আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইরি-বোরো চারার সংকট!!বীজের অপ্রতূলতা,কৃষি উপকরনের উচ্চ মূল্য!!বিদ্যূতের অভাবে সেচ বাধাগ্রস্হ!!এবারের মৌসুমে অর্জিত হবে কি উৎপাদনের লক্ষমাত্রা??..

আমি মনে প্রাণে একজন মুসলিম। ঘৃণা করি ধর্ম বিদ্বেষী নাস্তিকদের এবং ধর্ম ব্যবসায়ী ছাগু তথা উগ্রবাদীদের। ক্যঁচাল পছন্দ করিনা । । পুব প্রকাশিত অতিরিক্ত ঘন কুয়াশার চাদরে আচ্ছাদিত প্রকৃতির বিরুপ প্রভাবে নষ্ট হয়ে গেছে অধিকাংশ কৃষকের বীজতলা।

কুয়াশার কারনে উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ জেলার কৃষকের বীজতলায় ধানের চারা লালচে হয়ে শুকিয়ে মরে গেছে যার কারনে অনেক কৃষক উচ্চ মূল্য দিয়ে বীজ কিনে ধান বপন করতে বাধ্য হয়েছেন। যারা অতিরিক্ত বীজতলা তৈরী করেছিলেন এবং যাদের বীজতলা কুয়াশার বিরুপ প্রভাব থেকে রক্ষা পেয়েছে তারা নিজেদের জমির বীজ রেখে বাকীটা বিক্রী করে দিয়েছেন। বীজ সংকটের কারনে তারা প্রতি বিঘা বীজের চারা ৩০০ টাকার পরিবর্তে ১২০০-২০০০ টাকা (বিঘা) পর্যন্ত বিক্রী করেছেন। আর যে সমস্ত কৃষকের নিজস্ব বীজ নষ্ট হয়ে গেছে তাদের গুনতে হয়েছে বীজের জন্য বাড়তী দাম যা তাদের উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে। আর যারা টাকা দিয়েও বীজ কিনতে পারেননি তারা ধানের পরিবর্তে অন্য সশ্য আবাদের প্রস্তুতি নিয়েছেন।

এতে করে ধানী জমি এবার কমে গেল এবং কৃষকেরা অন্যান্য আবাদের দিকে ধাবিত হচ্ছে। গত ইরি-বোরো মৌসুমে কৃষক ধানের বাম্পার ফলন ফলিয়েও ধানের বাজার মূল্য কম থাকায় লোকসান করে ধান বিক্রী করেছেন। এরপর আমন মৌসুমে ধানের উৎপাদনের লক্ষমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় বাজারে চালের দাম একটু বেড়েছে সাথে ধানের দামও কিছুটা বেড়েছে। কৃষকেরা আশায় বুক বেধে প্রস্তুতি নিচ্ছিল ইরি-বোরো মৌসুমের। বিএডিসির বীজ সল্পতার পরেও বাজারে বিভিন্ন কোম্পাণীর বীজ কিনে তারা বীজতলা তৈরী করেছিলেন।

