আমি চাই শক্তিশালী স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ
কঠিন শর্তে অবশেষে পাওয়া যাচ্ছে আইএমএফের ১০০ কোটি ডলার ঋণ
দুই ডজনেরও বেশি কঠিন শর্ত মেনে অবশেষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ১০০ কোটি ডলার ঋণ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এসব শর্তের মধ্যে এক ডজন শর্ত আবার চলতি বছরের মধ্যেই পূরণ করতে হবে। এ জন্য আইএমএফের পক্ষ থেকে ‘গুণে গুণে’ সময়সীমাও বেঁধে দেয়া হয়েছে। শর্ত পূরণ করতে না পারলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে ঋণের কিস্তি ছাড়করণ। প্রায় ১৪ মাস ধরে চেষ্টা-তদবির করে আইএমএফের কাছ থেকে এই ঋণটি পেতে সক্ষম হলো সরকার।
ওয়াশিংটন সময় গত বুধবার আইএমএফের বোর্ডসভায় মোট ৯৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের ঋণটি অনুমোদন করা হয়। এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটির (সম্প্রসারিত ঋণসুবিধা বা ইসিএফ) আওতায় প্রাপ্ত এই ঋণসহায়তা তিন বছরে কয়েকটি কিস্তিতে প্রদান করা হবে। প্রথম কিস্তিতে বাংলাদেশকে দেয়া হবে ১৪ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার। ইসিএফ আওতায় বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ ঋণ দেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছে আন্তর্জাতিক এই অর্থলগ্নিকারী সংস'াটি।
বাংলাদেশকে দেয়া আইএমএফের উল্লেখযোগ্য শর্তের মধ্যে রয়েছে- আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে এখানেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে তেলের দাম বাড়াতে হবে।
আগামী জুনের মধ্যে আন্তর্জাতিক একটি নিরীক্ষা ফার্ম (অডিট ফার্ম) দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট কার্যক্রম চালাতে হবে। কমিয়ে আনতে হবে কর অবকাশ সুবিধা এবং এ খাত থেকে আয় করতে হবে জিডিপির শূন্য দশমিক ৫ ভাগ পরিমাণ অর্থ (যা বাংলাদেশী মুদ্রা প্রায় সাত হাজার টাকা)। ব্যাংকগুলো তার রেগুলেটরি ক্যাপিটালের সর্বোচ্চ ২৫ ভাগ অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে। জুনের মধ্যে সংসদে অনুমোদন করতে হবে ভ্যাট আইন। একই সময়েই স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচুয়ালাইজেশন প্রক্রিয়াও সম্পূর্ণ করতে হবে।
কমিয়ে আনতে হবে ভর্তুকি, সরকারের ব্যাংক। হস্তক্ষেপ করা চলবে না সুদহার ও বৈদেশিক মুদ্রাবিনিময় হারের ওপর। করতে হবে বাণিজ্য উদারীকরণ।
ঋণের শর্তগুলো পূরণ করা হচ্ছে কি না তা প্রাথমিকভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য আইএমএফের পক্ষ থেকে একটি টিমও পাঠানো হচ্ছে আগামী শনিবার। দুই সদস্যবিশিষ্ট এই টিমের সদস্যরা হচ্ছেন মিস্টার টনি ওবিসেসান ও মিস্টার নিহাল ফার্ন্ডানডোপুলি।
তারা মূলত এনবিআর ও শেয়ারবাজার সম্পর্কিত সংস্কার কর্মসূচি খতিয়ে দেখবেন।
আইএমএফ থেকে কঠিন শর্তে বাংলাদেশ কেন ঋণ নিচ্ছে- এ ব্যাপারে গতকাল সচিবালয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে। তিনি বলেছেন, এই শর্ত আইএমএফ আমাদের দেয়নি। আমিই এই শর্তের বিষয়গুলো আইএমএফকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলাম। কারণ এসব শর্তের কথা আমাদের ‘রূপকল্প’, ‘ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা’ ও আমার তিনটি বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করা ছিল।
আর শর্তগুলোর মেনে নেয়ায় দেশে আরো উন্নয়ন হবে বলে তিনি দাবি করেন।
এ দিকে ঋণ ছাড়করণের বিষয়টি উল্লেখ করে আইএমএফের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সামষ্টিক অর্থনৈতিক সি'তিশীলতা ফিরিয়ে আনা, বাইরের অবস'ানকে সুসংহতকরণ এবং প্রবৃদ্ধি ধারাকে আরো শক্তিশালী করতেই বাংলাদেশকে এই সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এই কর্মসূচি চলা কালে সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে তারা রাজস্ব পরিসি'তির উন্নতি, আর্থিক খাতের পুনর্জীবন, সামাজিক ও উন্নয়ন খাতে ব্যয় বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত সম্পদ আহরণ, বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো ঘাটতি মোকাবেলা, বিনিয়োগমুখী রফতানিতে প্রণোদনা প্রদান এবং কর্মসংস'ান বৃদ্ধিতে কাজ করে যাবে।
