আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোয়ান্টামের ওয়েব থেকে

সামহোয়ার কে ধন্যবাদ পারিবারিক জীবনে অবিদ্যা নর-নারীর পুরস্কার সমান পারিবারিক মনছবি করুন সবাইকে নিয়েই পরিবার রাজা বানকে আনারে ... বিয়েতে হীরের আংটি অশুভ যৌতুক পুরুষের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে জোর করে বিয়ে দেয়া অপরাধ আলোকিত দম্পতি প্রয়োজন ২০০৩ এবং ২০০৪ সালে পরপর অনুষ্ঠিত হয় পারিবারিক জীবনে অবিদ্যা বিষয়ক ৪টি গ্রাজুয়েট ওয়ার্কশপ। যার প্রথমটি হয় ১২ ডিসেম্বর, ২০০৩ এবং দ্বিতীয়টি ২৬ মার্চ, ২০০৪। প্রথম পর্বে পারিবারিক জীবনে অবিদ্যার সবচেয়ে বড় ত্রুটি হিসেবে চিহ্নিত করা হয় নারীর প্রতি ভ্রান্ত বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গিকে। যেমন, ‘নারী সকল পাপের উৎস’- এ ধারণা পুরুষরা এমনকি অনেক নারীও পোষণ করেন। কারণ তারা মনে করেন আদমের ¯^M© ত্যাগের জন্যে হাওয়া দায়ী ছিলেন, যা আসলে মধ্যযুগে ইউরোপে প্রচলিত ধারণা থেকে এসেছে।

অথচ কোরআনে এ সম্পর্কিত আটটি আয়াতের কোথাও হাওয়াকে দায়ী করা হয় নি বরং আদম ও হাওয়া উভয়কেই দায়ী করা হয়েছে। নর-নারীর পুরস্কার সমান পুরুষের তুলনায় নারীর বুদ্ধি-বিবেচনা কম, জ্ঞানার্জনের ক্ষমতা কম, এ ধারণায় তাকে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখা হয়। অথচ পবিত্র কোরআনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, বিশ্বাসী নর ও নারীর পুরস্কার সমান। আর নবীজী (সা.) বলেছেন, নারী হচ্ছে পুরুষের সহোদর। অর্থাৎ নারী ও পুরুষ পরস্পরের সমান।

আবার ‘ছেলে আপন মেয়ে পর’ মা-বাবার এ মনোভাবের কারণে একটি মেয়ে তার জন্মলগ্ন থেকেই বৈষম্যের শিকার হয় যা পরবর্তী জীবনে তার মধ্যে সৃষ্টি করে হীনম্মন্যতাবোধ। অথচ একটি ছেলের মতো একটি মেয়েরও শিক্ষা ও আত্মপরিচয়ের গুরুত্ব কোনো অংশেই কম নয়। আসলে পুরুষ পরিবারের প্রধান হলেও নারীই পরিবারের প্রাণ। কারণ, নারীকে কেন্দ্র করেই পরিবার টিকে থাকে। এই নারীকেই যখন অবজ্ঞা করা হয়, তার ওপর জুলুম করা হয়, তখন সে পরিবারে শান্তি থাকে না।

নারীকে তার যোগ্য সম্মান দিলেই পরিবারে শান্তি আসতে পারে। আর যোগ্য সম্মান লাভের জন্যে নারীকেও আত্মপরিচয় সৃষ্টি করতে হবে। পারিবারিক মনছবি করুন পারিবারিক অবিদ্যার দ্বিতীয় ওয়ার্কশপে আলোচিত হয় সুখী পরিবারের পঞ্চসূত্র সম্পর্কে। আর তা হলো- পারিবারিক মনছবি নির্দিষ্ট করা, সম্পর্কের জটিলতার ক্ষেত্রে সরাসরি কথা বলা, পারিবারিক ঐতিহ্য বা রেওয়াজ তৈরি করা, কোনো ব্যক্তিকে তার আচরণ দিয়ে বিচার না করে তার প্রতি সমমর্মিতা-ভালবাসা তৈরি করা এবং আত্মিক চেতনা ও মূল্যবোধকে গুরুত্ব দেয়া। একটি পরিবারের সামনে যদি কোনো মনছবি থাকে তবে সে পরিবার কখনো ভাঙতে পারে না।

