কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার আধ্যাত্মিক সাধক হযরত সোলাইমান শাহ্ চিশতী (রঃ) মাজারে ৩ দিনব্যাপী ওরশ মোবারক আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে। দেশের নদ-নদীগুলোর বেশির ভাগই এখন নাব্য সংকটে ভুগছে। পানির অভাবে শুকিয়ে মাঠ হয়ে যাওয়া নদ-নদীর সংখ্যাও কম নয়। সরকারি হিসাবে দেশের মোট নদীর সংখ্যা ৩১০। এর মধ্যে ১৭৭টি এখন অস্তিত্বের সংকটে।
এসব নদী এখন আংশিক কিংবা পুরোপুরিভাবে মৃত। উজানে বাঁধ নির্মাণ করে পানি প্রত্যাহার, পানি প্রবাহে বাধা, পলি জমা, দেশে অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ নির্মাণ ও গতিধারা বদলে যাওয়ায় এ ত্রিশঙ্কু অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনার মতো আন্তর্জাতিক নদীসহ দেশের সব নদী ক্রমান্বয়ে নাব্য হারাচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে নদীগুলোর পানি কমে এমন অবস্থায় দাঁড়ায়, যাকে দেখলে আর নদী বলে মনে হয় না। নদীমাতৃক এই দেশে নদীর অবস্থা ক্রমান্বয়ে যেভাবে সংকুচিত হচ্ছে, তাতে আগামী কয়েক বছরে নদীর প্রবাহতা থাকবে কি-না সন্দেহ।
এ দিকগুলো বিবেচনা করে নদ-নদী রক্ষায় এখনই যত্নবান হতে হবে। অস্তিত্বের স্বার্থেই এ বিষয়ে নিতে হবে সমন্বিত পদক্ষেপ। নদীর নাব্য হ্রাস পাওয়ায় দেশের অনেক জায়গাই হালকা নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। তাই পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে নদীগুলোর সংস্কার এখনই অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের মানুষের জীবন, জীবিকা, অর্থনীতি, যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা অনেকাংশে নদীকেন্দ্রিক ছিল।
নদীকেন্দ্রিক মৎস্য আহরণ এবং পরিবহন ব্যবস্থাপনার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছিল বিশাল জেলে, মাঝি-মাল্লা পেশাভিত্তিক সম্প্রদায়। নদীর অস্তিত্ব বিলীন হওয়ায় এসব পেশাজীবীর অস্তিত্বও আজ বিলুপ্তপ্রায়। সহজ ও স্বল্প ব্যয়ে পরিবহন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে উদ্ভূত যানজট নিরসনের স্বার্থে নদীগুলোকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে।
গত ২০ বছরে দেশের ১৭টি নদী পুরোপুরি মরে গেছে। এগুলোর বেশিরভাগ দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে।
এককালে খরস্রোতা নদী হিসেবে পরিচিতি থাকলেও এগুলো এখন মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকায় মৃত নদীগুলো হচ্ছে_ নরসুন্দা (কিশোরগঞ্জ), ভূবনেশ্বর (রাজবাড়ী-ফরিদপুর), বিবিয়ানা ও শাখা বরাক (হবিগঞ্জ), পালাং (শরীয়তপুর), বুড়িনদী (কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া), হরিহর ও মুক্তেশ্বরী (যশোর), হামকুড়া (খুলনা), মরিচাপ (সাতক্ষীরা), বামনী (লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী), মানস (রংপুর), বড়াল ও চিকনি (নাটোর-পাবনা), হিসনা (কুষ্টিয়া), মুসাখান (রাজশাহী-নাটোর)
পানি উন্নয়ন বোর্ড দেশের আরও ৮টি নদীকে মৃতপ্রায় হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এগুলো হচ্ছে_ করতোয়া (পঞ্চগড়, নীলফামারী, রংপুর, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ), ইছামতি (পাবনা, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ), কালিগঙ্গা (কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, পিরোজপুর), কুমার (কুষ্টিয়া, মাগুরা, ফরিদপুর, ঝিনাইদহ, মাদারীপুর), চিত্রা (নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ), ভদ্রা (যশোর ও খুলনা), সোমেশ্বরী (নেত্রকোনা) এবং নবগঙ্গা (নড়াইল)।