বোর্ডসভার পর সংস'াটির ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দায়িত্বে থাকা আইএমএফের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মিস্টার নায়োকি শিনোহারা এক বিবৃতি উল্লেখ করেন, বাণিজ্য শর্তের নেতিবাচক অভিঘাত, তেলের মূল্যবৃদ্ধি, অবকাঠামো সম্পর্কিত আমদানি এবং সংঙ্কলানমুখী নীতির কারণে ২০১০ সালের শেষ দিক থেকে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর চাপ জোরদার হয়েছে। অতি সম্প্রতি বাইরের চাহিদা কমে যাওয়া ও তেলের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের লেনদেনের ভারসাম্য পরিসি'তি আরো দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং এর সাথে যোগ হয়েছে রাজস্ব ও মূল্যস্ফীতির চাপ।
বিবৃতি আরো বলা হয়েছে, সামষ্টিক অর্থনৈতিক সি'তিশীলতা ফিরিয়ে আনা, বাইরের অবস'ান শক্তিশালীকরণ এবং আরো অধিকতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য বাংলাদেশকে নীতি সমন্বয় ও কাঠামোগত সংস্কারকাজে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। কর্তৃপক্ষ (সরকার) এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং যদি প্রয়োজন হয় এ কর্মসূচিতে সার্থক করতে যথোপযুক্ত পদক্ষেপও নেবে। এই কর্মসূচির আওতায় কর নীতি ও প্রশাসন, সরকারের আর্থিক ব্যবস'াপনা এবং আর্থিক খাতের নজরদারি শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতিকে আরো কঠোর করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সরকারি ঋণ কমিয়ে আনা এবং সামাজিক ও উন্নয়ন খাতে ব্যয় বাড়ানোর জন্য কর প্রশাসনকে আধুনিকায়ন ও ভর্তুকিকে কমিয়ে আনা হবে। একই সাথে একটি শিথিল কর হার (সুদহার নিয়ন্ত্রণ না করা) এবং উদার মুদ্রাবিনিময় ব্যবস'ার (মুদ্রাবিনিময় হারের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ না করা) সহায়তায় মুদ্রানীতিকে আরো কঠোর করতে হবে।
মূল্যস্ফীতিকে কঠিনভাবে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য যা যা করা দরকার বাংলাদেশ ব্যাংক তাই করবে বলে আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। একই সাথে আরো একটি লক্ষ্য হচ্ছে বাণিজ্য উদারীকরণ ত্বরান্বিত করা এবং বিনিয়োগ পরিবেশকে আরো উন্নত করা।
এ ধরনের ধীর কিন' বলপূর্বক পদক্ষেপ নেয়ায় আশা করা যায় কর্তৃপক্ষের (সরকার) নেয়া কর্মসূচির কারণে ভারসাম্যহীনতা কমবে এবং উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত সহায়তা পাওয়া সহজ হবে এবং এতে বাংলাদেশের লেনদেনের ভারসাম্য মধ্যমেয়াদে একটি টেকসই পথে এগিয়ে যাবে।
সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিসি'তির ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে আইএমএফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ১৮ মাস ধরে বাংলাদেশে সামষ্টিক অর্থনৈতিক চাপ জোরদার হয়েছে। জ্বালানি তেলের ব্যয় মেটানোয় কমে গেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং ঘাটতি দেখা দিয়েছে লেনদেনের ভারসাম্যে।
রফতানি চেয়ে আমদানি বেড়েছে অনেকখানি। আর এসব কারণেই চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) কমে হবে সাড়ে ৫ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আইএমএফ ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে যেসব শর্ত দিয়েছে, সেগুলো তার দেয়া। এসব শর্ত বাস্তবায়ন হলে দেশের ভালো হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে আইএমএফের ঋণপ্রাপ্তি প্রতিক্রিয়ায় তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এই ঋণ পাওয়ায় আমি খুবই খুশি হয়েছি। এর জন্য দীর্ঘ ১৪ মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে।
আইএমএফের কঠিন শর্তের ব্যাপারে তিনি বলেন, আইএমএফ যেসব শর্ত দিয়েছে, এগুলো আমারই দেয়া। ওদের সাথে বসে আমি এসব শর্ত ঠিক করেছি।
শর্তের কারণে দেশের অর্থনীতিতে কোনো প্রভাব পড়বে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এগুলো বাজেটেও ছিল।
