আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নির্বোধে মাথায় কাঁঠাল ভাংগা আর একজন ক্লুলেস স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি কাজে যাবার আগে আরাম করে কিছুক্ষন টিভি দেখি। এই সময়ই হলো সত্যিকারের ফানটাইম। বিশেষ করে বাংলাদেশের টিভিতে যে সকল খবর দেখায় তা আসলেই উপভোগ্য। যেমন আজকের সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের খবর - আসিফ নজরুলের এরশাদকে শ্রেষ্ঠ শাসকের সার্টিফিকেট দেওয়ার টকশো. মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর ইন্টারপোল দর্শন আর একটা পাবলিক ওপিনিওন। শুরু করি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বয়ান নিয়ে।

কার টাকা কে নেয় - ব্লকমেইল আর হাইজ্যাকের গল্পটা যেভাবে বললেন - তাতে অনেক পাজলের পিস মিসিং এই সামান্য বিষয়টা ধরা কি খুবই কঠিন। মানুষের কতটা আইকিউ লাগবে মন্ত্রী সুরঞ্জিত বাবুর গল্পের ফাঁকফোকরগুলো ধরতে? সামান্যই। কিন্তু হু কেয়ারস। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মন্ত্রী হিসাবে প্রথম কাজ ছিলো লোকগুলিকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করা - কারন আগের অনুমতি ছাড়া সরকারী গাড়ী সন্ধ্যার পর ব্যবহার নিষিদ্ধ। সরকারী কর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতার সাথে দূর্নীতির যে অপূর্ব সমন্বয় ঘঠেছে এই ঘটনা তারএকটা প্রমান।

তার উপরে উনি গ্রামের মাতব্বরের মতো নিজের ছেলেদের সালিশ নিজেই করার সিদ্ধান্ত নিলেন - তাইলে দেশে আর পুলিশের দরকার কি? এই ঘটনাকে একদল মানুষ ষড়যন্ত্র ইত্যাদি বলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চেষ্টা করবে। আরেকদল এই নিয়ে নানান রকমের থিয়োরী তৈরী করে জনগনের কাছে নিজেদের গ্রহনযোগ্যতা বাড়াতে চাইবে। প্রকৃতপক্ষে এরা কেউই এর প্রতিকার দেখতে চাইবে না। কারন যারা এই ঘটনা নিয়ে মজাদার গল্প বানিয়ে প্রচার করবে - তারা কখনই শুনতে চাইবে না কিভাবে ভাংগা সুটকেস থেকে কিভাবে লঞ্চের বহর বের হয় - এরা জানতে চাইবে না ওয়েটিং প্রিন্স অভ বাংলাদেশ কোথা থেকে বিপুল অর্থ পাচ্ছে যা দিয়ে লন্ডনে সপরিবারের বসবাস করছে আর চিকিৎসা করাচ্ছে। এই দুইদলই সাধারন মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে কাজে ব্যস্ত।

কেনই বা করবে না - যে দেশের সাধারন মানুষ আসলেই ক্লুলেস। তারা আসলেই জানে না কোথায় কি হয়। পরে দেখলাম - আসিফ নজরুল বলছেন এরশাদই ছিলেন প্রকৃতপক্ষে একজন ভাল শাসক এবং এই দুই নেত্রী থেকে অবশ্যই ভাল। অনেক মানুষ প্রশ্ন করে স্বৈরশাসক বিশ্ব বেহায়া চরিত্রহীন একটা চোর কিভাবে আবার রাজনীতিতে ফিরে আসে - তার উত্তর দিয়েছেন জনাব আসিফ নজরুল। আসিফ নজরুলেরা নিজেদের বিশেষ ধরনের মানুষ মনে করে - যা সাধারন মানুষের বুদ্ধি বিবেচনাকে সহজেই হেয় করার সাহস যোগায়।

বিগত সকল নির্বাচনে যে সমকল ভোটার এরশাদকে ভোট না দিয়ে দুই নেত্রীকে ভোট দিয়েছে - উনি অবলীলায় সেই সকল ভোটারদের বিচক্ষনতাকে খাটো করে দেখালেন। কেনইবা দেখাবেন না - কারন সাধারন মানুষ জানেই না - ভোট দিলে কি হয়। ভোট পেয়ে নির্বাচিত ব্যক্তিবর্গের দায়দায়িত্ব কি - তা জানার মতো জ্ঞান তারা পায়নি বা দেওয়া হয় না। সবশেষে দেখলাম মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বাচ্চু রাজাকারকে ধরার বিষয়ে ইন্টাপোলের ভেলকি দেখালেন। এই পর্যন্ত ইন্টারপোল কোথাও কোন বড় ধরনের গ্রেফতার করতে পেরেছে কিনা জানি না - তবে বাংলাদেশ ৪০ বছর ধরে ইন্টারপোলকে চাঁদা দিয়েই যাচ্ছে - কিন্তু এরা একজন ফেরারী আসামীর বিষয়েও সরকারকে সহযোগীতা দিতে পারেনি।