দেশের প্রধান তিনটি নদীর বিভিন্ন স্থানে পলি জমে গেছে। পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা আর মেঘনার মাধ্যমে হিমালয় থেকে বাংলাদেশের নদীগুলোতে পানি এলেও, এগুলোর স্রোতধারা অনেকটা কমে গেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
এক সময় উত্তরবঙ্গের বৃহত্তম নদী হিসেবে পরিচিত ছিল তিস্তা। করতোয়া, আত্রাই, যমুনেশ্বরীসহ বিভিন্ন নদীর জলরাশি প্রবাহিত হতো এ নদী দিয়ে। পলির কারণে এ তিস্তা এখন মরে গেছে। কুষ্টিয়া ও ফরিদপুরে কুমার নামে পৃথক দুটি নদী ছিল। কুষ্টিয়ার কুমার নদী মারা গেছে জিকে সেচ প্রকল্পের কারণে।
ফরিদপুরের কুমারের অস্তিত্বও নেই। অন্যদিকে কালীগঙ্গা আর কুশিয়ারার মতো ভয়াল নদীগুলো নাব্য হারিয়ে এখন মরা নদীতে পরিণত হয়েছে।
নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে প্রধানত তিনটি বিষয় দায়ী। প্রথমত, সীমান্তের ওপারে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় নদীগুলো নাব্য হারিয়ে ফেলছে। দ্বিতীয়ত, দেশের বিভিন্ন নদী অবৈধভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে কোথাও কোথাও বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ আটকে দেয়া হচ্ছে। এসব কারণে নদীগুলো তার নাব্য হারিয়ে ফেলছে।
নদী মরে যাওয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে কৃষি, মৎস্যসহ দেশের অর্থনীতিতে। হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য। কোথাও কোথাও বসতবাড়ি ও ফসলি জমিতে সৃষ্টি হচ্ছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা।
এ ভয়াবহ অবস্থা সত্ত্বেও দেশের নদ-নদীগুলোকে বাঁচানোর কোন কার্যকর পদক্ষেপই নেই। খুলনার ডুমুরিয়ার হামকুমড়া একসময় প্রমত্তা নদী হিসেবে বিবেচিত হতো। ১৯৯০ সালেও এ নদীতে ছিল জোয়ার-ভাটার প্রবাহ। আজ সে নদী অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে চিত্রা নদী।
আঠারোবেকি নদীর ৬০ ভাগই এখন মৃত। কপোতাক্ষ, ভৈরবসহ দক্ষিণাঞ্চলের অনেক নদী মৃত্যুর দিন গুনছে। ময়মনসিংহ এলাকার ঝিনাই, আইমন, সুতিয়া, পুরাতন ব্রহ্মপুত্রসহ অসংখ্য নদী অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে। বাংলাদেশের নদ-নদী ও পানিসম্পদ এ দেশের প্রাণ। এ দেশের মানুষের ভাগ্য জড়িয়ে আছে নদ-নদীর অস্তিত্বের সঙ্গে।
পলি পড়ে অধিকাংশ নদীর নাব্য হ্রাস পেলেও খননের কর্মসূচি নেই বললেই চলে। কখনো কখনো নদী খনন কার্যক্রম চললেও সেখানে চলে শুভঙ্করের ফাঁকি। জীববৈচিত্র্যকে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে নদ-নদীর স্বাভাবিক প্রবাহের গুরুত্ব অপরিসীম। কৃষি উৎপাদনের জন্য পানির কোন বিকল্পই নেই। মানুষ ও প্রাণীদের জীবনের মতো নদীর জীবনেরও পরিচর্যার প্রয়োজন।
নদীর নাব্য হারালে পানির ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে পুনরুজ্জীবিত করতে হয়। পানির অপর নাম হলো জীবন। কিন্তু সামান্য পরিবর্তনের জন্য পানির অপর নাম মরণও হতে পারে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।