আমি অতি সাধারন.... এখানে প্রদত্ত সাক্ষাৎকার গুলো ভারতের প্রখ্যাত দাঈ মাওলানা কালিম সিদ্দিকী সাহেবের কিতাব থেকে সংগ্রহকৃত।
মুহাম্মদ উমর:
১৯৬৪ সালে উত্তর প্রদেশ- ফতেহপুর জেলার রাজপুত(গৌতম) খান্দানে জন্ম। পিতার নাম ধনরাজ সিংহ গৌতম। এলাকার প্রভাবশালী ধনী লোক।
বাকীটা তাঁর মুখে শুনুন....
আমার প্রাথমিক,মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক আমাদের গ্রামে সমাপ্ত হয়।
পরে ননিতাল জেলার পনতননগরে বিএসি শেষ করি। ১৯৮৪ সালে আল্লাহ্ তায়ালা আমার হেদায়েতের ব্যবস্থা করেন। নতুন নাম হয় মুহাম্মদ উমর।
আমার বয়স যখন ১৫বছর তখন থেকে আমার মনে চিন্তা জাগত যে-আমাদের ঘরে পূজা পাঠের যে পদ্ধতি চালু আছে তা কতটুকু সত্য? আমরা যে হিন্দু এটা কেন? আমাদের বিশ্বাস বা আকিদা কি? আমি সব সময় চিন্তা করতাম। আমাদের মালিক কে? মৃত্যুর পর কি হবে? আমাদের পূজার যোগ্য কে? ৩৩কোটি দেবদেবীর পূজা কিভাবে সম্ভব? এমন অসংখ্য প্রশ্ন নানাদিক থেকে আমাকে অস্থির করে তোলে।
এর উত্তর জানার জন্যে প্রথমে আমার পরিবারের শরনাপন্ন হই । আমি আমার পরিবারের লোকদের নানাভাবে প্রশ্ন করতে থাকি। তারা আমাকে সন্তোষজনক কোন উত্তর দিতে পারে না। কারন তারা নিজেরাই নিজেদের ধর্ম সম্পর্ক জানতেন না। তারা আমাকে বুঝাতে চেষ্টা করে-বেটা তোমার বাপ দাদার ধর্ম ই তোমার ধর্ম।
আমি জানতে পারিনি যে বিশ্বের প্রাচীনতম ধর্ম হচ্ছে হিন্দু ধর্ম যাকে বিভিন্ন বেদের নামে স্মরন করা হয়। যা হোক আমি আমার পরিবারের লোকদের থেকে উত্তর না পেয়ে পন্ডিতদের কাছে যাই কিন্তু তারা ও কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। তাই আমি ধর্মীয় বইপত্র পাঠ করতে শুরু করি।
প্রথমেই আমি হিন্দু ধর্মের বই পত্র পড়তে থাকি। গীতা, রামায়ন, মহাভারত, বেদ-পুরান ইত্যাদী বই গুলো খুব মনোযোগের সাথে পড়ি।
তাছাড়া বিভিন্ন মনিষীদের জীবনী ও পড়তে থাকি। কিন্তু আমার প্রশ্নের পাল্লা ভারী হতে থাকে। ফলে আমি সিদ্ধান্তহীনতায় পড়ে যাই। আমি ভাবতে থাকি কিভাবে সত্যকে পাব? আমি সন্নাসী জীবন বেচে নেবার চিন্তাও করি।
১৯৮৪ সালের কথা।
আমার এক বন্ধু নাসির খান বাড়ী বিজনুরে, আমার হেদায়াতের উপলক্ষ হয়েছিল। আমি এক্সিডেন্ট করে হাসপাতালে ভর্তি হই। সেই সময়ে নাসিরের চারিত্রিক ব্যবহারে আমি এতই মুগ্ধ হই যে তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আমি তাঁকে জিগ্গেস করি এই চরিত্র কোথায় শিখেছে? সে জবাব দেয়, আমি মুসলমান আর আমাদের ধর্ম ইসলাম এই শিক্ষা দেয় যে বিপদে আপদে প্রতিবেশীর সহযোগীতা করতে হবে। তা না হলে আমার ভয় হয় হাসরের মাঠে যদি আমাকে পাকড়াও করা হয়!
এই কথায় আমি বেশী প্রভাবিত হই।
এবং ইসলাম সম্পর্কে প্রথম যে কথাটি জানতে পারি তা হলো-প্রতিবেশীর হক ও হাসরের মাঠের হিসাব কিতাব। এরপর নাসির খান এর সহযোগীতায় ইসলামী বিভিন্ন কিতাব পড়া শুরু করি। যখনই কুরআন শরীফের অনুবাদ পড়া শুরু করি আমার ভিতরে জমা থাকা বিভিন্ন প্রশ্ন একটা একটা নিভতে শুরু করে। আমার প্রতি আল্লাহ্ তায়ালার অসীম অনুগ্রহ ও দয়া বিনা বিসর্জন, চেষ্টা, সাধনা ছাড়া এতবড় নেয়ামত দান করেছেন।
ইসলাম গ্রহন করার পর প্রথম আমার বন্ধু বান্ধবদের চরম বিরোধিতার মুখে পড়ি।
পুরো ভার্সিটি জুড়ে হইচই পড়ে যায়। এমন কি বেরেলী থেকে প্রকাশিত উজালা নামে একটি পত্রিকা "গৌতম হলো মুসলমান" শিরোনামে লিখা ছেপে দেয়। আর.এস.এস ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের লোকেরা আমাকে তুলে নিয়ে মারধর করে। এবং শাসিয়ে বলে ২ দিনের মধ্যে আবার হিন্দু ধর্মে না ফিরলে মেরে ফেলবে। অবস্থার নাজুকতায় আমি ভার্সিটি থেকে পালিয়ে দিল্লী চলে যাই।
পরে ১৯৮৮ সালে জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়ায় এম.এ ভর্তি হই।
আলহামদুলিল্লাহ্ এখন আমি দাওয়াতের মেহনত করি। এই পর্যন্ত প্রায় ১০০ জনকে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছি এবং মুসলমান হয়েছে। কিন্তু যে জিনিস টা এখন আমাকে কষ্ট দেয় তা হল একদিকে ইসলাম যেমন একটি সত্য ধর্ম,শিক্ষাও পরম সুন্দর অথচ এর বিপরীতে মুসলমানদের সামাজিক ও চারিত্রিক অবস্থা বর্ননাতীত। এখন আমরা যদি সত্যিকার ইসলামের সৌন্দয্য অমুসলিমদের সামনে তুলে ধরতে পারি তাহলে দলে দলে অমুসলিমরা ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিবে ইনশ্আল্লাহ্।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।