যদি তা হতোই - তবে এতদিনে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসির বিষয়টা শেষ হয়ে যেতো। পুলিশ বাহিনী গত ডিসেম্বর থেকে বাচ্চু রাজাকারের উপর নজরদারী করছে। সে পালিয়ে গেলো পুলিশের চোখে ধুলা দিয়ে - আর তার জন্যে পুলিশের কাউকে জবাবদীহি করতে হবে না - এইটা কেমন কথা? সাহারা খাতুনের কাছ থেকে শুনতে চাচ্ছিলাম - কেন পুলিশ ব্যর্থ হলো - আর ব্যর্থতার দায়ে কি ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। আর উনি ঘুমপাড়ানির গানের মতো শুনানোর চেষ্টা করলেন ইন্টারপুলে কাহিনী- করবেন নাইবা কেন? কারন উনি জানেন একদল মানুষ আছে যারা উনি যা বলেন তাতেই সমর্থন দেবে। এই যে আমাদের নেতারা - সরকারে বা বাইরে - এরা কি জনসমর্থন নিয়েই নেতা।

আজকে মির্যা ফকরুলকেও দেখলাম বেশ রসাত্বক ভংগীতে সরকার দূর্নীতির রেকর্ড ভংগ করে ফেলেছে ঘোষনাটা দিচ্ছেন। দেখে কিছুটা কনফিউজড। উনি কি উনাদের মাথা চেপে থাকা দূর্নীতির রেকর্ড ভংগের আনন্দে মাতোয়ারা - নাকি বর্তমান সরকারের লোকজনের বোকামীতে মজা পেয়েছেন - মনে মনে ভাবছেন - কি বোকা এই গুলান - আমরা আমাদের টাকাগুলি কি ভাবে মালোশিয়া, কানাডা আর লন্ডনে পাঠালাম - আর এই বোকারা কয়টা টাকা নিয়ে ধরা পড়ে যাচ্ছে। যাই হোক - যেমন দেশে তেমন নেতা। কথাটা কতটা সত্য তা একুশে টিভির পাবলিক অপিনিয়ন নাকি কি যেন একটা অনুষ্টান দেখে নিশ্চিত হলাম।

উপস্থাপক প্রশ্ন করছেন ঢাকা সিটি মেয়র নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেন? উত্তর দাতাদের প্রায় সবাই বললো - যিনি বিদ্যুত, গ্যাস এবং পানির সরবরাহের নিম্চয়তা দিবেন - যিনি উন্নয়ন করবেন ইত্যাদি তাকেই ভোট দেবো। অবাক হয়ে শুনছিলাম লোকজনের কথা। ঢাকার মেয়রের কাজটা কি তাও এরা জানে না। ঢাকা শহরে ময়লা পরিষ্কার, গরুর হাট, রাস্তা কার্পেটিং আর বাজারের চাঁদাবাজি ছাড়া মেয়রের কোন ক্ষমতা নেই। ঢাকা শহরে ১১টা সংস্থা কাজ করে তাদের নিজ নিজ মন্ত্রনালয়ের অধীনে তা একই রাস্তা বছরে ১১ বার খোড়াখুড়ি করলেও অবাক হবার কিছু থাকে না।

কেন্ত্রীয় সরকারের কাছে ঢাকা মেয়র আর গ্রামের চেয়ারম্যানের গুরুত্ব সমান। জনগন কার কাছে কি চাইতে হবে তাও জানে না। আর ৯০ জন কমিশনারের কাজ কি তা কমিশনারাও মনে হয় ঠিকমতো জানেন না। ওরা একটা অফিস পায় - সেখানে বসে সালিশ করে আর চাঁদাবাজির একটা সুরক্ষা ছাড়াও মাস্তানী করার লাইসেন্স হিসাবে পদকে ব্যবহার করে। তাই দেখা যায় যিনিই মেয়র হন - দ্রুত ধনী হওয়া ছাড়া নতুন কিছু করতে পারেন না।

এই যে জনগন - যারা নিজেরাই জানে না তারা কি চায় - আর কোথায় কি চাইতে হবে। মুল কথা যারা নিজেদের অধিকার এবং ক্ষমতা সম্পর্কে কোন ধারনাই রাখে না - সেখানে সুরঞ্জিত, মির্যা ফকরুলের মতো কিছু বুদ্ধিমান মানুষ সহজেই ওদের মাথায় কাঁঠাল ভেংগে মহানন্দে কোয়াগুলোর রস আস্মাদন করে। তাকে সহায়তা করা জন্যে আরেকদল মানুষ নিজেরা একচোখ অন্ধ করে বিরোধীপক্ষের দোষত্রুটি নিয়ে লাফালাফি করে - যদিও নিজের পক্ষের দোষগুলো প্রায় একই এবং তাকে তারা কখনই অপছন্দ করে না। কতদিন এই কাঁঠাল ভাংগার প্রক্রিয়া চলবে - যতদিন বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন না হচ্ছে - যতদিন একজন মানুষ শিক্ষিত হয়ে আত্নসমালোচনা করার মতো উদার হচ্ছে - ততদিন। আমরা সেই দিনেরই অপেক্ষায় থাকবো।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।