চোখে যা দেখি, কানে যা শুনি, তা নিয়ে কথা বলবোই ! বাংলাদেশের মধ্যে ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর জৈন্তাপুর উপজেলা। বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকা যখন বৃটিশ শাসনের অন্তর্ভুক্ত তখন একমাত্র জৈন্তাপুর ছিল স্বাধিন বাজ্য । ১৫০০-১৬০০ সাল পর্যন্ত একমাত্র খাসিয়া রাজারাই শাসন করেছেন জৈন্তাপুর রাজ্যকে । ১৬৮০ সালে রাজা লক্ষী নারায়ন জৈন্তাপুর রাজ্যের রাজধানী স্থাপন করেন উপজেলার নিজপাট এলাকায় । তারপর দ্বিতীয় রাজধানী স্থাপন করা হয় খাসিয়ার নর্থিংপুঞ্জিতে ।
জৈন্তা রাজ্যের উত্তরে ও পশ্চিম দিকে নয়াগাং, পূর্বে নাগড়তিছড়া এবং দক্ষিনে বড়গাং প্রবাহিত হয়ে ঘিরে রেখেছে জৈন্তা নগরীকে ।
১৭৯০ সালে তৎকালীন রাজা রাজ সিংহের শাসনামলে জৈন্তাপুর রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বহু মসজিদ, মন্দির, গীর্জা নির্মাণ করা হয়েছিল । জৈন্তাপুর রাজ্যের চারিদিকে বিভিন্ন পরিখা খনন করে সুরক্ষিতভাবে ভেতরে খননকৃত কূপ, নরবলি দেয়ার স্থান, বিচারালয় সহ আরো অনেক বড় বড় মূল্যবান পাথর রাখার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছিল ।
তৎকালীন রাজা রামসিংহের শাসনামলে স্থাপিত পুরাকীর্তিগুলোর মধ্যে জৈন্তাপুর উপজেলার সারিঘাট এলাকায় অবস্থিত ঐতিহাসিক ঢুপির মটের টিলা ছিল অন্যতম । কিন্তু তৎকালীন রামসিংহ ধর্ম বিষয়ে প্রচার করতে বিশেষ উৎসাহী ছিলেন ।
তার অসাধারন প্রচেষ্টায় ১৭৭৮ সালে ঢুপি পাহাড়ের একটি শৈলখন্ডের উপর সুচারু শিল্পশোভিত সুউচ্চ শিব মন্দির স্থাপন করেন । শিব মন্দিরটি ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার দূর হতে দেখা যায় ।
১৮৯৭ সালে ভারতের আসাম অঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্প হলে শিব মন্দিরের চূড়াটি ভেঙ্গে যায় । এখনো মন্দিরটির ভগ্নাংশ রয়েছে । জৈন্তা রাজ্যের সারিঘাট এলাকার ঢুপির মঠের পাহাড়ে রামসিংহের খননকৃত পুকুর এবং একটি প্রান্তশালাও বিদ্যমান রয়েছে ।
১৮৩৫ সালে হ্যারী সাহেব নামক এক ইংরেজ ব্যক্তি চুনাপাথর ব্যবসায়ী জৈন্তা রাজ্যের রাজা রাজেন্দ্র সিংহকে বিভিন্ন কলাকৌশল অবলম্বন করে বিনা যুদ্ধে তাকে বন্দি করেন । এই দিন জৈন্তারাজ্র্যর স্বাধিনতার সূর্য অস্তমিত হয় । কিন্তু এই জৈন্তা রাজ্য থেকে বৃটিশরা অনেক মূল্যবান সম্পদ লুট করে নিয়ে চলে যায় । জৈন্তাপুর প্রাচীননিদর্শন রাজবাড়ি , রাজপ্রাসাদ, রামসিংহের শাসনামলের সময় অনেক মূল্যবান পুরাকীর্তি ও তৎকালীন জৈন্তা রাজ্যের নানা স্থাপনা, মেঘাতিলক, কালাপাথর ও বিজয় সিংহ মহারাজার স্মৃতি মন্দিরসহ জৈন্তা রাজ্যের পুরাতন নিদর্শনগুলো এখনও রয়েছে । সিলেট তামাবিল সড়কের সারিঘাটে রাস্তার মাঝপথে অবস্থিত ঐতিহাসিক পান্থশালা দেখে পর্যটকদের মনে খুবই আনন্দ জাগে ।
জৈন্তার এই রাজবাড়ির ইতিহাসের জন্য জৈন্তাবাসী গর্বিত ।
সূত্র : সিলেটের ডাক । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।