তাই এতে নেতিবাচক কোনো প্রভাব পড়বে বলে আমার মনে হয় না। বরং এগুলো বাস্তবায়ন হলে ভালো হবে।
আইএমএফের শর্ত সময়মতো পূরণ করতে না পারলে ঋণ না পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ব্যাপারে মন্তব্য জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এটি তো হতেই পারে। তারা শর্ত দেবে, সেগুলো বাস্তবায়ন না করলে ঋণ দেবে না- এটিই স্বাভাবিক।
তবে আমরা সময়মতোই সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারব।
সংসদে বিষয়টি ওঠানো হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সবাই অবহিত আছেন। তার পরও প্রসঙ্গটি সংসদে তোলা হবে।
রিপোর্টারঃ সৈয়দ সামসুজ্জামান নীপু
http://www.dailynayadiganta.com/details/41084
******************************
স্রেফ সময় মত গ্যাস-কয়লা তথা জ্বালানি খাতে দেশের স্বার্থে চুক্তি না করা এবং তা সময় মত উত্তোলিত না হওয়াতে নতুন কোন স্থায়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হয়নি। আর সরকারও বিদ্যমান বিভিন্ন কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার না করাতেও এগুলো পূর্ণ উৎপাদন করতে পারছে না।
কেবলই কুইক রেন্টাল বিদ্যুতে ঝুকে। এমনকি নিয়োগ দেওয়া কোম্পানীর জন্য দায়মুক্তিও দেওয়া হয়। পরিণাম বিগত এক বছরে স্রেফ এই কুইক রেন্টালের জন্যই মোট ২০ হাজার কোটি টাকা ভর্তূকি দিতে হয়েছে। একেতো ভর্তূকি মূল্যে তাদের ডিজেল সরবারাহ। আবার তাদেরকে(কুইক রেন্টাল কোম্পানী) লাভ দিয়ে জনগণের কাছে ১৫ টাকা ভর্তূকী দিয়ে বেচতে হয়েছে।
দুইটি বড় কোম্পানীই হাসিনার আস্থাভাজন দলীয় ব্যাক্তি। একটি হচ্ছে সামিট গ্রুপ এবং অন্যটি ওরিয়ন গ্রুপ। এর জন্য একটি ভিডিও দেখা যেতে পারে;
Click This Link
আর ঐ দিকে রফতানী কিছু বাড়লেও প্রবাসী বাংলাদেশীদের রেমিটেন্স কমে গেছে। ফলে আমদানী ব্যায় মেটাতে প্রয়োজনীয় মার্কিন ডলারের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যদিও এটা দীর্ঘস্থায়ী না কিন্তু সরকারকে বিশ্বব্যাংক, আই.এম.এফ, এডিবি সহ বিশ্ব স্বীকৃত সংস্থা(কম সুদের হার) ঋণ দিতে চায় না।
আর ঐ দিকে পদ্মা সেতু নিয়ে কেলেংকারীতে বিশ্বব্যাংকও বেকে বসেছে। উল্টো বিশ্বব্যাংককে হাসিনা ঝাড়ি দিয়েছে। আর এখন কানাডার পুলিশ বলছে কন্সালটেন্সি ফার্ম এসললভিন র্দূনীতিগ্রস্থ! কোন দিকেই যখন কিছু হচ্ছিল না তখন সরকার দেশের সার্বভৌমত্ব বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়ার চিন্তা ভাবনা শুরু করে;
Click This Link
এই নিয়ে রীতিমত কমিটি গঠনরে কথা বলা হয়;
Click This Link
আর সর্বশেষ শোনা যায় হাসিনা নাকি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন;
Click This Link
এই সার্বভৌমত্ব বন্ধ রেখে ঋণ খুবই মারাত্নক ঝুকি পূর্ণ। একেতো উচ্চ সুদের হার(৫-৭%) তার উপর একেবারেই সময় মত কিস্তি শোধ করতে হয়। একটু হেরফের হলেই রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে।
তখন আর তাদের ঠেকানো যায় না। আমরা দেখেছি যে কিভাবে গ্রীসকে ইইউ কঠিন শর্তে ১৩০ বিলিয়ন ইউরো ঋণ মঞ্জুর করেছে। যদিও গ্রীস অতিরিক্ত সোশ্যাল বেনিফিটের কারণে অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে সে আমাদের মত অত র্দূনীতিগ্রস্থ নয়। কিন্তু স্রেফ বিদ্যুৎ খাতের জন্য আমাদের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। যখন সার্বভৌমত্ব বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়ার উপক্রম তখন এই আই.এম.এফ এর কঠিন শর্তে ঋণ মঞ্জুর কিছুটা হলেও আশার আলো।
অন্তত সুদের হার কম ফলে কিস্তি শোধে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আশা করি তাদের কিস্তি সহ শর্তাদি সঠিক ভাবে পালন করে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত দাতাদের আস্থা ফিরে পাব। তাই তথাকথিত সার্বভৌমত্ব বন্ধকীর বিনিময়ে ৫০ কোটি ডলারের ঋণ প্রকল্পর চিন্তা বাদ দেওয়া হয়। এই ঋণ নেওয়া মরার উপর খড়গের ঘা! সরকারের নিকট জোর দাবী এই Sovereign Bond ঋণ যেন কোনমতেই না নেওয়া হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।