আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গরম পানির গামলা অথবা উত্তপ্ত বালির কড়াই যে কোন একটিতে ঝাপ দেয়ার পথ খুলে রেখেছে আমাদের মহান গণতন্ত্র, আমাদের ভোটাধিকার!

জনগনই সকল ক্ষমতার উৎস--- কি অসাধারন যাদুময়ি কথা!!! বলা হয়ে থাকে জনগনই সকল ক্ষমতার উৎস। আর এই কথা শুনে আমরা আম জনতা খুশিতে টগবগ করে নাচতে থাকি। পেটে তিন বেলা আহার জুটুক আর নাই জুটুক, পরনের কাপড় জোগাড় হোক আর নাই হোক, মাথার উপর ছাদ থাকুক আর নাই থাকুক, অসুস্থতায় সুচিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ হোক আর নাই হোক, ছেলেমেয়েরা শিক্ষার সুযোগ পাক কিংবা না পাক এই কথা নেতার কন্ঠে শুনে আমরা আপ্লুত হয়ে উঠি। মনে মনে নিজের কল্পিত শক্তিশালি পেশির ছবি এঁকে আহ্লাদে আটখানা হই। আর তখন নেতা যাই বলেন মনে হয ঈশ্বরের বাণি।

নেতার মুখ নিসৃত আশার বাণি শুনতে শুনতে আমরা আশার ভেলায় ভেসে যেন স্বর্গের দুয়ারে পৌঁছে যাই। আমাদের কন্ঠ গর্জে ওঠে নেতার স্তব গানে। জিন্দাবাদ, জিন্দাবাদ অথবা জয় জয়! আসলে জনগন হচ্ছে রাজনীতি নামক মেশিনের কাঁচামাল। কালের আবর্তে আমরা ধীরে ধীরে বুঝতে পারি যে, আমরা আসলে ব্যবহৃত হয়ে এসেছি এবং ব্যবহৃত হয়েই চলেছি। নেতারা, সামরিক, বেসামরিক আমলারা, বিদেশি 'বন্ধুরা' হলেন এই যন্ত্রের কারিগর, প্রকৌশলি, মালিক তথা 'বেনিফিসিয়ারি'।

রাষ্ট্রের মালিক জনগন!!! এই কথা আমাদের প্রায়ই শুনতে হয়। এই কথা নেতা বলেন, আমলারা বলেন, সামরিক কর্তারা বলেন, বিদেশি বন্ধুরাও বলেন। তখন বড়ই বিশ্বাস করতে মন চায় এ কথা। কিন্তু সময়ের চাকা গড়াবার সাথে সাথে বুঝতে আমাদের কষ্ট হয় না যে, আসলে একথা পিঠ চাপড়ানির কথা। পিঠ চাপড়ে স্বার্থ বাগিয়ে নেয়ার জন্যই এরকম কথা বলা হয়।

যারা এ কথা বলেন তারা নিজেরা কি একথায় বিন্দু বিসর্গও বিশ্বাস করেন? চাকরেরা থাকে ঠাঁটে বাটে আর মালিক থাকে অনাহারে। এর নামই কি গণতন্ত্র? মালিক তবে কারা? ঠাঁটে বাটে যারা জীবন যাপন করছে তারাই তো এ দেশের মালিক। এটাই তো সত্যি। গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশের আসল মালিক আসলে মুষ্টিমেয় কিছু লোক। এই লোকগুলিকে দেয়া হয়েছিল জনগণের স্বার্থ রক্ষার দায়িত্ব, এইলোকগুলোকে দেয়া হয়েছিল জনগনের সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব।

কিন্তু তারা এসবকিছু না করে নিজের ঝুলি ভরে চলেছে এবং জনস্বার্থ, সার্বভৌমত্ব অন্যের কাছে বিলিয়ে দিচ্ছে। এই কথা আমার না। এই কথাগুলো রাজনীতিকদের কথা থেকেই বেরিয়ে আসে। তাঁরাই বলেন, তেল কম্পানির স্বার্থ না দেখলে নাকি ক্ষমাতায় যাওয়া যায় না। তাঁরাই বলেন, আমেরিকাকে খুশি না করলে মুরুব্বি না মানলে নাকি ক্ষমাতায় থাকা যায় না।

