আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিদ্যুত সত্যিই বড়ো অস্বস্তিতে রেখেছো আমাদের!

খুব জানতে ইচ্ছে করে...তুমি কি সেই আগের মতনই আছো নাকি অনেকখানি বদলে গেছো... রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো নিয়ে সরকার বিপদে আছে। ঠিকমতো জ্বালানী তেলের সরবরাহ না থাকায় এসব কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে যেতে পারছেনা। আর সরকার বলছে রেন্টাল পাওয়ার কেন্দ্রগুলোর কারনে জৈব জ্বালানীতে সরকারের ভর্তুকী বেড়ে যাচ্ছে। রেন্টাল ক্ইুল রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মান সরকারের সবচেয়ে বড় ভুল সিদ্ধান্ত ছিল বলেই প্রতীয়মান। ছোট ছোট বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে আসা বিদ্যুত খুব বেশি সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারেনি।

কুইল রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্রের উদ্যোক্তারা বলছে ‘তাদের বিদ্যুত উৎপাদনের পূর্ণ ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও জ্বালানী তেলের অভাবে তারা প্রডাকশনে যেতে পারছেনা“। ফলশ্রুতিতে বিনিয়োগ নিয়ে এসব কেন্দ্রের নির্মাতাদের মধ্যে আশংকা কাজ করছে। তবে সরকার মনে করছে‘ সরকারের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল কারন সরকার যখন এ সিদ্ধান্ত নেয় তখন বিশ্বজুড়ে জ্বালানী তেলের দাম কম ছিল। তাই তখন এধরনের প্ল্যান্ট নির্মাণ অর্থনৈতিকভাবে সহজ ও লাভজনক ছিল। কিন্তু পরিবর্তীত বিশ্বের জ্বালানী তেলের মূল্য আকাশ ছোয়া হয়ে যায়।

২০০৯ সালে যেখানে তেলের মূল্য ছিল ব্যারেল প্রতি ৫৯ ডলার। ২০১১ সালের শেষ নাগাদ সে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি দাড়ায় ১২০ ডলারে যা দ্বিগুন। তাই তেল নির্ভর বিদ্যুত কেন্দ্র চালিয়ে নেয়া সরকারের জন্য বোঝাস্বরুপ। তাই সরকার ধীরে ধীরে এসব বিদ্যুত কেন্দ্র চালানোর আগ্রহ ও আর্থিক সহযোগীতা থেকে নিজেদেরকে গুটিয়ে নিবে। তবে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন কমে আসলেও তা বিনিয়োগকারীদের জন্য ক্ষতিকর কোন ব্যাপার থাকবেনা বা নেই।

কেননা সরকার এসব কেন্দ্রগুলোতে ক্যাপাসিটি প্যামেন্ট দিয়ে উদ্যোক্তাদের ক্ষতির দিকটা পুষিয়ে নিবে। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের মতে, এই মুহুর্তে ২০টির মতো রেন্টাল কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট রয়েছে। এবং এ সবগুলো কেন্দ্রই উৎপাদনে এসেছে কিন্তু মেশিনারিজ সমস্যার কারনে অনেক কেন্দ্র তাদের উপাদন ধরে রাখতে পারেনি। অন্যদিকে তেল সরবরাহ কমিয়ে দেয়ার কারনে এসব কেন্দ্র কেবলমাত্র পিক আয়ারে উপাদনে রয়েছে। বিশেষকরে এই সেচ মৌসুমে রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো ভালোভাবেই তাদের উৎপাদন ধরে রাখতে পারবে।

কারন প্রয়োজনের তুলনায় এ মৌসুমে ১৩-১৪০০ মেগাওয়াট বেশি বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। সেচ মৌসুম শেষে হয়তো অনেক কেন্দ্রই অনুৎপাদিত থেকে যাবে। বর্তমানে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোর মধ্যে বন্ধ রয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ কুইক রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্র, ডিপিএ কুইক রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্র, শিকল বাহার রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্র, ৪০ ও ৫৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন খুলনা রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্র, আমনুরা রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্র ও ঠাকুরগাও রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্র। ফার্নেসওয়েল ভিত্তিক কাটাখালি এনপিএস ৫০ মেগাওয়াট, ভেড়ামারা ৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র, শুধুমাত্র পিক আওয়ারে উৎপাদনে রয়েছে। নোয়াপাড়া ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রটি ২৪ মেগাওয়াটে নেমে এসেছে।

নোয়াপাড়া ১০৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রটি তেলের অভাবে ৮৯ মেগাওয়াট ও ডিজেলভিত্তিক ভেড়ামাড়া ১০৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রটি ৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উপাদন করছে (সূত্র যুগান্তর)। সেচ মৌসুমে অতিরিক্ত ১৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উপাদন করতে গিয়ে এসব রেন্টাল কুইক রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্রে সরকারকে ভর্তুকি গুনতে হবে ৫৫৭ কোটি টাকা। ৭০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করে ২০০৭ সালের অক্টোম্বরে সরকার বিদ্যুত সেক্টরে“ক্রাশ প্রোগ্রাম“ গ্রহন করে। আর এ প্রোগ্রামের আওতায় ছোট বড় ৩৩টি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মানে বিভিন্ন কোম্পানীর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। এসব কেন্দ্র থেকে উপাদিত বিদ্যুত চড়া দামে প্রতি ইউনিট ৯.৭ থেকে ২২ টাকা দরে ক্রয়ে সরকার চুক্তিনামায় সই করে।

