আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আরব সিনেমা : ইসলামী গণজাগরণের আগে ও পরে

© এই ব্লগের সকল পোষ্ট,ছবি,থিম প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কোথাও বিনা অনুমতিতে প্রকাশ করা নিষেধ । ২০১১ সাল ছিল আরব বিশ্ব তথা মুসলিম ভূখণ্ডে ইসলামী গণজাগরণের বছর। তিউনিশিয়া থেকে শুরু হয়ে ঐ জাগরণের ঢেউ গিয়ে লেগেছে মিশর, বাহরাইন, লিবিয়া, ইয়েমেন এবং সৌদি আরবের মতো আরব দেশগুলোতেও। এসব দেশের জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে এসেছে। রাজনীতি বিশ্লেষকগণ এই গণজাগরণকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করেছেন।

সেগুলো নিয়ে তৈরি হয়েছে বহু চলচ্চিত্র। 'ইসলামী জাগরণ' বলতে প্রথমত বোঝায় ঐ অঞ্চলের জনগণ মুসলমান। দ্বিতীয়ত ঐ এলাকার জনগোষ্ঠি তাদের আশা আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইসলামী নীতিমালা বা শাসনব্যবস্থায় ফিরে যাওয়াকেও বোঝায়। এরকম ব্যাখ্যার পেছনে যুক্তি হলো সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে অনুষ্ঠিত অবাধ নির্বাচন। সেখানে দেখা গেছে জনগণ ইসলামী পক্ষগুলোকে রায় দিয়েছে।

তার মানে এসব দেশের জনগণ ইসলামী মূল্যবোধ ভিত্তিক শাসনব্যবস্থা চাচ্ছে। চলচ্চিত্র বিশ্লেষকমহলে এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে-এই গণজাগরণ কি বিপ্লব অধ্যুষিত আরব দেশগুলোর চলচ্চিত্রে নতুন কোনো অধ্যায়ের সূচনা করতে যাচ্ছে? কিংবা ইসলামী গণজাগরণ কি আরব চলচ্চিত্রে পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে? অন্যভাবে বলা যায় গণজাগরণ এসব দেশের চলচ্চিত্রে কী ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে? আরব চলচ্চিত্রের প্রধান ধারা গড়ে উঠেছে মূলত মিশরে। প্রচুর ফিল্ম তৈরি হয়েছে মিশরে এবং আরব বিশ্বে মিশরের ফিল্মের ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তাও ছিল। ১৯২৭ সালে "লায়লা' নামে প্রথম নির্বাক চলচ্চিত্র তৈরির মধ্য দিয়ে মিশরে চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজ শুরু হয়। বিংশ শতাব্দির প্রথমার্ধে সেখানে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি প্রতিষ্ঠিত হয়।

এরপর থেকে মিশরে চলচ্চিত্র একটি সাংস্কৃতিক শিল্পপণ্য হিসেবে পরিচিতি পায় এবং আরব সংস্কৃতি নির্ভর চলচ্চিত্র নির্মাণ ও তার বিস্তার ব্যাপকভাবে ঘটতে থাকে। বিগত কয়েক দশকে আরব দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়েও মেলোড্রামা টাইপের চলচ্চিত্র গড়ে ওঠে। তবে 'ইউসুফ শাহিনের' মতো কোনো কোনো চলচ্চিত্রকার রাজনৈতিক বিষয় নিয়েও চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। তিউনিশিয়ার চলচ্চিত্রও আরব দেশগুলোর মাঝে বেশ উল্লেখযোগ্য। সেই শুরু থেকে অন্তত ৬০০ চলচ্চিত্র সেদেশে নির্মিত হয়েছে।

তিউনিশিয়ার জনগণ এবং সামাজিক বিষয় নিয়েই বেশিরভাগ চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে। তিউনিশিয়ার চলচ্চিত্রগুলো আরব বিশ্বের বাইরেও জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। যেমন 'কামাল শরিফে'র 'আলামতে মালেকিয়াতে'র কথা বলা যায়। এছাড়াও বর্ণবাদ বিরোধী আরেকটি ফিল্মের নাম বলা যায়, সেটি হলো 'নাসের কাতারি'র 'সাফিরন'। ফ্রান্সে উত্তর আফ্রিকার অভিবাসী বা শরণার্থীদের নিয়ে ফিল্মটি তৈরি করা হয়েছে।

