আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মানবকল্যাণে নিয়োজিত প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, আশ্চর্য গুণে গুণান্বিত এক ভাষা সৈনিককে স্মরণ করছি

জন্ম - ২১শে ফেব্রুয়ারি ১৯২৯, মৃতু্য- ২১ শে ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮ Source : Click This Link চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত বাঁশখালী উপজেলার দক্ষিণ বরুমচড়া গ্রামে ১৯২৯ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি রোজ বৃহস্পতিবার কৃতি সন্তান জামাল উদ্দীন নুরী বিদ্যারত্ন জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম মৌলভী বদি উদ্দীন, মাতা মরহুমা আমির জান ১৯৪৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাণী গ্রাম সাধনপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ডিস্টিংশনে মেট্রিক পাশ করেন। ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্যার সলিমুল্লাহ কলেজ ঢাকা থেকে ডিস্টিংশনে ইন্টারমেডিয়েট করে, ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিএ (অনার্স) ফাইনাল এবং ফজলুল হক হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। ২০ শে ফেব্রুয়ারি রাতে ফজলুল হক হলের পশ্চিমে পুকুর পাড়ে সভার আয়োজন করেন। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার ঢাকার আমতলা এলাকায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে খন্ড মিছিল নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রথম গেইট আসা মাত্রই পুলিশের লাঠি চার্জ ও কাদুঁনে গ্যাসের সম্মুখে ছত্রভঙ্গ হয়ে পুলিশের গুলিতে আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার হন।

২১ দিন কারাভোগ করে ১৩ মার্চ ১৯৫২ সালে মুক্তি পান। (আদেশ নং ৪৪৮ এইচ.এস) উল্লেখ্য যে ভারত বিভাগের পর ১৯৪৮ সালের ২৩ শে ফেব্রুয়ারি করাচীতে পাকিস্তানের গণ পরিষদে ভারত শাসন বিধির ২৯ নং উপধারা সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়। সংশোধনী প্রস্তাবে ইংরেজীর পাশাপাশি উদর্ূকে রাষ্ট্রভাষা করার কথা বলা হয়। ইংরেজী ভাষার সংগে উদর্ু ভাষা যুক্ত করার সরকারী প্রস্তাবে তৎকালীন পূর্ব বাংলার কুমিল্লা থেকে নির্বাচিত সদস্য শ্রী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ঐতিহাসিক সংশোধনী প্রস্তাব আনেন। এতে তিনি পূর্ব বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ ৪ কোটি ৪০ লক্ষ মানুষের মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করেন, গণ পরিষদে অধিবেশন শেষে করাচী থেকে ফিরছিলেন ঢাকার অনুন্নত তেজগাঁও বিমান বন্দরে সিকিউরিটি বলতে কিছু ছিল না।

প্লেন থেকে নেমে দেখলেন আর.এস.পি ছাত্রনেতা জামাল উদ্দীন এবং সাংবাদিক মোজাম্মেল হক (৬৫ সালে কায়রো বিমান দুর্ঘটনায় নিহত) এর নেতৃত্বে ২০-২৫ জন যুবক দাঁড়িয়ে তাদের প্রত্যেকের গায়ে চাদর ঢাকা। তার কথায় 'আমার ধারণা হল প্রথম গণ পরিষদে বাংলা ভাষার স্ব পক্ষে কথা বলায় এরা বিক্ষোভ জানাতে এসেছে এবং চাদরের আড়ালে অস্ত্র থাকতে পারে। সংশয় নিয়ে কাছাকাছি যাওয়ার পর তাদের চাদরের ভেতর থেকে রাশি রাশি গোলাপ বের করে আমার উপর বর্ষণ করতে লাগল'। [ সূত্র- আমার দাদু আমার গুন তৃতীয় খন্ড লেখক- নীলিমা দত্ত, প্রকাশক- বাংলা একাডেমী ১৯৭১] বাংলাকে তৎকালীন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার সংগ্রাম ৪৭ এর ভারত বিভাগের মাত্র তিন মাসের মধ্যে শুরু হলেও বাংলা আমাদের অস্তিত্ব, রক্তের উত্তরাধিকার সত্য সুন্দরের প্রেরণা এই বিশ্বাস নিয়ে ১৭ই নভেম্বর ১৯৪৭ সালে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার দাবী জানিয়ে তৎকালীন আর এস পি ছাত্রনেতা জামাল উদ্দীন নিজ উদ্যোগে পূর্ব বাংলার তরুণ- বয়স্ক মানুসের গণ স্বাক্ষর নিয়ে তৎকালীন মূখ্য মন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দীনের কাছে স্মারক লিপি পেশ করেন। করাচীতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান শিক্ষা সম্মেলনে উদর্ূকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা প্রস্তাব পাশের প্রতিবাদে ৬ই ডিসেম্বর ১৯৪৭ ডাকসু ভিপি ফরিদ আহমদের নেতৃত্বে এক বিরাট সভার আয়োজন করেন, ১১ ই মার্চ ১৯৪৮ ধর্মঘট ও ছাত্র সমাবেশ থেকে গ্রেপ্তার হন এবং তৎকালীন মূখ্য মন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দীনের সঙ্গে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের চুক্তির মাধ্যমে ছাত্রদের পক্ষে কমরুদ্দিন আহমদ চুক্তি পত্রে স্বাক্ষর করলে ১৪ই মার্চ ১৯৪৮ মুক্তি পান।

১৯৫২ সালে কারাগারে বসে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন- জেল থেকে বের হয়ে সুন্দর কোন সৃষ্টির প্রতি একাত্ম হয়ে সুন্দর মনের পরিচয় দিয়ে মানবতার মুক্তির নিভর্ুল দিশারী ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী মাতৃভাষা বাংলাকে শিক্ষার মাধ্যম করে নিজ উদ্যোগে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে বিনা বেতনে প্রদান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৯৮ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনেক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১। খাসমহল উচ্চ বিদ্যালয় দেউদিঘী সাতকানিয়া ২। তুলাতলি আইডিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় সাতকানিয়া ৩। হালিশহর সেন্ট্রাল উচ্চ বিদ্যালয় হালিশহর ৪।

সরল আমিরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় বাঁশখালী ৫। বারিক মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ডবলমুরিং ৬। হামজারবাগ রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয় পাঁচলাইশ ৭। বরুমচড়া বশরুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয় আনোয়ারা ৮। গুয়া পঞ্চক উচ্চ বিদ্যালয় আনোয়ারা ইহা ছাড়া আরো অনেক স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত ছিলেন।

কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ নূরী এবং বিদ্যারত্ব উপাধী লাভ করেন। ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৯৮ সালে ২১ শে ফেব্রুয়ারি (মৃতু্যর আগ পর্যন্ত সময়ে) মহান ভাষা সংগ্রামকে একুশের শীর্ষ বিন্দুতে পেঁৗছে দিতে আহত হয়েছেন, অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন, দমন পীড়নের শিকার হয়েছেন, কারা নির্যাতিত হয়েছেন, সারা বাংলাদেশে অনেক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার অসমাপ্ত কাজকে সমাপ্ত করার জন্য কানাডা প্রবাসী ছাত্ররা এগিয়ে এসেছেন এবং ১৯৯৮ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি বাংলাকে আন্তজর্াতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার জন্য ইউনেস্কোতে আবেদন করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কোর সাধারণ সভায় ১৮৮টি সদস্য রাষ্ট্রের সর্ব সম্মতিক্রমে ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে অনুমোদন দেন। ২০০০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী ২১ শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়।

Source : Click This Link  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।