ইবাদতের গুরুত্ব
বিসমিল্লাহহির রহমানির রহীম
নাহমাদুহু ও নুসাল্লী আলা রাসূলিহিল কারীম
মানব জীবনের লক্ষ্য কী এবং এ পথিবীতে আগমনের উদ্দেশ্য কী, তা না জানা পর্যন্ত মানব জীবনে ইবাদতের গুরুত্ব কতটুকু তা আসলে সঠিকভাবে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। এ বিশ্ব চরাচরে মানবের রয়েছে এক অসাধারণ অবস্থান। মানুষ সৃষ্টিগতভাবে দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও আকাশ ও পৃথিবীর সবকিছুর উপর সে রাজত্ব করে। এ বিশাল-বিস্তৃত সৃষ্টিজগতের প্রতিটি কণা তার সেবায় নিয়োজিত। মানুষের উদরপূর্তির জন্যে শস্য উৎপাদনের প্রয়োজন হলে সৃষ্টিজগতের মেশিনারির প্রত্যেকটি যন্ত্রাংশ তার সাহায্যের জন্যে গতিশীল হয়ে ওঠে।
মানুষের চেয়ে অনেকগুণ বেশি শক্তির অধিকারী পশু তার অনুগত হয়ে জমি চাষ করে। কিশলয় চারা এবং চারা বৃক্ষে পরিণত হতে তাপের প্রয়োজন। সূর্য তখন রশ্মি বিস্তার করে । পানির প্রয়োজন হলে মেঘমালা তার পুঁজি বিলিয়ে দেয়। বাতাসের প্রয়োজন হলে বায়ু দোলা দিয়ে তার বৃদ্ধি ঘটায় ।
মোটকথা, বিশ্বব্রম্মান্ডের যাবতীয় শক্তি মানুষের ক্ষুধা নিবারণ এবং তার জীবনের উপাদান সরবরাহের জন্য নিজের সম্পূর্ন ক্ষমতা ব্যয় করে ।
এটিতো একটি উদাহরণ ছিলো মাত্র। আপনি আপনার চতুর্দিকে চোখ বুলালে দেখতে পাবেন আসমান থেকে নিয়ে জমিন পর্যন্ত নিয়ে আল্লাহর নিয়োজিত সমস্ত কর্মী আপনার সেবায় রত আছে।
এখন প্রশ্ন জাগে যে, এমনটি হলো কেন? আপনার মধ্যে এমন কি বৈশিষ্ঠ রয়েছে যে কারনে এ বিশ্ব আপনার খেদমত করে থাকে। অথচ আপনার থেকে সে কোন খেদমত নেয় না।
একথার উপর যদি আপনার ঈমান থেকে থাকে যে, সৃষ্টি জগতের প্রতিটি কনার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতাআলা। তিনিই এ জগতকে আপনার সেবায় নিয়োজিত করেছেন। তাহলে এ সমস্ত প্রশ্নের উত্তর অনুধাবন করতে আপনার বিলম্ব হবে না। সমগ্র বিশ্বকে আপনার সেবায় নিয়োজিত করা হয়েছে যে, আপনি অনেক উচু ও অতি মহান প্রতিটি কাজে আদিষ্ট। আর সেই মহান কাজটিই হলো ইবাদত ও বন্দেগী।
এ কাজটি আমাদের জীবণের লক্ষ। এ উদ্দেশ্যে আমাদেরকে প্রেরণ করা হয়েছে। কুরআন কারীমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন - “আমি জ্বীন ও ইনসানকে শুধু আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি ” ।
কুরআনে কারিমের এ বাণী ও তার উপরোল্লেখিত এ ব্যখ্যা দ্বরা ইবাদতের গুরুত্ব সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। ইবাদত যেহেতু আমাদের জীবনের লক্ষ্য তাই তা গুরুত্বপূর্ন ।
