রাজশাহীর তানোরে ‘চান্দুড়িয়াহাট পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি’ স্থানীয় শিব নদীর একটি অংশ দখলে নিয়েছে। এখন কৃষকদের সেই নদী থেকে পানি কিনে বোরো ধানের জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে। সমিতির কর্মকর্তাদের দাবি, আইন অনুযায়ী তাঁরা রসিদ দিয়ে পানি বিক্রি করতে পারেন।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, নওগাঁর মান্দা বিলের আত্রাই নদীর পুরোনো ধারা থেকে উৎপত্তি শিব নদীটি তানোরের ভেতর দিয়ে এসে পবা উপজেলার মহানন্দাখালীতে এসে বারনই নাম ধারণ করেছে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০ কিলোমিটার।
সম্প্রতি সমিতির নামে নদীর তানোর উপজেলার চান্দুড়িয়া ইউনিয়ন এলাকার অংশটি কিছু লোক দখলে নিয়ে মাছ চাষ করছে। তারা কৃষকদের আর নদীর পানি ব্যবহার করতে দেয় না। বাধ্য হয়ে নদীর তীরের কৃষকেরা তাদের কাছ থেকে পানি কিনে ধান চাষ করছে।
তানোর উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ক্ষুদ্রাকার পানিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) তানোর উপজেলায় সাতটি সমিতি রয়েছে। এর একটি হচ্ছে চান্দুড়িয়া সমিতি।
তারা শিব নদীর চান্দুড়িয়ার অংশটি দখলে নিয়ে মাছ চাষ করছে।
গত সোমবার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সমিতির লোকজন শিব নদীর ওপরে নির্মিত চান্দুড়িয়া সেতুর নিচে টং করে নদী পাহারা দিচ্ছে। টঙের নিচে নৌকায় সমিতির কর্মচারী আনারুল ইসলামকে পাওয়া যায়। আনারুল বলেন, সমিতি গত দুই মাস আগে এই নদীতে মাছ ছেড়েছে। এখন কৃষকেরা নদী থেকে পানি নিয়ে সেচ দিলে মাছের জন্য ক্ষতি হবে।
সেই জন্য কৃষকদের কাছে থেকে অল্প করে টাকা নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, তাঁর হাত দিয়ে তিনি মাত্র ৭০০ টাকা আদায় করেছেন।
নদী থেকে সেঁউতি দিয়ে খেতে পানি সেচ দিচ্ছিলেন তানোরের দেওয়াতলা গ্রামের কৃষক শুকচান আলী ও তাঁর স্ত্রী নূরজাহান বেগম। শুকচান বলেন, তাঁর ১০ কাঠা পরিমাণ জমির জন্য ইতিমধ্যে সমিতির লোক বাবলু মেম্বারের হাতে ২০০ টাকা দিয়েছেন, আরও দিতে হবে। একটু দূরেই একই এলাকার সুফিয়া বেগম (৫৫) ও তাঁর মেয়ে নাসরিনকে (৩৫) একইভাবে সেঁউতি দিয়ে জামিতে সেচ দিতে দেখা যায়।
তাঁদের জমিও এক বিঘার নিচে। সুফিয়া বেগম বলেন, পানির জন্য ইতিমধ্যে তিনি ৩০০ টাকা দিয়েছেন। আরও দিতে হবে।
সমিতির খোঁজ নিতে তানোর উপজেলা মৎস্য কর্মকতার কার্যালয়ে গেলে কর্মকর্তা খালিদুজ্জামান বলেন, নদী কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি। তবে এলজিইডির সমিতি আছে তারা সেখানে হয়তো মাছ চাষ করছে।
তানোর উপজেলা প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, এখানে তাদের সাতটি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি রয়েছে। তারা শুধু আমাদের সমিতির অন্তর্ভুক্ত থেকে কাজ করবে। নদীর পানি বিক্রি করতে পারবে এমন আইনের কথা তাঁর জানা নেই।
এ ব্যাপারে সমিতির সভাপতি এমরান আলী বলেন, সমিতির নিয়ম অনুযায়ী তাঁদের পানি বিক্রি করার অধিকার রয়েছে। এ জন্য তাঁদের রসিদ দিয়ে পানির টাকা নেওয়ার বিধান রয়েছে।
তবে কৃষকেরা সবাই এলাকার লোক বলে তাঁরা টাকা নিচ্ছেন না বলে দাবি করেন। সরেজমিনে গিয়ে টাকা নেওয়ার প্রমাণ পাওয়ার কথা বললে তিনি আরও ভালো করে তথ্য নিতে বলেন।
তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী জিয়াউল বাসেত বলেন, নদীর পানি কেউ বিক্রি করতে পারবে না। তাঁর জানামতে, ওই নদী কোনো সমিতিকে সেভাবে ব্যবহারও করতে দেওয়া হয়নি। স্থানীয় কৃষকেরা যদি এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করেন, তাহলে তিনি তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।
copy paste from prothom alo ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।