তথ্যসূত্র : বাংলাদেশের কয়েকটি পত্রিকা
সাভার আশুলিয়ার গণকবাড়ীতে পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ম্যানুয়াল প্রসেসে তৈরি হচ্ছে টিনের বিকল্প জুটিন। পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ইনস্টিটিউট অব রেডিয়েশন অ্যান্ড পলিমার টেকনোলজির পরিচালক ও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোবারক আহমদ খানের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় উদ্ভাবিত হয়েছে পরিবেশবান্ধব এ জুটিন।
দেখতে ঢেউটিনের মতো। পাটের সঙ্গে পলিমারের মিশ্রণ দিয়ে এটি তৈরি। এতে মরিচা ধরে না।
ক্ষতিগ্রস্ত হয় না লবণাক্ত পানিতেও। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সিসা নেই এতে। এটি তৈরি করেছেন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোবারক আহমদ খান। পাট বা জুট থেকে তৈরি বলে তিনি এর নাম দিয়েছেন ‘জুটিন’।
জুটিন নির্মাণে কোনো ধাতব পদার্থ ব্যবহার করা হয় না।
ঝড় বা জলোচ্ছ্বাসে ঢেউটিনের আঘাতে মানুষ ও পশু আঘাতপ্রাপ্ত হয়, সেই দিক বিবেচনায় জুটিন কম বিপজ্জনক। তিনি বলেন, জুটিন তৈরিতে ৩৩-৪০ ভাগ পাট ব্যবহার করা হয়। ঢেউটিনের চেয়ে জুটিন মজবুত, দৃঢ়, তাপ বিকিরণরোধী।
জুটিন ৫০ বছরের অধিক সময় পর্যন্ত টেকসই হবে। তিনি জানান, বাজারে প্রচলিত ঢেউটিনগুলোর প্রতি বর্গফুটের দাম ৪৫ থেকে ৮০ টাকা।
একই স্থায়িত্ব ও দৃঢ়তাসম্পন্ন জুটিন তৈরি করা যায় প্রতি বর্গফুট ৩০-৩৫ টাকায়।
গোড়ার কথা: মোবারক আহমদ ২০০৯ সালের মার্চে সেমিনারের মাধ্যমে জুটিন তৈরির ঘোষণা দেন। গত দুই বছরে একই প্রযুক্তি ও কাঁচামাল ব্যবহার করে তিনি মোটরসাইকেল আরোহীর নিরাপত্তার জন্য প্রচলিত হেলমেটের চেয়ে মজবুত হেলমেট, স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারের রিং ও স্লাব, চেয়ার, টেবিল, টাইলসসহ নানা পণ্য তৈরি করেছেন।
যেভাবে তৈরি হয়: শহর কিংবা গ্রামে বাড়ির আঙিনা বা উঠানে নারী-পুরুষেরা সহজেই জুটিন তৈরি করতে পারবেন। জুটিন বানাতে প্রথমে একটি ঢেউটিনের ওপর পলিথিন বা মোম অথবা তেলের প্রলেপ দিতে হয়।
এর ওপর ঢেউটিনের সমান মাপের পাটের চট বিছিয়ে তার ওপর পলিমারের মিশ্রণ লেপে দেওয়া হয়। পলিমারের মিশ্রণের ওপর আরেকটি চট বিছিয়ে তার ওপর আবারও পলিমারের মিশ্রণ লেপে দিতে হয়। পলিমারমিশ্রিত ওই চটটির ওপরে আরেকটি ঢেউটিন চাপ দিয়ে রাখতে হয়। ২০ মিনিট পর ঢেউটিন ও পলিথিন সরিয়ে ফেললে পাওয়া যাবে জুটিন। তবে তাপমাত্রা পরিবর্তনের মাধ্যমে চার-পাঁচ মিনিটের মধ্যেও এটি করা সম্ভব।
গুণগত মান: পরমাণু শক্তি গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে, পাট তাপ কুপরিবাহী হওয়ায় জুটিন দিয়ে নির্মিত ঘর গ্রীষ্মকালে শীতল থাকে। শীতকালে টিনের সঙ্গে জলীয় বাষ্প তরলীভূত হয়ে জলকণায় রূপ নেয়, কিন্তু জুটিনে তেমনটি হয় না।