ঠিক তেমনি পারিবারিক রেওয়াজ পরিবারের সকল সদস্যকে একাত্ম থাকতে উদ্বুদ্ধ করে। একসঙ্গে থাকতে গেলে ভুল-বোঝাবুঝি হতে পারে, মতের অমিল হতে পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রে সম্পর্ক তিক্ত হওয়ার আগেই দুপক্ষ সরাসরি সংলাপে বসলে অনেক দ্রুত এবং সহজে তা সমাধান হয়। এটা তখনই হবে যখন সদস্যদের একে অপরের প্রতি থাকবে নিঃশর্ত ভালবাসা ও সমমর্মিতা, যাতে আছে শুধু দেয়ারই প্রচেষ্টা, পাওয়ার নয়। আর এজন্যে শুধু জৈবিক চাহিদা বা বংশধারা রক্ষা নয়, প্রয়োজন আত্মিক ও আধ্যাত্মিক চেতনাকে পরিবারের ভিত্তি হিসেবে দেখা।

সবাইকে নিয়েই পরিবার পারিবারিক জীবনে অবিদ্যার আরো দুটি ওয়ার্কশপ হয় ২০০৪ সালের ২৫ জুন ও ২৪ সেপ্টেম্বর| অবিদ্যার এ দুটি ওয়ার্কশপে মূলত বিয়ে সম্পর্কিত অবিদ্যাগুলোকে তুলে ধরা হয়। সংসার মানে স্বামী এবং স্ত্রী- মাত্র এই দুজনের সমন্বয় এটা বিয়ের অন্যতম প্রধান অবিদ্যা। কারণ একের সাথে এক যোগ করলে ‘দুই’ হয়, কিন্তু একের পাশে এক রাখলে হয় ‘এগার’। তেমনি বিয়ের মাধ্যমে একজন পুরুষ এবং একজন নারী যে পরিবার গঠন করেন, শুধু স্বামী-স্ত্রী মিলে কখনো সে পরিবার পরিপূর্ণ হয় না যদি না মা-বাবা, ভাই-বোন, শ্যালক-শ্যালিকা অর্থাৎ স্বামী এবং স্ত্রীর উৎস পরিবারের স্বজনদের সে পরিবারের সাথে একাত্ম করা না যায়। আর তাই ‘হাম দো হামারা দো’ শ্লোগানের একক পরিবারের যে ধারণা এখন প্রচলিত তা আসলে কখনোই সুখী পরিবার নয়।

কারণ ইচ্ছে করলেই মা-বাবাকে আলাদা করা যায় না। মায়ের গর্ভে জন্ম নেয়া, বাবার অর্থে লালিত-পালিত হওয়া, ভাই-বোনদের স্নেহ মমতায় বেড়ে ওঠা- এ সত্যগুলোকে অস্বীকার করা যায় না, এ সম্পর্কও ছিন্ন করা যায় না। এটা একজন পুরুষের ক্ষেত্রে যেমন সত্যি, নারীর ক্ষেত্রেও সত্যি। আসলে একজন সফল গৃহকর্তা বা কর্ত্রী তিনিই যিনি এরকম একটি পরিপূর্ণ পরিবারের প্রতিটি বিষয়কে ব্যালেন্স করে চলেন দক্ষ জাদুকরের কুশলতায়। রাজা বানকে আনারে ... আসলে বিয়ের ব্যাপারে ভুল ধারণা এবং মাত্রাতিরিক্ত প্রত্যাশাই দাম্পত্য জীবনে অশান্তির প্রধান কারণ।

‘রাজা বানকে আনারে- মুঝে লেকে যানারে, ছম ছমাছম ছম’- বিয়ের প্রসঙ্গে হিন্দি সিনেমার এ গানটিতে যে উচ্ছ্বাস, যে মোহময় কল্পনা ফুটে উঠেছে, বাস্তব জীবনেও তা-ই হবে- এমন কল্পনা করতে গিয়েই বিয়ে সংক্রান্ত অবিদ্যা বা ভ্রান্ত ধারণায় আক্রান্ত হই আমরা। সিনেমার নায়ক বা নায়িকার মতো স্বামী বা স্ত্রী কল্পনা করি নিজেদের জন্যে। অথচ বাস্তব জীবনের সাথে সিনেমার জীবনের কোনো মিল হয় না। বাস্তবে এদের দুঃখ আর অশান্তির কোনো শেষ নেই। সাধারণত বিয়েতে ছেলেপক্ষের প্রত্যাশা থাকে মেয়ে ফর্সা, সুন্দরী এবং কম বয়সী হতে হবে।

