জিম্বাবুয়ে থেকে দেশে ফিরেই আবার বিদেশে চলে যাবেন সাকিব আল হাসান। বিদেশ মানে যুক্তরাষ্ট্র। স্ত্রী উম্মে আহমেদ শিশির আছেন সেখানে। এরপর কাউন্টি খেলতে যেতে পারেন ইংল্যান্ডেও। সাকিবের এই গতিময় জীবনে এমনকি দুই বছর আগের ঘটনারও খুব বেশি স্থান নেই।
নইলে আরেকবার জিম্বাবুয়েতে এসে কেন ভুলে থাকতে চাইবেন দুঃসহ সেই স্মৃতির কথা!
২০১১ সালের জিম্বাবুয়ে সফর সাকিবকে নামিয়ে এনেছিল আকাশ থেকে মাটিতে। টেস্ট, ওয়ানডে দুই সিরিজই হারার পর অধিনায়কত্ব হারালেন, বিদ্ধ হলেন সমালোচনার তিরে। দুই বছর আগের ক্ষত শুকাতে জয় এবার শুধু বাংলাদেশ দলের জন্যই নয়, সাকিবের জন্যও প্রয়োজন ছিল খুব। তবে টেস্ট সিরিজ ড্র হওয়ায় এখন কাঙ্ক্ষিত সেই জয় আসতে পারে কেবল আজ শেষ হতে যাওয়া ওয়ানডে সিরিজেই। সিরিজ জয়ের জন্য তো বটেই, আজকের অলিখিত ফাইনাল জেতাটা কি সেই অর্থেও জরুরি নয়? সাকিব মানলেন না, ‘না...এখন আর ওসব নিয়ে এত বেশি টেনশন নেই।
জীবন অনেক বদলে গেছে। ’
জীবন বদলে গেলেও জীবনের চাহিদা কি সব সময় বদলায়? সম্ভবত, না। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের চাহিদা যেমন প্রতিটা ম্যাচেই জয়। সে চাহিদা কখনো পূরণ হয়েছে, কখনো হয়নি। তবে আজ পূরণ না হলে এই জিম্বাবুয়ে থেকে আবারও ব্যর্থতার বোঝা নিয়ে ফিরতে হবে দেশে।
২০১১-এর বিষাদ ফিরে আসবে আবার।
বুলাওয়ে কুইন্স স্পোর্টস ক্লাবের উইকেট নিয়ে এবার অনেক আলোচনা। এটি আর আগের মতো স্পিন-বান্ধব নয়। এর সখ্য পেসারদের সঙ্গেই বেশি। সাকিব অবশ্য বুলাওয়ের উইকেট খুব একটা বদলেছে বলে মনে করেন না।
কাল অনুশীলনে নামার আগে বললেন, ‘আমার মনে হয়, উইকেট আগের মতোই আছে। আগেরবারও এখানে সকালে পেসাররা সাহায্য পেয়েছে। টসে জিতে সবাই ফিল্ডিং করেছে। সব সময়ই এখানে দ্বিতীয় ভাগে খুব ভালো ব্যাটিং উইকেট হয়ে যায়। ’ স্পিনারদের জন্য যে এই উইকেট একটু বৈরিতাই বিছিয়ে রেখেছে, সেটি বুঝেছেন নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই, ‘এখানে স্পিনারদের পক্ষে আক্রমণাত্মক হওয়া কঠিন।
বল বেশি ঘোরে না। ’
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে আগে ব্যাট করা-পরে ব্যাট করাও খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। প্রথম ম্যাচে আগে ব্যাট করেও জিতেছিল বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধে উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য খুব ভালো হয়ে যাওয়ায় আগে ব্যাট করাটা হঠাৎই ‘অভিশাপ’ বলে বিবেচিত হচ্ছে। সাকিবও যেমন বললেন, ‘টস জেতাটা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
’ তবে টসে জেতা-হারাটা যেহেতুু কারও হাতে নেই, জয়ের জন্য বিকল্প পথও ভেবে রেখেছেন তিনি, ‘টসে না জিতলেও আমরা ব্যাটসম্যানরা যদি ভালো খেলি, তাহলে বড় রান করা সম্ভব। আর বোর্ডে বড় রান থাকা মানে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলা। প্রথম ম্যাচে যেমন আমরা ২৭০ রান (আসলে ২৬৯) করেছিলাম। ও রকম হলেও জেতার ভালো সুযোগ থাকবে। ২৭০ এখানে মোটামুটি নিরাপদ রান।
’
পরে ব্যাটিং করতে হলেও প্রথম দুই ম্যাচের একটি খণ্ডাংশ অনুপ্রাণিত করছে সাকিবকে, ‘এখানে উইকেটে থাকতে পারলে পরে রান করা সহজ হয়। দুই ম্যাচেই আমরা শেষ ১০ ওভারে ৮০ রানের মতো করেছি। আগে ব্যাট করলেও উইকেট হাতে নিয়ে শেষ ১০ ওভারে গেলে যেকোনো কিছু হওয়া সম্ভব। ’
প্রথম ম্যাচে বাজেভাবে হারার পর দ্বিতীয় ম্যাচে দুর্দান্তভাবে ফিরে এসেছে জিম্বাবুয়ে। দলটার আত্মবিশ্বাসও তাই তুঙ্গে।
কাল অনুশীলন শেষে দলের মুখপাত্র হয়ে সিঙ্গি মাসাকাদজা তাই হুমকিই দিয়ে রাখলেন, ‘আমরা খুবই উজ্জীবিত। আগের ম্যাচে আমরা দারুণভাবে ফিরে এসেছি। আশা করি, এই ধারা শেষ ওয়ানডেতেও ধরে রাখতে পারব। ’ কোচ স্টিভেন ম্যাঙ্গোঙ্গোর ভয়টাও আবার এ জায়গাতেই, ‘আমাদের ধারাবাহিকতা নেই। এক-দুজন ভালো করে।
কিন্তু পুরো দল একসঙ্গে ভালো করে না। ’
শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের চাওয়াটা অনুমান করতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়—টপ অর্ডারের কারও ব্যাট থেকে বড় রান। এখানে পরিবর্তনও আসছে। প্রথম দুই ম্যাচে অস্বচ্ছন্দ মমিনুলের জায়গায় আসছেন জহুরুল। রবিউল না সোহাগ গাজী—এই প্রশ্নটাও ঘুরপাক খাচ্ছিল কাল সন্ধ্যা পর্যন্ত।
শেষ পর্যন্ত যে-ই নামুক, সাকিবের মতো বাকি খেলোয়াড়দেরও ভুলে থাকতে হবে ২০১১ সালের স্মৃতি। সাকিব সেই চাপ এড়াতেই কিনা স্মৃতির পাখিটাকে উড়িয়ে নিয়ে গেলেন ২০১১-এরও পেছনে, ‘গতবারের আগ পর্যন্ত আমরা ভালোই খেলেছি এখানে। ২০০৯ সালে পাঁচ ম্যাচের চারটাই ভালোভাবে জিতেছি। আমাদের সেরা খেলা খেললে এবারও জেতা উচিত। ’।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।