বর্তমান অবস্থা: বর্তমানে ঢাকার আশুলিয়ার গণকবাড়ীতে পরমাণু শক্তি গবেষণাপ্রতিষ্ঠানে কায়িক প্রক্রিয়ায় জুটিন তৈরি করা হচ্ছে। পরমাণু শক্তি গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ কিছু কাজে এটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জনস্বাস্থ্য বিভাগ ও ইউনিসেফের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে শুধু গণশৌচাগার নির্মাণের জন্য জুটিনের তৈরি কিছু মালামাল সরবরাহ করা হচ্ছে।
জুটিনের উদ্ভাবক ড. মোবারক আহমেদ খান বলেন, কৃত্রিম তন্তু উদ্ভাবনের পর বাংলাদেশের ‘সোনালি আঁশ’খ্যাত পাট এবং পাটজাত দ্রব্য বিশ্ববাজারের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছে। পাটের অন্যতম উত্পাদনশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সোনালি আঁশ থেকে যথার্থ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারছে না। কৃষকও দিন দিন পাট উত্পাদনের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এ অবস্থায় পাটের সনাতন ব্যবহারের পাশাপাশি আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত যুগোপযোগী করে তোলার চিন্তা থেকেই পাট নিয়ে গবেষণা করা। আমাদের দেশের পাট দিয়ে উন্নত বিশ্বে পাট ও অন্যান্য প্রাকৃতিক তন্তু কম্পোজিট হিসেবে ব্যবহার করে যানবাহন ও আকাশযানের বডি নির্মাণ করা হচ্ছে।
এটি দেখেই আমেরিকা থেকে দেশে ফিরে এসে পাট নিয়ে গবেষণা শুরু করি।
জুটিনের পাইলট পস্ন্যান্ট প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, জুটিন বর্তমানে আশুলিয়ার গণকবাড়িতে পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কায়িক প্রক্রিয়ায় (ম্যানুয়াল প্রসেস) তৈরি করা হচ্ছে। পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অভ্যনত্মরীণ কিছু কাজে এটি ব্যবহার করা হচ্ছে। মডেল হিসেবে যেখানে জুটিনের তৈরি একতলা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও সাভারে কমিশনের পাশর্্ববতর্ী একটি স্কুলে জুটিনের তৈরি চেয়ার বেঞ্চ ও ডেস্ক সরবরাহ করা হয়েছে।
এই পাইলট পস্ন্যান্ট প্রকল্পে পরীৰামূলক পাবলিক টয়লেটের জন্য রিং সস্নাব ও কমোড তৈরি করা হচ্ছে। জুটিন দিয়ে একই সঙ্গে ঘরের ছাদ, দেয়াল ও চেয়ার তৈরি করা হয়েছে এই পাইলট পস্ন্যান্টে। বর্তমানে তিনি এই পাইলট পস্ন্যান্টে একটি প্রাইভেট সেক্টরের জন্য ১০০ স্যানিটারি ল্যাট্রিনের রিং সস্নাব তৈরি করছেন।
পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক মোঃ আলি জুলকারনাইন বলেন, নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির উন্নয়নের লৰ্যেই আমরা কাজ করছি। তিনি বলেন, জুটিন উদ্ভাবনের ফলে গবেষণার ৰেত্রে নতুন মাত্রা সংযোজিত হয়েছে।
বাইরের দেশে উদ্ভাবিত প্রযুক্তির বাণিজ্যিকীকরণের ৰেত্রে সংশিস্নষ্ট গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সুযোগ থাকলেও আমাদের দেশে সেই সুযোগ নেই। সরকারকে এ ব্যাপারে পদৰেপ গ্রহণ করতে হবে। তাহলে একদিকে যেমন উদ্ভাবকের স্বীকৃতি দেয়া সম্ভব হবে ঠিক তেমনি সম্ভানাময় জুটিন তার লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবে।
আরো জানতে চাইলে: Jutin
www.greennovationtechs.com ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।