মেয়ের বাবার বাড়ি গাড়ি ব্যাংক-ব্যালেন্স থাকতে হবে, যাতে যৌতুক পাওয়া যায়। আবার মেয়েপক্ষ ভাবে ছেলে ভালো বেতনের চাকুরে বা পয়সাওয়ালা ব্যবসায়ী বা বিদেশে থাকলেই তা ভালো পাত্র হওয়ার জন্যে যথেষ্ট। সে মদ্যপ, বদমেজাজী বা লম্পট কিনা বা বিদেশে সে কী করে তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজনও তারা মনে করেন না। এমনকি বিয়ের পর মেয়ের পড়াশোনা বা ক্যারিয়ারের ক্ষতি হবে কিনা, এটাও তারা ভাবতে চান না। বিয়েতে হীরের আংটি অশুভ বিয়ে সংক্রান্ত প্রচলিত আরেকটি অবিদ্যা হলো বিয়ের জন্যে খরচের প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠা।

একটিমাত্র বিয়ের জন্যে প্রচুর অর্থ ব্যয়ে একাধিক অনুষ্ঠান আয়োজনের পাশাপাশি পোশাক ও অলঙ্কার কেনাকাটা করতে গিয়ে হয় টাকার শ্রাদ্ধ। ঋণ করে হলেও বিয়ের এই ফুটানি করতে গিয়ে অনেক পরিবার দুর্দশায় নিপতিত হয়। বিয়েতে দেয়া হীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে পারিবারিক অশান্তি বয়ে আনে। কারণ হীরা বেশিরভাগ মানুষের জন্যেই অশুভ। আসলে বিশ্ব পুঁজিবাদী চক্র নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থেই ভোজন, বিনোদন এবং জৈবিক চাহিদা পূরণকে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে প্রচার করতে মিডিয়াকে ব্যবহার করছে।

এজন্যেই মিডিয়াতে বিয়েকে কাল্পনিক এক বিশাল ব্যাপার হিসেবে চিত্রিত করা হয়। অথচ বিয়ে একটি সাধারণ ও স্বাভাবিক ঘটনা যার মাধ্যমে দুজন নর-নারীর জৈবিক চাহিদা পূরণের বিষয়টিই সর্বজন গ্রহণযোগ্যতা পায়। তাই একটি স্বাভাবিক ঘটনাকে আকাশ কুসুম মনে করা এবং এর জন্যে অপচয়ে মত্ত হওয়া অবিদ্যা ছাড়া আর কিছু নয়। বরং এই খরচ, ধুমধাড়াক্কা, অপচয় শুধু অকল্যাণই বয়ে আনে। যে বিয়েতে ধুমধাড়াক্কা অপচয় যত বেশি, সে বিয়েতে সুখের পরিমাণ তত কম।

যৌতুক পুরুষের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে বিয়ের আরেকটি অবিদ্যা হলো বিয়ের সময় পাত্রপক্ষকে নানারকম দামি আসবাব, বিলাস উপকরণ ইত্যাদি দিতে হবেই- এরকম একটি বাধ্যতা যা যৌতুকেরই নামান্তর। কারণ কনের মা-বাবা কৌতুক করে এগুলো দিচ্ছেন না। তারা যৌতুক হিসেবেই দিচ্ছেন প্রচলিত সমাজের তথাকথিত নিয়মের চাপে বাধ্য হয়ে, যাতে বিয়ের পর মেয়েকে শ্বশুরবাড়ির খোঁটা না শুনতে হয়। কিন্ত সত্য হচ্ছে, কোনো আত্মমর্যাদাসম্পন্ন পুরুষেরই উচিত নয় শ্বশুরবাড়ি থেকে বিয়ের সময় তথাকথিত উপহার হিসেবে পাওয়া এ সমস্ত আসবাব-উপকরণ গ্রহণ করা। জোর করে বিয়ে দেয়া অপরাধ বিয়ে সংক্রান্ত আরেকটি অবিদ্যা হচ্ছে বিয়েকে ফরজ বা বাধ্যতামূলক মনে করা।

