কেবলই নিজেকে খুঁজছি মা, কেমন করে ঘুমিয়ে আছো আমায় ছেড়ে
একবারও তো দেখলে না, বললে না-
কেমন আছে তোমার ছেলে?
কিছু খেয়েছে কিনা?
আমি যখন রওনা বাড়ির পথে হতাম
তুমি একটু পরপরই ফোন করতে-
'‘বাবা তুই কোন জায়গা?’'
এবার আসার পথে বাবা একবার ফোন করেছিলো মা।
আমাকে দেখা মাত্রই তুমি বটতলা পর্যন্ত এগিয়ে যেতে
বটতলা থেকে দুজনে বাড়িতে হেঁটে আসতাম
আমি তোমার কাঁধে হাত রেখে আর
তুমি আমার কোমর জড়িয়ে।
এবার কেউ বটতলায় এগিয়ে যায়নি মা
বটের শুকনো ঝরা পাতারা আমাকে স্বাগত জানিয়েছে
বিষন্ন মর্মর শব্দে।
আমি একাই হেঁটে এসেছি-
মুঠোয় ব্যাগের শক্ত হাতল চেপে
আর তোমার শূন্যতার হাহাকার নিয়ে।
মা, তোমার খুব কষ্ট হতো, তবু
তুমি উঠোন ঝাট দিতে-লেপতে
তোমার সেই ঝকঝকে উঠোন এখন
ঝরাপাতার মিলনমেলা।
যে চুলাগুলো নিজে জ্বলে
তোমার হাতে সবার খাবার তুলে দিত
এখন নিয়মিত আগুন জ্বলে না চুলার উদোরে
একাকী বিষন্নতায় ক্ষয়ে যাচ্ছে।
মা রাত্রে আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতাম
তুমি আবদার করতে-
‘'তাড়াতারি একটা চাকরি কর
তারপর আমাকে একটা সুন্দর বৌমা এনে দিবি’'
যেন ছোট্ট মেয়ের পুতুলের আবদার!
আমি বিয়ে করবো না বললেই
তুমি অভিমানী মেয়ের মতো
আমার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে পাশ ফিরে শুতে।
যেন আমি ছোট্ট মেয়ের পুতুলের বিয়ে ভেঙে দিয়েছি ।
আমি রুপকথার গল্পের মতো
বউকথার গল্প বলে তোমার অভিমান ভাঙাতাম।
এখন আমি বাড়িতে এসে একা ঘুমাই মা
ধুলোর বিছানায়!
তোমার শরীরের গন্ধ নেই
পুতুলের আবদার নেই
সেই অভিমানী মেয়েটি নেই
ঘুম আসে না মা!
কেবলই মনে হয়-
আমি ঘুমিয়ে পড়লে তুমি আসবে
আমার মাথার কাছে বসে চুলে আঙুল বুলাবে আর
আমার ঘুম ভাঙার অপেক্ষা করবে।
ঘুম ভাঙতেই পুতুলের আবদার করবে
অভিমান করবে।
আর আমি রুপকথার গল্পের মতো বউ কথার গল্প বলে
তোমার অভিমান ভাঙবো।
কতোদিন বউকথার গল্প বলি না
বউকথার গল্প শুনবে না মা!
০২.১২.০৯
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।