আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জামাত-শিবিরের বর্তমান ক্যাডারদের ধরণ, রিক্রুট পদ্ধতি এবং শিবিরের দেশ বিরোধী নীতির কারণ ( অবশ্য পঠ্যব্য )

জামাত-শিবিরের বর্তমান কার্যকলাপ দেখে অনেকেই প্রশ্ন করছেন এদের মানসিক সুস্থ্যতা নিয়ে! যে দেশের মাটিতে খেয়ে পরে বড় হচ্ছে কেমন করে সে দেশের ক্ষতি তারা করতে পারে একথা ভেবেও অবাক হচ্ছেন কেউ কেউ। কেউ আবার তাদের পথকেই সঠিক পথ বলছেন! তাদের অর্থের উৎস এবং বিভিন্ন জামাতী প্রতিষ্ঠানের তালিকা নিয়ে আগে অনেক আলোচনায় হয়েছে। তাই আমি আর সেদিকে যাচ্ছি না। আজকে আপনাদের সাথে জামাত-শিবিরের বর্তমান ক্যাডারদের ধরণ, রিক্রুট পদ্ধতি এবং শিবিরের দেশ বিরোধী নীতির কারণ সম্পর্কে কিছু আলোচনা করবো। তাই বলে কেউ আবার আমাকে ছাগু বিশেষজ্ঞ মনে কইরেন না তো আসুন চলে যায় মূল আলোচনায়: জামাত-শিবির সারাদেশে তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে।

এসব প্রতিষ্ঠান থেকে শুধু কর্মী পরিচালনায় নয় অর্থ জোগানও দেওয়া হয়। সমাজের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন মাধ্যমে জামাত-শিবির তাদের জাল বিছিয়ে রেখেছে। স্বাধীণতার পর থেকে অত্যন্ত সুকৌশলে, দেশীয় বেঈমানদের সহযোগীতায় এবং আমাদের প্রধাণ দুই রাজনৈতিক দলের স্বেচ্ছাচারীতার কারণে এরা সহজেই এসব প্রতিষ্ঠান করতে পেরেছে। তবে আমার আজকের পোস্টের বিষয় তাদের অতীত নয় বর্তমান। জামাতী প্রতিষ্ঠান গুলোতে যারা কাজ করে তাদের ৯৯%ই জামাত-শিবির ক্যাডার।

আর বাকি ১% ক্যাডার না হলেও জামাতী সুপারিশ ছাড়া কারোই চাকরী হয়না। তবে বর্তমানে খুব কাছ থেকে দেখেছি, যে সব শিবির ক্যাডার চাকরী পাবার আগে মাঠ পর্যায়ে ভয়ঙ্কর ছিলো তারা চাকরী পাবার পর কোর্ট-টাই-জুতা-মোজা লাগিয়ে আর মাঠ পর্যায়ে যেতে চায় না শিবিরের যে সব ক্যাডাররা দল রিক্রুট করে তারা সবাই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী পরিবার গুলো থেকে এসেছে। কিছু আছে আবার সুবিধাবাদী। এরা বিভিন্ন পাবলিক-প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি, মাদ্রাসা, কলেজ এর ছাত্র। কেউ কেউ ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান এবং কর্মস্থলেও রিক্রুটের কাজ করে যাচ্ছে।

মসজিদ, চায়ের দোকান, ক্লাসরুম, হোস্টেল, হল, মেস, খেলার মাঠ সবজায়গায় এরা কৌশলে বেকুবদের ব্রেইন ওয়াশ করতে থাকে। তবে বর্তমানে দেশের তরুণ প্রজন্ম জামাত-শিবির বিষয়ে সচেতন হওয়ার কারণে তারা আগের মতো সহজে নতুন সাথী পাচ্ছে না। আর পুরাতন ক্যাডারদের বেশীর ভাগই তাদের বানানো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা, চাকরী নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে গেছে। বিয়ে-শাদী করে অধিকাংশই এখন সংসারী। এরা আর আগের মতো মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে না।