তিউনিশিয়ায় ডকুমেন্টারি ফিল্ম তৈরির প্রবণতা বেশি। বছরে চার-পাঁচটার বেশি কাহিনীভিত্তিক পূর্ণদৈর্ঘ চলচ্চিত্র তৈরি হয় না। কিন্তু প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রচুর তৈরি হয়। তিউনিশিয়ায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যপূর্ণ প্রচুর শ্যুটিং স্পট রয়েছে। বিদেশি অনেক চলচ্চিত্রকারও তিউনিশিয়ায় বছরে বহু ফিল্ম তৈরি করে থাকেন।

অন্তত ছয়টি চলচ্চিত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে সেখানে। ২০১০ সালে তিউনিশিয়ায় অন্তত একশ' টি প্রামাণ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। আরব দেশগুলোর মাঝে তিউনিশিয়ার চলচ্চিত্রকারগণ ফিল্ম নির্মাণের ক্ষেত্রে ভালোই দক্ষতা অর্জন করেছে। চলচ্চিত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণ। সমাজে যা কিছু ঘটে বা যা কিছু পালিত হয়- অর্থাৎ সংস্কৃতি, রীতি-নীতি, রাজনীতি ইত্যাদি সবকিছুই তুলে ধরা হয় চলচ্চিত্রে।

স্বাভাবিকভাবেই আরব চলচ্চিত্রে গত বছরের গণজাগরণ নিয়েই প্রামাণ্য চলচ্চিত্র এবং স্বল্পদৈর্ঘ চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে বেশি। "মুক্তি ২০১১: ভালো, স্বৈরাচারী, রাজনীতি' নামক ফিল্মটির কথা উল্লেখ করা যায়। ফিল্মটির টেকনিক্যাল দিকটির কথা বাদ দিয়েও কেবলমাত্র মিশর বিপ্লব কেন্দ্রিক বিষয়বস্তুর কারণে এটি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। 'আসমা' নামক আরেকটি ফিল্মের কথা বলা যায়। সামাজিক ধারার এই ছবিটি মিশরে সুস্থ ও সৃজনশীল চলচ্চিত্র ধারার ভবিষ্যত সম্পর্কে আশাবাদ জাগাতে পারে।

মিশরের বিশিষ্ট চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব 'আহমাদ আতেফ" বলেছেনঃ "ইতোপূর্বে মিশরে বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রই ছিল বেশি। কিন্তু ইসলামী বিপ্লবের পর মিশরের চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বদের উচিত এখন মিশরের বাস্তবতা, তাদের দেশের জনগণের চাওয়া পাওয়া এবং তাদের ভবিষ্যত নিয়ে কথা বলা, বিপ্লব থেকে প্রকৃত অর্জনের জন্যে গভীর চিন্তাভাবনা করা। " 'আলেক্সান্দ্রিয়া ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালে'র প্রেসিডেন্ট 'নাদের আদলি' শৈল্পিক তৎপরতায় সাময়িক স্থবিরতার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেনঃ 'বিপ্লবের উত্তাল প্রবাহ প্রশান্ত হবার পর চলচ্চিত্রের পরিস্থিতিও এখন শান্ত হয়ে আসবে এবং নিজেদের নতুন বীর সন্তানদের সনাক্ত করবে। ' রাজনৈতিক নতুন পরিস্থিতিতে মিশরের নতুন নতুন ফিল্ম কোম্পানীগুলোও তৎপর হয়ে উঠেছে ধর্মীয় ও সামাজিক চলচ্চিত্রের পাশাপাশি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে। 'রাহাব' কোম্পানী ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে আরব সমাজের জন্যে তারা ফিল্ম এবং সিরিয়াল তৈরি করবে।