ইবাদত এজন্য গুরুত্বপূর্ন যে, এ উদ্দেশ্যে আমাদের দুনিয়াতে আসা। ইবাদত এজন্য গুরুত্বপূর্ন যে, তা আমাদের আশরাফুল মাখলুকাত হওয়ার মূল উপাদান । এ শক্তিবলেই আমরা বিশ্ব ব্রম্মান্ডের সবকিছু থেকেই খেদমত নিয়ে থাকি। ইবাদতের এই দায়িত্ব যদি আমরা পুরো না করি তাহলে আমাদের দৃষ্টান্ত সেই চাকরের ন্যয় যে তার মালিক থেকে পুরো বেতন উসূল করে, তার দেওয়া সুযোগ সুবিধা পুরোটাই ভোগ করে কিন্তু যে মনিবই যখন তাকে কোন কাজে হুকুম দেয় সে তা স্পষ্ট ভাষায় পালন করতে অস্বীকার করে। এ চাকর যেমন শাস্তিযোগ্য, তেমনিভাবে সে ব্যক্তিও শাস্তির উপযুক্ত ।
যে জগতের সমস্ত নিয়ামত ভোগ করে কিন্তু ইবাদতের দ্বায়িত্ব পালন করেনা। অপরদিকে যে ব্যক্তি সবগুলো ইবাদত সঠিকভাবে করে তার দৃষ্টান্ত সেই অনুগত চাকরের ন্যয় যার অরাম বিরামেও মালিক খুশী হয়ে থাকে। যেমন অবসর সময়ে চাকরের কাজ না করার এবং তার আরাম ও বিশ্রাম ও চাকরির মধ্যে পরিগনিত হয়। এমনিভাবে একজন অনুগত বান্দার ইবাদত শুধুমাত্র নামায রোযা হয়ে হ্জ্ব যাকাতের মধ্যে সীমাŸদ্ধ থাকেনা । বরং তার জীবনের প্রতিটি পরিক্ষা ইবাদত বলে পরিগনিত হয়।
হাদীস শরীফে এসেছে যে এমন ব্যক্তি তার বউ-বাচ্চার জন্য যে উপার্যন করে এজন্যও সে সওয়াব পেয়ে থাকে। তার ঘুমানো জাগ্রত হওয়া এমনকি হাসি তামাশা বন্দেগী বলে গণ্য হয়। প্রকৃত পক্ষে বন্দেগীর উদ্দেশ্য হলো মানুষ নিজেকে আল্লাহর আজ্ঞাধীন মনে করে নিজের পুরো জীবনকে তার বিধান মোতাবেক চালাবে। তাই ইবাদত বিশেষ কোন জায়গা , বিশেষ কোন সময় বা বিশেষ কোন বিশেষ কোন কাজের সাথে নির্ধারিত নয়। আপনি নিজের জীবনকে যদি আল্লাহর হুকুমের অধীন বানান, তাহলে আপনার জীবনের প্রত্যেকটি কাজ ইবাদত বলে গন্য হয়।
আপনার ব্যবসা চাকরি এমনকি বৈধ বিনোদনও ইবাদত। তবে শর্ত হলো তা আল্লাহর হুকুম মত ও সৎ নিয়তে হতে হবে।
কোন জাতির বেশির ভাগ সদস্য যখন তাদের সামগ্রিক জীবনকে এভাবে ইবাদত বানিয়ে নেয় তখন জীবনের সকল সফলতা তাদের পদচুম্বন করে। ফলে আল্লাহর সে ওয়াদা পরিপূর্ন হয়, কুরআন কারিম যার ঘোষনা দিয়েছে -“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে ও সৎ কর্ম করেছে, আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি অবশ্যই তাদেরকে পৃথিবীতে নিজ খলিফা বানাবেন , যেমন খলিফা বানিয়েছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তাদের জন্য তিনি সেই দ্বীনকে অবশ্যই প্রতিষ্ঠা দান করবেন, তার পরিবর্তে তাদেরকে অবশ্যই নিরাপত্তা দান করবেন। তারা আমার ইবাদত করবে, আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না, এরপরও যারা অকৃতজ্ঞ, তারাই অবাধ্য সাব্যস্ত হবে।
” ইবাদতে আবেগ উদ্দীপনা উদ্দেশ্য নয়। ইসলাহী মাজালিশ (৩৩৯-৩৫০)
আমলের পার্থিব ফলাফল (৪০৭-৪১৬)
((বিদ্রঃ হযরত মাওলনা জালালউদ্দীন সাহেবের বই "ইসলামী আকিদা-বিশ্বাস ২য় খন্ড http://www.maktabatulashraf.net" থেকে নেয়া। Please visit http://www.thevoiceof islam.weebly.com ) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।