তাই মাঠ পর্যায়ের এই কর্মী সংকটের জন্য তারা বেছে নিয়েছে দেশের ধর্মভীরু, সরল-সহজ মানুষদের। তারা মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে ধর্ম নিয়ে নোংরা খেলা খেলছে। জামাত-শিবির ক্যাডাররা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল গুলোতে তাদের কার্যক্রম বিশাল আকারে চালিয়ে যাচ্ছে! তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করে তাদের দলে ভিড়াচ্ছে। তারা নিজেদেরকে ইসলামের একমাত্র ধারক-বাহক হিসাবে প্রচার করে কিছু স্বল্প শিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত, কুশিক্ষিত, মুর্খ মানুষকে দলে টানছে। আর এই ব্রেইনওয়াশ করা উন্মাদের দলই হচ্ছে বর্তমান শিবির! এদের কাছ থেকে ভাংচুর, হত্যা, হরতাল, মিথ্যাচার, ধর্ম ব্যাবসা ছাড়া আর কি আশা করা যায়! রাজাকারদের ফাঁসির সাথে সাথে এই সব নব্য রাজাকারদের বিরুদ্ধেও ব্যাবস্থা নিতে হবে।

আমার মনে হয় যত রাজাকার একাত্তরে ছিলো একাত্তর পরবর্তী সময়ে তার সংখ্যা আরো বেড়ে গেছে! শিবির নাম দিয়ে নতুন রাজাকার রিক্রুট করা হচ্ছে! রিক্রুটে নিয়োজিত শিবিররা বিভিন্ন কৌশলে সমাজে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাচ্ছে। এরা মূলত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোকে টার্গেট করে বেশী ছড়িয়ে যাচ্ছে। প্রথমে এরা ছাত্র হিসাবে এলাকায় মেস ভাড়া নেয়। তারপর স্থানীয় মসজিদ, খেলার মাঠ, চায়ের দোকান, মোড়ে চলতে থাকে তাদের গোপন প্রচারণা। এরা ধর্মভীরু মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে তাদের ব্রেইন ওয়াশ করতে সহজেই সক্ষম হয়।

কারণ আমাদের দেশের মানুষ ধর্মের কথা অন্যের কাছ থেকেই শুনে অভ্যস্ত। আসলে কোরআন কি বলছে, হাদিসে কি লেখা আছে সেটা তারা নিজেরা কখনো যাচাই করার চেষ্টা করে না। কোরআনের বাণী, আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেওয়ার নাম করে শিবির ক্যাডাররা তাদের মওদুদী মতবাদ সহজেই জনগণের মাথার ভেতর ঢুকিয়ে দিচ্ছে। আর এর সাথে যুক্ত হয়েছে সাঈদীর মতো ভন্ড ধর্ম প্রচারকের ধর্ম ব্যাবসা আর ফতোয়া। শিবিররা এমন ভাবে কথা বলে যেন মনে হয়, আল্লাহ পাক সাঈদী, গু. আজম, কসাই কাদের, নিজামী, কামরুজ্জামান, মুজাহিদ, বাচ্চু রাজাকারদের হাতে জান্নাত-জাহান্নামের টিকিট ধরিয়ে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন! আর এদের বিরুদ্ধে কথা বললেই তারা ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলার অভিযোগ তোলে! দেশের কিছু সংখ্যক মানুষও তাদের কথায় বিভ্রান্ত হয়ে তাদের দলভারী করছে! কিন্তু তাদেরকে এটা কে বোঝাবে যে রাজাকারদের বিরুদ্ধে কথা বলা আর ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলা এক নয়! শিবির ক্যাডারদের সাধারণত কিশোর বয়স মানে স্কুল লেভেল থেকেই ব্রেইন ওয়াশ শুরু করা হয়।

