আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শবে বরাত পালন করা কি অন্যায়?

আমার পরিচয় আমার রোজনামচায়। ‘যারা এই কথা মানবে না তারা নাস্তিক মুরতাদ’ – এটা মানেই হল আপনাকে বাধ্য করা হচ্ছে। সমাজে দাঙ্গা বিশৃংখলা বাধানো হচ্ছে। তাই এদেরকে পরিহার করুন। বলা উচিত ছিল – ‘যারা এই কথা মানেন না - তাহলে আসুন।

আমারো তো ভুল হতে পারে। ভাই ভেবে - দুটো কথা বলে নিজেরা আলোচণায় দেখি আমরা সঠিক পথে আছি কিনা?’ ৬) শবে বরাত শব্দটি ফারসী। একটা কথা বুঝতে হবে ধর্মকে মানুষ পালন করবে আপন করে, যার যার সংস্কৃতির আলোকে এবং এ পর্যন্ত যা পালন হয়ে আসছে তার মধ্যে কোন অসম্মান দেখা যায় নি। শুকনা রুটি আরবীয় খাবার, এবার এর সাথে যোগ করা হালুয়া যেন ইরান-পাকিস্থান মনে করিয়ে দেয়। আরবের সংস্কৃতি তো ইসলামে থাকবেই, ইরানীদের ক্যালীগ্রাফি তো আরবী বর্ণের সৌন্দর্য্য – বলতে গেলে জের-জবর-পেশ না হলে তো আমরা এদেশের মানুষ উচ্চারণইতো করতে পারতাম না।

তাহলে সংস্কৃতি আদান প্রদান হবে – এতে অন্যায় কি? আমরা হিন্দুয়ানী থেকেই মুসলমান হওয়া জাতি। এদেশের ৮৫% মুসলমান হিন্দু ধর্মকে আর ধারণ করে না, কিন্তু মাটির সংস্কৃতির একটা টানকে অস্বীকার করতে পারে না। বাংলা ভাষার জন্য এদেশের মানুষ উর্দুকে মেনে নেয় নি। তাহলে এদেশের মানুষ সংস্কৃতিকে বদলে দেয় নি বরং রক্ষা করেছে। এটাই তো আমাদের গর্ব।

তাহলে শবে বরাতে হালুয়া রুটি খাওয়া আর বাবা মা মুরুব্বিদের পা ছুয়ে সালাম করায় অন্যায় কোথায়? এটা তো আমাদের রীতিতে সম্মানিত করা। আমরা তো আল্লাহ ব্যাতীত কাউকে সিজদা করছি না। ৭) তবে আমার কিছু ব্যাক্তিগত আপত্তি আছে। প্রথম আপত্তি বাজি ফুটানোতে। এটা পরিবেশটাকে ধর্মীয় থেকে হট্টগোল করে তোলে।

ভাবগাম্ভির্য নষ্ট হয়। দ্বিতীয় আপত্তি মাজারে সিজদা করা – কবরের কাছ থেকে আশা করার ব্যাপারে। আমরা জিয়ারাত করতে পারি, মৃত মানুষের কাছ থেকে আশা করতে পারি না। তবে মাজারের যিনি পীর পয়গম্বর শুয়ে আছেন- তাঁর ইসলামের প্রতি অবদান সম্পর্কে জানার জন্য মাজারে যাওয়াটাকে সমর্থন করি। এটা ঐদিনে করা যায় যেহেতু একটা ছুটির দিন আর যেহেতু একটা কৃষ্টিতে পরিণত হয়েছে।

তৃতীয় আপত্তি হল শবে বরাতের রাতকে রাশিফলের সাথে তুলণা করা। আপনার আমার ভাগ্য আল্লাহর হাতে – তাই আমাদের সলাহের মাধ্যমে তাদবীর করতে হবে। এই তাদবীর এ তাকদীর খুলবে। তাই আল্লাহ তা’আলা বাজেট ঘোষণা করবেন এমন ধারণার চাইতে এটা ভাবুন – আজ সুযোগ পেয়েছেন আল্লাহকে আপনার কাছে পাওয়ার। সারাজীবনে আর কি লাগে বলুন? 8) সব সময় তো আর গুনাহ থেকে মাফ চাওয়ার সুযোগ হয় না আর সব দেশেও কিন্তু শবে বরাতকে ছুটি ঘোষণা করে না, আমরা ভাগ্যবান যে এই রকম একটা সুযোগ জাতিগতভাবে পেয়েছি।

এটাকে বে’দাত বলে - হারাম বলে কলুষিত করাটাই জুলুম। মাফ চাওয়ার উৎসবকে নস্যাৎ করে দিলে আপনার সুযোগ কি আর থাকে? তাই আসুন – আমরা এই লাইলাতুল বারাতের রজনীকে যথাযথভাবে পালন করি। হালুয়া রুটি খাওয়াটাকে স্কুল ইউনিফর্মের মত মনে করে খুশী মনে বিসমিল্লাহ বলি। প্রতিবেশীকে পাঠাই আর প্রতিবেশীর দেয়া খাবারকে প্রশংসা করি। আরো আরো ইসলামিক বন্ধন বাড়িয়ে তুলি।

আর যারা ইসলাম বান্ধব সুযোগকে এসব বে’দাত বলে ঠলে ঝামেলা করতে চাইছে- তাদেরকে ডেকে এনে বলি, “ভাই! যা বলেছো – বলেছো, এসো আমরা অজু করে হালুয়া রুটি মুখে দিয়ে শাবানের এই পবিত্র রাত্রিতে আল্লাহর কাছে মাফ চাই যেন আর ভুল পথে পা না বাড়াই, শয়তানের প্রলোভনে না পড়ি। আমাদের মত কত মুসলমান ভাইএর পরিবার যুদ্ধ করছে না খেয়ে আছে আর অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা-সেবা না পেয়ে পড়ে পড়ে কাতরাচ্ছে। অনেক দেশে ইসলামিক উৎসব পালন করাকে ভাল চোখে দেখছে না। তুমি আমি তো অনেক সুখে আছি, তাহলে কেন ভাই ভূতে কিলানোর মত কাজ করে আমাদের পবিত্র সুযোগকে হাতছাড়া করবো? কেন আমরা ভাতৃত্বের বন্ধনের মিলনমেলাকে বে’দাত বলবো? তাই এসব ছেড়ে আসো ভাই - আজ আল্লাহর দরবারে হাত তুলি ”। আল্লাহ আমাদের সকলকে ঈমান মজবুত করে দিন আর ক্ষমা করে দিন আর শয়তানের হাত থেকে জুলুম করা থেকে দূরে রাখুন।

ধন্যবাদ।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।