আমি একজন পর্যটন কর্মী। বেড়াতে, বেড়ানোর উৎসাহ দিতে এবং বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে গুম আতঙ্ক। মহাজোট সরকারের ক্ষমতা নেয়ার পর থেকে অনেকে গুম হয়েছেন। বিএনপি নেতা চৌধুরী আলম গুম হওয়ার মধ্য দিয়ে এ সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে।
সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে গাড়ির চালকসহ ‘নিখোঁজ’ হন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী। এক সময়ের ডাকসাইটের এ ছাত্রনেতার ‘নিখোঁজ’ হওয়ার খবরে কাল দিনভর দেশে ও দেশের বাইরের প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে ছিল আলোচনা-ক্ষোভ-আতঙ্ক।
সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুক, টুইটার, ব্লগসহ সবখানে এ নিয়ে আলোচনা উঠে আসে। তবে সব ছাপিয়ে উঠে আসে আতঙ্ক। সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে রাজনীতির সাথে জড়িত সবাই আতঙ্কে রয়েছেন।
কখন, কে কিভাবে ‘নিখোঁজ’ হন তা নিয়ে আতঙ্ক চার দিকে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও রাজনীতি বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়গুলো সিরিয়াসলি দেখা উচিত। সরকারের কোনো বাহিনী যদি এর সাথে জড়িত থাকে এবং তা সরকার না জানে তাহলে তা আরো ভয়াবহ ব্যাপার।
তিনি বলেন, নিখোঁজ বা গুম যা-ই বলা হোক না কেন এটি দেশের ভেতর অসন্তোষ তো বাড়াবেই, দেশের বাইরে রাষ্ট্রের ইমেজ নষ্ট করবে। তাই সরকারকে এটি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে।
এ ধরনের অপরাধ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এর অন্যতম কারণ আগে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে সরকারের তরফে সে গুলোর দোষীরা শনাক্ত হয়নি। কোনো বিচার হয়নি। যদি এর বিচার হতো, সরকার যদি কেসগুলো মেটাতে পারত তাহলে এমনটি হতো না।
তিনি বলেন, সরকারের উচিত পুরনো কেসগুলো দ্রুত মিটিয়ে ফেলা, দায়ীদের খুঁজে বের করা এবং তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা। নইলে অতীত ও বর্তমানের চেয়ে ভবিষ্যতে এ পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে।
তার মতে, সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিষয়গুলো জানা উচিত। যদি সরকারের কোনো বাহিনী জড়িত থাকে তাহলে সরকারকে সেটিও যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে খারাপ হচ্ছে তার প্রমাণ এসব সমস্যা। তবে এটা কারা ঘটাচ্ছে? এটা এখনো পরিষ্কার নয়। এককভাবে কেউ করছে নাকি সঙ্ঘবদ্ধভাবে কেউ এ ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত।
সরকারকে এটা খুঁজে বের করতেই হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইলিয়াস আলী ‘নিখোঁজ’ হওয়ার পর বিএনপি ও তার সহযোগী বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা উদ্বিগ্ন। তাদের মধ্যে গুম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে পারিবারিকভাবে চাপের মুখে পড়ছেন, রাজনীতি থেকে সরে আসার চাপও রয়েছে কারো কারো ওপর।
বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা মনে করছেন, সরকার বিরোধী মত দমনের জন্য এমন কৌশল বেছে নিয়েছে।
এটি জারি রেখে নিজেরা ক্ষমতায় থাকতে চায় অন্তত আরো একটি মওসুম।
তবে অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলছেন, এটা সরকার যদি করে থাকে, তাহলে ভালো কোনো কৌশল হতে পারে না। যে হারে এ ধরনের অনিভিপ্রেত ঘটনা ঘটছে সেটি যে সরকারি দলের নেতাকর্মীদের ক্ষেত্রেও ঘটবে না তার নিশ্চয়তা কে দেবে? তাই সরকারের নিজের স্বার্থেই তাদের সেখান থেকে সরে আসতে হবে।
গতকাল বিকেলে সাবেক একজন ছাত্রনেতার স্ত্রী ফেসবুকে লিখেছেন, এ ধরনের ভয়াবহ ও আতঙ্কের খবর নিয়ে তিনি টেনশনে আছেন। তিনি বলছেন, এ রকম কোনো দেশে চলতে থাকলে সেখানে বাস করা খুবই কঠিন এবং এ ধরনের অনিরাপদ জীবন খুবই ভয়ঙ্কর।
তিনি বিএনপির ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ কর্মসূচির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, সে সময় তার প্রতিটি সেকেন্ড কেটেছে অনিশ্চয়তা এবং আতঙ্কের মধ্য দিয়ে। এখনো একই অবস্থা চলছে।
তিনি বলেন, তার স্বামী এখনো ঘরের বাইরে গেলেই টেনশনে থাকেন। ফিরে আসবেন তো? এ অনিশ্চয়তা তার মানসিক অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, এটা এক ধরনের রাষ্ট্রীয় টর্চার।
এমন দেশ কে চেয়েছিল? যে দেশে জননিরাপত্তা নিয়ে এতটা উদ্বিগ্ন থাকতে হবে?
সামহয়্যার ইন ব্লগে ইরফান আহমেদ বলেছেন, সারা দেশ যেন আজ নরকপুরী। এই দেশে কেউ এখন আর নিরাপদ নন। ধীরে ধীরে বিভীষিকাময় রক্ষী বাহিনীর দিনগুলোতে ফিরে যাচ্ছে মাতৃভূমি বাংলাদেশ।
আবু সালেহ লিখেছেন, সেনগুপ্ত নাটকের দৃষ্টি অন্য দিকে সরাতেই সরকার ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে।
ব্লগার মিস্টার জবরদস্ত লিখেছেন, আমার মনে হয় আমরা ইলিয়াস আলীকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলেছি।
ব্লাক উড বলেছেন, পুরো দেশেই এখন গুম আতঙ্ক। ব্যক্তি ইলিয়াস নয়, রাজনৈতিক অবস্থানে ইলয়াস এখন বড় মাপের নেতা। যখন ইলিয়াস নিখোঁজ হয়ে যান তখন আমরা আতঙ্কিত না হয়ে পারি না।
এভাবেই বিভিন্ন মাধ্যমে চলছে, লেখা, মন্তব্য ও সমালোচনা। তবে সরকারের তরফে এখন পর্যন্ত কোনো কিছু খোলাসা করা হয়নি।
যখন ইলিয়াসের সিলেট হাউজে চলছে কান্নার রোল, তখন ঢাকায় যুব গণসংবর্ধনা নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি এ বিষয়ে কিছু বলেননি।
দেশের মানুষের নিরাপত্তার প্রশ্ন যখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তখন সরকারের চুপ থাকা কিংবা দোষ চাপানোর রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসা উচিত বলেই মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাসউদ।
তিনি বলেন, এভাবে কোনো রাষ্ট্র চলতে পারে না। চলে না।
সরকারকে অবশ্যই গুম হওয়া সব ব্যক্তির খবর দিতে হবে। এটা তার দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।