কুইক রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো থেকে ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত জাতিয় গ্রিডে সংযোজনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। যার মধ্যে মেঘনা ঘাট বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে ২০০ মেগাওয়াট, ঘোড়াশাল কেন্দ্র থেকে ১০০ মেগাওয়াট, খুলনা থেকে ১১৫ মেগাওয়াট, আশুগঞ্জ থেকে ৮০ মেগাওয়াট, কেরানীগঞ্জ কেন্দ্র থেকে ১০০ মেগাওয়াট, সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে ১০০ মেগাওয়াট, আশুগঞ্জ থেকে অতিরিক্ত ৫৩ মেগাওয়াট, জুলদা থেকে ১১৫ মেগাওয়াট, এবং কাটাখালি থেকে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের চূড়ান্ত লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। বাংলাদেশের বিদ্যুত ব্যবহারের কনজুমার রেট ঘন্টায় মাত্র ১৩৬ কিলোওয়াট যা পৃথিবীর সর্বনি¤œ বলে ইনডেক্স‘এ রেকর্ডভুক্ত। বাংলাদেশের বিদ্যুত সরবরাহের সিস্টেম লস ও অবর্ননীয় লোড শ্যাডিং জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় শুধুমাত্র লোডশেডিংয়ের কারনে বাংলাদেশের বছরে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার লস হয়।

যা জিডিপি প্রবৃদ্ধির উপর প্রভাব পড়ছে ০.৫ শতাংশ হারে । মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ট্রান্সমিশন ও সরবরাহজনিত কারনে এক তৃতীয়াংশ বিদ্যুতে অপচয় হচ্ছে। যা দিয়ে ঢাকা শহরের মতো ঘনবসতি পূর্ণ এলাকায় ২৪ ঘন্টা নিরবিচ্ছন্ন বিদ্যুতের যোগান দেয়া সম্ভব। এ মুহুর্তে সৌরালোক থেকে বিদ্যুত পাওয়া যাচ্ছে ১৫ মেগাওয়াট, বায়ু থেকে ১.৯ মেগাওয়াট বিদ্যুত উপন্ন হচ্ছে। আগামি তিন বছরের মধ্যে মোট ব্যবহৃত বিদ্যুতের ৫% শতাংশ বিদ্যুত নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে উপন্ন করা হবে বলেও সরকারের কর্মপরিকল্পনা রয়েছে।

এ মুহুর্তে সরকার সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় আছে বিদ্যুত নিয়ে। বিদ্যুত নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে হরহামেশাই তীর্যক মন্তব্য করতে দেখা যাচ্ছে। যা সরকারের ভেতরের দুর্বলতাকে স্পষ্ট করছে। যদিও সরকারের আগ্রহের কোন কমতি নেই। বিদ্যুত নিয়ে সরকারের আন্তরিকারও অভাব নেই।

কিন্তু তারপরও সরকার পেরে উঠতে পারছেনা। এর মুল কারন হচ্ছে সরকারের পলিসিগত দুর্বলতা। শুরু থেকে রেন্টাল কুইক রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্র গড়ে তোলার যে প্রয়াস নিয়েছিল সরকার তা সর্ববৈ কোন কাজেই আসেনি। উপরুন্ত সরকারকে হাজার হাজার কোটি টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে। আর সাবসিডি কমাতে গিয়ে বিদ্যুতের সীমাহীন মুল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

যা জনগন ভালোভাবে নেয়নি। ফলশ্রুতি একদিকে সরকার জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে অন্যদিকে বিদ্যুত নিয়ে সরকার বেসামাল হয়ে উঠছে। সব মিলিয়ে বিদ্যুত সেক্টরে এখন হযবরল অব¯হা বিরাজ করছে। আর এ অব¯হা থেকে উত্তোরনে যে সময়ের প্রয়োজন এসরকারের মেয়াদও অতো নেই। আর এসব কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুত উৎপাদনে সরকার যতোবেশি মনোযোগী ঠিক ততবেশি অমনোযোগী ছিল প্রচলিত বৃহদ বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো নিয়ে।

ঠিকমতো রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে বড় বড় বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো একের পর এক বন্ধ হতে লাগলো। ফলে বিদ্যুত উৎপাদন করেও সরকার লোডশেডিংয়ের কবল থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি। বেশি বিদ্যুত উপাদন করেও বিদ্যুতের চেহারার কোন পরিবর্তন আনতে পারেনি। যদিও সরকার বলছে তারা ক্ষমতায় এসে অধিক হারে নতুন নতুন বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার ফলে বেশি বিদ্যুত উপাদন করেও লোড শেডিং থেকে জনগনকে পরিত্রান দেয়া যায়নি। অতচ পরিসংখ্যান বলে সরকার ক্ষমতায় বসে অনির্দিষ্টকালের জন্য নতুন বিদ্যুত সংযোগ দেয়া বন্ধ রেখেছে।

যা দু‘মাস আগে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। যাই হোক বিদ্যুত সত্যিই সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে। তার উপর বিদ্যুতের যারা চাকরি করেন তারা রাতারাতি বিত্ত ভৈবের মালিক হয়। এতো পরিমানে র্দুনীতি বিদ্যুত সেক্টরে যা কল্পনাকেও হার মানায়। বিদ্যুতের একজন মিটার রিডারের আলিশান বাড়ির গল্প হরহামেশাই পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

দেশের বিদ্যুতের চেহারার পরিবর্তন না হলেও বিদ্যুতের চাকর বাকরদের চেহারা মাশাল্লা দিনদিন ফুলে ফেপে বেড়েই চলছে। তাই বলবো বিদ্যুত তুমি সত্যিই সত্যিই বড়ো অস্বস্তিতে রেখেছো আমাদের। হাসান কামরুল: ভূতত্ত্ববিদ ও কলামিষ্ট। যধংধহশধসৎঁষমবড়ষড়মরংঃ@মসধরষ.পড়স ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.