আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমােদর সামিগ্রক সমােজ নারীর অবস্থান (নারীবাদী েপাষ্ট)

অন্ধকার যুগে নারীকে মনে করা হতো ভোগের সামগ্রী। বাজারে ক্রয় করা ভোগ্য পন্যের মতই প্রয়োজনে ব্যবহার করত আবার ইচ্ছে হলেই ছুড়ে ফেলে দিত। কন্যা সন্তানের জন্ম হলে নিজেকে হতভাগা মনে করত তারা। এমনকি জীবন্ত মাটির নিচে পুঁতে ফেলতেও দ্বিধাবোধ করত না। কালের বিবর্তনে সময়ের দাবীতে এই ধারণার পরিবর্তন হয়েছে।

সচেতনতা এসেছে মানুষের মাঝে। বুঝতে শিখেছে তারা। নারী মা, নারী স্ত্রী, নারী বোন। মানুষের মনে শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছে ঠিকই কিন্তু বর্তমান সমাজে নারীদের অবস্থান কোথায়? নারীর অধিকার কতুটুকু? বিভিন্ন স্থানে, ভাল ভাল পর্যায়ে অবস্থান করেও মানষিকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে তারা। এখনও আমাদের সমাজের অনেকে মেয়ে হিসাবে জন্মগ্রহণ করাকে আজন্মের পাপ মনে করেন।

নারীদের উপর চলে নানা ধরণের বর্বরতা ও নির্যাতন। ধর্ষণের মত জঘন্য অপরাধে বিচারের নামে হয় প্রহসন। বিয়ে দেয়া হয় ধর্ষকের সাথে। না হয় সামাজিক চাপে তাকে করা হয় গ্রাম ছাড়া কিংবা একঘরে। এরকম শত শত নারীর বুকফাটা কান্না আমরা শুনতে পাইনা।

স্কুল কলেজে যেতে কিংবা বাসে লঞ্চে চলতে গিয়ে নারীকে সইতে হয় নানা রকম উত্তক্ত্যতা। হায়নার মত চেয়ে থাকে পুরুষের দল। শুধু তাই নয়। কৈশর পেরিয়ে যৌবনে পাঁ দিলেই বাবা মা আর আগের মত করে কাছে ডাকে না। আদর করে না।

কেমন যেন একটা বোঝা মনে করে। বিয়ে দিতে পারলেই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচেন। কন্যা শিশু তাদের কামনার বাইরে। সমাজে নারীর প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে গেছে। আসলে কি তাই? নারী ছাড়া কি আমাদের সুন্দর এই পৃথিবী কল্পনা করতে পারি? ধীরে ধীরে নারীর জীবনে আসে বিষন্নতা ও একঘেয়ামী।

চার দেয়ালের মধ্যে পচন ধরে তার। এছাড়া শতকরা ৭৫ভাগ কর্মজীবি নারীকে স্বামীগণ সন্দেহের চোখে দেখে। কেননা, স্বামীগণ নিজেদের নারী সহকর্র্মীর সাথে যে সকল আচরণ করেন তার মধ্যে, ‘ম্যাডাম শাড়ী পড়লে আপনাকে সুন্দর দেখায়’, ‘এই ড্রেসটা সুন্দর মানিয়েছে’, ‘আজ আপনাকে দারুণ দেখাচ্ছে’ উল্লেখযোগ্য। নিম্নবিত্ত, উচ্চবিত্ত, গৃহিনী কিংবা পেশাজীবি যে কোন নারীর জীবন প্রক্রিয়া এ দেশে, এ সমাজে অনেকটাই তার নিজের তৈরী নয়। সমাজ, সংসার পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে তৈরী করা ধাঁচে নিজের জীবনকে বসিয়ে দেয়াকে নারীরা ‘ভালো বৌ’, ‘ভালো মা’ বাহবা শোনার উপায় মনে করে।

জীবনের প্রয়োজনে, বাস্তবতার নিরীখে সংসার জীবনে পাঁ দিতে হয় নারীকে। আজও অনেক মেয়েকে শুধুমাত্র ছেলের ছবি দেখেই অভিভাবকদের মতানুযায়ী বিয়ের পিঁড়ীতে বসতে হয়। নিজের ভরণ-পোষণ ও অন্যান্য খরচ মেটানোর জন্য মুখাপেী হতে হয় স্বামীর দিকে। আবার স্বামী নামক যন্ত্রটির হাতের পুতুল হয়ে না থাকার জন্য অনেক পরিবারের মেয়েরা চাকুরী করে। কেউবা দেবতুল্য স্বামীকে একটু বিশ্রাম দিতে, সংসারে সাপোর্ট দিতে হয়ে যায় নিজভূমে প্রবাসী।

এরকম কথা হচ্ছিল সুমাইয়ার সাথে। সহকর্মীর সাথে পরিচয় থেকে পরিণয় হয় তাদের। বাসরঘরের ফুল শুকাতে না শুকাতেই বদলীজনিত কারণে তাকে স্বামীর কাছ থেকে অন্যত্র চলে যেতে হয়। প্রতীার প্রহর গুণে কখন আসবে সে। অপরিচিতদের ফাঁকে খুজে স্বামীর মুখ।

