শব্দ খুঁজি, সৃষ্টির অদম্য নেশায় প্রিয়তমা, শব্দটার শেষ অক্ষরটা তোমার নামেরও শেষ অক্ষর। এর উচ্চারণে যেমন প্রশান্তিমাখা আদুরে ভাব আছে, তেমনি তুমিও। পুরো একটা বছর কাটলো তোমার মোহাবিষ্টতায়। একই ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে নিজেদের শরীর লুকোলাম বৃষ্টির ঝঞ্ঝাটে। একই চাঁদের বন্যায় দুজনই আপ্লুত আনন্দে ভাসলাম একই শহরে।
তীব্র শীতে তোমার হুডওয়ালা কার্ডিগানে দেখেছি নিষ্পাপ চোখ। হলদে আলোর টিমটিমে আভায় তোমার সোনালি প্রতিফলন ধাঁধিয়ে দিয়েছে আমার চির অন্ধ চোখ। ঝেড়ো বাতাসের প্রবল প্রতাপে শহরের সমস্ত ধূলো আগলে রেখেছি নিজের শরীর দিয়ে। ব্যস্ত রাস্তা পেরিয়েছি তোমার কোমল হাত মুঠোয় পুরে। শৈশবের একটা ছবিও না দেখে আমি অবলীলায় ভেবে নিতে পারি ছোট্ট তোমাকে।
শরীরের সমস্ত রক্ত-ঘামের প্রবাহে, মস্তিষ্কের প্রতিটি নিউরনের সংযোগে, বুকের প্রতিটা স্পন্দনে প্রিয়তমা তোমাকে আমি অনুভব করি।
শাহবাগে্র সমস্ত হাইব্রিড ফুলের গন্ধও তোমার ঘর্মাক্ত শরীরের সুবাসের কাছে নস্যি। আমি উত্তরের ছেলে, অরণ্যের সাথে আমার পরিচয় নেই। আমার দিকে পেছন ফিরে যখন দাঁড়িয়ে থাকো তখন ঠিকই বুঝে যাই বনের মাদকতা আসলে তোমার চুলে। তোমার চশমার ফ্রেম, কাজল বর্জিত কালো চোখ, ছোট করে কাটা নখ, দাঁতে কাটা ক্ষয়ে যাওয়া নখ, খিলখিলে সশব্দ হাসি, আমার শোনা শ্রেষ্ঠ হাসি, ঠোঁট গোল করে দেয়া ব্যর্থ শিস, কবিতার উচ্চারণ, চীনা মেয়েদের মতো ছোট্ট পা, মাত্র দুই জোড়া স্যান্ডেলে আবৃত ছোট্ট পা, মুচির সার্জারী করা স্যান্ডেলে আবৃত ছোট্ট পা, একজোড়া পুরনো কনভার্সে ঢাকা ছোট্ট পা,সুনীলের মনীষার মতো কাদা-ময়লার উর্ধ্বে থাকা শ্রেষ্ঠ পা, ডাভ শ্যাম্পুতে ধোয়া স্নিগ্ধ চুল, লতানো বৃক্ষের শেকড়ের মতো চুল, সহস্রবার আঁচড়ে দিতে ইচ্ছে করা অবিন্যস্ত চুল, আমার অস্তিত্বের সমুদ্রে টুপ করে ডুবে যায়।
নাড়া দেয় তলদেশের ভূকম্পনের মতো। প্লাবিত উপকূলের বেওয়ারিশ নৌকার মতো। পরিযায়ী পাখির নিরন্তন ডানা ঝাপ্টানোর মতো। বাসের জানালায় দেখা অরণ্যসদৃশ সুদূরের গ্রামের মতো। রবীন্দ্রনাথের নতুন শোনা গানের মতো।
বাতাসে ভেসে আসা তুলোর রোঁয়ার মতো। ছোটবেলার প্রিয় চাচা চৌধুরী, হযবরল, পাগলা দাশু, ফ্যান্টম, টিনটিনের মতো। সুকুমার রায়ের ননসেন্স ছড়ার মতো। কুমড়ো পটাশের হরদম নৃত্যের মতো। রামগরুড়ের ছানার অট্টহাসির মতো।
সদ্যজাত শিশুর আগমনী কান্নার মতো। স্কুলের পাঁচিল টপকানো উত্তেজনার মতো। সিগারেটে প্রথম টানের মতো। মেঘের আকৃতিতে দেখা কিউপিডের প্রাসাদের মতো। মধ্যরাত্রির আচমকা শিহরণের মতো।
রেমবার্টের আঁকা ছবির মতো। লোডশেডিং শেষে বৈদ্যুতিক পাখার সশব্দ ঘূর্ণনের মতো। ঘুম ভেঙ্গে দেখা নতুন ভোরের মতো।
আমি থামতে পারছিনা। লেখাগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে আঙ্গুলের ডগায় এসে পড়ছে।
আমিও আজ্ঞাবহ দাসের মতো, নিশিতে পাওয়া হাটুরের মতো, শামানের ইচ্ছাধীন অভিশপ্ত জোম্বির মতো লিখে যাচ্ছি। এই লেখা কখনো শেষ হবে না। হৃদয়ের দৈবিক স্পন্দনের মতো জাদুবাস্তবতায় আমি লিখেই যাবো। এই সীমাবদ্ধ পরিসরের, এই ডিজিটাল পাতার সাধ্য নেই আমার ভালোবাসার পুরোটা ধারণ করে। তুমি তো জানোই, না? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।