আগেই।
নির্দিষ্ট করে বললে যান্ত্রিক বিপ্লবের কিছুদিন পরেই। আগে ব্যাপারটা অনেক বেশী ধীরে হত, বাণিজ্যিকভাবেও লাভজনক ছিল না।
প্রকৃতির দরকারটা কি, যখন আমরা মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় স্টিমুলেশন দিয়ে ভালবাসার অনুভূতি তৈরী করতে পারি। ফলাফল তো আপনে নিজেই দেখলেন, পেনি সম্পুর্ণরুপে আপনার প্রেমে পড়েছিল। তাকে দেখে সেটার প্রতিক্রয়ায় আপনার মধ্যেও কিছু পরিবর্তন চলে আসে।
আমার শুধু সমুদ্র, চাঁদ এগুলোর ব্যাবস্থা করেছি। "
"তার মানে তাকে দিয়ে যে কাউকেই ভালবাসানো যেত। "
"তাকে যে কাউকে ভালবাসার ব্যাবস্থা করে দেয়া যেত," মি: টেইট সংশোধন করলেন।
"হায় খোদা, এই ভয়ংকর কাজে সে কিভাবে জড়িয়ে পড়ল?"
"সে এসে চুক্তিপত্রে সই করেছে। এই কাজে আয় অনেক বেশী, তাছাড়া চুক্তি শেষে সে আবার নিজের আসল ব্যক্তিসত্তা ফিরে পাবে।
আর এই কাজকে ভয়ংকর বলছেন কেন? কাউকে ভালবাসা তো কোন অপরাধ নয়। "
"এটা ভালবাসা নয়!" সাইমন চিৎকার করে উঠল।
"অবশ্যই এটা আসল ভালবাসা। বিজ্ঞানীরা নানাভাবে পরীক্ষা করে দেখেছেন, প্রাকৃতিক ভালবাসা থেকে এটা অনেক বেশী তীব্র, গভীর। "
সাইমন চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ বসে থাকল।
তারপর চোখ খুলে বলল, "আমার কথা শুনুন। আপনাদের বিজ্ঞানীরা কি বের করেছে সে সম্পর্কে আমার কোন আগ্রহ নেই। আমি তাকে ভালবাসি, সে আমাকে ভালবাসে, এটুকু জানাই আমার জন্য যথেষ্ঠ। প্লিজ আমাকে তার সাথে কথা বলতে দিন। আমি তাকে বিয়ে করতে চাই।
"
"এইসব কি বলছেন, এই লাইনের মেয়েদের কেউ বিয়ে করে না। যদি আপনি বিয়ে ব্যাপারে আগ্রহী থাকেন তাহলে এই নিয়েও আমরা কাজ করি। আমি আপনাকে আপনার ব্যক্তিত্বের সাথে মেলে এরকম, সরকারীভাবে পরীক্ষিত কুমারী..........."
"না! আমি পেনিকে ভালবাসি। অন্তত আমাকে তার সাথে কথা বলতে দিন!"
"এটা কোনভাবেই সম্ভব নয়। "
"কেন?" মি: টেইট একটা বাটন টিপলেন।
"আপনাকে নিয়ে পেনির সব স্মৃতি ইতিমধ্যে মুছে ফেলা হয়েছে। পেনি এখন অন্য কাউকে ভালবাসে। "
এবার সাইমন বুঝল। এই মুহূর্তে পেনি শুয়ে অন্য কারো সাথে শুয়ে আছে ব্রশিওয় এর সেই বালুকাবেলায়, অন্য কারো চোখের দিকে তাকিয়ে আছে বুকভরা ভালবাসা নিয়ে, যা প্রাকৃতিক ভালবাসার চেয়ে অনেক বেশী তীব্র আর গভীর বলে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। হঠাৎ করেই সাইমন টেইটের গলা টিপে ধরার জন্য ঝাঁপ দিল।
দুইজন এ্যটেনডেন্ট, যারা একটু আগে রুমে ঢুকে দাঁড়িয়েছিল, তাকে ধরে রুমের বাইরে নিয়ে যেতে লাগল।
"তাই বলে মনে করবেন না আপনার হৃদয়ে ভালবাসার যে অনুভূতি ছিল তা মিথ্যা ছিল," মি: টেইট মি: থেকে বলল। সাইমন উপলব্ধি করল, দু:খজনক হলেও কথাটা সত্যি।
এরপর সাইমন নিজেকে আবিষ্কার করল রাস্তায়। সবার প্রথমে তার মনে হল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই নষ্ট গ্রহ থেকে পালিয়ে যায়, যেখানে অনুভূতির বেচাকেনাই মানুষের প্রধান জীবিকা।
কিন্তু কি মনে করে সে এসে দাঁড়াল গতদিনের সেই শ্যুটিং গ্যালারিটার সামনে।
"ভাগ্য পরীক্ষায় জন্য তৈরী?" দোকানদার চিনতে পেরেছে তাকে।
"রেডি করুন মেয়েগুলোকে," সাইমন বলল
(কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ ব্লগার ইশতিয়াক মাহমুদ, গল্পটির মূল কপি দেওয়ার জন্য)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।