ছোট থেকেই তাদেরকে ভয় আর কঠোর শাসনের মধ্যে রাখা হয়! তাদের নেতারাই যে সব এটা তাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তাদের নেতাদের বাণী প্রচার করা হয় ইসলামের বাণী বলে। নেতাদের আদেশকে বলা হয় ইসলামের আদেশ। নাউজুবিল্লাহ! ধর্মভীরু ছোট ছোট কিশোরদেরকে ধীরে ধীরে পরিণত করা হয় আজ্ঞাবাহক গেলমানে! তাদের মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় যে জামাতের নেতারাই দেশে ইসলাম রক্ষা করছে! সুতরাং এই নেতারা না থাকলে ইসলাম বিপন্ন হয়ে যাবে! আর এ বিশ্বাস থেকেই তারা জীবন বাজি রেখে জান্নাত পাবার আশায় রাজপথে জনগণের বিরুদ্ধে নেমে যাচ্ছে। এটা তাদের কাছে অন্যায় নয়, কারণ তাদের ন্যায়-অন্যায়ের মূল ভীতটাই তো পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে।

এরা কোন প্রকার যুক্তির ধার ধারে না। নেতাদের কথাই এদের কাছে সব। কথায় কথায় এরা ধর্মের বুলি আওড়ায়। আবার ধর্মের নিয়ম-কানুন গুলো ভাংতেও এরা সবার চেয়ে এগিয়ে। এরা একদিকে ইসলামের কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করে আবার অন্য দিকে রাজাকারদের পুজা করে! তাদের দেবতার মতো মানে! জামাত-শিবিরদের এতদূর অগ্রসর হওয়ার জন্য মূলত দুইটা জিনিস আমার কাছে দায়ী মনে হয়েছে।

প্রথমটা হলো, আমাদের নিজ ধর্ম ইসলাম সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান, গবেষণা এবং সঠিক ধর্ম প্রচারণার অভাব। দ্বিতীয়টা হলো, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসের প্রচারণার অভাব। আমার এই কথা গুলো হয়তো অনেকের মনপুত: নাও হতে পারে। তবে আমি কারো উপর চাপিয়ে দিচ্ছি না। এটা সম্পূর্ণ আমার ব্যাক্তিগত মতামত এবং অবশ্যই ধ্রুবক নয়।

বাংলাদেশের মানুষ যে ধর্মপ্রাণ এটা নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু আগেই বলেছি, আমরা ধর্মের কথা অন্যের কাছ থেকে শুনতে আগ্রহী। কোন তথ্য যাচাই করে দেখার অভ্যাস এখনো আমাদের হয়নি। আর যতদিন আমরা নিজেরা আমাদের ধর্মের ব্যাপারে সঠিক তথ্য না জানবো ততদিন জামাত-শিবির তাদের ষড়যন্ত্র চালিয়ে যেতে সক্ষম হবে। তাই ধর্ম ব্যবাসাকে বন্ধ করতে সবাই ইসলাম সম্পর্কে জানুন।

ইসলামের সঠিক বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দিন। সমাজে এখনো অনেক ভালো আলেম-হুজুর আছেন যারা আপনাদের সহায়তা করতে পারে। এছাড়াও তথ্য প্রযুক্তির যুগে যে কোন কিছু যাচাই করা, জানা, সত্য উন্মোচন করা এখন সবার কাছেই সহজ হয়ে গেছে। বাংলা কোরআনও এখন সহজেই পাওয়া যায়। মোবাইল, কম্পিউটার, ওয়েবসাইট ব্যবাহার করেও কোরআন পড়া যায়।

