সংবাদ কর্মী আশার কথা হচ্ছে এ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ধানের উৎপাদন হয়েছে অনেক বেশী হয়েছে। কিন্তু বাজার মূল্যে মাথায় হাত কৃষকদের। তাদের বক্তব্য এক মন ধান উৎপাদন করতে যত টাকা ব্যয় হয়েছে বর্তমান বাজার তার মূল্য একতৃতীয়াংশ কম।
এ অবস্থায় উৎপাদিত ধান এখন যেন আমাদের গলার কাঁটায় রূপ নিয়েছে। এই বিড়ম্বনা এড়াতে আগামীতে কৃষকরা ধান চাষে আগ্রহ হারাতে পারে।
যা খাদ্যশষ্যের উপর হুমকি স্বরূপ। তবে সংশ্লিষ্ঠরা মনে করছেন ইতোমধ্যে যেহেতু সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়েছে সেহেতু দুই এক দিনের মধ্যে ধানের দাম বেড়ে যাবে।
বিদ্যুৎ এই আছে এই নেই। শুকনো নালা দিয়ে ধানের ক্ষেতে পানি যেতেই যেতেই বিদ্যুৎ চলে যায়। আবার একঘণ্টা দেড়ঘণ্টা পরে এসে থাকে ৩০ মিনিটের মত, কখনো একটু বেশী।
এ বিদ্যুৎ আবার ব্যবহার করতে হবে রাত ১১টার পর। বিদ্যুতের এই যাওয়া-আসাতে কৃষকদের মটর জ্বলে গেছে। আর যারা ডিজেল দিয়ে মোটর চালিছে তাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে অনেক। প্রতি লিটার ডিজেলের দাম আগে ছিল ৪৪ টাকা। লিটারে ১৭ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৬১ টাকায়।
অপরদিকে ৬০০ টাকা বস্তার ইউরিয়া কিনেছে এক হাজার টাকায়। তারপরও কোনো কোনো অঞ্চলে ছিল সারের সঙ্কট। এদিকে সব মিলিয়ে এক বছরে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ২১ ভাগ, ডিজেলের দাম বেড়েছে ৩৯ ভাগ এবং ইউরিয়া সারের দাম বেড়েছে ৬৭ ভাগ। এর ফলে সামগ্রিকভাবে বোরোর উৎপাদন খরচ গত বছরের তুলনায় ৪০ ভাগ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। এছাড়া শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সবকিছুর উর্ধ্বগতির ধারায় সামগ্রিকভাবে বোরোর উৎপাদন খরচ গত বছরের তুলনায় ৪০ ভাগ পর্যন্ত বেড়েছে। তবে আল্লাহর অশেষ রহমতে এবার সকল ধরণের দুর্যোগ থেকে রেহাই পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
সব প্রতিবন্ধকতা পেছনে ফেলে সারা দেশে আশার চেয়েও বেশি ফলন পেয়েছেন কৃষক। সরকারি হিসাব মতে চলতি বোরো মৌসুমে ৪৭ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে উৎপাদন ধরা হয়েছিল ১ কোটি ৮৭ লাখ মেট্রিকটন। কিন্তু এবারের ফলন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে গেছে।
অপরদিকে খুলনার উপ-পরিচালক (কৃষি) মোঃ আব্দুল আজিজ জানান, এই মৌসুমে খুলনা জেলার ৪৬ হাজার নয় শ’ উনপঞ্চাশ হেক্টর জমিতে এক লক্ষ ৮৯ হাজার চুরাশি মেট্রিকটন ধানের লক্ষ্যমাত্রার বিপরিতে ৫০ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে দুই লক্ষ ১২ হাজার পাঁচ শ’ বায়ান্ন মেট্রিকটন ধান উৎপাদিত হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ১৫ মেট্রিকটন বেশী।
কিন্তু বর্তমান বাজারমূল্য খুবই কম। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হিসাব গড় করলে দেখা যায় ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা করে প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে। এক কৃষকের হিসাব অনুযায়ী এ বছর এক বিঘা জমিতে জমির জমা, বীজ, হালচাষ, বীজতলা তৈরি, চারা উত্তোলন, চারা রোপণ, সার, আগাছা পরিষ্কার, কীটনাশক, কামলা, ধান শুকানো, পানি/বিদ্যুৎ খরচ, মাড়াই, ধান শুকানোসহ আনুসঙ্গিক খরচ দিয়ে ধান চাষ করতে ব্যয় হয়েছে ১,৬৮০০ টাকা।
এক বিঘা জমির বিচালির মূল্য ৩০০০ টাকা বাদ দিলে খরচ দাঁড়ায় ১,৩৮০০ টাকা। এক বিঘা জমির গড় ফলন ২০ মণ হলে একমণ ধানের উৎপাদন খরচ দাঁড়ায় ৬৯০ টাকা। অথচ এখন বাজারমূল্য ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি দৈনিক থেকে জানা যায়, ২০০৯ সালে প্রতিকেজি ধান উৎপাদন করতে খরচ হয়েছিল ১৩.২১ টাকা, ২০১০ সালে তা দাঁড়ায় ১৩.৩২ টাকা, ২০১১ সালে তা দাঁড়ায় ১৪.৬৫ টাকা এবং এ বছর অর্থাৎ ২০১২ সালে এসে দাঁড়ায় ১৫.৭৬ টাকা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর বোরো উৎপাদনে কৃষকে গুনতে হয়েছে অতিরিক্ত টাকা।
অনেকে এনজিও কিংবা বিভিন্ন মানুষের নিকট থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে আবাদ করেছে। তাই বাধ্য হয়ে সে ধান বিক্রি করছে, আবার কারো কারো ধান রাখার যায়গা নেই। আর এ বিক্রিতে তার উৎপাদন খরচও উঠছে না। দিশেহারা এসব কৃষকদের আগামীতে বোরো চাষে আগ্রহী করতে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। তবে ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ধান-চাল সংগ্রহ শুরু হয়েছে।
জানা যায় এ বছর সরকার ১০ হাজার সাত শ’ ১০ মেট্রিকটন ধান-চাল সংগ্রহ করবে। যার মূল্য নিধারণ করেছে প্রতি কেজি ধানের দাম ১৮ টাকা এবং চাউল ২৮ টাকা।
বিস্তারিত পড়ুন... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।