অনেকে নাম সস্বর্স কোম্পাণীর বীজ কিনে প্রতারিতও হয়েছেন কারন অনেক বেনামী কোম্পাণীর বীজ বাজারে এসেছিল যার অন্কুরোদগম ক্ষমতা কম হওয়ায় বীজ থেকে চারা কম গজিয়েছে যার ফলে কৃষক প্রতারিত হয়েছে। উল্লেখ্য দুই কেজি ধানের মূল্য ৩২ টাকা হলেও বীজ বিক্রেতারা ২ কেজি ধানের বীজের প্যকেট কৃষকের কাছে বিক্রী করেছে ২২০-২৪০ টাকা দরে!!.. জনৈক কৃষকের প্রতিক্রিয়াঃ আমার পরিচিত একজন কৃষক যার নাম মোঃ রফিকুল মিয়া যিনি ১৮ বিঘা জমির মালিক এবং ১৮ বিঘাতেই তিনি ধান চাষ করে থাকেন প্রতি মৌসুমে। এবছর তিনি ৩ বিঘা জমিতে ধান চাষ করছেন বাকী ১৫ বিঘা জমি বর্গা দিয়েছেন অন্য চাষীকে কারন জানতে চাইলে বললেন গতবছর ধান চাষ করে অনেক টাকা লোকসান করেছেন যার কারনে এবছর শুধুমাত্র নিজের সংসারে চাইলের জন্য তিন বিঘা জমিতে ইরি-বোরো চাষ করছেন বাকী ১৫ বিঘায় গম, পাট, এবং ভুট্টা চাষের জন্য বর্গাচাষীকে বর্গা দিয়েছেন। আরেকজন ধান চাষী মফিজউদ্দিন তিনি বললেন ”বাহে হামার খারার জন্য ধানের আবাদ করতাছি অন্য জমিতে পাট আবাদ করুম!! বেছনের যেই দাম!! হামার বেছন কুয়ায় নষ্ট হয়ে গেছে…হাজার টেকা দিয়া বেছন কিনা এক বিঘা মাটি আবাদ করার সাধ্য হামার নাই!!” বিস্তৃত দিগন্তে সবুজের হাতছানি.. বিস্তৃত দিগন্তে সবুজের হাতছানি আগের মতই আছে তবে মাঝে মাঝে চোখ আটকে যাবে। যেখানে জমির পর জমিতে সবুজ ধানের ক্ষেত ছিল গতবছরও এবার সেইসব জমিতে ধানের আবাদের সাথে পাট ও ভুট্টা যোগ হয়েছে।

কিছুটা হলেও এবছর ধানের উৎপাদন কম হচ্ছে দেশের প্রধান কৃষি অন্ঞ্চল উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে.. যা জাতীয় খাদ্য সষ্য উৎপাদনের লক্ষমাত্রা অর্জনের অন্তরায়। আশন্কা করা যাচ্ছে উৎপাদন কম হলে হু-হু করে বেড়ে যাবে চালের বাজার সাধারন জনগনের ভোগান্তি বাড়ার আশন্কা!!... সেচ সংকটে দিশেহারা কৃষক!!.. জ্বালাণী তেলের দাম বৃদ্ধি এবং বিদ্যূতের বাড়তী দাম দিয়েও কৃষক যখন জমিতে সেচ দিতে গিয়ে বিদ্যূৎ বিভ্রাটের সন্মুখিন হন তখন কৃষকের কি মাথা ঠিক থাকে??.. সেচের অভাবে জমি ফেটে যাচ্ছে বাস্তবে কিন্তু কৃষকের মুখে প্রতিচ্ছবি যেন তাদের হ্রদয়টা ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে… সেদিন বগুড়া থেকে রংপুরে যাচ্ছিলাম হানিফ পরিবহনের একটি বাসে। পথিমধ্য গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগন্ঞ্জ উপজেলার বালুয়াহাট নামক স্হানে পৌছুতেই দেখি মহাসড়কের উপর কাঠের গোলাই ফেলে রাস্তা অবরোধ করেছে কৃষকেরা। বাস থেকে নেমে জিজ্ঞাসা করলাম লোকজনকে তারা বললো চারদিন ধরে বিদ্যূৎ দেয়া হচ্ছেনা তাদের এলাকায় যার ফলে জমিতে সেচ দিতে না পারায় জমি ফেটে যাচ্ছে তাই দিশেহারা কৃষক মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। অবশ্য অবরোধ ৩০ মিনিটটের বেশি স্হায়ী হয়নি কারন হাইওয়ে পেট্রোল পুলিশ এসে তাদের তাড়িয়ে দেয় মহাসড়ক থেকে।