তাদের ফিল্মের বেশিরভাগই হবে ইসলামী বিষয়বস্তু কেন্দ্রিক। অবশ্য আরব দেশগুলোতে চলচ্চিত্র ভূবনে ইরানী চলচ্চিত্রের নাম বেশি শোনা যাচ্ছে। ইসলামী দেশগুলোতে শ্লীল, শোভন ও সামাজিক ধারার চলচ্চিত্রের আদর্শ হিসেবে ইরানী চলচ্চিত্রকেই মানদণ্ড হিসেবে মনে করা হচ্ছে। উত্তর আফ্রিকার মুসলিম দেশগুলোতে স্বৈরাচারদের পতন চলচ্চিত্রকারদের সামনে নতুন ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণের অনন্য এক সুযোগ সৃষ্টি করেছে। 'ভীতির অবসান' একটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম।

তিউনিশিয়ার বিপ্লবী তরুণদের সম্পর্কে এই ফিল্মটি নির্মাণ করেছেন সেদেশের বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার'মুরাদ বিন শেখ'। তিউনিশিয়ার বিপ্লব সংক্রান্ত সবচেয়ে বড়ো এবং সর্বপ্রথম ফিল্ম হিসেবে চলচ্চিত্র সমালোচকগণ এই ফিল্মটির নাম নিয়ে থাকেন। ফিল্মটির পরিচালকও ফিল্মটিকে স্বৈরাচারমুক্ত নির্ভীক পরিবেশের ফল বলে মনে করেন। তিনি অন্যান্য নির্মাতাদের নিয়ে তিউনিশিয়া ন্যাশনাল ফিল্ম সেন্টার নির্মাণের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাদেঁর বিশ্বাস এই ফিল্ম সেন্টারটি গড়ে উঠলে তিউনিশিয়ার ফিল্মের ব্যাপক উন্নয়ন ও অগ্রগতি ঘটবে।

তিউনিশিয়ার বিখ্যাত অভিনেত্রী 'হিন্দ সাবরি' আরব দেশগুলোতে চলচ্চিত্রের উন্নয়নকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেনঃ ' আমি মনে করি ইসলামী ব্যবস্থায় শিল্পের কোনো সমস্যা নেই,কেননা এর উদাহরণ হলো ইরান,সেখানে ইসলামী সরকার ব্যবস্থা চালু থাকা সত্ত্বেও সিনেমার মতো শিল্পমাধ্যমটি ব্যাপক শক্তিশালী হয়েছে। " আরব চলচ্চিত্রকারদের কাছে ইরানী চলচ্চিত্র একটি আদর্শ নমুনা। এ কারণে ইরানী চলচ্চিত্রকারগণও আরব দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ গড়ে তুলতে এবং সম্পর্ক বিস্তারে আগ্রহী। এরিমাঝে যৌথ প্রযোজনায় ফিল্ম নির্মাণের লক্ষ্যে তিউনিশিয়ার চলচ্চিত্র সংস্থাগুলোর সাথে ইরানের সহযোগিতা চুক্তি হয়েছে এবং তাদের শিল্পীদের জন্যে প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজনকেও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্রহণ করা হয়েছে। তিউনিশিয়ার চলচ্চিত্র শিল্পীদের একটি দল ইরান সফর করেছেন এবং ইরানী ফিল্ম প্রোডাকশন্সের সুযোগ সুবিধাগুলোর সাথেও পরিচিত হয়েছেন।

এই সফরে দু'দেশই যৌথ প্রযোজনায় ফিল্ম তৈরি, যৌথ চলচ্চিত্র বাজার সৃষ্টি এবং তিউনিশিয়ায় ফিল্ম নির্মাণে ইরানী টেকনোলজির ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করেছেন। মিশর এবং ইরানের মাঝেও অনুরূপ সফর বিনিময় হয়েছে। মিশরে ইরানী চলচ্চিত্র প্রদর্শনীও হয়েছে। কায়রোর শিল্পী কলাকুশলীগণ ইরানী ফিল্মকে ব্যাপকভাবে স্বাগত জানিয়েছেন। এরপর উভয় দেশই ভবিষ্যতে পারস্পরিক সহযোগিতার ব্যাপারে আগ্রহ ব্যক্ত করেছে।

তাই ইসলামী ফিল্মের ভবিষ্যত উজ্জ্বল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞগণ। (আপডেট হবে আরো ) তথ্যসূত্র:ইন্টারনেট  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।