অথচ নবীজী (সা.) বলেছেন, ‘বিয়ে হলো আমার সুন্নত। যে ব্যক্তি (শারীরিক ও আর্থিক সঙ্গতি থাকার পরও) এই সুন্নতকে লঙ্ঘন করলো সে আমার দলভুক্ত নয়’ অর্থাৎ জৈবিক চাহিদা বিয়ের মাধ্যমেই পূরণ করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু যিনি জৈবিক প্রয়োজন সেভাবে অনুভব করেন না, তার জন্যে বিয়ে ফরজ নয়। বিয়ের জন্যে মানসিক আগ্রহ গুরুত্বপূর্ণ। কারও যদি বিয়ের ব্যাপারে অবচেতন মনে অনীহা থাকে, তার বিয়ে হওয়া যেমন একদিকে বিঘ্নিত হবে, তেমনি জোর করে বিয়ে দেয়া হলেও আরেকটি মানুষকে প্রবঞ্চিত করা হবে।

এক্ষেত্রে অভিভাবকদের জবরদস্তি একেবারেই অনুচিত। বিয়ের তৃতীয় অবিদ্যা হলো বিয়ে না করলে জীবন বৃথা- এ ধারণা। বিয়ে করেছেন এমন অনেকে যেমন বিখ্যাত হয়েছেন, তেমনি বিয়ে করেন নি এমন প্রচুর নারী-পুরুষের নামও আমরা ইতিহাসে পাই যারা বিখ্যাত হয়েছেন। অর্থাৎ জীবন সার্থক হওয়া বা বিখ্যাত হওয়ার সাথে বিয়ের সম্পর্ক নেই। কারণ বিয়ে এমন একটি দায়িত্ব যেখানে রয়েছে দৈহিক, মানসিক, বংশধারা এবং আত্মিক- এ চারটি মৌলিক চাহিদাকে ভারসাম্যপূর্ণভাবে সমন্বিত করার প্রয়োজন।

দায়িত্ব পালনে দৈহিক, মানসিক অথবা অর্থনৈতিকভাবে অক্ষম হলে সে বিয়ে অর্থহীন। এ ধরনের বিয়ে অশান্তিই ডেকে আনে। আলোকিত দম্পতি প্রয়োজন বিয়ে সংক্রান্ত প্রচলিত এসব অবিদ্যার বিপরীতে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয় ওয়ার্কশপে। বিয়ে সবসময় পরিচিত পরিমণ্ডলে হওয়া উচিত যেখানে পারস্পরিক জানা-শোনা আছে এবং সেটা অবশ্যই সম-সামাজিক ও সম-সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে উভয় পরিবারের সম্মতিতে। সত্যিকারের সুখী এবং আনন্দপূর্ণ পরিবার গঠনের জন্যে একটি ছেলে বা মেয়ের তাকেই বিয়ে করা উচিত যাকে সে সম্মান করতে পারে, তার সহযোদ্ধা মনে করতে পারে এবং যে তার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে এবং তার জন্যে প্রয়োজনে সবকিছু বিসর্জন দিতে পারবে।

তাই বিয়ের জন্যে শুধু সৌন্দর্য বা অর্থ-বিত্ত নয় বা উচ্চ ডিগ্রী নয়, ভালো মানুষ খুঁজতে হবে যার সাথে চেতনার মিল আছে এবং যিনি এ জীবনের পরও মহাজাগতিক জীবনে সঙ্গী হতে পারবেন। আসলে স্বামী-স্ত্রী যদি পারস্পরিক মেধা বিকাশ এবং আলোকিত পথের সহযোগী হন এবং সন্তানকে আলোকিত হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন, তাহলে সফল দম্পতি হিসেবে অবশ্যই স্বীকৃত হবেন। আর ফাউন্ডেশন এরকম সফল দম্পতিই কামনা করে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.