একটি পরিসংখ্যান জমির পরিমান ১ বিঘা (৩৩ শতাংশ) ১. বীজের চারা ক্রয় =১৮০০ টাকা ২. হালচাষ =৭০০ টাকা ৩. সেচ বাবদ =১৪০০ টাকা ৪. সার টি এস পি ১৫ কেজি* ২৩ =৩৪৫ টাকা ৫. সার পটাস ৫ কেজি* ২৫ =১২৫ টাকা ৭. সার জিপসাম ৫ কেজি* ৮ =৪০ টাকা ৮. সার ইউরিয়া ৫০* ২০ =১০০০ টাকা ৯. বেছন বপন কৃষাণ ৫ জন*২৮০ =১৪০০ টাকা ১০. আগাছা নিধন লেবার দুইবারে ৮জন* ২৮০টাকা করে = ২২৪০টাকা ১১. বালাইদমন বাবদ =৪০০ টাকা ১২. ধানকাটা কৃষানের মজুরী ১৪০০- ২২০০টাকা পর্যন্ত গড়ে =১৭০০ টাকা ধরলাম। ১৩. ধান মাড়াই = ৪০০ টাকা। ১৪. অন্যান্য খরচ =৬০০টাকা ১ বিঘা(৩৩ শতাংশ)জমিতে ধান চাষ করতে সর্বমোট খরচ=১২৭৫০ টাকা। এক বিঘা জমিতে ভালো ফলন হলে ২০ মণ ধান হবে যা শুকিয়ে ১৯ মণ টিকবে। তাহলে ১২৭৫০/১৯=৬৭১ টাকা মণ কৃষকের সম্ভাব্য উৎপাদন খরচ হবে।

প্রতি মণ ধানে চাল উৎপন্ন হয় ২৬ কেজি তাহলে এক বিঘায় চাল হয়১৯*২৬=৪৯৪ কেজি যার উৎপাদন খরচ হয় ১২৭৫০/৪৯৪ কেজি=২৬ টাকা+ মিলার চার্জ ৩টাকা=২৯ টাকা। কৃষকের ১ কেজি চাল উৎপাদন খরচ যদি ২৯ টাকা হয় তাহলে ভোক্তাকে কত টাকায় কিনতে হবে?? অবশ্যই হাত বদল হয়ে ৮-১০ টাকা কেজিতে বেশি দামে??.. (এই পরিসংখ্যানটি রংপুর বিভাগের কয়েকটি জেলার হিসাবে যেখানে শ্রমিকের মজুরী ২৮০ টাকা করে ধরা হয়েছে। অন্যত্র যদি শ্রমিকের মজুরী বেশী হয় তাহলে উৎপাদন খরচ আরো বাড়বে আর শ্রমিকের মজুরী কম হলে উৎপাদন খরচ কমবে) শেষ কথাঃ [si]কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। কৃষক রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে ফসল ফলান নিজের বাঁচার তাগিদে আমাদের খাদ্য জোগান দিয়ে থাকেন। কৃষক যদি ফসল ফলিয়ে উপকৃত হন তবেই টিকে থাকবে কৃষক ও কৃষি।

আর যদি ক্রমাগত লোকসান হতে থাকে তখন কৃষক দিশেহারা হয়ে বিকল্প কিছু চাষাবাদ করবে যা আমাদের জন্য ভয়ংকর পরিস্হিতির উদ্রেক হতে পারে। মধ্যসত্বভোগী মিলাররা বরাবরই কৃষকের কাছে থেকে কম দামে ধান কিনে মজুদ করে এবং বাজারে কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করে মুনাফা লোটে আর মাঝখান থেকে ক্ষতির স্বিকার হয় কৃষক এবং ভোক্তা। এইসব মিলারদের মজুদদারী করতে অর্থের যোগান দিয়ে থাকে কিছু বেসরকারী ব্যংক। তন্মধ্য ইসলামী ব্যংক অন্যতম। অথচ সহীহ বুখারীতে বলা আছে কোন খাদ্য দ্রব্য দাম বাড়ানোর উদ্দেশ্য মজুদ করা হারাম!! অথচ ইসলামের সাইনবোর্ড লাগিয়ে ইসলাম পরিপন্হী কাজ করছে তারা।

এইসব বিষয়ে সরকারকে সঠিক নজরদারী করতে হবে তবেই উপকৃত হবে কৃষক এবং ভোক্তা। সরকারী কত্তৃপক্ষের উদাসীনতার দায়ভার কি জনগণ বহন করবে??...  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৯ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।