স্বামীর আগমনের বার্তা পেয়ে ুধার জ্বালা পেটে রেখে এক সাথে খাবার অপোয় পথ পানে চেয়ে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে পড়ে টের পায় না সে। সপ্তাহে/মাসে কিংবা বছরে একটিবার সাাত হয় তাদের। ভালভাবে চেনাজানা হবার পূর্বেই নতুন মানুষটির প্রতি ঘোর কেটে যায় তার। স্বামীকে প্রিত হয় দায়সারা ভালবাসা। সে চাইনা নিজের কোন অধিকার।

পাই না প্রকৃত ভালবাসা। সুমাইয়া জানে বিড়ম্বনাটি শুধু তার প্রয়োজনে আর দায়িত্বের ভার বইতে আসে। গর্ভে রেখে চলে যায় ভালবাসার ফসল। এই সময়ে কতটা দরকার ওকে কিন্তু না, পাওয়া যায় না এই সামান্য অধিকারটুকু। ক্রমেই দুরত্ব বাড়তে থাকে।

রাগে, দুঃখে, অভিমানে ছিন্নভিন্ন করে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে বিষন্নতায়। কথায় কথায় রাগ হয় ওর। মেজাজটাও কেমন যেন খিটমিটে হয়ে গেছে। মাতৃত্বের অকৃত্রিম ছায়াশীতল ভালবাসা দেয় ছেলেকে কিন্তু পিতৃস্নেহের তৃষ্ণা মেটাতে পারেনা সে। পিতার প্রতি সন্তানের যে সমসাময়িক শূন্যতা, তা মেটাতে পারছে না।

আবার এ প্রসঙ্গে কর্মজীবি নারী তুলি বলছিলেন, দুপুরে চাইল্ড কেয়ার রুমে রাখা বাচ্চার কাছে যাচ্ছেন বিষয়টি সুপারভাইজার এর কানে পৌঁছাতেই তিনি কটা করে বলেন ‘ও আপনিতো ব্রেষ্ট ফিডিং করান’। সংসার, সন্তান, সামাজিকতা সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন এরকম অনেক নারী। শারীরিক ও মানসিক বিশ্রামের অভাব তাকে করে তুলছে জীবন সম্পর্কে উদাসীন, ভর করছে নিরাশা, সম্পর্কের েেত্রও প্রভাব ফেলছে এই অস্থিরতা। তাইতো বুক দিয়ে বেরিয়ে আসে হঠাৎ দীর্ঘশ্বাস, জানালার পর্দা সরিয়ে একটু দূরে চেয়ে থাকা, নিষ্পলক নয়নে বিষন্ন বদনে কিছুণ নীরবতা। ভয়, হতাশা, নিরাপত্তাহীনতা সর্বপরি একাকিত্ববোধের চরম গ্লানী নারীকে দ্রুত পৌঁছে দেয় বার্ধক্যের কুটিরে।

এতো হলো সামাজিকতা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’য় নারীর স্বাস্থ্য বলতে প্রজনন স্বাস্থ্য বা জন্ম নিয়ন্ত্রণ ও সন্তান ধারণ এই দুটি বিষয়কে নিয়ে ঘুরপাক খাই। নারীর মানষিক অসুস্থ্যতাকে কেউ চোখ মেলে দেখে না। কাজেই আপনার অধিকার আপনাকেই প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নারীর সমান অধিকার বলতে বলতে রাজপথে মিছিল মিটিংয়ের অধিকার নিয়ে লড়াই না চালিয়ে, পুলিশের প্রতি ইট-পাটকেল নিপে না করে, নারী হিসাবে আপনার যে অধিকার, মা হিসাবে আপনার যে অধিকার, সেই নায্য অধিকার পেতে আন্দোলন করুন।

অনুকম্পা নয়; অনুপ্রেরণা নয়, প্রয়োজন অধিকারের। আত্মমর্যাদার, আপন সম্মান রা করার। আর আধুনিক নারী হিসাবে জীবনকে এমনভাবে সাজাতে হবে যেন প্রতিদিন নিজের জন্য কিছু সময় হাতে থাকে। সুস্থ্য জীবন যাপনের পেছনে রহস্য হচ্ছে বিশ্রাম, নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারা, আনন্দের জন্য সময় করে নেয়া, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস, কাজের স্বীকৃতি পাওয়া, নিজের প্রিয় কোন কাজে সংযুক্ত থাকা। কিছুণ রিলাক্স করুন।

গান শুনুন বা ব্যয়াম করুন অথবা সুইয়ের ফোড় তুলতে তুলতে কিংবা ঘরের আসবাব পত্র মুছতে বা গোছাতে গুণ গুণ করে গান করুন। দেখবেন কি আনন্দ পাচ্ছেন আপনি। আপনার সুস্থ্য জীবন যাপনে এই আনন্দই এক অবর্ণনীয় মহৌষধ। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।