আর এ জন্যই কে আমেরিকার কত বড় বন্ধু তা প্রমানের জন্য প্রতিযোগীতা চলে। আবার আমেরিকা কাউকে নিশ্চিত বন্ধু হিসাবে ঘোষনা দিলে নিজের স্বার্থে তাকে পথ থেকে সরাবার যত প্রকার নষ্ট কায়দা আছে সব কিছুই করতে কোন কসুর করা হয় না। এক সময় বলা হতো মস্কোতো বৃষ্টি হলে নাকি অনেকে এদেশে ছাতা ধরেন। অপর পক্ষে লন্ডনে, ওয়াশিংটনে, মক্কায়, দিল্লিতে, ইসলামাবাদে বৃষ্টি হলে এদেশের রাজনীতিকদের এক এক গ্রুপ নিজেদের মতো করে ছাতা ধরেন। এমন কোন দল, এমন কোন রাজনীতিক এখনো দেখা যায়নি যে দল বা যে রাজনীতিক বাংলার মানুষের মনের কথা, চাওয়া, ইচ্ছা বুঝতে পারেন এবং তাদের মতো করে তাদের কথা তুলে ধরেন।

গণতন্ত্রের খোলসে এ কোন আজব তন্ত্র? একটি গণতান্ত্রিক সমাজে যে কটি প্রতিষ্ঠান বা অংগ থাকা দরকার আমাদের এর সবগুলিই আছে। কিন্তু কোনটিই সঠিকভাবে কাজ করছে না। প্রশাসন দাঁড়িয়ে আছে দুর্নিতির প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির উপর। পুলিশ আছে জনগনের বন্ধু হয়ে নয় ত্রাস হয়ে। আদালত আছে ক্ষমতাবানদের আজ্ঞাবহ হয়ে।

সামরিকবাহিনি এই টুটাফাটা গণতন্ত্রকেও কখন গিলে খায় মানুষ সারাক্ষন সেই ভয়েই থাকে। হাসপাতালে চিকিৎসক নাই, ওষুধ নাই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আছে কলমের বদলে অস্ত্রের ঝনঝনানি। দূর্নিতীদমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, নির্বাচন কমিশন সবই ঠুঁটোজগন্নাথ। বড় নেতারা দলের ভেতর চিরস্থায়ি বন্দোবস্ত নিয়ে গেঁড়ে বসে আছেন যুগের পর যুগ কিংবা আছেন বংশ পরম্পরায়।

থাকবেন আরো। এটা প্রায় নিশ্চিত করা হয়েছে। দেশের মানুষের রয়েছে গামলা ভর্তি গরম পানিতে ঝাপ দেয়া অথবা জলন্ত কড়াইয়ে ভাজা ভাজা হওয়ার মধ্যে যে কোন একটি বেছে নেয়ার গণতান্ত্রিক স্বাধিনতা। কি অসাধারন ভোটাধিকার আমরা উপভোগ করছি! অবশ্য এই গণপ্রজাতন্ত্রি সার্বভৌম বাংলাদেশের মিত্রদের এতে খুউব সুবিধা হয়েছে। নতুন কোন ঝুটঝামেলা পোহাতে হবে না।

জনগন বেছে নেবে ঐ গামলা অথবা কড়াই। উভয়ই পরীক্ষিত বন্ধু। এই বন্ধুরা স্যুট বুট পরে একদিকে জনগনকে ধর্মিয় সুড়সুড়ি দিয়ে মনজয় করতে সিদ্ধহস্ত অন্যদিকে সুশিল সমাজের (আরেক মিত্র) সহায়তায় আমাদেরকে পশ্চিমাসভ্যতার সাগরতীরে কত দ্রুত টেনে হিচড়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেই কৌশলেও পটু। উদাহরন স্বরুপ বলা যায়, সমকামিদের অধিকার, পুরুষ-পুরুষ, নারী-নারী বিয়ের অধিকার, ভ্রুণ হত্যার অধিকার যে বাংলাদেশের মানুষের অন্য, বস্ত্র কাজের অধিকারের চেয়েও বড় তা গেলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। মারহাবা, মারহাবা।

জয় হোক গণতন্ত্রের! যুগ যুগ জিয় হে গণতন্ত্র! ইয়ে আজাদি ঝুটা হায়। ইংরেজরা যখন ভারতবর্ষ ছেড়ে চলে যায়, নেতাজী সুভাষ বসুর দল তখন বলেছিল, ইয়ে আজাদি ঝুটা হায়। হায় তখন কে জানতো একথা আমাদের ললাট থেকে এতদিন পরেও আমরা মোছার কথা ভাবতে পারবো না?! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।