আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভূরিভোজের বিনিময়ে সরকারের যেসব মন্ত্রী ডেসটিনির বিভিন্ন প্রোগ্রামে উপস্থিত হয়ে এটিকে প্রমোট করেছেন তারা কি আজ দায় এড়াতে পারেন?

সবকিছুই চুকিয়ে গেছে গালিব! বাকি আছে শুধু মৃত্যু!! খবরে প্রকাশ, ডেসটিনির কর্মকাণ্ডে মন্ত্রিসভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সোমবার (১৪/০৫/২০১২) অনুষ্ঠিত মন্ত্রিভার বৈঠকে কয়েকজন মন্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির অবৈধ কার্যক্রম ও লাখ লাখ গ্রাহকের সাথে প্রতারণার ঘটনা তুলে ধরেন এবং এর সূত্র ধরে ডেসটিনির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ প্রদান করা হয়। তাছাড়া বৈঠকে ডেসটিনি সহ অন্যান্য এমএলএম কোম্পানীর অবৈধ ব্যাংকিংয়ের লাগাম টেনে ধরতে সমবায় সমিতি (সংশোধন) আইন, ২০১২-এর খসড়া অনুমোদন করা হয়। সংশোধিত আইনটি কার্যকর হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া সমবায় সমিতির নামে কোনো ব্যাংকিং কার্যক্রম চালালে সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে। দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী এ আইন অনুমোদনের সময়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জনাব জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, "ডেসটিনি যেসব অবৈধ কার্যক্রম চালিয়েছে, এ আইনে আগে যদি এ অপশন (ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন) থাকত তাহলে এসব প্রতিষ্ঠান তা করতে পারত না।

” বৈঠকে উপস্থিত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা প্রতিমন্ত্রী নানকের এ বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করেন এবং আশা করেন ডেসটিনি সহ এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অবৈধ কার্যক্রমগুলোকে এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে। সমবায় সমিতি (সংশোধন) আইন, ২০১২-এর খসড়া অনুমোদন এবং সভায় উপস্থিত মাননীয় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের বক্তব্যে স্পষ্ট যে, ডেসটিনি-২০০০ এর কার্যক্রমে তারা উদ্বিগ্ন এবং এ কার্যকমের ফলে যে সমস্ত গ্রাহক প্রতারিত হয়েছেন বা প্রতারিত হবার সম্ভাবনায় আছেন তাদের সমস্যা লাঘবে মন্ত্রিসভা তথা সরকারের সদিচ্ছার কোন অভাব নেই। কিন্তু বাস্তব সত্য হচ্ছে এই যে, ডেসটিনি-২০০০ এ অবৈধ কাযর্ক্রম হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা নয়। প্রায় ১২ বছর ধরে তারা তাদের এই অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। পূর্বের খালেদা-নিজামীর সরকার বা বর্তমানের আওয়ামী লীগ সরকার এতোদিন পর্যন্ত এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

এক্ষেত্রে আমাদের সরকারগুলোর এটা বলার কোন সুযোগ পাবেনা যে, ডেসটিনির অবৈধ কর্মকান্ড সম্পর্কে তারা জানতনা। প্রথমদিক থেকেই আমাদের গণমাধ্যম ডেসটিনির এসব অবৈধ কর্মকান্ডের উপর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। কিন্তু সরকারের কোন সংস্থাই এ রিপোর্টগুলোর প্রেক্ষিতে তৎপর হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয়কে প্রশ্ন করা হলে তারা দায় চাপাত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপর, বিপরীতদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দায় চাপাত অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপর। বাংলাদেশ ব্যাংক সময়ে সময়ে শুধু সাবধানবাণী শুনিয়েই দায়িত্ব শেষ করতো।

দায় এড়ানোর জন্যে আইনের দুর্বলতার কথা বলত। তবে এসবের চেয়েও বড় লজ্জার বিষয় হচ্ছে ডেসটিনির বিভিন্ন প্রোগ্রামে বিভিন্ন সময়ে সরকারের মন্ত্রীদের উপস্থিতি। বিভিন্ন প্রোগামে মন্ত্রীদের উপস্থিতির ছবিগুলোকে ডেসটিনি বিজ্ঞাপন হিসেবে প্রচার করত। তারা মানুষকে এর মাধ্যমে এটাই বুঝানোর চেষ্টা করত যে, তাদের সব কার্যক্রমে সরকারের সায় আছে। নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যেসব গ্রাহক প্রতারিত হয়েছেন বা প্রতারণার সম্মুখীন হচ্ছেন তাদের অনেকেই এসব বাহারী বিজ্ঞাপন দেখেই ডেসটিনি ফাদে পা দিয়েছেন।

এমন একটি বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানের প্রোগ্রামে মাননীয় মন্ত্রীরা কেন উপস্থিত থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে প্রমোট করতেন তার সঠিক জবাব তারাই দিতে পারবেন। তবে স্বাভাবিক সেন্স বলে উপযুক্ত ভূরিভোজ ছাড়া তারা কেউই এসব প্রোগামে উপস্থিত হননি। গলা পর্যন্ত পানিতে ডুবার পর মন্ত্রীপরিষদের হুশ হয়েছে। পরিষদ এখন উদ্বিগ্ন। এর বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তারা আইনের সংশোধন করছেন, ডেসটিনির কর্তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

কিন্তু এই পরিষদেরই যেসব সদস্য ডেসটিনির বিভিন্ন প্রোগ্রামে উপস্থিত হয়ে একে প্রমোট করেছেন তারা কি ডেসটিনির অপকর্মের দায় এড়াতে পারেন? না, এড়াতে পারেন না। পারেননা এই কারণে যে, এসব প্রোগামে উপস্থিত থেকে তারা জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারেই প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে সরকারি বিজ্ঞাপন হিসেবে কাজ করেছেন। এটা পরিস্কার অসততা/অযোগ্যতার নিদর্শণ। দেরিতে হলেও অবৈধ কার্যক্রম তথা মানুষ ঠকানোর জন্য সরকার ডেসটিনির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে, এটা অবশ্যই প্রশংসনীয়। কিন্তু সরকারেরই যেসব মন্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন প্রোগ্রামে উপস্থিত হয়ে সরকারি বিজ্ঞাপন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে একে প্রমোট করে সম অপরাধ করেছেন সরকার কি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন? সরকারের কি অতোটা নৈতিক শক্তি আছে? অবশ্য আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিবেচনায় সরকারের কাছে এমন আচরণ আশা করা বা সরকারকে এমন নৈতিক ভাবাটা প্রকৃতপক্ষে অর্বাচীনের মতোই হবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।