তাই সকল সুযোগ কাজে লাগিয়ে আগে ধর্মকে জানুন, মানুষকে জানান তাহলেই দেখবেন জামাত-শিবিরকে তাদের আস্তানা গুটিয়ে ভাগতে হবে। কে না জানে প্রচারেই প্রসার। আর এখানেই আমরা সবচেয়ে পিছিয়ে আছি। আমরা সবসময় নিজেদের লেজ টানাটানি নিয়ে ব্যাস্ত থাকি! আর আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বরা ৫ বছর পর পর দেশটাকে ইজারা নিয়ে কেউ নিজের বাবার স্বপ্ন ভাঙিয়ে লুটপাট করছে, কেউ স্বামীর স্বপ্ন ভাঙিয়ে লুটপাট করছে! এরা সবাই রাজনৈতিক দলের নেতা বটে, কিন্তু গণমানুষের নেতা হতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু আর জিয়ার নামে দেশে যতগুলা প্রতিষ্ঠান আছে ততগুলো হাসপাতালই নাই মনে হয়।

প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বঙ্গবন্ধু আর জিয়ার নাম যে কোন কিছুতে লাগানোতেই ব্যাস্ত! বঙ্গবন্ধু আর জিয়া যেন কোন কর্পোরেট গ্রুপ অফ কোম্পানীর ব্রান্ড! কিন্তু যে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা এ দেশ পেয়েছি স্বাধীণ বাংলাদেশে খুব কমই তার সঠীক ইতিহাস প্রচার হয়েছে। সবাই নিজ নিজ স্বার্থ অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিক্রিত করে ব্যবহার করেছে। যার ফলে ৭১ এর পর যাদের জন্ম তারা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আর এ সুযোগে জামাত-শিবিররা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পেরেছে। যতদ্রুত সম্ভব আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস প্রচারে উদ্যোগ নিতে হবে।

এজন্য সমাজের সকল স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। একটা জাতির জন্মের ইতিহাস কেউ যেন বিক্রিত করতে না পারে সে ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। তাহলে দেশের জন্ম থেকেই জামাত-শিবিরের অবস্থান সাধারন মানুষ জানতে পারবে। ৭১ এ জামাত-শিবিরের কর্মকান্ড যদি মানুষ ঠিক মতো জানতে পারে তাহলে ১০০% গ্যারান্টী দিয়ে বলছি জামাত-শিবির বাংলাদেশ থেকে অচিরেই নির্মুল হয়ে যাবে। আসুন, সবাই মিলে রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতে যে আন্দোলন শুরু করেছি সেখান থেকেই জামাত-শিবিরের সকল অপচেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই।

এরা আমাদের দেশের শত্রু, গণমানুষের শত্রু। এরা তো দেশের জন্মই চায়নি! স্বাধীণ বাংলার মাটিতে এদের অস্তিত্ব কোন ভাবেই থাকতে পারে না! রাজাকার গুলার ফাঁসি হলেই এদের অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যাবে। তাই ইসলামের ভেকধারী কুলাঙ্গার রাজাকারদের দ্রুত ফাঁসির দাবিতে সবাই সোচ্চার হন, জামাত-শিবিরদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। নয়তো কোন একদিন দেখা যাবে, মুক্তিযুদ্ধ করার অপরাধে মুক্তিযোদ্ধাদেরই বিচার করা হচ্ছে জামাতী ট্রাইবুনালে! পোস্ট অলরেডী অনেক বড় হয়ে গেছে! জানি না কত জন এই পর্যন্ত পড়েছেন। তবে যারা এতদুর কষ্ট করে পড়েছেন লেখাটা ধন্যবাদ তাদেরকে।

আমি যতটুকু পেরেছি সহজ ভাষায় কথা গুলো বোঝানোর চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনারা কমেন্টে মতামত দিয়ে আপনাদের দৃষ্টি ভঙ্গি জানাবেন। কারো ভিন্ন মত থাকলে থাকতেও পারে। তবে অনুরোধ, কেউ তর্কের খাতিরে কোন মন্তব্য করবেন না। আর এই আলোচনার বাইরে কোন বিষয় নিয়েও অহেতুক তেনা পেঁচাবেন না।

বানান ভুল জনিত কারণে কোন ভুল হলে শুধরে দিবেন আশা করি। অবশ্য পঠ্যব্য এবং সংগৃহীত । সৌজন্যে : মাগুর ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.